গুলবাহার হাতুন (দ্বিতীয় বায়েজীদের স্ত্রী)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(গুলবাহার হাতুন থেকে পুনর্নির্দেশিত)
গুলবাহার হাতুন
ট্রাবজন-এ অবস্থিত গুলবাহার হাতুন মসজিদ-এর অভ্যন্তরস্থ গুলবাহার হাতুন -এর সমাধিসৌধ
জন্মআয়শে[১][২] অথবা
গুল-বাহার বিনত-ই আবদু'স-সামাদ[৩]
আনু. ১৪৫৩
এলবিস্তান, দুলকাদির বেয়লিক
মৃত্যুআনু. ১৫০৫ (বয়স ৫১–৫২) [৪]
ট্রাবজন, উসমানীয় সাম্রাজ্য
সমাধি
গুলবাহার হাতুন মসজিদ, ট্রাবজন
দাম্পত্য সঙ্গীদ্বিতীয় বায়েজীদ
বংশধরপ্রথম সেলিম
পূর্ণ নাম
তুর্কি: Ayşe Gülbahar Hatun
উসমানীয় তুর্কি: عائشه کل بھار خاتون
বাংলা: আয়শে গুলবাহার হাতুন
পিতাআলাউদ্দেভলে বযকুরত বে[২][৫] or
আবদু'স-সামাদ[৬]
ধর্মসুন্নি ইসলাম

গুলবাহার হাতুন (উসমানীয় তুর্কি: کل بهار خاتون; আনু. ১৪৫৩ – আনু. ১৫০৫[৭], আয়শে হাতুন নামেও পরিচিত[৫][৮]) উসমানীয় সাম্রাজ্যের সুলতান দ্বিতীয় বায়েজীদের স্ত্রী এবং সুলতান প্রথম সেলিমের মা এবং সুলতান প্রথম সুলাইমানের দাদী ছিলেন।[৯]

নাম[সম্পাদনা]

জেনাবী হিস্টোরি নামক অতিপ্রাচীন তথ্যসূত্রগুলোর মধ্যে একটি তাকে আয়শে হাতুন নামে অভিহিত করেছে। সিসিল-ই ওসমানী অনুযায়ী তার নাম গুলবাহার হাতুন, অন্যদিকে এন্ডারসনও তাকে আয়শে হাতুন নামে অভিহিত করেছেন। [৪]

উৎপত্তি[সম্পাদনা]

গুলবাহার হাতুন এবং আয়শে হাতুন মোটেও আলাদা নারী ছিলেন না। গুলবাহার হাতুনের বংশোদ্ভভের তত্ত্ব তাকে আয়শে হাতুন থেকে আলাদা হিসেবে চিহ্নিত করে যেহেতু ঊভয়েরই আয়শে নামক অনুরূপ বংশীয় প্রথম নাম ছিল এবং যাদের বিয়েও একই বছর সম্পন্ন হয়েছিল। তার উৎপত্তি সম্পর্কে যেসব তত্ত্ব রয়েছে সেগুলো হল:

  • উসমানীয় লিপি (ওয়াকফিয়ে) তাকে হাতুন বিনতি আবদ-উস-সামেদ (আবদ-উস-সামেদের কন্যা) হিসেবে বিবৃত করে[৬],যা এই অভিমতকে সমর্থন করে যে তিনি একজন অমুসলিম ছিলেন যিনি পরে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হন। আবদ-উস-সামেদএর অর্থ হলো আল্লাহর গোলাম যা বহু বলকান এবং আনাতোলীয় খ্রিস্টানদের ছদ্মনাম হিসেবে প্রয়োগ করা হয়েছিল যারা শীর্ষস্থানীয় উসমানীয় আমলে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছিল।[৭][১০][১১]
তুরস্কের ট্রাবজন এ অবস্থিত ঐতিহাসিক গুলবাহার হাতুন মসজিদের দরবার যেখানে দুলকাদির রাজ্যের আলাউদ্দেভলে বযকুরত বে'র কন্যা আয়শে খাতুন[১২] এর সমাধি অবস্থিত।

উপর্যুক্ত উৎসটি সুলতান দ্বিতীয় মেহমেদের স্ত্রী, সুলতান দ্বিতীয় বায়েজীদের মা এবং সুলতান প্রথম সেলিমের দাদী এমিনে গুলবাহার হাতুন এর বংশোদ্ভবের ক্ষেত্রেও বর্ণিত হয়েছিল। নিম্নে বর্ণিত উৎসটি গুলবাহার খাতুনের বংশোদ্ভব সম্পর্কে সর্বজন গৃহীত উৎস।

  • এই উৎস অনুসারে তিনি কাহরামানমারাশ এর অভ্যন্তরস্থ এলবিস্তান কেন্দ্রিক দুলকাদির রাজ্যের একাদশতম শাসক আলাউদ্দেভলে বযকুরত বে'র কন্যা ছিলেন। তার প্রকৃত নাম ছিল আয়শে[২] এবং বিয়ের পরে তার পুনরায় নামকরণ করা হয় গুলবাহার।[১৩][১৪][যাচাই প্রয়োজন]

তবে, গ্রীক ইতিহাসবিদ কনস্ট্যান্টাইন প্যাপাররিগোপোউলোস এর মতে, গুলবাহার হাতুন ছিলেন মারিয়া নামক একজন পন্টিক গ্রিক বংশোদ্ভূত যিনি মাছকা জেলার লিভেরা গ্রামের একজন ধর্মযাজকের কন্যা।[১৫]

জীবন[সম্পাদনা]

