জিরাতি
জিরাতি দ্বারা সাধারণতঃ ফসলী জমি চাষাবাদ ও ভোগ-দখলের সাথে সংশ্লিষ্ট একটি শ্রেণিকে বুঝানো হয়ে থাকে।[১] প্রাক-ঔপনিবেশিক আমলে হতে শুরু করে[২] বর্তমানেও এই ব্যবস্থাটি চালু রয়েছে; যদিও ক্ষেত্রবিশেষে এর প্রয়োগ ও ব্যবহার পরিবর্তন হয়েছে।
ব্যুত্পত্তি[সম্পাদনা]
জিরাত একটি আরবি শব্দ যার অর্থ চাষোপযোগী জমি অথবা যে জমিতে কর দান করার ফলশ্রুতি বসতি স্থাপন করার অনুমতি লাভ করা গিয়েছে।[২] মূলতঃ মধ্যযুগের মুগল দলিলাদিতে অনাবাদি ও আবাদি জমির মধ্যকার ব্যবহারগত বৈপরিত্য বুঝাতে আবাদি জমিকে জিরাত শব্দটি দ্বারা নির্দেশ করা হতো; যা ব্যবহারগত দিক থেকে বসত ভিটা বা বাগান করার কাজে ব্যবহূত জমি খজনা আদায় ও চিহ্নিত করের ক্ষেত্রে আলাদা একটি বৈশিষ্ঠ্যে হিসাবে বিবেচিত হতো।[২]
ইতিহাস[সম্পাদনা]
প্রথম দিকে, বাংলায় প্রাক্-ঔপনিবেশিক ও ঔপনিবেশিক আমলে, আবাদি জমির ধরন বুঝাতে জিরাতি শব্দটি ব্যবহৃত হলেও সতেরো শতকের প্রথম থেকে এই শব্দটির অর্থ ও প্রয়োগে পরিবর্তন পরিলক্ষিত হতে থাকে যখন বিহার অঞ্চলের জিরাতি জমি ফসলি জমি হিসেবে এবং বাংলায় এটি আবাদি জমি হিসাবে পরিচিতি লাভ করে।[২] তখন থেকে কৃষিজ পন্যের মৌসুমে অন্যগ্রাম ও এলাকা থেকে আসা রায়তদের দ্বারা চাষ করা জমি বুঝানোর জন্য জিরাতি শব্দটি ব্যবহৃত হতে থাকে যারা ফসল ফলানোর মৌসুমের শুরুতে আসত এবং ফসল ওঠানোর পর নিজ বাড়িতে ফিরে যেত।[২] বর্তমানে, বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে হাওর এলাকায় এসে অস্থায়ী কাঁচা ঘর তৈরি করেন সেখানে বসবাস করে চাষাবাদ করে থাকেন।[৩]
বর্তমান কর্মপদ্ধতি[সম্পাদনা]
বর্তমানে, জিরাতি হিসাবে যারা কাজ করেন তারা সাধারণতঃ বাংলা সনের কার্তিক থেকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত - বছরের এই অর্ধেক সময় এই কার্যে লিপ্ত থাকেন।[৪] হাওরে এলাকায় বোরো ধানের জমি তৈরি করা, চারা রোপণ, সেচ, পরিচর্চা থেকে শুরু করে ধান কাটা, মাড়াই, ঝাড়াইয়ের কাজ সম্পন্ন করে পারিশ্রমিক হিসাবে নতুন ধান সঙ্গে নিয়ে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে নিজ বাড়িতে ফেরেন তারা।[৫]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ "'জিরাতিদের' কষ্টকর ৬ মাস"। দৈনিক সময়ের আলো। ২৫ এপ্রিল ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০২৩।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ "জিরাতি"। bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০২৩।
- ↑ "সর্বস্বান্ত জিরাতিরা খালি হাতে ফিরছে ঘরে"। দৈনিক প্রথম আলো। ২৬ এপ্রিল ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০২৩।
- ↑ "হাওরের জিরাতি: খাদ্য সৈনিকদের খোঁজ রাখে না কেউ"। বার্তা বাজার। ২৮ এপ্রিল ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০২৩।
- ↑ "শুন্য হাতে ফিরছেন 'জিরাতিরা'"। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। ২০ এপ্রিল ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০২৩।