বিষয়বস্তুতে চলুন

আহমদ আল ওয়াফি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আহমদ আল ওয়াফি

৮ম ইসমাইলি ইমাম
অফিসে
৮১৩ – ৮২৮
পূর্বসূরীমুহাম্মদ ইবনে ইসমাইল
উত্তরসূরীমুহাম্মদ আল-তাকী
উপাধিআল-ওয়াফি
আল-রাদি
অন্য নামআবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম১৪৯ হিজরি
(আনুমানিক ৭৬৫/৭৬৬)
মৃত্যু২১২ হিজরি
(আনুমানিক ৮২৭/৮২৮)
সালামিয়াহ
সমাধিস্থলসালামিয়াহ, সিরিয়া
ধর্মশিয়া ইসলাম
সন্তান
পিতামাতা
অন্য নামআবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ

আবু আহমদ আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে ইসমাইল (আরবি: أَبُو أَحْمَد عَبْد ٱللَّٰه ٱبْن مُحَمَّد ٱبْن إسْماعِيل, খ্রিস্টাব্দ ৭৬৬ – ৮২৮) ছিলেন নবী মুহাম্মদ এর বংশধর এবং ইসমাইলি ইমামতের শিয়া মতবাদের অষ্টম ইমাম। তিনি তার পিতা মুহাম্মদ ইবনে ইসমাইল -এর মৃত্যুর পর ইমামত গ্রহণ করেন। আবদুল্লাহ পারস্য এবং মধ্যপ্রাচ্য ভ্রমণ করেন। ৩য়/৯ম শতাব্দীর প্রথম ভাগে, কোনো এক সময় তিনি সিরিয়াতে আশ্রয় নেন, সেখানে তিনি তার কিছু দাঈদের সাথে পুনরায় যোগাযোগ স্থাপন করেন এবং সালামিয়াহতে বসবাস শুরু করেন। সেখানে তিনি হাশিমি বণিক হিসেবে নিজের পরিচয় দেন। আবদুল্লাহ তার প্রকৃত পরিচয় সর্বসাধারণের কাছে প্রকাশ করেননি এবং কেবলমাত্র কিছু উচ্চপদস্থ ইসমাইলি হুজ্জাত এবং দাঈ-রা তার অবস্থান সম্পর্কে জানতেন। তাকে আল-ওয়াফি (অর্থ: বিশ্বস্ত) এবং আল-রাদি (অর্থ: সন্তুষ্ট) উপাধি দিয়ে ডাকা হয়। আবদুল্লাহ তার পুত্র আহমদ-কে তার উত্তরাধিকারী হিসেবে মনোনীত করেন এবং আনুমানিক ৮২৮ খ্রিস্টাব্দে ইন্তেকাল করেন। জাফর আস-সাদিক-এর মৃত্যু ১৪৮ হিজরি/৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে এবং ইসমাইল এবং মুহাম্মদ এর পর থেকে আব্বাসীয়দের দ্বারা অত্যাচারের মাত্রা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। ইসমাইলি ইমামরা গোপনে থাকতে বাধ্য হন এবং ১৯৭ হিজরি/৮১৩ থেকে ২৬৮ হিজরি/৮৮২ সাল পর্যন্ত দাউর আল-সাতর-এর সময় শুরু হয়, যখন ইমামদের আল-আইম্মা আল-মাস্তুরিন (অর্থ: গোপন ইমাম) বলা হতো। এই গোপনীয়তার অবসান ঘটে ফাতিমীয় খলিফাত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।

ঐতিহাসিক পটভূমি

[সম্পাদনা]

