ইরিপথ নয়নার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ইরিপথ নায়নার
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম
ধর্মহিন্দুধর্ম
দর্শনশৈবধর্ম, ভক্তি
সম্মাননায়ণার সন্ত

'ইরিপথ নয়নার ' , যিনি ইরিপথার ইরিপট্টার ইরিপট্টর, ইরিপট্টার, এরিপত্তার, ইরিপথ নয়নর এবং ইরিপথ নয়নার নামেও পরিচিত , হলেনহিন্দু শৈব সম্প্রদায়ে পূজিত নায়নার সন্ত। ৬৩ জন নায়নারের তালিকায় তাঁকে সাধারণত অষ্টম হিসাবে গণ্য করা হয়।[১]

জীবনী[সম্পাদনা]

এরিপাথ নায়নারের জীবনী সেক্কিজহারের (দ্বাদশ শতাব্দী) পেরিয়া পুরানমে বর্ণনা করা হয়েছে। পেরিয়া পুরানম ৬৩ জন নায়নারের জীবনীগ্রন্থ।[১][২] এরিপাথা নয়নার কারুভুরের অন্তর্গত। কারুভুর সাধারণত ভারতীয় শহর করুর হিসাবে চিহ্নিত, এবং পসুপতীশ্বর মন্দিরের জন্য বিখ্যাত যা শৈবধর্মের পৃষ্ঠপোষক দেবতা শিবের উদ্দেশ্যে নিবেদিত। কারুভুর তখন চোল রাজ্যের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র ছিল। পুগল চোল, যিনি নায়নার নামেও পূজিত হন, তিনি এই ভূমিতে রাজত্ব করেছিলেন। বিদ্যা দেহেজিয়ার মতে, তার ঐতিহাসিকতা "সম্ভাব্য"। তিনি কয়েকজন নায়নারের একজন, যাদের বর্ণ পেরিয়া পুরাণমে উল্লেখ করা হয়নি। নয়নার কারুভুরের শিব মন্দিরে কর্ম করতেন।[৩]

এরিপাথাকে শিবভক্ত বলা হয় এবং পসুপতেশ্বরের মন্দিরে প্রতিদিন তাঁর পূজা করতেন। তিনি শিব ও তাঁর ভক্তদের সেবা করে সময় অতিবাহিত করতেন। শিব ভক্তদের রক্ষার জন্য তিনি সর্বদা একটি কুঠার বহন করতেন। যদি কেউ শিব ভক্তদের ক্ষতি করত তাকে তিনি কুঠার দ্বারা শাস্তি দিতেন। শিবকামি অন্দর নামে এক ভক্তের শিবের পূজার মালা তৈরির জন্য সকালে সতেজ ফুল সংগ্রহ করার অভ্যাস ছিল। একবার মহা নবমীর দিন চোলের রাজকীয় হাতি সমেত শহর প্রদক্ষিণ করা হচ্ছিল। হাতিটি শিবকামি অন্দরকে দেখে তার হাত থেকে ফুলের ঝুড়ি কেড়ে নিয়ে ফুলগুলোকে নিস্পিষ্ট করে দিল। ভক্তটি হাতিটিকে তাড়া করেছিল, কিন্তু বৃদ্ধ বয়সের কারণে টাল সামলাতে ব্যর্থ হয়েছিল। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়, এরিপাথ ভক্তকে কাঁদতে দেখেন এবং হাতিটিকে শাস্তি দেওয়ার জন্য তাড়া করেন। তিনি হাতিটিকে ধরে ফেলেন এবং শুধু জন্তুটিকেই হত্যা করেননি, তার মাহুত এবং সহকারী রক্ষীদেরও হত্যা করেন যারা হাতিটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছিল।[৩][৪]

