গোলাম আবু জাকারিয়া

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
গোলাম আবু জাকারিয়া
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম (1953-12-30) ৩০ ডিসেম্বর ১৯৫৩ (বয়স ৭০)
নওগাঁ
নাগরিকত্ববাংলাদেশি ও জার্মানি
জাতীয়তাবাংলাদেশী
পিতামাতাবনিজ উদ্দীন প্রামাণিক
রহিমা বেগম
প্রাক্তন শিক্ষার্থীনওগাঁ কে.ডি. সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়
রাজশাহী কলেজ
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়
লাইপ্‌ৎসিশ বিশ্ববিদ্যালয়
হালে-উইটেনবার্গের মার্টিন লুথার বিশ্ববিদ্যালয়
হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়
পুরস্কারফেডারেল ক্রস অব মেরিট
বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি ফেলোশিপ
প্রবাসী লেখক পুরস্কার

গোলাম আবু জাকারিয়া (জন্ম: ৩০ ডিসেম্বর ১৯৫৩) একজন বাংলাদেশি জার্মান চিকিৎসা-পদার্থবিদ। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে দীর্ঘদিন কাজ করার স্বীকৃতি হিসেবে ২০২৪ সালে ২২ মার্চ তাকে জার্মান সরকারের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ফেডারেল ক্রস অব মেরিট (বুন্দেসভারডিয়েনস্টক্রুজ) পদকে ভূষিত করা হয়।[১] [২] সাহিত্যে অবদানের জন্যে ২০১৩ সালে বাংলা একাডেমি থেকে ‘প্রবাসী লেখক পুরস্কার’ ও একই বছর বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি ফেলোশিপ সম্মাননা পান। [৩][৪]

জন্ম ও শিক্ষা জীবন[সম্পাদনা]

গোলাম আবু জাকারিয়া ১৯৫৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর নওগাঁ জেলার ইকরকুড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[৫] তার বাবা বনিজ উদ্দীন প্রামাণিক, মা রহিমা বেগম। পরিবার থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি সংস্কৃতিচর্চা ও পরোপকারী মনোভাব পান। [১]

১৯৬৮ সালে নওগাঁ জেলার কেডি হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯৭০ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ওই বছরেই আহছানউল্লা স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং বর্তমানে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস বিভাগে ভর্তি হন।[১]

১৯৭২ সালে শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে বাংলাদেশ থেকে জার্মানি যান। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার প্রথম বছর যে কয়েকজন শিক্ষার্থী বৃত্তি নিয়ে জার্মানি যান তাদের একজন ছিলেন গোলাম আবু জাকারিয়া। জার্মানির লিপজিগে জার্মান ভাষা শেখার পর হালে-উইটেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যায় ১৯৭৮ সালে স্নাতক ডিগ্রি, ১৯৮০ সালে গটিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিকিৎসা পদার্থবিদ্যায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮৬ সালে জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।[৫][৬][৭]

পদার্থবিদদের উদ্দেশে নোবেলজয়ী মলিকিউলার বায়োলজির জনক ম্যাক্স ডেলব্রুকের একটি বক্তৃতা ‘বিশ্বে দু-দুটো বিশ্বযুদ্ধ হয়েছে। অনেক রক্তারক্তি হয়েছে। পদার্থবিদদের এখন উচিত, পরমাণু বোমা তৈরির কাজ বাদ দিয়ে চিকিৎসা-পদার্থ নিয়ে কাজ করা। অনেক মানুষ এতে উপকৃত হবে।’ জাকারিয়ার মনে গেঁথে যায়। [১]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

জাকারিয়া ১৯৮৬ কোলন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৮৭ সালে তাঁর নেতৃত্বেই কোলন বিশ্ববিদ্যালয়ের গুমার্চবার্গ হাসপাতালে মেডিকেল রেডিয়েশন ফিজিকস বিভাগ চালু করা হয় । তিনি ২০১৯ সালের আগস্টে অবসরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সেই বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[১] এ ছাড়া জার্মানির আনহাল্ট প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লিনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অধ্যাপনা করেন। সাভারে অবস্থিত গণবিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি অধ্যাপক ছিলেন। তিনি ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত জার্মান মেডিক্যাল ফিজিক্স সোসাইটির 'উন্নয়নশীল বিশ্বে চিকিৎসা পদার্থবিদ্যা' নামে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ২০১০ সাল থেকে এ গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[৫]

