কমলানন্দ ভট্টাচার্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কমলানন্দ ভট্টাচার্য
জন্ম(১৮৯৪-০৬-০২)২ জুন ১৮৯৪
মৃত্যু৪ জানুয়ারি ১৯৫১(1951-01-04) (বয়স ৫৬)
পেশানাট্যকার, গীতিকার, শিক্ষক
পরিচিতির কারণনাগা কোঁবর
বাউলী
চিত্রাঙ্গদা

কমলানন্দ ভট্টাচার্য (২ জুন, ১৮৯৪- ৪ জানুয়ারি, ১৯৫১) আসামের একজন নাট্যকার, অভিনেতা, কবি, গীতিকার এবং শিক্ষাবিদ।[১] ১৮৯৪ সালে নগাঁওয়ে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম মহদানন্দ ভট্টাচার্য এবং মাতার নাম রত্নেশ্বরী দেবী। নগাঁও, গুয়াহাটী এবং কলকাতায় শিক্ষা সমাপ্ত করে তিনি শিক্ষক হিসাবে কাজ নেন। সাত বছর কাজ করার পরে তিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং বহুবার কারাবাস করেন। নগাঁও নাট্য মন্দিরের সাথে আজীবন সম্পর্ক রক্ষা করেছিলেন। নাগা কোঁয়র, চিত্রাঙ্গদা, সমাপন ইত্যাদি কয়েকটি নাটক তিনি লিখে গিয়েছেন। এরে কিছু অপ্রকাশিত অবস্থায় ছিল। জেলে থাকয়াকালীন লেখা বহু গান এবং নাটক আন্দোলনের সময় ঘরে তল্লাশী চালানোর সময় নষ্ট হয়। "বাউলী" বইটির জন্য তাঁকে "বাউলী কবি" বলে অভিহিত করা হয়। ১৯৫১ সালে তিনি মৃত্যুররণ করেন।

শিক্ষা[সম্পাদনা]

১৮৯৪ সালের ২ জুনে নগাঁওর আমোলাপট্টিতে কমলানন্দ ভট্টাচার্যের জন্ম হয়েছিল। পরিবারের চারজন ছেলে এবং তিন মেয়ের মধ্যে তিনি জ্যেষ্ঠ ছিলেন। ১৯০৯ সালে তাঁর ১৫ বছর বয়সে পিতৃবিয়োগ হয়। ১৯১১ সালে তিনি মেট্রিক পরীক্ষায় ঊত্তীর্ণ হয়ে ১৯১৪ সালে কটন কলেজ থেকে এফ. এ সম্পূর্ণ করেন। এরপর তিনি কলকাতায় বি এ পড়তে যান। কিন্তু টাকার অভাবে পড়া সম্পূর্ণ করতে না পারায় নগাঁওতে ফিরে আসেন এবং নগাঁও গভর্মেন্ট হাইস্কুলে শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। চাকরি পাওয়ার কিছুদিন পরেই যোরহাটর প্রখ্যাত চা বাগানকর্তা সোমেশ্বর শর্ম্মার নাতনির সাথে তাঁর বিয়ে হয়।

কর্মজীবন এবং স্বাধীনতা সংগ্রাম[সম্পাদনা]

সাত বছর চাকরি করার পরে ১৯২১ সালে তিনি চাকরি থেকে পদত্যাগ করে অসহযোগ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। আন্দোলনে যোগ দিয়ে সরকারী চাকরি ত্যাগ করা তিনিই নগাঁওর প্রথম ব্যক্তি।[২]

এই সময়ে তাঁর একজন ভাই কটন কলেজে আই এস সির বাছাই পরীক্ষা দিয়েছিল এবং অন্য দুজন ইংরাজী স্কুলে পড়ত। এদের তিনি পড়াশুনা থেকে সরিয়ে এনে আন্দোলনে যোগ দেওয়ান। বড় ভাই কেশবানন্দ ভট্টাচার্যের সাথে তিনি দুবার জেল খাটেন। জেল থেকে ফিরে এসে তিনি বাণিজ্যে হাত দেন এবং ছোট ভাই দুজনকে পুনরায় স্কুলে ভর্তি করান। ব্যবসায় ভাল না চলায় বাড়িতে পড়ি পি এল পাস করে এবং নগাঁওয়ে ওকালতি আরম্ভ করেন। এরপরো তিনি ছিলেট, তেজপুর ইত্যাদি স্থানে কারাবাস করেছিলেন। ১৯৪২ সালের আগষ্টে তিনি নগাঁও জেলা কংগ্রেস কমিটির সম্পাদকের ভার নিয়েছিলেন। ভারত স্বাধীনতা লাভের পরে সরকার তাঁকে প্রচার বিভাগে একটি চাকরি দিয়েছিল যদিও কিছুদিন পরে সেই বিভাগ বন্ধ হয়।

