জাহান্নাম থেকে চিঠি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
১৫ অক্টোবর ১৯৮৮-এ পোস্টমার্ককৃত "ফ্লম হেল লেটার"-এর একটি ফটোগ্রাফিক অনুলিপি

"ফ্রম হেল লেটার" (জাহান্নাম থেকে চিঠি) [১] [২] একটি চিঠি ছিল যেটি ১৮৮৮ সালের অক্টোবরে হোয়াইটচ্যাপেল ভিজিল্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান জর্জ লুস্ককে একটি সংরক্ষিত অর্ধেক মানব কিডনির মধ্যে পাঠানো হয়েছিল। [৩] এই চিঠির লেখক নিজেকে জ্যাক দ্য রিপার নামে পরিচিত অজ্ঞাত সিরিয়াল কিলার বলে দাবি করেন। তিনি লুস্ক এই চিঠি পাওয়ার দুই মাস আগে লন্ডনের হোয়াইটচ্যাপেল এবং স্পিটালফিল্ডস জেলায় কমপক্ষে চারজন মহিলাকে খুন ও বিকৃত করেছিলেন। এ বিষয়ক ভিজিল্যান্স কমিটিতে লুস্ক অপরাধীকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের উদ্দেশ্যে পুলিশকে বেসামরিক নাগরিকদের সহযোগিতার নেতৃত্ব দেন। [২]

চিঠিটি ১৫ অক্টোবর ১৯৮৮ তারিখে পোস্টমার্ক করা হয়েছিল এবং পরের দিন লুস্ক সেটি পেয়েছিলেন। [৪] কিডনিটির পরীক্ষায় জানা যায়, যে ব্যক্তিটি থেকে এই অঙ্গটি উদ্ভূত হয়েছিল তিনি ব্রাইটস রোগে ভুগছিলেন। [৫] এই চিঠির লেখক দাবি করেছেন যে তিনি কিডনিটির বাকী অর্ধেক ভেজে খেয়েছেন[৬]

পুলিশ, সংবাদমাধ্যম এবং জনসাধারণ একইভাবে নিজেকে হোয়াইটচ্যাপেলের ঘটনার হত্যাকারী দাবিকারীর কাছ থেকে অনেক চিঠি পেয়েছিলেন। তদন্তকারীরা এক পর্যায়ে মামলার সাথে সম্পর্কিত আনুমানিক ১,০০০টি চিঠির খোঁজ পেয়েছিলেন। যাইহোক, "জাহান্নাম থেকে" চিঠিটি চিঠিপত্রের কয়েকটি নিবন্ধের মধ্যে একটি নিবন্ধ প্রকৃতপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা পেয়েছে। [৭] তা সত্ত্বেও, চিঠির সত্যতা নিয়ে মতামত বিতর্ক রয়েছে, অনেকই এ চিঠিগুলোকে নিছক একটি ঠাট্টা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। [২]

জ্যাক দ্য রিপার দ্বারা সংঘটিত হত্যাকাণ্ডগুলি কয়েক দশক ধরে জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে অনেক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। সেই কারণে বেশ কয়েকটি বাস্তব এবং কাল্পনিক ঘটনায় "জাহান্নাম থেকে" চিঠির উল্লেখ পাওয়া যায়।

চিঠি[সম্পাদনা]

চিঠিতে লেখা আছে: [৮]

জাহান্নাম থেকে

জনাব লুস্ক,
স্যার
আমি একজন মহিলা থেকে নেওয়া কিডনির অর্ধেক অংশ আপনার জন্য পাঠিয়েছি এর অন্য টুকরোটি আমি ভাজা করে খেয়েছি এটি খুব দারুণ ছিল। আমি আপনাকে রক্তাক্ত ছুরিটি পাঠাতে পারি যা এটি বের করে নিয়েছিল, যদি আপনি আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেন।

স্বাক্ষরিত

মিস্টার লুস্ক যখন পারো তখন আমাকে ধরে নিয়ো

বিশ্লেষণ[সম্পাদনা]

রিপারের হত্যার সময় হত্যাকারীর কাছ থেকে দাবি করে শত শত চিঠি পোস্ট করা হয়েছিল, যার বেশিরভাগই ঠাট্টা মনে করা হয়। কিন্তু অনেক গবেষক যুক্তি দেন যে "জাহান্নাম থেকে" চিঠিটি প্রকৃত হত্যাকারীর লেখা হতে পারে। [৯] লেখক "জ্যাক দ্য রিপার" ছদ্মনামে সাথে এই চিঠিতে স্বাক্ষর করেননি। সেই কারণে সে সময়ে হত্যাকারী দাবি করে পাঠানো অন্যান্য চিঠি যেমন: "ডিয়ার বস" চিঠি এবং "সসি জ্যাকি" পোস্টকার্ড থেকে "জাহান্নাম থেকে" চিঠিকে আলাদা মনে করা হয়। তদুপরি, "ডিয়ার বস" চিঠি এবং "সসি জ্যাকি" পোস্টকার্ডের হাতের লেখা উল্লেখযোগ্যভাবে একই, কিন্তু "জাহান্নাম থেকে" চিঠির হাতের লেখা ভিন্ন। চিঠিটি পুলিশ বা ব্রিটিশ সরকারের উল্লেখ ছাড়াই ব্যক্তিগতভাবে লুস্কের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। এটি লুস্ক বা তার স্থানীয় হোয়াইটচ্যাপেল সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষবসত পাঠানো হতে পারে বলে ধারণা করা হয়।

