কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়
কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় | |
---|---|
অবস্থান | |
তথ্য | |
বিদ্যালয়ের ধরন | সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় |
নীতিবাক্য | "Better School Make A Better Nation" "মানসম্পন্ন বিদ্যালয়, মানসম্পন্ন জাতি তৈরী করে" |
প্রতিষ্ঠাকাল | ১৮৭৪ |
ইআইআইএন | ১০৬২৬৩ |
অনুষদ | বিজ্ঞান ও ব্যাবসায় শিক্ষা |
শ্রেণি | ৬ষ্ঠ থেকে ১০ শ্রেণী পর্যন্ত |
শিক্ষায়তন | ২৩ একর |
ডাকনাম | কসউবি |
কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় বাংলাদেশের, চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার শহরের একটি শিক্ষা
বিদ্যালয়ের ইতিহাস
[সম্পাদনা]কখন, কীভাবে এবং কোন তারিখেি এই প্রতিষ্ঠানের সূচনা হয়েছিল তার সঠিক দিন-তারিখ পাওয়া যায় না। সময়ের আবর্তনে প্রাচীন সব নথিপত্র পাওয়া যাচ্ছে না। তবে একথা সর্বজন স্বীকৃত যে, ১৮৭৪ সালে এখানে প্রতিষ্ঠানটির সূচনা হয়েছিল। বিদ্যালয়ের রেকর্ডপত্রে এ সালটি পাওয়া যায়। প্রাচীন ব্যক্তিবর্গের জবানী এবং বিদ্যালয়ের পরিদর্শন বুকের পরিদর্শকের মন্তব্য থেকে জানা যায় যে, সূচনালগ্নে এটি মাদ্রাসা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রায় ৩০ বছরাধিক মাদ্রাসা শিক্ষাঙ্গন থাকার পর ক্রমে ইংরেজ শাসনের প্রভাব ও বাংলা চর্চার অগ্রগতি হলে স্থানীয়ভাবেও রেনেসাঁর প্রভাব পড়ে। ক্রমে জনগণ বাংলা ও ইংরেজি শিক্ষার দিকে আগ্রহী হন। তাই স্থানীয় জনগনের আগ্রহে ও তৎকালীন সরকারি প্রভাবে মাদ্রাসার নাম পরিবর্তন করে ১৯০৮ সালের দিকে Middle English School নামকরণ করে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা হয়। মিডল ইংরেজি বিদ্যালয়ে প্রাইমারি থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা, ইংরেজি, উর্দু, ফারসি, পালি, সংস্কৃত ইত্যাদি বিষয়ের উপরও শিক্ষাদান করা হত।
ক্রমে শিক্ষা-দীক্ষার প্রসার ও আধুনিক শিক্ষার ছোঁয়াইয়ে বিদ্যালয়ের ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধি এবং বিদ্যালয়ের সার্বিক অবকাঠামোর উন্নয়ন হতে থাকে। তাই মডেল ইংরেজি বিদ্যালয়কে একটি পূর্ণাঙ্গ উচ্চবিদ্যালয়ে রূপদানের জন্য স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ এবং কমিটির সদস্যবৃন্দ সক্রিয় হন। ক্রমে দাবী সরকারের নিকট পৌঁছালে ১৯২৩ সালের ২৬ শে ডিসেম্বর তৎকালীন বিদ্যালয় পরিদর্শক জনাব আহসান উল্লাহ কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে বিদ্যালয় পরিদর্শনে আসেন। বিদ্যালয়ের Visitor’s Book’-এর ৯ পৃষ্ঠায় তাঁর দীর্ঘ মন্তব্য রয়েছে। তাঁর রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তীতে M.E.স্কুলকে H.E স্কুল হিসেবে স্বীকৃতি এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক Matriculation পরীক্ষা দেয়ার অনুমতি পাওয়া যায়।
Higher English School প্রতিষ্ঠা: উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৯২৩ সালের ৪ঠা জানুয়ারি। তৎকালীন S.D.O.Mv. A.WHarris স্কুলের দ্বারোদঘাটন করেছিলেন। সেদিন থেকে M.E স্কুলের নাম পরিবর্তন হয়ে H.E স্কুলে পরিণত হয়। Visitor’s Book-এর ২য় পৃষ্ঠায় এ সংক্রান্ত তথ্য রয়েছে। [১]
বিদ্যালয়ের অবকাঠামো
[সম্পাদনা]প্রতিষ্ঠাকালে বিদ্যালয়ে ৩টি দালান ছিল বলে জানা যায়। ৩টি দালানে ১১টি শ্রেণি কক্ষ, ১টি প্রধানশিক্ষক কক্ষ, ১টি পাঠাগার এবং শিক্ষকদের জন্য ১টি কক্ষ বরাদ্ধ ছিল। বর্তমানে পাঁচটি একাডেমিক ভবন রয়েছে। শহিদ শাহ আলম-বশীর মিলনায়তন নামের একটি বড় মিলনায়তন রয়েছে। পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, কৃষিবিজ্ঞান, কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং জীববিদ্যার জন্য ল্যাব রয়েছে। এই ল্যাবগুলি প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি দিয়ে সজ্জিত যা মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্তরের সমস্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয়। এখানে প্রধানশিক্ষকের বাসস্থান আছে। এছাড়াও রয়েছে একটি মসজিদ, একটি ক্যান্টিন ও একটি বড় খেলার মাঠ আছে।[১]
