চীনা চন্দ্রানুসন্ধান কর্মসূচি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
চীনা চন্দ্রানুসন্ধান কর্মসূচি
চীনা চন্দ্র অভিযান কর্মসূচির লোগো.png
কর্মসূচির প্রতীক: একটি চন্দ্রকলা যার কেন্দ্রে দুইটি পদচিহ্ন। প্রতীকটি দেখতে চীনা অক্ষর  [zh]-এর মতো, যার অর্থ "চাঁদ"
দেশচীন
সংস্থাচীনের জাতীয় মহাকাশ প্রশাসন
উদ্দেশ্যরোবটভিত্তিক চন্দ্র অভিযান (একাধিক)
অবস্থাচলমান
কার্যক্রমের ইতিহাস
স্থায়িত্বকাল২০০৩ – আজ অবধি
প্রথম উড্ডয়নছাং-ও ১, ২৪ অক্টোবর ২০০৭, ১০:০৫:০৪.৬০২ (2007-10-24UTC10:05:04Z) UTC
উৎক্ষেপণ কেন্দ্র(সমূহ)
যানের তথ্য
যানের ধরনচন্দ্র পরিক্রমকসমূহ, অবতরকসমূহ, পরিভ্রামকসমূহ এবং নমুনাসহ প্রত্যাবর্তনকারী মহাকাশযান
উৎক্ষেপক যান(গুলি)

চীনা চন্দ্রানুসন্ধান কর্মসূচি (চীনা: 中国探月; ফিনিন: Zhōngguó Tànyuè চুংকুও থান-ইউয়ে), যা চীনা চন্দ্রদেবী ছাং-ও-র নামে ছাং-ও প্রকল্প (চীনা: 嫦娥工程; ফিনিন: Cháng'é Gōngchéng, ছাং-ও কুংছেং) নামেও পরিচিত, চীনের জাতীয় মহাকাশ প্রশাসন দ্বারা পরিচালিত রোবটভিত্তিক (স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রভিত্তিক) চন্দ্রানুসন্ধানের একটি চলমান ধারাবাহিক কর্মসূচি। কর্মসূচিটিতে চন্দ্র পরিক্রমকযান বা আবর্তক যান, অবতরক যান, পরিভ্রামক যান এবং নমুনা প্রত্যানয়নকারী মহাকাশযানসমূহের কর্মকাণ্ড অন্তর্ভুক্ত। এই যানগুলিকে চীনের নিজস্ব "দীর্ঘ পদযাত্রা" (ছাংচেং বা লংমার্চ) পরিবারের রকেটের সাহায্যে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়। একটি দূরমিতি, অনুসরণ ও আদেশ ব্যবস্থা দ্বারা এই উৎক্ষেপণ ও উড্ডয়নগুলিকে পর্যবেক্ষণ করা হয়, যেটি বেইজিং নগরীতে অবস্থিত একটি ৫০ মিটার ব্যাসের অ্যান্টেনা এবং খুনমিং, সাংহাইউরুমছি নগরীতে অবস্থিত তিনটি ৪০ মিটার ব্যাসের অ্যান্টেনা ব্যবহার করে থাকে। অ্যান্টেনাগুলি একত্রে ৩০০০ কিলোমিটারের একটি "ভিএলবিআই" (অতিবৃহৎ ভূমিরেখা ব্যতিচারমিতি) অ্যান্টেনা গঠন করেছে।[১][২] নিম্নমুখী সংযোগের উপাত্ত গ্রহণের জন্য একটি স্বত্বযুক্ত ভূ-প্রয়োগ ব্যবস্থা রয়েছে।

চীনা ভূবিজ্ঞানী ও রাসায়নিক মহাকাশবিজ্ঞানী ঔইয়াং সিইঊয়ান এ পর্যন্ত জানা চাঁদে মজুদ বিভিন্ন ধাতু যেমন টাইটেনিয়াম ও (পরমাণুকেন্দ্রের গলন বা ফিউশন প্রক্রিয়ার আদর্শ জ্বালানি হিসেবে) হিলিয়াম-৩ গ্যাসের ব্যবহারের পক্ষে মত দেওয়া প্রথম কয়েকজন বিজ্ঞানীদের মধ্যে একজন। তিনি বর্তমানে চীনের চন্দ্রানুসন্ধান কর্মসূচির প্রধান বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করছেন। এছাড়া বিজ্ঞানী সুন চিয়াওতুং প্রধান নকশাবিদ হিসেবে এবং সুন সেচৌ সহকারী মহানকশাবিদ হিসেবে নিযুক্ত আছেন। কর্মসূচির প্রধান পরিচালক হলেন লুয়ান এনচিয়ে।