সুলতান বায়েজিদ তাকে ১৪৬৯ সালে আমাসিয়া-তে বিয়ে করেন। যখন গুলবাহার ১৪৭০ সালে শাহজাদা সেলিমের জন্ম দেন বায়েজিদ তখনো একজন শাহজাদা এবং আমাসিয়া সানজাক-এর প্রশাসক ছিলেন।[৭] ১৪৮১ সালে যখন সুলতান দ্বিতীয় মেহমেদ মৃত্যুবরণ করেন তখন বায়েজীদ সিংহাসনে আরোহণের জন্য তার পরিবারসহ উসমানীয় সাম্রাজ্যের রাজধানী কনস্টান্টিনোপল চলে যান।[৭]

তুর্কি ঐতিহ্য অনুসারে, সকল শাহজাদাকেই প্রশিক্ষণের অংশ হিসাবে প্রাদেশিক প্রশাসক (সানজাক-বে) হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।[১৬] শাহজাদাদের মায়েরা প্রাদেশিক পদে তাদের ছেলেদের যথাযথ কার্যক্রমের জন্য দায়বদ্ধ ছিলেন।[১৬] ১৪৯৫ সেলিমকে তেমন সানজাক বে হিসেবে ট্রাবজন সানজাক এবং পরবর্তীতে ১৫১১ সালে সামান্দিরাতে পাঠানো হয় এবং গুলবাহার তার সঙ্গে যান।[৭] যাইহোক, তার জীবদ্দশায় তিনি ভালিদে হাতুন হওয়ার সুযোগ পাননি কারণ তিনি তার পুত্র প্রথম সেলিমের সিংহাসনে আরোহণের পূর্বেই ১৫০৫ সালে মৃত্যুবরণ করেন। ট্রাবজনের গুলবাহার হাতুন মসজিদে তার সমাধিসৌধ অবস্থিত।[১৬] সেলিমের মায়ের প্রতি সম্মান জ্ঞাপন করে এটি ১৫১৪ সালে স্থাপন করা হয় এবং ১৮৮৫ সালে এর সংস্কার করা হয়।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Directorate of Religious Affairs aka Diyanet İslâm Ansiklopedisi: I. Selim, vol: 36, pages: 407.
  2. Necdet Sakaoğlu (২০০৮)। Bu mülkün kadın sultanları: Vâlide sultanlar, hâtunlar, hasekiler, kadınefendiler, sultanefendiler। Oğlak publications। পৃষ্ঠা 136। আইএসবিএন 978-975-329-623-6  (The name of the real biological mother of Yavuz Sultan Selim is given as Âişe Hâtun of the Beylik of Dulkadir in İ. H. Danişmend's İzahlı Osmanlı Tarihi Kronolojisi).
  3. নেচদেত সাকাওগ্লু (২০০৮)। Bu mülkün kadın sultanları: Vâlide sultanlar, hâtunlar, hasekiler, kadınefendiler, sultanefendiler। Oğlak publications। পৃষ্ঠা 136। আইএসবিএন 978-975-329-623-6  (গুলবাহার বিনতে আবদুসসামেদ ছিলেন উসমানীয় সুলতান দ্বিতীয় বায়েজীদ-এর অষ্টম স্ত্রী যাকে তার পুত্র ট্রেবিজন্ড এয়ালেত এর প্রশাসক প্রথম সেলিম এর সাথে যোগ দিতে প্রেরন করা হয়েছিল।)
  4. Necdet Sakaoğlu (২০০৮)। Bu mülkün kadın sultanları: Vâlide sultanlar, hâtunlar, hasekiler, kadınefendiler, sultanefendiler। Oğlak publications। পৃষ্ঠা 135। আইএসবিএন 978-975-329-623-6  (It is disputed if the names of Âisha and Gül-Bahar refers to two different persons, or indicates two different names of the same individual, i.e., the real biological mother of Yavuz Sultan Selim).
  5. Diyanet İslâm Ansiklopedisi, vol: 36, pages: 407–414, 2009 (Âişe Hâtun was the daughter of Alaüddevle Bozkurt Bey)
  6. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; gülbahar নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  7. "Turkey: The Imperial House of Osman"। web.archive.org। মে ২, ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ 
  8. Bahadıroğlu, Yavuz, Resimli Osmanlı Tarihi, Nesil Yayınları (Ottoman History with Illustrations, Nesil Publications), 15th Ed., 2009, page 157, আইএসবিএন ৯৭৮-৯৭৫-২৬৯-২৯৯-২
  9. Ahmed Akgündüz, Said Öztürk (২০১১)। Ottoman History: Misperceptions and Truths। Oxford University Press। আইএসবিএন 978-90-90-26108-9 
  10. "Consorts Of Ottoman Sultans (in Turkish)"। Ottoman Web Page। 
  11. Anthony Dolphin Alderson (১৯৫৬)। The Structure of the Ottoman Dynasty। Clarendon Press। 
  12. Diyanet İslâm Ansiklopedisi: I. Selim, vol: 36, page: 407. (pdf)
  13. *"Yavuz Sultan Selim Han"Republic of Turkey Ministry of Culture and Tourism। ২০১১-০৪-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০২-০৬ 
  14. "Yavuz'un annesi Fatih'in annesi gibiydi"btp.org (Turkish ভাষায়)। ২১ মার্চ ২০১৮। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মে ২০২০ 
  15. লেসলি পি. পিয়ার্স (১৯৯৩)। The Imperial Harem: Women and Sovereignty in the Ottoman Empire। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 106–107। আইএসবিএন 978-0-19-508677-5