বিষয়বস্তুতে চলুন

ওয়াকফ সংশোধনী বিল, ২০২৪

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৪ থেকে পুনর্নির্দেশিত)

ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৪ ভারতীয় লোক সভায় ৮ই আগস্ট ২০২৪ সালে পেশ করা হয়[][][]। এই বিলে ১৯২৩ সালের মুসলমান ওয়াকফ আইন বাতিল এবং ১৯৯৫ সালের ওয়াকফ আইন সংশোধন করার প্রস্তাব করা হয়েছে[]। এই আইনের অধীনে ওয়াকফকৃত সম্পত্তি পরিচালিত হয়, যেখানে ওয়াকফের সঙ্গা নির্ধারণ করা হয়েছে ধর্মীয় বা জনহিতকর কাজের জন্য মুসলিম আইন অনুসারে দানকৃত স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি । ওয়াকফ ব্যাবস্থাপনা করার জন্যে প্রতিটি রাজ্যেই ওয়াকফ বোর্ড গঠন করা হয়। বিলটিতে পুরাতন আইনের ৪৪টি সংশোধন আনার এবং সংশোধিত আইনের নাম ‘একীভূত ওয়াকফ ব্যবস্থাপনা, ক্ষমতায়ন, দক্ষতা এবং উন্নয়ন আইন, ১৯৯৫’ রাখার প্রস্তাব করা হয়।

পর্যালোচনা

[সম্পাদনা]
  • ওয়াকফের গঠন: আইন অনুযায়ী ওয়াকফ করা যেতে পারে: (১) ঘোষণা দ্বারা, (২) দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারের ভিত্তিতে স্বীকৃতি (ব্যবহারকারী দ্বারা ওয়াকফ), অথবা (৩) উত্তরাধিকারীর অভাবে প্রদান (ওয়াকফ-আলাল-আউলাদ)। বিলটিতে উল্লেখ আছে যে শুধুমাত্র পাঁচ বছর ধরে ইসলাম পালনকারী ব্যক্তি ওয়াকফ ঘোষণা করতে পারবে। এতে বলা হয়েছে যে ঘোষণাকারীকে সম্পত্তির মালিক হতে হবে। এটি ব্যবহারকারী দ্বারা ওয়াকফকে বৈধতা দান করে না এবং ওয়াকফ-আলাল-আউলাদ কেবল তখনই হবে যদি দাতার উত্তরাধিকারী, বিশেষ করে নারী, উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়।
  • সরকারি সম্পত্তি ওয়াকফ হিসেবে: বিল অনুযায়ী, কোনো সরকারি সম্পত্তি যদি ওয়াকফ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় তবে তা ওয়াকফ হিসেবে ধরা হবে না। এলাকার কালেক্টর মালিকানা নির্ধারণ করবেন এবং রাজ্য সরকারকে প্রতিবেদন জমা দেবেন। সরকারি সম্পত্তি হলে রাজস্ব রেকর্ড হালনাগাদ করা হবে।
  • সম্পত্তি ওয়াকফ কিনা নির্ধারণের ক্ষমতা: আইন ওয়াকফ বোর্ডকে সম্পত্তি ওয়াকফ কিনা তা নির্ধারণের ক্ষমতা প্রদান করে। বিলে এই বিধান সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
  • ওয়াকফের জরিপ: আইনানুগভাবে ওয়াকফের জরিপ করার জন্য সার্ভে কমিশনার এবং অতিরিক্ত কমিশনার নিয়োগের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রস্তাবিত বিল অনুযায়ী কালেক্টর জরিপের দায়িত্বে থাকবে এবং চলমান জরিপগুলি রাজ্য রাজস্ব আইন অনুযায়ী সম্পন্ন করবে।
  • সেন্ট্রাল ওয়াকফ কাউন্সিল: আইন অনুযায়ী কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকার এবং ওয়াকফ বোর্ডকে পরামর্শ দিতে সেন্ট্রাল ওয়াকফ কাউন্সিল গঠন করে। এই কাউন্সিলের সভাপতি, কেন্দ্রীয় ওয়াকফ মন্ত্রীর অভিভাবক পদ। আইন অনুযায়ী, কাউন্সিলের সকল সদস্য মুসলিম হতে হবে এবং অন্তত দুজন মহিলা সদস্য থাকতে হবে। বিলটিতে প্রস্তাব করা হয় দুইজন অমুসলিম সদস্য থাকবে এবং সংসদ সদস্য, প্রাক্তন বিচারক এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিরা কাউন্সিলে মুসলিম না হলেও চলবে। মুসলিম সদস্যদের মধ্যে: (১) মুসলিম সংগঠনের প্রতিনিধিরা, (২) ইসলামী আইন বিষয়ক পণ্ডিতরা (মুফতি), এবং (৩) ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারপার্সনরা মুসলিম হতে হবে। মুসলিম সদস্যদের মধ্যে অন্তত দুইজন নারী থাকতে হবে।
  • ওয়াকফ বোর্ড: আইনে রাজ্য থেকে সংসদ সদস্য,বিধায়ক এবং বার কাউন্সিল সদস্যদের থেকে দুইজন সদস্য নির্বাচন করার বিধান রয়েছে । বিলটি এর পরিবর্তে রাজ্য সরকারকে এসব ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে একজন করে সদস্য নিয়োগ করার ক্ষমতা প্রদান করে এবং তারা মুসলিম না হলেও চলবে । বোর্ডে: (১) দুইজন অমুসলিম সদস্য, (২) শিয়া, সুন্নি, এবং মুসলিম অনগ্রসর শ্রেণী থেকে অন্তত একজন করে সদস্য থাকতে হবে। যদি রাজ্যে বোরা এবং আগাখানি সম্প্রদায়ের ওয়াকফ থাকে তবে তাদের থেকেও একজন করে সদস্য থাকতে হবে। আইন অনুযায়ী, বোর্ডে অন্তত দুটি নারী সদস্য থাকতে হবে। বিলটি বলে যে বোর্ডে দুই মুসলিম সদস্য নারী হতে হবে।
  • ট্রাইবুনাল গঠনের রূপরেখা: আইনে রাজ্যগুলিকে ওয়াকফ নিয়ে বিরোধের মিমাংসার জন্য ট্রাইবুনাল গঠন করতে বলে। ট্রাইবুনালের চেয়ারম্যান হতে হবে ক্লাস-১,জেলা, সেশন, অথবা সিভিল জজের সমতুল্য র‌্যাংকের বিচারক। অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে: (১) অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সমান রাজ্য কর্মকর্তার, এবং (২) মুসলিম আইন এবং বিচারব্যবস্থা বিষয়ক জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি। বিলটিতে দ্বিতীয় সদস্যের পরিবর্তে চেয়ারম্যানকে বর্তমান বা প্রাক্তন জেলা আদালতের বিচারক, এবং একজন বর্তমান বা প্রাক্তন রাজ্য সরকারের যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
  • ট্রাইবুনালের আদেশের উপর আপিল: আইন অনুযায়ী, ট্রাইবুনালের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত এবং এর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে আপিল নিষিদ্ধ। উচ্চ আদালত নিজে থেকে, বোর্ডের আবেদন অথবা ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষের আবেদনে বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে। বিলটি ট্রাইবুনালের সিদ্ধান্তকে চূড়ান্ত মনে করার বিধান মুছে দিয়েছে এবং ট্রাইবুনালের আদেশ উচ্চ আদালতে ৯০ দিনের মধ্যে আপিল করা যাবে।
  • কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা: বিলটি কেন্দ্রীয় সরকারকে ওয়াকফের নিবন্ধন, হিসাব প্রকাশ, এবং ওয়াকফ বোর্ডের কার্যবিধি প্রকাশ বিষয়ে নিয়ম তৈরির আইনি ক্ষমতা প্রদান করে। আইন অনুযায়ী, রাজ্য সরকার যেকোনো সময় ওয়াকফের হিসাব নিরীক্ষণ করতে পারে। বিলটি কেন্দ্রীয় সরকারকে সি.এ.জি বা নির্ধারিত কর্মকর্তার মাধ্যমে এই হিসাব নিরীক্ষণের ক্ষমতা প্রদান করে।
  • বোহরা এবং আগাখানি ওয়াকফ বোর্ড: আইন শিয়া ওয়াকফ যদি রাজ্যে সব ওয়াকফ সম্পত্তি বা ওয়াকফ আয়-এর ১৫% থেকে বেশি হয় তবে পৃথক ওয়াকফ বোর্ড গঠনের অনুমতি দেয়। বিলটি আঘাখানি এবং বোহরা সম্প্রদায়গুলির জন্যও পৃথক ওয়াকফ বোর্ড প্রতিষ্ঠার অনুমতি প্রদান করে ।

