এডভার্ড মুঙ্খ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
এডভার্ড মুংখ
এডভার্ড মুংখ, তারিখবিহীন আলোকচিত্র
জাতীয়তানরওয়েজীয়
পরিচিতির কারণরংচিত্র অঙ্কন ও চিত্রলেখশিল্পী
উল্লেখযোগ্য কর্ম
আন্দোলনঅভিব্যক্তিবাদ, প্রতীকীবাদ

এডভার্ড মুংখ (নরওয়েজীয়: [ˈɛ̀dvɑɖ ˈmʊŋk] (শুনুন); ১২ই ডিসেম্বর ১৮৬৩ – ২৩শে জানুয়ারি ১৯৪৪) একজন নরওয়েজীয় ইউরোপীয় চিত্রশিল্পী। তিনি নরওয়ের অসলো (তৎকালীন ক্রিস্টিয়ানিয়া) শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁকে অভিব্যক্তিবাদী শিল্পকলার একজন অগ্রদূত বলা হয়ে থাকে। তাঁর সবচেয়ে পরিচিত চিত্রকর্মটি হলো স্ক্রিক, যার অর্থ "আর্তনাদ"। এই চিত্রকর্মটি পাশ্চাত্য শিল্পকলার সবচেয়ে সুপরিচিত চিত্রগুলির একটি।

শৈশবে তিনি অসুস্থতা, শোক ও বংশগত মানসিক রোগের ভীতিতে আচ্ছন্ন ছিলেন। তিনি অসলো শহরে (তৎকালীন ক্রিস্টিয়ানিয়া) নরওয়েজীয় জাতীয় চারুকলা অ্যাকাডেমিতে পড়াশোনা করেন। নাস্তিবাদী হান্স ইয়েগারের প্রভাবে তিনি বোহেমীয় ছন্নছাড়া ভবঘুরে জীবনযাপন করা শুরু করেন। ইয়েগার মুংখকে তাঁর নিজস্ব আবেগ-অনুভূতি ও মানসিক অবস্থা চিত্রকর্মে তুলে ধরতে তাগিদ দেন (যাকে তিনি নাম দিয়েছিলেন আত্মার চিত্রকর্ম)। এখান থেকেই মুংখের স্বতন্ত্র শৈলী গড়ে ওঠে। ভ্রমণের সুবাদে মুংখের উপর আরও অন্যান্য প্রভাব পড়ে এবং তাঁর শিল্পীসত্তার প্রকাশস্থলের সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়। প্যারিস শহরে এসে তিনি পোল গোগাঁ, ভিনসেন্ট ভান গখ ও অঁরি দ তুলুজ-ল্যত্রেকের কাছ থেকে অনেক শেখেন। বিশেষ করে রঙের ব্যবহার সম্পর্কে শিক্ষালাভ করেন। বার্লিন শহরে তিনি সুয়েডীয় নাট্যকার আউগুস্ট ষ্ট্রিন্ডবের্গের সাথে সাক্ষাৎ করে তার একটি প্রতিকৃতি অঙ্কন করেন। এই সাক্ষাতের পরে তিনি ধারাবাহিকভাবে কতগুলি চিত্রকর্ম আঁকেন, যেগুলির তিনি নাম দেন জীবনদেয়ালের কারুকাজ। এগুলিতে তিনি প্রেম, উদ্বেগ, ঈর্ষা ও বিশ্বাসঘাতকতার মতো গভীরভাবে অনুভূত বিষয়গুলিকে উপজীব্য করে আবহসৃষ্টিকারী চিত্র আঁকেন।

আর্তনাদ বা স্ক্রিক ছিল ক্রিস্টিয়ানিয়া শহরে (বর্তমান অসলো) থাকাকালীন সময়ে আঁকা চিত্র। মুংখের ভাষ্য অনুযায়ী তিনি একদিন সূর্যাস্তের সময় বাইরে হাঁটতে গিয়েছিলেন, যখন তিনি "প্রকৃতির এক বিশাল, অন্তহীন আর্তনাদ শুনতে পান"। চিত্রকর্মটির ব্যক্তিটির যন্ত্রণাকাতর মুখকে আধুনিক মানবের মনের ভেতরের "আতঙ্কের" বহিঃপ্রকাশ হিসেবে গণ্য করা হয়। ১৮৯৩ থেকে ১৯১০ সালের মধ্যে তিনি চিত্রটির দুইটি রঙে আঁকা সংস্করণ ও দুইটি প্যাস্টেলে আঁকা সংস্করণ তৈরি করেন। একটি প্যাস্টেল সংস্করণ একটি নিলামে ইতিহাসের চতুর্থ সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হয়।

রঙ-ফলকসহ আত্মপ্রতিকৃতি (১৯২৬)। বর্তমানে ক্লার্ক আর্ট ইনস্টিটিউটে প্রদর্শিত।

খ্যাতি ও সম্পত্তি লাভের পরেও মুংখের আবেগিক অস্থিরতা দূর হয়নি। তিনি এক পর্যায়ে বিয়ের কথা ভাবলেও পরে পিছিয়ে আসেন। ১৯০৮ মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার পরে তিনি অতিরিক্ত মদ্যপান পরিহার করেন। ক্রিস্তিয়ানিয়ার মানুষের সমাদর ও সেখানকার জাদুঘরগুলিতে তাঁর চিত্রকর্মগুলির প্রদর্শনী তাঁকে উৎফুল্ল করে তোলে। জীবনের শেষ বছরগুলি তিনি শান্তিতে ও একান্ত গোপনীয়তায় অতিবাহিত করেন। নাৎসিদের দখলে থাকা ইউরোপে তাঁর শিল্পকর্ম নিষিদ্ধ করা হলেও এগুলির সিংহভাগই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় টিকে ছিল। ফলে তাঁর শিল্পের সুদূরপ্রসারী প্রভাব নিশ্চিত হয়।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]