১৮৮৮ সালের একটি পাঞ্চ ইলাস্ট্রেশনে খুনিকে একটি পৈশাচিক বর্ণালী ব্যক্তিত্ব হিসাবে দেখানো হয়েছে।

যারা মামলাটি নিয়ে গবেষণা করেছেন তাদের মধ্যে চিঠিটির সত্যতা সম্পর্কিত মতামতের ভিন্নতা রয়েছে। এমন সম্ভাবনা করা হয়েছিল যে হোয়াইটচ্যাপেল হত্যাকারীর কাছ থেকে অনুমিত সমস্ত চিঠি প্রতারণামূলক, এবং এটি ক্র্যাঙ্ক বা সাংবাদিকদের করা কাজ যার উদ্দেশ্য হত্যার বিষয়ে জনস্বার্থ বজায় রাখা এবং এইভাবে তাদের সংবাদপত্রের বিক্রয় বৃদ্ধি করা।

এই চিঠিটি অন্যগুলো থেকে বেশি আলাদা হওয়ার প্রাথমিক কারণ হল এটি একটি ছোট বাক্সের মধ্যে পাঠানো হয়েছিল যা পরে ডাক্তাররা বিশেষভাবে সংরক্ষিত একটি মানব কিডনি হিসেবে শনাক্ত করেন। হত্যাকাণ্ডের শিকার এক নারী ক্যাথরিন এডোজের একটি কিডনি হত্যাকারী নিয়ে নেয়। সেই সময় ডাক্তারদের মতামত ছিল যে অঙ্গটি মেডিকেল ছাত্রদের দিয়ে নেওয়া হতে পারে এবং একটি প্রতারণার অংশ হিসাবে চিঠির সাথে পাঠানো হতে পারে। [২] [৯] লুস্ক নিজেই এ ধারণা পোষণ করতেন। [১০]

লন্ডন হাসপাতালের ডাঃ থমাস ওপেনশোর কিডনির সমসাময়িক বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে এটি একটি অসুস্থ মদ্যপ মহিলার কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে যিনি গত তিন সপ্তাহের মধ্যে মারা গিয়েছিলেন, যা এডোজের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। যাইহোক, এই তথ্যগুলি তৎকালীন সমসাময়িক মিডিয়া রিপোর্টিং হিসাবে বিতর্কিত হয়েছে। ইতিহাসবিদ ফিলিপ সুগডেন লিখেছেন যে সম্ভবত অনিশ্চয়তার পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্তে আসা যায় যে কিডনিটি মানুষের ছিল এবং শরীরের বাম দিকের কিডনি ছিল। [২] [৯]

সমসাময়িক পুলিশ লিড থেকে জানা যায় যে এমিলি মার্শ নামের এক দোকানদার লন্ডনের মাইল এন্ড রোডে অবস্থিত তার দোকানে একজন দর্শনার্থীর মুখোমুখি হয়েছিলেন। সে দর্শনার্থীর চেহারা এবং কথাবার্তা উভয়ই অদ্ভুত, অস্বস্তিকর ছিল। তিনি মার্শকে জনাব লুস্কের ঠিকানা জানতে চাইলেন, যা তিনি একটি ব্যক্তিগত নোটবুকে লিখেছিলেন এবং তারপরই তিনি হঠাৎ চলে যাওয়ার যান। সে দর্শনার্থী প্রায় ছয় ফুট উচ্চতা লম্বা কালো ওভারকোট পরা একজন পাতলা মানুষ ছিলেন, যিনি একটি স্বতন্ত্র আইরিশ উচ্চারণে কথা বলতেন, তার মুখে গাঢ় দাড়ি এবং গোঁফ ছিল। ঘটনাটি লুস্কের "জাহান্নাম থেকে" বার্তা পাওয়ার আগের দিন ঘটেছিল এবং সেই এলাকায় ঘটেছিল যেখানে এটি পোস্টমার্ক করা হয়েছে বলে মনে করা হয়। [৯]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Grove, Sophie (৯ জুন ২০০৮)। "You Don't Know Jack: A New Museum Exhibition Opens the Case File on Jack the Ripper—and Affords a Grim Look at the London of the Time: A City Made for Murder"Newsweek। সংগ্রহের তারিখ ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ 
  2. Jones, Christopher (২০০৮)। The Maybrick A to Z। Countyvise Ltd. Publishers। পৃষ্ঠা 162–165। আইএসবিএন 978-1-906-82300-9 
  3. Jack the Ripper: An Encyclopedia আইএসবিএন ৯৭৮-১-৮৪৪-৫৪৯৮২-৫ p. 160
  4. Science Images and Popular Images of the Sciences আইএসবিএন ৯৭৮-১-১৩৪-১৭৫৮০-২ p. 127
  5. Jack the Ripper: An Encyclopedia আইএসবিএন ৯৭৮-১-৮৪৪-৫৪৯৮২-৫ p. 52
  6. Evans and Rumbelow, p. 170; Fido, pp. 78–80
  7. Jack the Ripper: An Encyclopedia আইএসবিএন ৯৭৮-১-৮৪৪-৫৪৯৮২-৫ p. 161
  8. Jack the Ripper Article on the Ripper Letters. Casebook.org.
  9. Sugden, Philip (মার্চ ২০১২)। "Chapter 13: Letters From Hell"। The Complete History of Jack the RipperLittle Brownআইএসবিএন 978-1-780-33709-8 
  10. Douglas, John; Mark Olshaker (২০০১)। The Cases That Haunt Us। New York, New York: Simon & Schuster। পৃষ্ঠা 54–55। আইএসবিএন 978-0-7432-1239-7