যৌথ সংসদীয় কমিটি

[সম্পাদনা]

ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৪ পর্যালোচনা করার জন্য ৩১-সদস্যের একটি যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি) গঠন করা হয়েছে। [] কমিটিটিতে লোক সভার ২১ জন সদস্য এবং রাজ্যসভার ১০ জন সদস্য রয়েছে। ৯ আগস্ট ২০২৪ তারিখে কেন্দ্রীয় সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন।[]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Centre introduces Waqf Amendment Bill 2024: What is the bill about, key features and more"Business Today। ৮ আগস্ট ২০২৪। 
  2. "Waqf Act Amendment Bill: NDA allies JD(U) and TDP support Waqf Bill for transparency, not interference with mosques, in Lok Sabha."The Hindu। ৮ আগস্ট ২০২৪। 
  3. Bureau, The Hindu (৮ আগস্ট ২০২৪)। "Waqf Bill referred to joint parliamentary panel after Opposition calls it 'draconian' and an attack on the Constitution"The Hindu 
  4. "Government introduces bill to repeal Mussalman Wakf Act, 1923"ANI News। ২০২৪-০৮-০৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-০৯ 
  5. "21 Lok Sabha MPs on Waqf bill panel, here's who is on it"India Today। ৯ আগস্ট ২০২৪। 
  6. "Waqf (Amendment) Bill: Lok Sabha adopts motion naming 21 members for joint panel on Waqf Bill; will have 10 MPs from Rajya Sabha"The Hindu। ৯ আগস্ট ২০২৪।