এরিপথে আত্মহত্যার চেষ্টা এবং পুগল চোল দ্বারা রক্ষা করা।

রাজকীয় হাতি হত্যার খবর পৌঁছে গেল পুগল চোলায়। ক্ষিপ্ত রাজা গণহত্যার স্থানে পৌঁছান। রাজা যখন তার সেনাবাহিনীদের নির্দেশ দিচ্ছিলেন, তখন তিনি এক ধর্মযোদ্ধাকে হাতির উপর দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন। জিজ্ঞাসাবাদের পর, রক্ষীরা ইরিপাথাকে হাতির হত্যাকারী হিসাবে নির্দেশ করে পরিচয় করিয়ে দেয়। পুগল চোল তার ঘোড়া থেকে নেমে ক্রুদ্ধ ইরিপাথাকে শ্রদ্ধার সাথে প্রণাম করলেন এবং তার হাতি, মাহুতদের অপরাধ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। এরিপাথা হাতি হত্যার ঘটনা সম্পর্কে রাজাকে অবহিত করেন এবং বলেন, তিনি শিবের বিরুদ্ধে পাপের জন্য তাদের শাস্তি দিয়েছেন। চোল মনে করলো এটা তার নৈতিক দায়িত্ব। তিনি নায়নারের সামনে নত হন এবং তরবারি উপস্থাপন করে নয়নারকে তাকেও হত্যা করতে বলেন, কারণ রাজাও তার হাতি এবং সেনাবাহিনীর কর্মের জন্য শেষ পর্যন্ত দোষী। ইরিপাথ রাজার ভক্তি ও কর্মে বিস্মিত হন এবং অনুতপ্ত বোধ করেন। তিনি চিন্তা করলের, খুনের জন্য তলোয়ার দিয়ে আত্মহত্যা করাই উত্তম। এরিপাথ তার মাথা কাটার জন্য তলোয়ার তুললে ভীতসন্ত্রস্ত রাজা তাকে থামানোর জন্য তার হাত ধরে রাখেন। যখন তারা তাদের জীবন উৎসর্গ করার জন্য তরবারির দিয়ে লড়াই করছিল, তখন শিব তাদের ভক্তিতে খুশি হয়ে তাদের আশীর্বাদ করেছিলেন। তিনি হাতি এবং রাজার লোকদেরও পুনরুত্থিত করেছিলেন। শিবকামী অন্দরের ঝুড়িও ফুলে পূর্ণ হয়েছিল। এরিপাথাকে রাজকীয় হাতির উপর বসিয়ে সম্মান দেওয়া হয়, এবং রাজা দাসের মতো তার মাথায় রাজকীয় ছাতা ধরে রেখেছিলেন। দুজনেই পশুপতেশ্বর মন্দিরে গিয়ে শিবের পূজা করেন। মৃত্যুর পরে, এরিপাথ শিবের বাসস্থান কৈলাসে পৌঁছেছিলেন এবং শিব গণের নেতা হয়েছিলেন বলে জানা যায়।[৩][৪]

স্মরণ[সম্পাদনা]

তামিলনাড়ুর বহু শিব মন্দিরে নায়নারদের মূর্তি দেখা যায়।

এরিপথ নয়নারকে মুণ্ডিত মস্তক, হাত অঞ্জলি মুদ্রা অবস্থায়, হাতের কুঁকড়ে একটি কুঠার ( পরশু ) দিয়ে চিত্রিত করা হয়েছে। তার সম্মানে পবিত্র দিন মাসি মাসের পনেরতম দিনে পালন করা হয় যা সাধারণত ২৭ ফেব্রুয়ারির সাথে মিলে যায়।[৩] তিনি ৬৩ জন নয়নারদের সাথে সম্মিলিতভাবে পূজা গ্রহণ করেন। তাদের মূর্তি এবং তাদের কর্মের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তামিলনাড়ুর বহু শিব মন্দিরে পাওয়া যায়। উৎসবে শোভাযাত্রায় তাদের মূর্তি তোলা হয়।[১]

সবচেয়ে বিশিষ্ট নয়নারদের একজন, সুন্দরার (৮ম শতাব্দী) বিভিন্ন নয়নার সাধুদের স্তোত্রে এরিপাথা নয়নারের (এখানে রাজকুমার এরিপত্তন বলা হয় এবং বর্শাধারী বর্ণনা করা হয়েছে) উল্লেখ করেছেন।[৫]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Roshen Dalal (২০১১)। Hinduism: An Alphabetical Guide। Penguin Books India। পৃষ্ঠা 281। আইএসবিএন 978-0-14-341421-6 
  2. "The Puranam of Eri-Pattha Nayanar"। T N Ramachandran। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ডিসেম্বর ২০১৪ 
  3. Vidya Dehejia (১৯৮৮)। Slaves of the Lord: The Path of the Tamil Saints। Munshiram Manoharlal। পৃষ্ঠা 161। আইএসবিএন 978-81-215-0044-9 
  4. Swami Sivananda (১৯৯৯)। Sixty-three Nayanar Saints (4 সংস্করণ)। The Divine Life Society। 
  5. Indira Viswanathan Peterson (২০১৪)। Poems to Siva: The Hymns of the Tamil Saints। Princeton University Press। পৃষ্ঠা 376। আইএসবিএন 978-1-4008-6006-7