কর্মসূচিটির প্রথম মহাকাশযানটি ছিল ছাং-ও ১ চন্দ্র পরিক্রমক যান বা আবর্তক যান। এটিকে ২০০৭ সালের ২৪শে অক্টোবর তারিখে চীনের শিছাং কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়।[৩] ছাং-ও ২ নামের দ্বিতীয় পরিক্রমক যানটিকে ২০১০ সালের ১লা অক্টোবর প্রেরণ করা হয়।[৪][৫] এরপর ২০১৩ সালের ১লা ডিসেম্বর ছাং-ও ৩ অভিযানের মহাকাশযানটিকে উৎক্ষেপণ করা হয়, যাতে একটি অবতরক যান (ল্যান্ডার) ও একটি পরিভ্রামক যান (রোভার) অন্তর্ভুক্ত ছিল। যান দুইটি সফলভাবে ২০১৩ সালের ১৪ই ডিসেম্বর চন্দ্রপৃষ্ঠে সফলভাবে কোমল অবতরণ সম্পন্ন করে। এরপর ছাং-ও ৪ অভিযানের যানটিকে ২০১৮ সালের ৭ই ডিসেম্বর তারিখে চন্দ্রাভিমুখে উৎক্ষেপণ করা হয়; এটিতেও একটি অবতরক যান ও পরিভ্রামক যান ছিল। এগুলি ২০১৯ সালের ৩রা জানুয়ারি চাঁদের দূরবর্তী পার্শ্বে দক্ষিণ মেরু-আইটকেন অববাহিকা অঞ্চলে অবতরণ করে। ২০২০ সালের শেষ নাগাদ একটি নমুনা সংগ্রহ অভিযানের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যার নাম ছাং-ও ৫[৬]

চীনের চন্দ্রানুসন্ধান কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক প্রতীকটির আকৃতি দেখতে চীনা অক্ষর  [zh]-এর মতো, যার অর্থ "চাঁদ"। এই প্রতীকটিতে চীনা অক্ষরে লেখা চাঁদ অক্ষরটির কেন্দ্রে দুইটি মানব পদচিহ্ন অঙ্কিত আছে। এটি কর্মসূচিটির পরম লক্ষ্যকে নির্দেশ করছে, যা হল চাঁদে মানব অভিযানের পথ সুগম করা। চীনের জাতীয় মহাকাশ প্রশাসনের প্রধান চাং খচিয়েন ঘোষণা দেন যে চীন ২০৩০ সালের মধ্যে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে মহাকাশচারীদের অবতরণ ও চাঁদে একটি মহাকাশ বিরতিকেন্দ্র বা স্টেশন স্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।[৭]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. (চীনা ভাষায়) “嫦娥奔月”地面主干工程基本完成 云南天文台巨型射电追踪望远镜年底投入使用 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০০৭-১০-২৭ তারিখে
  2. "巨型望远镜送"嫦娥"飞月-望远镜,嫦娥-北方网-科技无限"। ২৪ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ আগস্ট ২০২০ 
  3. ""嫦娥一号"发射时间确定 但未到公布时机"Xinhua News Agency। ২০০৭-০৭-০৭। মার্চ ১৫, ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১২, ২০০৭ 
  4. Stephen Clark (১ অক্টোবর ২০১০)। "China's second moon probe dispatched from Earth"Spaceflight Now। ১৮ জুলাই ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০১০ 
  5. "China's 2nd lunar probe Chang'e-2 blasts off"। Xinhua। ১ অক্টোবর ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০১০ 
  6. "China to launch Chang'e-5 lunar probe in 2020"। ২০১৯-১০-২৮। 
  7. "China to build moon station in 'about 10 years'" 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]