চণ্ডাল
চণ্ডাল একটি সংস্কৃত শব্দ এটি একটি বংশ। চণ্ডাল বংশ স্থাপিত হয় ৮৩১ সালে চণ্ডাল বংশের স্থাপক নান্নুক। চন্ডাল বংশের উত্তরসূরী বর্তমান বাংলায় নমঃশূদ্র নামে পরিচিত।
শ্রেণীকরণ
[সম্পাদনা]বর্ণ হচ্ছে প্রাচীন হিন্দু সমাজে প্রচলিত একটি সামাজিক বিভাজন ব্যবস্থা, যার উৎপত্তি হচ্ছে বেদ। সবচেয়ে প্রাচীন সাহিত্যসূত্র হিসাবে বেদই হচ্ছে মানব-সমাজের বর্ণ ব্যবস্থার উৎস। মূলত ব্রাহ্মণীয় দৃষ্টিভঙ্গির উপর প্রতিষ্ঠিত বর্ণ মতবাদ কোন একটি বিশেষ উপলক্ষে সৃষ্টি করা হয়েছিল যা কার্যত অপরিবর্তিত রয়ে যায়। জাতিগত বিশুদ্ধতা বজায় রাখাই হল বর্ণভেদ ধারণার মূল বিষয়। কর্ম-গুণ অনুযায়ী মনুষ্য সমাজের সকল জাতিকে চারটি ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে যথা- ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র। ঋগবেদের সূক্তের ভাষ্য অনুযায়ী স্বয়ং ব্রহ্মাই চারটি বর্ণের সৃষ্টিকারী। ব্রহ্মার মুখ থেকে ব্রাহ্মণগণ সৃষ্ট হয়েছেন যাদের কাজ পূজা অর্চনা ও ধর্মীয় শিক্ষাদান। বাহু থেকে সৃষ্ট হয়েছেন ক্ষত্রিয়গণ যাদের কাজ দেশরক্ষা ও রাজ্য পরিচালনা করা। ব্রহ্মার উরু থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে বৈশ্যদের, যাদের কাজ ব্যবসা-বাণিজ্য, গো-রক্ষা ও কৃষিকাজ। ব্রহ্মার পা থেকে সৃষ্টি হয়েছে শূদ্রদের যাদের কাজ বাকি তিন বর্ণের মানুষদের সেবা এবং কর্মে সহযোগিতা করা। [৩] এই চার বর্ণের বাইরে আরো একটি বর্ণ আছে। এই পঞ্চম ভাগটি হল অস্পৃশ্য।[৪]
অস্পৃশ্যদের সম্পর্কে দুইটি ধারণা প্রচলিত। একটি ধারণায় বলা হয় যে তারা মূল বসতির বাইরে অবস্থান করত। হয়ত তাদের সেখানে প্রবেশাধিকার ছিল না অথবা তারা খাদ্য সংগ্রহ বা অন্যান্য কারণে পৃথক স্থানে তাদের আবাস গড়ে তুলেছিল। তাদের ভাষা ইন্দো-আর্য ভাষাভাষীদের নিকট বোধগম্য ছিল না। তাদের পেশাকে অত্যন্ত নিচু কাজ হিসাবে গন্য করা হত যেমন, শিকার বা নলখাগড়ার মাদুর প্রস্তুত করা প্রভৃতি। অন্য ধারনায় বলা হয় যে, ইন্দো-গঙ্গা সমতলভূমির নগরীগুলো আকারে বৃদ্ধি পাওয়ায় কিছু প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তৈরী হয় যাদেরকে পরবর্তীতে ভৃত্যশ্রেনীর কাজে নিয়োগ করা হয়। আজকাল অস্পৃশ্যদের বিভিন্ন পেশায় নিয়োগে কোন সামাজিক বাধা নেই।
আধুনিক ভারতে চন্ডাল শব্দটি কোন কিছু নিন্দনীয়, নোংরা বা নীচ বুঝাতে ব্যবহৃত হয়। চন্ডাল বংশের পরাজয়ের পরে তাদেরকে বিভিন্ন কাজে নিযুক্ত করা হয় এবং নিচু জাত বলে আখ্যায়িত করা হয়।
আধুনিক ভারতে চন্ডাল শব্দটির ভুল ব্যাখ্যা করে নিন্দনীয় বা নীচ বুঝাতে ব্যবহৃত হয়। চন্ডাল বংশের পরাজয়ের পর তাদেরকে বিভিন্ন কাজে নিযুক্ত করে, বিদ্যা চর্চা থেকে বঞ্চিত রাখা হয় এবং ১৯১১ সালে নিচু জাত বলে আখ্যায়িত করা হয়। চন্ডাল জাতি বা চন্ডাল বংশ ভারতবর্ষে দীর্ঘদিন রাজ করেছে। চন্ডাল বংশের প্রতিষ্ঠাতা নান্নুক ৮৩১ খ্রিস্টাব্দে স্থাপন করেন। চন্ডাল জাতি মূলত প্রচলিত চতুর বর্ণের বিরোধী ছিলেন। তাই তারাও চতুর বর্ণের বাইরেই অবস্থান করতেন। ভারতবর্ষের ৩৬ রাজপুতদের আধিপত্য বিস্তার ছিল। তাদের মধ্যে একটি চন্ডাল। চন্ডালদের ভারতবর্ষের শাসনকাল প্রায় ৫৬০ বছর। তাদের শাসন অঞ্চল গুজরাট, উত্তরপ্রদশের, মধ্যপ্রদেশ, বিহার, বাঙ্গাল (পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশ)। বর্তমান বাংলায় চন্ডাল জাতি নমঃশূদ্র নামে পরিচিত।
