চম্পাবতী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

চম্পাবতী[১] একটি অসমীয়া লোককাহিনী। এটি প্রথম কবি লক্ষ্মীনাথ বেজবড়োয়া কর্তৃক বুড়ি আইর সাধু শিরোনামের অসমীয়া লোককাহিনীর সংকলনে যুক্ত হয়েছিল। পণ্ডিত প্রফুল্লদত্ত গোস্বামীর মতে, গল্পটি " উত্তর লখিমপুর" অঞ্চলের লোকগাঁথা।[১]

ভারত এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে এবং ব্রাজিল, আরব/মধ্যপ্রাচ্যে এই লোককথা বিভিন্ন রূপে বিদ্যমান।

সারসংক্ষেপ[সম্পাদনা]

এই গল্পে একজন ব্যাক্তির উল্লেখ আছে যার দুজন স্ত্রী। তাদের মধ্যে যিনি বড় তিনি তার নাম লাগী এবং তিনি তার স্বামীর প্রিয়। ছোটজনের নাম আইলাগী। প্রত্যেক স্ত্রীর একজন কন্যাসন্তান আছে। ছোট স্ত্রীর মেয়ের নাম ছিল চম্পাবতী। একদিন, সেই মেয়ে ধানের ক্ষেতে যায় এবং পাখিদের তাড়ানোর জন্য একটি গান গেয়ে ওঠে। কিন্তু হঠাত এক অজানা পুরুষ কণ্ঠস্বর তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। ঘটনাটি চম্পাবতী তার মাকে বলেন। তার বাবা ঠিক করেন যে কোণ ব্যাক্তি তার মেয়েকে বিয়ে করতে চাইলে তিনি বিবাহে সম্মত দেবেন। তখন তার মেয়েকে বিবাহ করার জন্য একটি সাপের আগমন হয়।

বিবাহের পর সাপ এবং চম্পাবতী একত্র রাত্রিযাপন করে এবং পরের দিন সকালে রত্ন এবং সোনার অলঙ্কারে সজ্জিত হয়ে তার পরিবারের সংএ দেখা করতে আসে। তার বাবা এবং তার সৎ-মা চম্পাবতীর সৌভাগ্যের প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে ওঠে। ইর্ষার বশবর্তী হয়ে তারা জঙ্গলে বন্দী একটি সাপের সাথে তাদের দ্বিতীয় মেয়ের বিবাহের ব্যবস্থা করে। যখন মেয়েটির সাথে সাপটিকে রাখা হয়, তখন সে তার মায়ের কাছে অভিযোগ করে - যে দরজার পিছনে শুনছে - তার শরীরের বিভিন্ন অংশে সুড়সুড়ি দিচ্ছে, যা মা মানে তার সাপের স্বামী তাকে দাম্পত্য পোশাক এবং গহনা দিয়ে সাজিয়েছে।

পরদিন সকালে তারা জানতে পারে যে তাদের দ্বিতীয় মেয়েটি মারা গেছে। তারা দুঃখ এবং ক্রোধেআইলাগী (ছোট স্ত্রী) এবং চম্পাবতীকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করে। কিন্তু তারা কিছু ক্ষতি করার আগেই চম্পাবতীর অজগর স্বামী তাদের গ্রাস করে। অজগর তখন তার স্ত্রী চম্পাবতী এবং তার মাকে ধরে বনের একটি প্রাসাদে নিয়ে যায়। তারা সেখানে একসাথে থাকতে শুরু করে। মা মারা যাওয়ার পর একজন ভিক্ষুক মহিলার সাথে চম্পাবতী দেখা হয়। সেই মহিলা জানায় যে চম্পাবতীর স্বামী সাপের খোলস পরে থাকা একজন ছদ্মবেশী দেবতা। ভিক্ষুক চম্পাবতীকে কোনভাবে সাপের চামড়া পোড়াতে পরামর্শ দেয়। চম্পাবতী ভিক্ষুক মহিলার কথামতো কাজ করে এবং তার স্বামীকে মানবে পরিণত করে।

সেই ভিক্ষুক মহিলা অন্য একদিন আবার আসেন এবং চম্পাবতীকে তার স্বামীর থালা থেকে খাওয়ার পরামর্শ দেন। তার পরামর্শ অনুসরণ করে চম্পাবতী তার স্বামীর থালা থেকে খায়। তারপর সে তার স্বামীর মুখের ভিতর কিছু গ্রাম দেখতে পায়। চম্পাবতী তার স্বামীকে তার মুখস্থিত জগতের দর্শন করাতে বলে। তার অনুরোধে তার স্বামী নদীর কাছে যায় এবং তাকে তার মুখস্থিত বিশ্বের দর্শন করায়। এরপর চম্পাবতীকে তার স্বামী বলে যে সে ছয় বছরের জন্য দূরে চলে যাবে। চম্পাবতীকে অন্য কোনো রাক্ষসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য তার স্বামী তাকে একটি আংটি দেয়। চম্পাবতীর স্বামী চম্পাবতীকে বলেন যে তার মা একজন নরখাদক। তার পছন্দের পাত্রীর সাথে তিনি বিয়ে না করে তার মায়ের ইচ্ছাকে অমান্য করেছিলেন।

চম্পাবতীর স্বামীর আশংকা সত্যি হয় এবং চম্পাবতী বিপদের সম্মুখীন হয়। কিন্তু তাঁর দেওয়া আংটি চম্পাবতীকে রক্ষা করে। ৬ বছর পর চম্পাবতী তার স্বামীর খোঁজ করেন এবং তাকে তার নরখাদক মায়ের বাড়িতে খুজে পান। তার শাশুড়ি চম্পাবতীকে একটি চিঠি দেয়। চম্পাবতীকে তিনি আদেশ দেন অন্য রাক্ষসের কাছে এই চিঠি নিয়ে যাওয়ার জন্য। চিঠিতে চম্পাবতীকে হত্যা করার আদেশ দেওয়া হয়েছিল। তখন চম্পাবতীর স্বামী চম্পাবতীকে বাধা দেয় এবং তার কাছ থেকে চিঠিটি নেয়। তার মানব স্ত্রীকে রক্ষা করার জন্য সে তার নিজের মাকে হত্যা করে।[১][২][৩][৪]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Goswami, P. (১৯৪৭)। "The Cinderella Motif in Assamese Folk-tales": 316। 
  2. Goswami, Praphulladatta. Ballads and Tales of Assam: A Study of the Folklore of Assam. University of Gauhati, Assam, 1960. pp. 91-93.
  3. Das, Jogesh. Folklore of Assam. Folklore of India Series. New Delhi: National Book Trust, 1972. p. 53.
  4. Bezbaroa, Lakshiminath. Grandma's Tales. Translated by Pallavi Barua. Hornbill Productions, 2011. pp. 95-101. আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৯০৪৪২৪-০-৪.