জাতীয়করণ
[সম্পাদনা]বিদ্যালয়ের রেকর্ডপত্র অনুযায়ী জানা যায়, ১৯৭০ সালে এটি বেসরকারি থেকে জাতীয়করণ করা হয়। তখন বিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয় কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। ৬.১৫ একর ভূমিতে জাতীয়করণকৃত বিদ্যালয়ের ক্রমে উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে। ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে নির্দিষ্ট সংখ্যক ছাত্র ভর্তি করাতে হয়। বর্তমানে ছাত্ররা বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষার দিকে অত্যধিক ঝুকে পড়েছে। ফলে বর্তমানে এ স্কুলে মানবিক শাখা নেই। বর্তমানে দুই শিফট চালু হওয়ায় ছাত্র ও শিক্ষক সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।[১]
পাঠাগার
[সম্পাদনা]বিদ্যালয়ে রয়েছে একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার। গ্রন্থাগারটি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র-এর সঙ্গে যুক্ত। প্রাচীন ইতিহাস, ঐতিহ্য, ধর্মীয় পুস্তক, প্রাচীন ভৌগোলিক জ্ঞানের বই, ইংলিশ মিডিয়ামের প্রাচীন সকল বিষয়ের বই, উপন্যাস, রবীন্দ্র-নজরুল রচনাবলিসহ প্রচুর পুস্তক ভান্ডারে পূর্ণ এ পাঠাগার। অধিকন্তু রামু হাইস্কুলের প্রদত্ত প্রাচীন পুস্তকসহ বর্তমানে প্রায় ৮ হাজারাধিক পুস্তক রয়েছে।[১]
হোস্টেল ব্যবস্থাপনা
[সম্পাদনা]জেলাব্যাপী শিক্ষা সম্প্রসারণের জন্যে বিদ্যালয়ে হোস্টেলের ব্যবস্থা করেছিল। সকল ধর্মের ছাত্রদের লেখাপড়ার ও থাকার ব্যবস্থার জন্যে মোহামেডান হোস্টেল, হিন্দু হোস্টেল ও বৌদ্ধ হোস্টেলের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। স্কুলে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের ছাত্ররা হোস্টেলে অবস্থান করে লেখাপড়ার সুযোগ পেয়েছিল। এটা তৎকালীন কমিটির দূরদর্শিতার বহি:প্রকাশ। বহুবৎসর এ হোস্টেল ব্যবস্থা চালু ছিল। পরবর্তীতে বিলুপ্ত হলেও বর্তমানে অর্থাৎ ২০০৮-০৯ সাল থেকে আবার সীমিত আকারে সাধারণ হোস্টেল চালু আছে।[১]
বিদ্যালয় ও এর পরিবেশ
[সম্পাদনা]সাগর সৈকত গিরি-পর্বত নির্ঝরিণী সিঞ্চিত ও মনোরম প্রাকৃতিক রম্য-হর্ম্যে ভরপুর কক্সবাজার। কক্সবাজার সু-প্রাচীন কালের নৈসর্গিক তথা অপার সমুদ্র তটের বিচিত্র সম্পদ ভান্ডারের ঢালি নিয়ে সবাইকে বিমোহিত ও স্তম্ভিত করে আসছে। বিশ্বের দীর্ঘতম এ সৈকত তটের মনি কৌঠায় অবস্থিত বর্তমান এ কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। সূচনালগ্নে প্রতিষ্ঠাতাগণ সুদূর ভবিষ্যতের কথা ভেবে অত্যন্ত সুন্দর ও মনোরম সমতল স্থান তথা কক্সবাজার পৌরসভার নাভিতটে প্রতিষ্ঠানটি স্থাপন করেছিলেন। স্থানটি সেদিন চতুর্দিক জঙ্গলাকীর্ণ ছিল বটে, যোগাযোগের ও জ্ঞান সাধনার জন্য ছিল অপূর্ব। বিশাল এলাকা নিয়ে বিদ্যালয়টি যাত্রা করে ক্রমে এর কর্মশক্তি দেশব্যাপী বিধৃত। কয়েকবার জেলার সর্বশ্রেষ্ঠ বিদ্যালয়ের স্বীকৃতি লাভ এবং সর্বাধিক সুনাম-সুখ্যাতিতে বিদ্যালয়ের গৌরব গাঁথা কিংবদন্তি হয়ে সকলকে বিমোহিত করে আসছে।[১] উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৯২৩ সালের ৪ঠা জানুয়ারি।
কৃতি ছাত্র
[সম্পাদনা]- নির্মল লালা- সূর্য সেনের সহযোগী বিপ্লবী।
- মুহাম্মদ আবদুর রশিদ সিদ্দিকী- কবি, সাংবাদিক রাজনীতিবিদ
- বীর উত্তম মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ- সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা।
- সালামত উল্লাহ-আইনজীবী, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]১. https://ssc99coxsbazar.com/%E0
গ্যালারি
[সম্পাদনা]-
শহীদ মিনার
-
মসজিদ
-
মাঠ ও মাঠের কোণে ছাত্রাবাস
-
প্রশাসনিক ভবনের সামনে ছাত্ররা (২০১০ এসএসসি ফল প্রকাশের দিন)