সাংস্কৃতিক অবদান[সম্পাদনা]

কম বয়স থেকে কমলানন্দ ভট্টাচার্যই নগাঁও নাট্য মন্দিরের জন্য ইংরাজী এবং বাংলা নাটক অনুবাদ করেছিলেন। তার পরে তিনি নিজে নাটক এবং গীত লিখতে থাকেন। অভিনয়ের ক্ষেত্রেও তিনি অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন। সাংস্কৃতিক কাজে ব্যস্ত থাকার সময় কবি রত্নকান্ত বরকাকতির সাথে তাঁর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে এবং সেই সূত্রেই অসমীয়া ভাষা উন্নতি সাধিনী সভার অধিবেশনে ভট্টাচার্য নিজের দলের সাথে সঙ্গীত পরিবেশন করেছিলেন। তিনি দুশোরও অধিক গীত রচনা করেছিলেন।[২] ১৯২৭ সালে ভাই কেশবানন্দের মৃত্যুর পরে স্মৃতি রক্ষার্থে তিনি গীত সংকলন "বাউলী" প্রকাশ করেন। এরপর তিনি "নাগা কোঁবর" (১৯৩৬), "অবসান" (১৯৩৬), "চিত্রাঙ্গদা" (১৯৫৬), "সাবিত্রী" (১৯৫৬), "খরিভারীর রাজ্যলাভ", "মরাণ জীয়রী", "সৈরিন্ধ্রী", , ইত্যাদি নাটক লেখেন।[৩] HMV কোম্পানীর আগ্রহে তিনি "বব্রুবাহন" নাটক লেখেন এবং তা নগাঁওর কয়েকজন শিল্পীর সাথে কলকাতায় রেকর্ড করেন। সিলেট্‌ জেলে আবদ্ধ থাকার সময় তিনি "যুগল মিলন" নামের একটি নাট এবং অনেক গান রচনা করেছিলেন। ১৯৪৩ সালে তেজপুর জেলে থাকার সময় তিনি "বিয়াল্লিছর ছহীদ" এবং "নাবরীয়ার সুর" বলে গানের কিতাপ লেখেন।[৩]

ঐতিহ্য[সম্পাদনা]

"বাউলী" বইয়ের অবিস্মরণীয় গীতসমূহের জন্য কমলানন্দ ভট্টাচার্যকে "বাউলী কবি" বলে অভিহিত করা হয়। পুত্র বিবেকানন্দ ভট্টাচার্যের প্রচেষ্টায় তাঁর রচনাবলী প্রকাশ হওয়ার সাথে দুটি শ্রাব্য রেকর্ড মুক্তি পায়।[২] শ্রীমন্ত শংকরদেব কলাক্ষেত্র ২০০৬ সাল থেকে নিয়মিত ভট্টাচার্যের গীতের কর্মশালা অনুষ্ঠিত করে আসছে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. দত্ত, অমরেশ (সম্পাদনা) (১৯৮৭)। "Encyclopaedia of Indian Literature: A-Devo, Volume 1"। সাহিত্য একাডেমী। পৃষ্ঠা ৪৮৫। সংগ্রহের তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ 
  2. চিন্ময় চক্রবর্তী (৩ জানুয়ারি ২০০৯)। "Kamalanand Bhattacharyya's 57th death anniversary"। আসাম টাইমস। সংগ্রহের তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ 
  3. লেখক পরিচিতি- নাগা কোঁবর। শিলং: চপলা সাহিত্য সদন। ১৯৫৫। পৃষ্ঠা ২২০–২২৩।