‘ভাবতে ভালো লাগে, একজন চিকিৎসা-পদার্থবিদ হিসেবে আমি ৫০ হাজারের বেশি রোগীকে সেবা দিতে পেরেছি।’ -গোলাম আবু জাকারিয়া

১৯৮২ সালেই হাইডেলবার্গ শহরে ‘বাংলাদেশ অধ্যয়ন গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা করেন । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বেগম রোকেয়া, কাজী নজরুল ইসলাম এবং বঙ্গবন্ধুর ওপর জার্মান ভাষায় একাধিক বই প্রকাশ করেছেন। এসব সাহিত্যকৃতির অবদান হিসেবে ২০১৩ সালে বাংলা একাডেমি থেকে পেয়েছেন ‘প্রবাসী লেখক পুরস্কার’।[৭]

জাকারিয়া বাংলাদেশে চিকিৎসা-পদার্থবিদ্যা বিষয় চালু করার জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ২০০০ সালে তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে গণ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ‘মেডিকেল ফিজিকস ও বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিভাগ প্রতিষ্ঠা করে। তত্ত্বগত বিষয়ের বাহিরে ব্যবহারিকভাবেও দক্ষ চিকিৎসক তৈরির উদ্দেশ্যেগণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে চুক্তির ব্যবস্থা করে দেন তিনি। ওই চুক্তি অনুযাযী ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৮০ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ প্রদান করে হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়। [১][৮]

জাকারিয়া চিকিৎসা পদার্থবিদ্যা বিষয়ে জার্মান ও ইংরেজি ভাষায় ৭০টিরও বেশি গবেষণামূলক প্রবন্ধ লিখেছেন। [৫]

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. ডেস্ক, জীবনযাপন (২০২৪-০৩-৩০)। "জার্মান সরকারের 'ফেডারেল ক্রস অব মেরিট' পেলেন বাংলাদেশি চিকিৎসা-পদার্থবিদ"Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-০৮ 
  2. "বাংলাদেশি বিজ্ঞানী পেলেন জার্মান সরকারের সর্বোচ্চ পুরস্কার"Bangla Tribune। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-০৮ 
  3. Dhakatimes24.com। "জার্মানিতে সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পেলেন ড. গোলাম আবু জাকারিয়া"Dhakatimes News। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-০৮ 
  4. "জার্মানির সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান পেলেন বাংলাদেশি চিকিৎসা-পদার্থবিদ | Prof. Golam Abu Zakaria" 
  5. "চিকিৎসা পদার্থবিদ ড. জাকারিয়া"কালের কণ্ঠ। ২০১৪-০৪-১২। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-০৮ 
  6. "Prof. Dr. Golam Abu Zakaria – SCMPCR" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-০৮ 
  7. অনলাইন, চ্যানেল আই (২০১৯-০৭-৩১)। "জার্মানিতে ৩৩ বছরের ক্যারিয়ার শেষ করলেন ড. গোলাম আবু জাকারিয়া"চ্যানেল আই অনলাইন (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-০৮ 
  8. "Prof. Dr. Golam Abu Zakaria - Founder Chairman, South Asia Centre for Medical Physics and Cancer Research (SCMPCR) | Prof Golam Abu Zakaria speaks to ecancer at the Global Health Catalyst Summit 2019 at the Dana Farber Cancer Institute in Boston, Massachusetts about his... | By South Asia Centre for Medical Physics and Cancer ResearchFacebook" 
  9. "প্রবাসী ফেলো"বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি। ২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ 
  10. "Golam Abu Zakaria AFOMP Best Young Leadership Award"এফওএমপি.ওর্গ (ইংরেজি ভাষায়)। ২১ অক্টোবর ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ৯ এপ্রিল ২০২৪ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]