বিষয়বস্তুতে চলুন

খনিকর পুঁথি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

খনিকর পুঁথি আসামের গোলাঘাট জেলার মিছামরা মৌজার খনিকর গাঁওয়ে সংরক্ষিত একটি পুঁথি। এই পুঁথি মহাপুরুষ শ্রীমন্ত শংকরদেব এবং শ্রীশ্রী মাধবদেব দ্বারা রচিত কীর্তন-ঘোষা এবং নামঘোষা নামের দুটি সাঁচিপতীয়া পুঁথির সমষ্টি। এই পুঁথিটি প্রায় আড়াইশ বছর পুরানো। লোকবিশ্বাস মতে, পুঁথিটিতে বিভিন্ন আধ্যাত্মিক এবং অলৌকিক শক্তি জড়িত হয়ে আছে।[]

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

খনিকর পুঁথি মহাপুরুষ শ্রীমন্ত শংকরদেব দ্বারা রচিত কীর্তন এবং শ্রীশ্রী মাধবদেবের নামঘোষা নামের দুটি সাঁচিপতীয়া পুঁথির সমষ্টি। খনিকর পুঁথিটি সাঁচিপাতায় প্রাচীন অসমীয়া লিপিতে লেখা। এই পুঁথি দুটি আবিষ্কার হওয়ার সময় থেকেই একসাথে করে একটি কাঠের বাক্সের ভিতর রাখা হয়েছে। কথিত আছে যে, বর্মার আসাম আক্রমণের সময়ে (১৮১৯-১৮২১) খনিকর গাঁও নি‌বাসী নরহরি বরুয়ার বংশের মণি বরুয়া নামের একজন ব্যক্তি এই পুঁথিসমূহ উদ্ধার করেন। সেই সময়ে বর্মার অত্যাচারে গাঁওয়ের অধিকাংশ লোকই বন-জঙ্গলে পালিয়ে গিয়েছিল যদিও মণি বরুয়া বার্ধক্যের জন্য ঘর ছেড়ে যেতে পারেননি। এসময়ে বর্মিরা গাঁওয়ের সকলকে ঘরের সম্পত্তিসমূহ লুঠ করে নিয়ে যায় এবং কোনো কারণে মণি বরুয়ার ঘরের পুকুরের পারে একটি টোপোলা ছেড়ে রেখে যায়। তারপরে বরুয়া টোপোলাটি খুলে তাতে কীর্তন, দশম, নামঘোষা এবং ভক্তি রত্নাবলী নামে চারিটি মহাপুরুষীয়া সাঁচিপাতার পুঁথি উদ্ধার করেন। কিছুদিন পরে তিনি এর দশমটি নিজের গাঁওয়ের নামঘরে এবং ভক্তি রত্না‌বলীটি কাছের হালো‌য়া গাঁওয়ের নামঘরে নিয়ে যান। বাকী থাকা কীর্তন এবং নামঘোষা পুঁথিদুটি নিজের ঘরে সংরক্ষণ করে রাখেন। পুঁথিদুটি রাখতে সেই সময়েে স্থানীয় শিল্পী লীলারাম বরুয়া দুটি কাঠের বাক্স তৈয়ার করে দেন। মণি বরুয়ার মৃত্যুর পরে বংশানুক্রমে তাঁর পরিবার পুঁথিদুটির সংরক্ষণের দায়িত্ব নেয়।[]

নামের উৎপত্তি

[সম্পাদনা]

বর্মার আক্রমণের সময় থেকে বর্তমান পর্যন্ত মণি বরুয়ার খনিকর গাঁওয়েই সংরক্ষিত হয়ে থাকার জন্য এই সংযুক্ত পুঁথিদুটি খনিকর পুঁথি নামে পরিচিত হয়।

বর্ণনা

[সম্পাদনা]

খনিকর পুঁথির অন্তর্গত কীর্তন পুঁথিটির মোট পৃষ্ঠার সংখ্যা হল ১০৫। এই পুঁথির সাঁচিপাতসমূহ দৈর্ঘ্যে ৪৫ সেন্টিমিটার এবং প্রস্থে ১৬ সেন্টিমিটার। নামঘোষাটির মোট পৃষ্ঠার সংখ্যা ৫৩। প্রতিটি পৃষ্ঠার দৈর্ঘ্য ৩৫ সেন্টিমিটার এবং প্রস্থ ১০ সেন্টিমিটার। এটি বেঁধে রাখার জন্য একটি বন্ধনও আছে। দুটি পুঁথির লেখকের নাম উল্লেখ নেই।

খনিকর পুঁথি নামঘর

[সম্পাদনা]

প্রথমে খনিকর গাঁও গুরুগৃহতে ভক্তরা খনিকর পুঁথিটি পূজা অর্চনা করেন। কালক্রমে খনিকর পুঁথির বিষয়ে নাগরিকগণ পরিচিত হওয়ায় তাদের দানে পুঁথিটি থাকা সাধারণ গুরুগৃহটি ২০০০ সালে নামঘর হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। নামঘরটির বাকী থাকা মূল মণিকূটটি আসামের কৃষিমন্ত্রী অতুল বরা ২০১৭ সালে উদ্বোধন করেন।[]

লোকবিশ্বাস

[সম্পাদনা]

প্রথমে দুই-একজন লোক এই পুঁথি নিজ গৃহে পাঠ করতে নিয়ে মনোকামনা সিদ্ধি এবং মানসিক প্রশান্তি লাভ করেন। এবং এভাবে এর অলৌকিক মহিমা নাগরিকগণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে খনিকর নামঘরে প্রতিদিন একাধিক ভক্তর সমাগম হয়। অনেকে পুঁথিটি স্বগৃহে নিয়ে গিয়ে নাম-প্রসঙ্গের মাধ্যমে শ্রবণ-কীর্তন করে। পুঁথিটিকে নিজগৃহে নিতে চাওয়া ভক্তদের চুরীয়া-চাদর ইত্যাদি পরম্পরাগত ভকতীয়া পোশাক পরে বাক্সের সাথে নিজের মাথার উপর বা কাঁধে তুলে নেয়ার নিয়ম আছে।

গ্রন্থপঞ্জি

[সম্পাদনা]
  • তীর্থ নাথ বরুয়া, মিছামরার ঐতিহ্য : ঐতিহাসিক খনিকর পুঁথি, খনিকর গাঁও মিছামরা, খনিকর পুঁথি নামঘর, ২৯ মার্চ ২০১০, পৃষ্ঠা ০৭
  • নারায়ণ বরুয়া, মহিমা মণ্ডিত খনিকর পুঁথি, খনিকর দত্ত অফসেট প্রিন্টারস ঢেকিয়াল গোলাঘাট, ৩০ মার্চ ২০১০, পৃষ্ঠা ০২

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]