আর্সেনাল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

স্থানাঙ্ক: ৫১°৪২′৪০″ উত্তর ০°১৭′৫″ পশ্চিম / ৫১.৭১১১১° উত্তর ০.২৮৪৭২° পশ্চিম / 51.71111; -0.28472
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আর্সেনাল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
ওয়াটলিং চেজ টিমবেরল্যান্ড ট্রায়াল জন ফুটপাথ থেকে একটি পিচের দৃশ্য।
মানচিত্র
অবস্থানলন্ডন কলনি
হার্টফোর্ডশায়ার
স্থানাঙ্ক৫১°৪২′৪০″ উত্তর ০°১৭′৫″ পশ্চিম / ৫১.৭১১১১° উত্তর ০.২৮৪৭২° পশ্চিম / 51.71111; -0.28472
মালিকআর্সেনাল ফুটবল ক্লাব
ধরনক্রীড়া সুবিধা
নির্মাণ
নির্মিত১৯৯৮–১৯৯৯
উদ্বোধন১১ অক্টোবর ১৯৯৯
নির্মাণ ব্যয়£১০ মিলিয়ন বা ১,১৭,৯৪,২৪,৫০০ টাকা

আর্সেনাল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র অনেক সময় এর ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে একে লন্ডন কলনি হিসেবেও উল্লেখ করা হয়, যা লন্ডনের হার্টফোর্ডশায়ারে অবস্থিত। এটি আর্সেনাল ফুটবল ক্লাবের প্রশিক্ষণ স্থল। এটি দশটি পূর্ণ মাপের ঘরের পিচের সময়, এতে আভ্যন্তরীন অণুশীলনের সুবিধা এবং একটি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র রয়েছে।

বর্তমান ম্যানেজার আর্সেন ওয়েঙ্গারের প্রচেষ্টায় লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের জমিতে এটি নির্মাণ করা হয়। ১০ মিলিয়ন পাউন্ড ব্যায়ে তৈরীকৃত এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি ১৯৯৯ সালের অক্টোবর মাসে উন্মুক্ত করা হয়। আর্সেনালের ফরোয়ার্ড নিকোলাস এনেলকা রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দিলে সেই অর্থ থেকে প্রকল্পটির ব্যয়ভার বহন করা হয়। 

আর্সেনালের মূল একাদশ ও যুব একাদশের প্রশিক্ষণ ছাড়াও ২০০৩ থেকে ২০১২ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচের জন্য ইংল্যান্ড জাতীয় দলের প্রশিক্ষণ ঘাঁটি হিসেবেও ব্যবহৃত হয়েছে। পরিবেশগত ও অন্যান্য কারণে এটি স্থানীয় অধিবাসীদের সমালোচনার মুখোমুখিও হয়েছে।

ইতিহাস ও উন্নয়ন[সম্পাদনা]

১৯৯৬ সালের অক্টোবরে আর্সেনালের দায়িত্ব নেয়ার পরে আর্সেন ওয়েঙ্গার তার দলের খেলোয়াড়দের আরো নিবিড়ভাবে জানার জন্য লন্ডনের বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ এর মাঠে অতিরিক্ত একটি প্রশিক্ষণ সেশনের আয়োজন করতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানায় থাকা মাঠটি মূলত তাদের ছাত্রদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। কিছুদিন পরে আগুনে বিশ্ববিদ্যলয়ের অণুশীলন কেন্দ্রের কিছু অংশ পুড়ে যায়। এতে প্রায় ৫০ হাজার পাউন্ড অর্থ ক্ষতি হয়। আর্সেনাল তখন অস্থায়ীভাবে তাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সেন্ট আলবান্স এর সোপোয়েল হাউস হোটেলে সরিয়ে নেয়। ওয়েঙ্গার সেখানকার ব্যবস্থাপনা দেখে নিরাশ হয়ে আধুনিক প্রশিক্ষণ সরঞ্জাম সংবলিত আর্সেনালের মালিকাধীন একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরীর জন্য প্রচারণা শুরু করেন। এটি ছিল ক্লাবের উন্নতির জন্য তার অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন,''এই সিদ্ধান্ত নেয়ার স্বাধীনতা ও নিশ্চয়তা না দেয়া হলে আমি ক্লাবের সাথে থাকতে নাও পারি।''