[৫] নমঃশূদ্র জাতির পূর্বপুরুষ গোন্ড জাতির আদিবাসী।
ধর্মাচার
[সম্পাদনা]চন্ডালরা মূলত বৈঞ্চব মতালম্বী হিন্দু। তারা বিষ্ণু, মহাদেব এবং নদীর দেবতার পূজা ইত্যাদি ধর্মীয় আচার পালন করে থাকে। চন্ডালদের মধ্যে ব্রাহ্মণ আছে। তারা বর্ণ ব্রাহ্মণ নামে পরিচিত। তারা চন্ডাল সমাজে পূজা পার্বণ পরিচালনা করেন।[৬]
উনিশ শতকের হিন্দু সন্ন্যাসী, স্বামী বিবেকানন্দ চন্ডালদের প্রতি অত্যন্ত সদয় ছিলেন। তিনি চাইতেন চন্ডালরা ব্রাহ্মণদের মর্যাদায় উন্নীত হোক।
[৭] চন্ডাল একটি বংশ যা চন্ডাল জাতি বলা হয়। চন্ডাল বংশ স্থাপন করেন নান্নুক ৮৩১ খ্রিস্টাব্দে। তাদের রাজত্বকাল ৮৩১ খ্রিস্টাব্দে থেকে ১২১৫ খ্রিস্টাব্দে। তাদের রাজ্যসীমা গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, উত্তর প্রদেশ এবং বাঙাল যেটা বর্তমান বাংলাদেশ আর পশ্চিমবঙ্গ। চন্ডাল বংশের উত্তরসূরিদের কে বর্তমান নমঃশূদ্র বলে আখ্যায়িত করা হয়। নমঃশূদ্র জাতির পূর্বপুরুষ গোন্ড জাতির আদিবাসী।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Viswanath
ইউআরএল=https://books.google.co.in/books?id=EP4YBQAAQBAJ&pg=PA268, Rupa (২০১৪)। The Pariah Problem: Caste, Religion, and the Social in Modern India। Columbia University Press। পৃ. ২৬৮। আইএসবিএন ৯৭৮-০-২৩১১৬-৩০৬-৪।
{{বই উদ্ধৃতি}}:|শেষাংশ=এর 11 নং অবস্থানে line feed character রয়েছে (সাহায্য);|শেষাংশ=প্যারামিটারে সাধারণ নাম রয়েছে (সাহায্য);-এ বহিঃসংযোগ (সাহায্য)উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: সাংখ্যিক নাম: লেখকগণের তালিকা (লিঙ্ক)|শেষাংশ= - ↑ Jha, Ashok Kumar (২০১৩)। Meghadutam। PartridgeIndia। পৃ. ১০১। আইএসবিএন ৯৭৮-১-৪৮২৮৯-৪৯৪-৩।
- ↑ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]/দৈনিক আমার দেশ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩
- ↑ Thapar, Romila (২০০৪)। Early India: From the Origins to AD 1300। University of California Press। পৃ. ৬৩। আইএসবিএন ৯৭৮-০-৫২০২৪-২২৫-৮।
- ↑ Biswas, A. K. (২০০০)। The Namasudras of Bengal: profile of a persecuted people। Blumoon Books। পৃ. viii।
Though he is physically almost practically unknown, save and except in Bengal, calling someone a Chandal is the ultimate insult and humiliation of a Hindu anywhere under the sun.
- ↑ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]/বাংলাপিডিয়া
- ↑ Vivekananda। "Swami Vivekananda on Chandala"। Swami Vivekananda Quotes। ৭ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মার্চ ২০১৪।
8.https://en.m.wikipedia.org/wiki/Chandelas_of_Jejakabhukti চন্ডাল বাংলা শাসন