চারুচন্দ্র ভাণ্ডারী
চারুচন্দ্র ভাণ্ডারী | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ২৪ জুন ১৯৮৫ | (বয়স ৮৮)
দাম্পত্য সঙ্গী | প্রভানলিনী ভাণ্ডারী |
চারুচন্দ্র ভাণ্ডারী (১৯ অক্টোবর ১৮৯৬ – ২৪ জুন ১৯৮৫) ছিলেন একজন নিষ্ঠাবান কংগ্রেসকর্মী, প্রবীণ গান্ধীবাদী এবং সর্বোদয় নেতা। [১] তিনি আচার্য বিনোবা ভাবের ঘনিষ্ট সহযোগী হিসাবে বাংলায় সর্বোদয় আন্দোলনের প্রধান প্রচারক ছিলেন এবং ভূদান আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নেন।[২]
জন্ম ও শিক্ষা জীবন
[সম্পাদনা]চারুচন্দ্র ভাণ্ডারীর জন্ম ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দের ১৯ অক্টোবর ব্রিটিশ ভারতের অধুনা পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার ডায়মন্ড হারবার মহকুমার কুলপি থানা অন্তর্গত শ্যামবসুরচক গ্রামে। [৩] পেশায় তিনি ছিলেন একজন আইনজীবী।
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে দেশ জুড়ে লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু হলে মহাত্মা গাঁধীর নির্দেশে সুন্দরবনে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন চারুচন্দ্র ভান্ডারী। আইনজীবীর পেশা ছেড়ে সম্পূর্ণ ভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেন তিনি। লবণ সত্যাগ্রহে অংশ নিয়ে পুলিশের হাতেও ধরা পড়েছিলেন চারুচন্দ্র। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তাঁর হাত ধরেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার হটুগঞ্জ, ডায়মন্ড হারবার, কুলপি, করঞ্জলি, হরিনাভি-সহ সুন্দরবনের বিভিন্ন জায়গায় গড়ে ওঠে খাদি মন্দির। স্বাধীনতা সংগ্রামী বিশ্বরঞ্জন সেন ডায়মন্ড হারবারের 'খাদি মন্দির' প্রতিষ্ঠায় তার অন্যতম সহযোগীর ভূমিকা পালন করেছিলেন। [৪] সে সময় এই খাদি মন্দিরই সুন্দরবন সংলগ্ন গ্রামের অর্থনীতির ভিত্তি হয়ে উঠেছিল। সেখানে চরকায় কাটা সুতোয় তৈরি বস্ত্র ছড়িয়ে পড়ত গ্রামে গ্রামে। ওই খাদি মন্দির থেকেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থির করতেন চারুচন্দ্র। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় চারুচন্দ্রের আমন্ত্রণে ডায়মন্ড হারবারে অধুনা মহকুমা শাসকের কার্যালয় সংলগ্ন ময়দানে প্রকাশ্য জনসভা করেছিলেন মহাত্মা গান্ধী।[৫]
চারুচন্দ্র মহাত্মা গান্ধীর আন্দোলনের সাংগঠনিক ও সেবামূলক কাজগুলির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন।
গান্ধীবাদী আদর্শে প্রাণিত অধুনা বাংলাদেশের কুমিল্লায় প্রতিষ্ঠিত অভয় আশ্রমের সঙ্গেও তার বিশেষ যোগ ছিল।
চারুচন্দ্র ভাণ্ডারী আচার্য বিনােবা ভাবের একজন উল্লেখযােগ্য শিষ্য ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গে তার সর্বোদয় আন্দোলনের অন্যতম প্রধান প্রচারক ছিলেন চারুচন্দ্র। তার মতে সহযােগিতা হল গ্রামদান ও ভূ–দান আন্দোলন সম্পর্কে মূল নীতি। বিনােবা ভাবের নীতি চারুচন্দ্র ভাণ্ডারী বাস্তবে রূপায়িত করবার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। গয়ায় আয়োজিত সর্বোদয় সম্মেলনে অন্য অনেকের সঙ্গে তিনি জীবনদানী ব্রত নেন। তিনি ডায়মন্ড হারবারে পশ্চিমবঙ্গ ভূদানযজ্ঞ সমিতি গড়ে তোলেন।
রচিত গ্রন্থসমূহ-
- ভূদানযজ্ঞ কি ও কেন (১৯৫৫)
- আমাদের জাতীয় শিক্ষা (১৯৬২)
- কোর-আন সার
- আসামের অশান্তি প্রসঙ্গে (১৯৬১)
চারুচন্দ্র ভাণ্ডারী বঙ্গীয় আইনসভার সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ২০ জুন অবিভক্ত বাংলা বিভাগের ও পশ্চিমবঙ্গ প্রতিষ্ঠার পক্ষে মতদান করেন। স্বাধীন ভারতের প্রথম সাধারণ নির্বাচন ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে, কিষাণ মজদুর প্রজা পার্টির (কেএমপিপি এর) সদস্য হিসাবে ডায়মন্ড হারবার বিধানসভা কেন্দ্র হতে চারুচন্দ্র ভাণ্ডারী নির্বাচিত হন। প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষের মন্ত্রীসভায় তিনি প্রথম খাদ্যমন্ত্রী হন।[৬]
মৃত্যু
[সম্পাদনা]চারুচন্দ্র ভাণ্ডারী ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দের ২৪ জুন পরলোক গমন করেন। তার মৃত্যুর পর ডায়মন্ড হারবারে তার স্মৃতিতে গঠিত হয় চারুচন্দ্র স্মৃতিরক্ষা কমিটি। ডায়মন্ড হারবার শহরের ১৩নম্বর ওয়ার্ডে 'গার্লস্ স্কুল রোড'টি পৌরসভা কর্তৃক 'চারুচন্দ্র ভাণ্ডারী সরণি' নামাঙ্কিত হয়েছে এবং ডায়মন্ড হারবার মেন রোড ও চারুচন্দ্র ভাণ্ডারী সরণির সংযোগস্থলে চারুচন্দ্র ভাণ্ডারীর একটি আবক্ষমূর্তি স্থাপিত হয়েছে।[৬]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬, পৃষ্ঠা ২১৮, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
- ↑ "আচার্য বিনোবা ভাবের জীবনী"। ২০২২-১০-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-১৩।
- ↑ "ডায়মণ্ড হারবারে দেশবরেণ্য চারুচন্দ্র ভান্ডারীর প্রয়াণ দিবস পালন"। ২০২৩-০৫-০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৫-০৭।
- ↑ অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা ২৬৭, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
- ↑ "ধ্বংসের পথে স্বাধীনতা সংগ্রামী চারুচন্দ্রের খাদি মন্দির, সংস্কার চায় হটুগঞ্জ"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-১৪।
- ↑ ক খ "এক সময়ের অর্থনীতির পীঠ স্থান আজ আগাছায় ভর্তি, উঠল সংস্কারের দাবি"। News18 Bengali। ২০২৩-০৬-২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৬-২৫।