উম্মে হানি বিনতে আবি তালিব
উম্মে হানি বিনতে আবি তালিব (আরবি فاختة بنت أبي طالب) হযরত মুহাম্মাদ সাঃ এর চাচাত বোন ছিলেন। উম্মে হানি আবু তালিবের কন্যা ছিলেন।[১] তিনি একজন হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবা ছিলেন।
নাম ও বংশ পরিচয়
[সম্পাদনা]উম্মে হানি বিনতে আবি তালিব এর আসল ছিলো ফাখিতা মতান্তরে হিন্দ। তার পিতার নাম আবু তালিব ইবনে আবদুল মুত্তালিব ও মাতার নাম ছিলো ফাতিমা বিনতে আসাদ। তিনি জাফর,আকিল ও আলীর সহোদরা ছিলেন।[২][৩][৪]
উম্মে হানির কয়েকজন সন্তানের নাম হলো:
ইসলাম পূর্ব সময়
[সম্পাদনা]তার বাল্যকালের কথা তেমন কিছু জানা যায় না। তবে মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাঃ এর নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্বে চাচা আবু তালিবের নিকট উম্মে হানির বিয়ের প্রস্তাব পাঠান। একই সময়হুবায়রা ইবনে আমর ইবনে আয়িয আল মাখযুমিও উম্মে হানিকে বিয়ে করতে চান। আবু তালিব হুবায়রার প্রস্তাব গ্রহণ করে উম্মে হানিকে তার সাথে বিয়ে দেন।[৭] এবং হযরত মুহাম্মাদ সাঃ কে বললেন, ভাতিজা! আমরা তার সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক করেছি। সম্মানীয়দের সমকক্ষ সম্মানীয়রাই হয়ে থাকে। [৮]
মক্কা বিজয়ের দিন ও ইসলাম গ্রহণ
[সম্পাদনা]ইমাম আয যাহাবি বলেছেন, উম্মে হানি মক্কা বিজয়ের দিন ইসলাম গ্রহণ করেছেন।[৯] মক্কা বিজয়ের দিন উম্মে হানির ইসলামের গ্রহণের কথা শুনে তার স্বামী মক্কা থেকে পালিয়ে নাজরানের দিকে চলে যান।[১০]] উম্মে হানির ইসলাম গ্রহণের খবর শুনে তাকে তিরস্কার করে তার স্বামী একটি কবিতা রচনাও করেন।[১১][১২][১৩] কবিতাটি নিম্নরূপঃ
‘তোমার জীবনের শপথ! আমি ভিরুতার কারণে ও হত্যার ভয়ে মুহাম্মাদ ও তাঁর সঙ্গীদেরকে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পালিয়ে আসিনি। তবে আমি নিজের বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেছি, তাতে বুঝেছি এ যুদ্ধে আমার তীর ও তরবারি যথেষ্ট নয়। আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল থেকেছি। কিন্তু যখন আমার অবস্থান সংকীর্ণ হওয়ার ভয় করেছি তখন ফিরে এসেছি যেমন বাঘ তার শাবকের কাছে ফিরে আসে।’[১৪]
মক্কা বিজয়ের দিন আল হারিস ইবনে হিশাম ও আবদুল্লাহ ইবনে আবি রাবিয়া উম্মে হানির গৃহে আশ্রয় নেন।[১৫] আলী এই সংবাদ পেলে তাদের হত্যা করতে উদ্যত হন। উম্মে হানি এ ব্যপারে মহানবী সাঃ এর কাছে অভিযোগ করলে, মহানবী সাঃ বলেন, তুমি যাকে আশ্রয় দিয়েছো, আমরাও তাকে আশ্রয় দিলাম ।[১৬][১৭][১৮][১৯]
মক্কা বিজয়ের পরে উম্মে হানি ও হুবায়রা ইবনে আমরের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটলে মহানবী সাঃ বিয়ের প্রস্তাব দেন। জবাবে উম্মে হানি বলেন : আল্লাহর কসম! আমি ইসলাম পূর্ব যুগে পছন্দ করতাম,এখনো পছন্দ করি । এখন আমার অনেকগুলো ছোট ছেলে-মেয়ে আছে। আমার ভয় হয় তারা আপনাকে কষ্ট দেবে।[১১][২০][২১][২১]
মিরাজের ঘটনা
[সম্পাদনা]উম্মে হানি দাবী করেন যে মুহাম্মাদ তার ঘর থেকেই মিরাজের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন। এই মর্মে একটি হাদিস বর্ণিত রয়েছে,
মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক বলেন, মুহাম্মদ ইবন সাইব কালবী.... উম্মে হানী বিনতে আবু তালিব (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ(ﷺ)-এর মিরাজ সম্পর্কে বলেন, যেই রাত্রে রাসুলুল্লাহ(ﷺ)-এর মিরাজ সংঘটিত হয় সেই রাতে তিনি আমার বাড়ীতে শায়িত ছিলেন। ঈশার সলাত শেষে তিনি ঘুমিয়ে যান। আমরাও ঘুমিয়ে যাই। ফজরের সামান্য আগে তিনি আমাদেরকে জাগালেন। তিনি সালাত পড়লেন এবং আমরাও তাঁর সাথে [ফজরের] সালাত পড়লাম তখন তিনি বললেনঃ হে উম্মে হানী, তোমরা তো দেখেছো আমি তোমাদের সাথে ঈশার সালাত পড়ে তোমাদের এখানেই শুয়ে পড়ি। কিন্তু এরপরে আমি বাইতুল মুকাদ্দাস গমন করি এবং সেখানে সলাত আদায় করি। এখন ফজরের সলাত তোমাদের সাথে পড়লাম যা তোমরা দেখলে। উম্মে হানী বলেন, এই বলে তিনি চলে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালেন। আমি তাঁর চাদরের কিনারা ধরে ফেললাম। ফলে তাঁর পেট থেকে কাপড় সরে গেল। তা দেখতে ভাঁজ করা কিবতী বস্ত্রের মত স্বচ্ছ ও মসৃণ। আমি বললাম : হে আল্লাহর নবী! আপনি এ কথা লোকদের কাছে প্রকাশ করবেন না। অন্যথায় তারা আপনাকে মিথ্যাবাদী বলবে এবং আপনাকে কষ্ট দেবে। কিন্তু তিনি বললেন : আল্লাহর কসম! আমি অবশ্যই তাদের কাছে এ ঘটনা ব্যক্ত করব। তখন আমি আমার এক হাবশী দাসীকে বললাম ; বসে আছো কেন, জলদি, রাসূলুল্লাহ্(ﷺ)-এর সঙ্গে যাও, তিনি লোকদের কি বলেন তা শোনো, আর দেখো তারা কী মন্তব্য করে।[২২]
তবে অধিকাংশ হাদিস বিশ্লেষক এই বর্ণনাকে অসত্য বলেছেন ।[২৩] অধিকাংশ আলেমদের মতে রাসুল মিরাজে গমন করেছিলেন কাবা শরীফ থেকে।[২৪]
হাদিস বর্ণনা
[সম্পাদনা]উম্মে হানি বিনতে আবি তালিব মুহাম্মাদ থেকে ৪৬ টি হাদিস বর্ণনা করেছেন।[২৫][২৬] তার সূত্র ধরে যেসকল তাবেয়ী হাদিস বর্ণনা করেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য-
- জাদা,
- ইয়াহইয়া,
- হারুর,
- আবু মূররা,
- আবু সালিহ,
- আবদুল্লাহ ইবনে আয়াশ
- আবদুল্লাহ ইবনে আল হারিস ইবনে নাওফাল,
- আবদুর রহমান ইবনে আবি লায়লা,
- শাবী,
- আতা,
- কুরাইব,
- মুজাহিদ,
- উরওয়া ইবনে আয যবায়র,
- মুহাম্মাদ ইবনে উকবা প্রমুখ।[৯][২৭]
মৃত্যু
[সম্পাদনা]উম্মে হানির মৃত্যুসন সঠিকভাবে জানা যায় না। তবে “আল ইসাবা ফী তাময়ীয আস-সাহাবা” গ্রন্থের বর্ণনায় জানা যায়, তিনি আলীর মৃত্যুর পরও জীবিত ছিলেন।[২৮]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "হযরত উম্মে হানী রা : | ইমাম পোর্টাল"। xn--b5b2fa7d.xn--54b7fta0cc। ২০১৯-১১-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-১৭।
- ↑ [সীরাতু ইবন হিশাম, ২/৪২০]।
- ↑ [আ‘লাম আন-নিসা‘, ৪/১৪]।
- ↑ [আল-ইসী‘আব, ২/৭৭২]।
- ↑ [সাহাবিয়াত-২২৯]।
- ↑ [প্রাগুক্ত-২/৩১২,৩১৩]।
- ↑ [উসুদুল গাবা-৫/৬২৪]।
- ↑ [আ‘লাম আন-নিসা- ৪/১৪]।
- ↑ ক খ [সিয়ারু আ‘লাম আন-নুবালা-২/৩১২]।
- ↑ [আনসাবুল আশরাফ-১/৩৬২]।
- ↑ ক খ [সীরাতু ইবন হিশাম-২/৪২০]।
- ↑ [উসুদুল গাবা-৫/৬২৮]।
- ↑ [ইবন দুরাইদ, আল-ইতিকাক-১৫২]।
- ↑ বর্ণিত রয়েছে, [আ‘লাম আন-নিসা-৪/১৪]।
- ↑ [প্রাগুক্ত-৪/১৫]।
- ↑ [মুসনাদে আহমাদ-৫/২৪২]।
- ↑ [হায়াতুস সাহাবা-১/১৮২; ৩/১৪৫, ১৪৬]।
- ↑ [সীরাতু ইবন হিশাম-২/৪১১]।
- ↑ [বাবু সালাতিল ফাজরি ফিস সাফর-৬/১৯৫, ১৯৬]।
- ↑ [আনসাবুল আশরাফ-১/৪৫৯]।
- ↑ ক খ [আ‘লাম আন-নিসা-৪/১৬]।
- ↑ (সীরাতুন নবী (সা.) - ইবন হিশাম, ২য় খণ্ড (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ), পৃষ্ঠা : ৭৬)।
- ↑ [তাফসির ইবন কাসির, ৬ষ্ঠ খণ্ড (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ), সুরা বনী ইস্রাঈলের ১ নং আয়াতের তাফসির, পৃষ্ঠা ২৫১]।
- ↑ "দুর্লভ তথ্যের আলোকে মি'রাজ"। The Daily Sangram। ২০১৯-১০-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-১৭।
- ↑ [বুখারী-৬/১৯৫, ১৯৬]।
- ↑ [বুবু আমান আন-নিসা ওয়া জাওযারিহিন্না; মুসলিম (৩৩৬), বাবু ইসতিহবাব সালাতিদ দুহা]।
- ↑ [আ’লাম আন-নিসা-৪/১৬]।
- ↑ [সিয়ারু আ‘লাম আন-নুবালা-২/৩১৩]।