জিরাতি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

জিরাতি দ্বারা সাধারণতঃ ফসলী জমি চাষাবাদ ও ভোগ-দখলের সাথে সংশ্লিষ্ট একটি শ্রেণিকে বুঝানো হয়ে থাকে।[১] প্রাক-ঔপনিবেশিক আমলে হতে শুরু করে[২] বর্তমানেও এই ব্যবস্থাটি চালু রয়েছে; যদিও ক্ষেত্রবিশেষে এর প্রয়োগ ও ব্যবহার পরিবর্তন হয়েছে।

ব্যুত্‌পত্তি[সম্পাদনা]

জিরাত একটি আরবি শব্দ যার অর্থ চাষোপযোগী জমি অথবা যে জমিতে কর দান করার ফলশ্রুতি বসতি স্থাপন করার অনুমতি লাভ করা গিয়েছে।[২] মূলতঃ মধ্যযুগের মুগল দলিলাদিতে অনাবাদি ও আবাদি জমির মধ্যকার ব্যবহারগত বৈপরিত্য বুঝাতে আবাদি জমিকে জিরাত শব্দটি দ্বারা নির্দেশ করা হতো; যা ব্যবহারগত দিক থেকে বসত ভিটা বা বাগান করার কাজে ব্যবহূত জমি খজনা আদায় ও চিহ্নিত করের ক্ষেত্রে আলাদা একটি বৈশিষ্ঠ্যে হিসাবে বিবেচিত হতো।[২]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

প্রথম দিকে, বাংলায় প্রাক্-ঔপনিবেশিক ও ঔপনিবেশিক আমলে, আবাদি জমির ধরন বুঝাতে জিরাতি শব্দটি ব্যবহৃত হলেও সতেরো শতকের প্রথম থেকে এই শব্দটির অর্থ ও প্রয়োগে পরিবর্তন পরিলক্ষিত হতে থাকে যখন বিহার অঞ্চলের জিরাতি জমি ফসলি জমি হিসেবে এবং বাংলায় এটি আবাদি জমি হিসাবে পরিচিতি লাভ করে।[২] তখন থেকে কৃষিজ পন্যের মৌসুমে অন্যগ্রাম ও এলাকা থেকে আসা রায়তদের দ্বারা চাষ করা জমি বুঝানোর জন্য জিরাতি শব্দটি ব্যবহৃত হতে থাকে যারা ফসল ফলানোর মৌসুমের শুরুতে আসত এবং ফসল ওঠানোর পর নিজ বাড়িতে ফিরে যেত।[২] বর্তমানে, বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে হাওর এলাকায় এসে অস্থায়ী কাঁচা ঘর তৈরি করেন সেখানে বসবাস করে চাষাবাদ করে থাকেন।[৩]

বর্তমান কর্মপদ্ধতি[সম্পাদনা]

বর্তমানে, জিরাতি হিসাবে যারা কাজ করেন তারা সাধারণতঃ বাংলা সনের কার্তিক থেকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত - বছরের এই অর্ধেক সময় এই কার্যে লিপ্ত থাকেন।[৪] হাওরে এলাকায় বোরো ধানের জমি তৈরি করা, চারা রোপণ, সেচ, পরিচর্চা থেকে শুরু করে ধান কাটা, মাড়াই, ঝাড়াইয়ের কাজ সম্পন্ন করে পারিশ্রমিক হিসাবে নতুন ধান সঙ্গে নিয়ে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে নিজ বাড়িতে ফেরেন তারা।[৫]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "'জিরাতিদের' কষ্টকর ৬ মাস"দৈনিক সময়ের আলো। ২৫ এপ্রিল ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০২৩ 
  2. "জিরাতি"bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০২৩ 
  3. "সর্বস্বান্ত জিরাতিরা খালি হাতে ফিরছে ঘরে"দৈনিক প্রথম আলো। ২৬ এপ্রিল ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০২৩ 
  4. "হাওরের জিরাতি: খাদ্য সৈনিকদের খোঁজ রাখে না কেউ"বার্তা বাজার। ২৮ এপ্রিল ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০২৩ 
  5. "শুন্য হাতে ফিরছেন 'জিরাতিরা'"বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। ২০ এপ্রিল ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০২৩ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]