গ্রেট ইস্টার্ন হোটেল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

গ্রেট ইস্টার্ন হোটেল (আনুষ্ঠানিকভাবে ললিত গ্রেট ইস্টার্ন হোটেল) ভারতের কলকাতা (পূর্বেনাম কলিকাতা) শহরে অবস্থিত ঔপনিবেশিক যুগের একটি হোটেল । হোটেলটি ১৮৪০ কিংবা ১৮৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়; এমন একটি সময়ে যখন কলকাতা, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজধানী এবং ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি শহর ছিলো। শহরটির স্বর্ণালী সময়ে একে "প্রাচ্যের রত্ন" বলে অভিহিত করা হতো, গ্রেট ইস্টার্ন হোটেল অনেক উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গকে শহরটিতে অবস্থান ও পরিদর্শনের জন্য আতিথ্য প্রদান করেছে। ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর, হোটেল তার ব্যবসা অব্যাহত রেখেছিলো কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের নকশাল আন্দোলনের সময় হোটেলটি তার চাহিদা হারাতে থাকে; পরে রাজ্য সরকার এর পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে। ২০০৫ সালে এটি একটি প্রাইভেট কোম্পানির কাছে বিক্রি করা হয় এবং একটি ব্যাপক সংস্কার করার পর ২০১৩ সালের নভেম্বরে পুনরায় চালু করা হয় ।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

ব্রিটিশরাই কলকাতায় সর্বপ্রথম আধুনিক হোটেলের সূচনা করেছিলো। সবচেয়ে পুরাতন হোটেলটি ছিলো জন স্পেন্সেস হোটেল। স্পেন্সেস, এশিয়ায় সর্বপ্রথম এই হোটেলটি ১৮৩০ সালে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। গ্রেট ইস্টার্ন হোটেলটি ১৮৪০ কিংবা ১৮৪১ সালে ডেভিড উইলসন দ্বারা অকল্যান্ড হোটেল নামে প্রতিষ্ঠিত হয়, হোটেলের নামকরণ করা হয় অকল্যান্ডের ১ম আর্ল ইডেনের নামানুসারে, যিনি পরবর্তিতে ভারতের গভর্নর জেনারেল হয়েছিলেন। হোটেলটি খোলার পূর্বে উইলসন একই স্থানে একটি বেকারি চালাতেন। হোটেলটি ১০০ টি কক্ষ এবং নিচতলায় একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোর নিয়ে চালু করা হয় । (স্পেন্সেস হোটেল, ১৮৩০ সালে প্রতিষ্ঠিত কিন্তু এখন আর নেই, যা কলকাতার প্রথম প্রধান হোটেল হিসেবে বিবেচনা করা হয়)।[১] এছাড়াও হোটেল পরিচালনা পরিষদে একজন ভারতীয় দায়িত্বরত আছে এমন ক্ষেত্রেও এটি প্রথম হোটেল, ১৮৫৯ সাল। এটা ১৯১৫ সালে হোটেলটির নামকরণ গ্রেট ইস্টার্ন হোটেল হয় ।[২][৩]

এর স্বর্ণালী দিনগুলোতে হোটেলটি "প্রাচ্যের জুয়েল" এবং "প্রাচ্যের স্যাভয়" হিসেবে পরিচিত ছিল এবং কিপলিং এর ছোটগল্প সিটি অব ড্রেডফুল নাইটে এর বর্ণনা রয়েছে। ১৮৮৩ সালে হোটেলটি সম্পর্কে এটা বলা হতো যে " একজন লোক হোটেলটির একপাশ দিয়ে ঢুকে, সম্পূর্ণ সাজসরঞ্জাম কিনতে পারত, বিয়ের উপহার, অথবা বাগানের জন্য বীজ, ভাল খাবার উপভোগের পর, যদি বারমেইড রাজী থাকত, তবে হোটেলের অপর প্রান্ত দিয়ে বের হয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারত।[৪] হোটেলটি অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিদের আতিথ্য প্রদান করেছিলো যাদের মধ্যে রয়েছে নিকিতা ক্রুশ্চেভ এবং নিকোলাই বুলগানিন, দ্বিতীয় এলিজাবেথ, মার্ক টোয়েন, ডেভ ব্রুবেক এবং হো চি মিন। ২০০৫ সালে এর পুনর্বহালের উদ্দেশ্যে বন্ধ হওয়ার আগে পর্যন্ত, হোটেলটি এশিয়ার দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ক্রমাগত চালু হোটেল ছিলো।[৫]

পশ্চিমবঙ্গের নকশাল যুগের সময় হোটেলেটির অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে এবং ১৯৭০ সাল পর্যন্ত এর এ অবস্থা অব্যাহত থাকে, যে পর্যন্ত না এর ব্যবস্থাপনা রাজ্য সরকার দ্বারা অধিগৃহীত হয় । রাজ্য সরকার ২০০৫ সালে বেসরকারী গ্রুপ দি ললিত হোটেল, প্রাসাদ এবং রিসর্ট এর কাছে হোটেলটি বিক্রি করে।

সংস্কার[সম্পাদনা]

গ্রেট ইস্টার্ন হোটেলে সংস্কারের কাজ চলছে

হোটেলটি, পূর্বে কয়েক বছর বন্ধ ছিলো, হোটেলটিতে ব্যাপক সংস্কার কাজ চলছে, ২০১৩ সালের নভেম্বরে ললিত গ্রেট ইস্টার্ন হোটেল নামে সাময়িকভাবে হোটেলটি চালু হয়। ভবনটি একটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ (বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান) হিসেবে নিবন্ধিত[[৬] হয়েছে এবং সংস্কারের মাধ্যমে হোটেলটির সম্মুখভাগ এবং মূল বৈশিষ্ট্য রক্ষা করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে । হোটেলটিকে তিনটি অংশে বিভক্ত করা হয়েছে- হেরিটেজ(ঐতিহ্য)১, হেরিটেজ(ঐতিহ্য) ২ ও নতুন ব্লক ।[৭]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Denby, Elaine (এপ্রিল ২০০৪)। Grand Hotels: Reality and Illusion। Reaktion। পৃষ্ঠা 197। সংগ্রহের তারিখ ১৮ এপ্রিল ২০১৬ 
  2. Mookerjee, Madhumita; Chaudhuri, Sumanta Ray (২০ নভেম্বর ২০০৫)। "End of an era: Great Eastern changes hands"DNA। সংগ্রহের তারিখ ১৮ এপ্রিল ২০১৬ 
  3. "Great Eastern Hotel History"। cleartrip.com। সংগ্রহের তারিখ ১৮ এপ্রিল ২০১৬ 
  4. Dasgupta, Minakshie; Gupta, Bunny; Chaliha, Aya (মার্চ ১৯৯৫)। Calcutta Cookbook: A Treasury of Recipes from Pavement to Place। Penguin Books। পৃষ্ঠা 158। সংগ্রহের তারিখ ১৮ এপ্রিল ২০১৬ 
  5. Dutta, Indrani (২০ নভেম্বর ২০১২)। "Great Eastern Hotel set for re-launch"The Hindu। সংগ্রহের তারিখ ১৮ এপ্রিল ২০১৬ 
  6. http://whc.unesco.org/en/list/
  7. "Mamata's Ganesha unveils new-look Great Eastern"The Telegraph। ২০ নভেম্বর ২০১৩। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ এপ্রিল ২০১৬