১৪৮ হিজরি/৭৬৫ সালে জাফর আল-সাদিক এর মৃত্যু এবং ইসমাইল (মৃ. ১৫৮ হিজরি/৭৭৫) ও মুহাম্মদ (মৃ. ১৯৭ হিজরি/৮১৩)-এর ঘটনাবলীর পর, আব্বাসীদের অত্যাচার অনেক বেড়ে যায় ।[][]ইসমাইলি ইমামগণ বাধ্য হয়ে আত্মগোপন করেন, ফলে প্রথম দাওর আল-সাত্র ('গোপন থাকার সময়কাল')[] ১৯৭ হিজরি/৮১৩ থেকে ২৬৮ হিজরি/৮৮২ পর্যন্ত কার্যকর হয়, যেখানে ইমামদের আল-আইম্মা আল-মাস্তুরিন (আক্ষ.'গোপন ইমামগণ') হিসেবে উল্লেখ করা হয়।[][][] এই সময়ে জীবিত ইমামের পরিচয় সুরক্ষার জন্য গোপন রাখা হয় এবং সম্প্রদায় মুহাম্মদ ইবনে ইসমাইল এর অধীনে কার্যক্রম পরিচালনা করে।[] পরবর্তী ঐতিহ্য অনুযায়ী এরা ছিলেন আবদুল্লাহ (৮ম ইমাম), আহমদ (৯ম ইমাম) এবং আল-হুসাইন (১০ম ইমাম)।[][] পরবর্তীকালের ইসমাইলি ঐতিহাসিকদের মধ্যে আহমদ ইবনে ইব্রাহিম আল-নাইসাবুরি, ইস্তিতার আল-ইমাম এর লেখক ফাতিমীয় ইমাম-খলিফা আল-আজিজ বিল্লাহ (শা. ৯৭৫–৯৯৫) এর অধীনে এই তিনজন 'গোপন' ইমামের নাম প্রথম উল্লেখ করেন বলে মনে করা হয়।[]

ফাতিমীয় যুগের আধুনিক ঐতিহাসিক শাইনুল জিওয়া ব্যাখ্যা করেন যে, দাওর আল-সাত্র (৭৬৫–৯০৯ খ্রিষ্টাব্দ) চলাকালে ইসমাইলি মতবাদ ইয়েমেন থেকে ইফ্রিকিয়া (আধুনিক টিউনিসিয়া এবং পূর্ব আলজেরিয়া) পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল এবং এর প্রধান অনুসারীরা ছিলেন উত্তর আফ্রিকার কুতামা বারবার সম্প্রদায়।[]

