ইলেকট্রনিক বর্তনীর উপাদান বিন্যাস
ইলেকট্রনিক বর্তনীর উপাদান স্থানবিন্যাস বলতে কোনও ইলেকট্রনিক বর্তনীর উপাদানগুলির আন্তঃসংযোগগুলির জালব্যবস্থাটি যে স্থানিক বিন্যাস গঠন করে, তাকে বোঝায়। উপাদানগুলির বিভিন্ন নির্দিষ্ট মান বা শ্রেণী (রেটিং) একই স্থানবিন্যাস হিসাবে বিবেচিত হয়। বর্তনীর উপাদানের স্থানবিন্যাস বাস্তব জগতে একটি বর্তনীর উপাদানগুলির ভৌত অবস্থানের বিন্যাসের সাথে বা বর্তনীর রেখাচিত্রে তাদের দৃশ্যমান অবস্থানের সাথে সম্পর্কিত নয়। টপোগণিতের গাণিতিক ধারণার অনুরূপে এটি শুধুমাত্র উপাদানগুলির মধ্যে যে সংযোগগুলি রয়েছে, কেবল সেগুলির সাথে সংশ্লিষ্ট। অনেক বাস্তবিক মূর্ত ভৌত বিন্যাস এবং বর্তনী লেখচিত্র থাকতে পারে, যেগুলির উপাদানগুলির স্থানবিন্যাস শেষ বিচারে একই হয়ে থাকে।
আরও কঠোর দৃষ্টিকোণ থেকে বললে কোনও বর্তনীর উপাদানের স্থানবিন্যাস উপাদানের ধরনের উপর নির্ভর করে না। অর্থাৎ বর্তনীর কোনও উপাদানকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের আরেকটি উপাদান দিয়ে একটি উপাদান প্রতিস্থাপন করা হলেও বর্তনীটির উপাদানের স্থানবিন্যাস একই থাকবে। তবে কিছু কিছু পরিস্থিতিতে এগুলিকে শিথিল একটি দৃষ্টিকোণ থেকে ভিন্ন স্থানবিন্যাস হিসাবে বর্ণনা করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, নিম্ন-কম্পাংক সংকেত পরিস্রাবক (লো-পাস ফিল্টার) নামক যন্ত্রের ইলেকট্রনীয় বর্তনীর আবেশক এবং ধারকগুলির স্থান পরিবর্তন করলে সেটি উচ্চ-কম্পাংক সংকেত পরিস্রাবকে (হাই-পাস ফিল্টার) পরিণত হয়। এগুলির বর্তনীর উপাদান স্থানবিন্যাস (বা জালকব্যবস্থা স্থানবিন্যাস) অভিন্ন হলেও এগুলোকে উচ্চ-কম্পাংক পারাপার এবং নিম্ন-কম্পাংক পারাপার নামক দুইটি ভিন্ন উপাদান স্থানবিন্যাস হিসাবে বর্ণনা করা যেতে পারে। এই শ্রেণির বস্তুর জন্য অধিকতর সঠিক পরিভাষা (অর্থাৎ, একটি জালকব্যবস্থা যেখানে উপাদানের ধরন নির্দিষ্ট করা হয় কিন্তু পরম মান নয়) হলো আদিপ্রতিমা জালকব্যবস্থা (প্রোটোটাইপ নেটওয়ার্ক)।
ইলেকট্রনিক জালকব্যবস্থা স্থানবিন্যাস গাণিতিক টপোগণিত (স্থানবিন্যাস গণিত) নামক শাস্ত্রের সাথে সম্পর্কিত। বিশেষ করে, যে জালকব্যবস্থাগুলি শুধুমাত্র দ্বি-প্রান্তিক কলকৌশল বা ইলেকট্রনীয় উপাদান ধারণ করে, সেক্ষেত্রে বর্তনীর উপাদানের স্থানবিন্যাসকে গ্রাফ তত্ত্বের একটি প্রয়োগ হিসাবে দেখা যেতে পারে। স্থানবিন্যাসগত দৃষ্টিকোণ থেকে এই ধরনের বর্তনীর জালকব্যবস্থা বিশ্লেষণে জালকব্যবস্থার গ্রন্থিগুলি গ্রাফ তত্ত্বের শীর্ষবিন্দু এবং জালকব্যবস্থার শাখাগুলি গ্রাফ তত্ত্বের প্রান্ত নির্দেশ করে।
আদর্শ গ্রাফ তত্ত্বের সম্প্রসারণ ঘটিয়ে সক্রিয় উপাদানসমূহ এবং বহু-প্রান্তিক কলকৌশল, যেমন সমন্বিত বর্তনীর মতো ব্যাপারগুলি ব্যাখ্যা করা যায়। গ্রাফগুলিকে অসীম জালকব্যবস্থাগুলির বিশ্লেষণেও ব্যবহার করা যেতে পারে।