আব্দুল্লাহ যিনি পরবর্তীতে আহমদ আল-ওয়াফি নামে পরিচিত হন, তিনি ১৪৯ হিজরি/৭৬৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন।[১০] তাঁর পিতা মুহাম্মদ ইবনে ইসমাইল ছিলেন আলী ইবনে আবি তালিবফাতিমা এর বংশধর। যাদের মধ্যে আলী ছিলেন নবী মুহাম্মদ এর চাচাতো ভাই এবং ফাতিমা ছিলেন তাঁর কন্যা। আব্দুল্লাহর মা ছিলেন ফাতিমা, যিনি সারাহর কন্যা ও ইসহাক ইবনে আল-আব্বাসের বোন।[১১][১২] যখন মুহাম্মদ ইবনে ইসমাইল মৃত্যু সম্মুখে ছিলেন,তিনি পৃথিবীর দায়িত্ব তাঁর পুত্র আব্দুল্লাহকে দেন। তাঁকে উত্তরসূরি ও তত্ত্বাবধায়ক করেন। [১৩]আব্বাসীয়রা প্রতিটি হুসাইনী সাইয়্যিদকে হত্যা বা বিষপ্রয়োগে নতুন প্রচেষ্টা চালায়।[১৪]আব্বাসীয়দের নির্যাতন থেকে বাঁচতে আব্দুল্লাহ পারস্যের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেন এবং তাঁর পরিচয় ও বাসস্থান কেবলমাত্র কিছু নির্ভরযোগ্য সহযোগীদের জানায় । তিনি আহওয়াজের কাছে আস্কর মুকরাম নামে এক স্থানে বাস করেন, সেখান থেকে পরবর্তীতে বাসরা ও তারপর কেন্দ্রীয় সিরিয়ার সালামিয়ায় চলে যান, যেখানে তিনি স্থানীয় ব্যবসায়ীর ছদ্মবেশে বসবাস করেন।[১৫][১৬][১৭]সালামিয়ায় অনেক বিশিষ্ট হাশিমি বাস করতে তাদের অধিকাংশই আকিল ইবনে আবি তালিব এর বংশধর ছিলেন, কিন্তু তাদের মধ্যে কিছু আব্বাসীয়দের সাথেও সম্পর্কিত ছিলেন।[১৭] আব্দুল্লাহ তাঁদের একজন হিসেবে নিজের পরিচয় দেন এবং এভাবে তিনি বেঁচে থাকেন।[১৬][১৭] আব্দুল্লাহর প্রচেষ্টা ২৬০ হিজরি/৮৭০-এর দশকে ফলপ্রসূ হতে থাকে। তখন ইরাক ও আশেপাশের অঞ্চলে অনেক দাঈ আবির্ভূত হন।[১৮]পরে আব্দুল্লাহ তাঁর ৩২ বিশ্বস্ত দাঈদের সাথে দায়লামে যান, যেখানে তিনি আলিদের সাথে বিয়ে করেন এবং তাঁদের একটি পুত্রসন্তান হয়, যার নাম রাখেন আহমদব। যিনি পরবর্তীতে মুহাম্মদ আল-তাকী নামে পরিচিত হন।[১৩][১৪]আহমদ ছাড়াও আব্দুল্লাহর ইব্রাহিম নামে আরও একটি পুত্র ছিল।[১৭] ইব্রাহিম সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়, তবে বলা হয় যে তাঁর বংশধর ফাতিমীয় ইমাম-খলিফা আব্দুল্লাহ আল-মাহদির সময়েও সালামিয়ায় জীবিত ছিলেন এবং ২৯০ হিজরি/৯০২ সালে কারমাতিদের হাতে নিহত হন।[১৯][]মৃত্যুর পূর্বে, আনুমানিক ২১২ হিজরি/৮২৭-৮২৮ সালে আব্দুল্লাহ তাঁর পুত্র আহমদকে তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে মনোনীত করেন।[১৫][১৭][]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Tajddin 1997, পৃ. 177।
  2. Daftary 2007, পৃ. 90, 95 – 96।
  3. Nasr 1966, পৃ. 159।
  4. Makarem 1969
  5. Daftary 2007, পৃ. 712।
  6. Daftary 1998, পৃ. 3।
  7. Daftary 2007, পৃ. 100, 507।
  8. Tajddin 1997, পৃ. 205।
  9. Jiwa 2018, পৃ. 79।
  10. Tajddin 2009, পৃ. 27।
  11. Tajddin 1997, পৃ. 176।
  12. Hollister 1953, পৃ. 205।
  13. Hollister 1953, পৃ. 206।
  14. Tajddin 2009, পৃ. 28।
  15. Daftary 2007, পৃ. 100।
  16. Hollister 1953, পৃ. 207।
  17. Tajddin 2009, পৃ. 29।
  18. Daftary 2007, পৃ. 178–195।
  19. Tajddin 1997, পৃ. 185।

উৎসসমূহ

[সম্পাদনা]
  • গোপনে থাকা (মাস্তুর) ধারণাটি, তবে দ্বাদশ ইমামের অদৃশ্যতার সাথে গুলিয়ে ফেলা উচিত না । প্রথমটি শুধুমাত্র জনসম্মুখ থেকে লুকিয়ে থাকা বোঝানো হয় আর দ্বিতীয়টি শারীরিক জগত থেকে অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার বিষয়টি বোঝায়।[][]
  • আহমদ আল-ওয়াফি
    আহল আল-বাইত
    কুরাইশ এর ক্যাডেট শাখা
    জন্ম: ১৪৯ হিজরি ৭৬৬ খ্রিঃ মৃত্যু: ২১২ হিজরি ৮২৮ খ্রিঃ
    শিয়া ইসলামী পদবীসমূহ
    পূর্বসূরী
    মুহাম্মদ ইবনে ইসমাইল আল-শাকির
    ইমাম উত্তরসূরী
    আহমদ (আল-তাকি মুহাম্মদ)