১৯৯৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে হার্টমেয়ার বরো কাউন্সিল লন্ডন কলোনির একটি স্থানীয় স্কুলের নিকটবর্তী গ্রীনফিল্ড এর জমিতে আর্সেনালের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরীর অণুমতি দেয়। এটি আবার ক্লাবের সাবেক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র শেনলি স্পোর্টস গ্রাউন্ডস এর নিকটে অবস্থিত, যেটি বর্তমানে ওয়াটফোর্ড ফুটবল ক্লাব প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহার করে। ইংল্যান্ডের পরিবেশ সচিব জন প্রেসকট সবুজ বলয় রাখার শর্তে প্রকল্পটিকে অণুমোদন দেন।[১] ১৯৯৮ এর সেপ্টেম্বরে সমগ্র পরিকল্পনা অণুমোদন পায়।

রিচার্ড মার্শাল এবং ডেয়ালি ও হেন্ডারসন প্রশিক্ষণ মাঠ ও এর অন্যান্য সুবিধাদির নকশা করেন।[২] ম্যানেজার আর্সেন ওয়েঙ্গার এর সাথে সরাসরিভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। জাপানের ক্লাব নাগোয়া গ্রাম্পাস এইট-এর ম্যানেজার হিসেবে তার অর্জিত সকল অভিজ্ঞতা এই প্রকল্পে কাজে লাগান। সেখানেও ক্লাবটি ও ওয়েঙ্গারের তত্ত্বাবধায়নে তাদের নিজস্ব প্রশিক্ষন কেন্দ্র তৈরী করেছিলো। নিজস্ব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরীর নিমিত্তে ক্লাবের প্রতিনিধিরা বায়ার্ন মিউনিখ ও আউক্সেররের প্রশিক্ষণ সুবিধাদি ও পর্যবেক্ষণ করে আসেন। আর্সেনালের ফিজিওথেরাপিস্ট এবং ফিটনেস কোচ তাদের নিজস্ব খাতের উন্নয়নে কাজ করেন। ১৪০ একরের প্রকল্পটি ১০ মিলিয়ন পাউন্ড ব্যায়ে ৪৫ সপ্তাহে নির্মাণ করা হয়েছিল। আর্সেনালের ফরোয়ার্ড নিকোলাস এনেলকা ১৯৯৯ এর আগস্টে ২২.৫ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেন। সেই অর্থ থেকেই প্রকল্পটির ব্যয়ভার চালানো হয়।

ক্রীড়া মন্ত্রী কেট হই ১৯৯৯ এর ১১ ই অক্টোবর আর্সেনাল প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি উদ্ভোধন করেন।[৩] চেয়ারম্যান পিটার হিল-উড একে “সত্যি অসাধারণ” হিসেবে বর্নণা করেন। অন্যদিকে আর্সেন ওয়েঙ্গার মনে করেন এটি দলে যোগ দিতে চাওয়া খেলোয়াড়দের জন্য বড় আকর্ষণ হিসেবে কাজ করবে।[৩] প্রথমবারের মত এখানে একই সাথে যুব দল ও মূল দল অণুশীলন করে। যা আর্সেনাল ওয়েঙ্গারের মতে আর্সেনালের খেলোয়াড়দের একতার শক্তিকে বৃদ্ধি করে। ২০০৬ সালে উন্নয়ন কাজের সময় একটি এখানে একটি আর্টিলারি শেল পাওয়া গিয়েছিল।

সুবিধাসমুহ[সম্পাদনা]

প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি ১৪৩ একর (০.৫৮ কিমি) জায়গার উপরে অবস্থিত। সবমিলিয়ে এখানে দশটি পুর্ণ মাপের ফুটবল মাঠ রয়েছে। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটির ভেতরে প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন অঞ্চল, ফিজিওথেরাপি এবং মালিশ কক্ষ ও প্রতিকারমূলক এবং হাইড্রোথেরাপি পুল রয়েছে। এছাড়াও স্কোয়াশ, বাস্কেটবল কোর্ট, স্টীম বাথ, বাষ্প ও ওজন কক্ষ, সম্মেলন কক্ষ, অফিস,কর্মকর্তা ও খেলোয়াড়দের জন্য একটি রেস্তোরা, শ্রেনীকক্ষ এবং আর্সেনাল টিভির জন্য খেলোয়াড়-কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকার নেয়ার জন্য একটি টেলিভিশন স্টুডিও আছে।

দশটি মাঠেই ভূগর্ভস্থ নিষ্কাশন ব্যবস্থা ও স্বয়ংক্রিয় পানি ছিটানোর ব্যবস্থা আছে। এছাড়াও দুটিতে ভূগর্ভস্থ তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আছে। এমিরেটস স্টেডিয়ামের মাঠের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এখানকার প্রতিটি মাঠ তৈরী করা হয়েছে। মূল দল, রিজার্ভ দল এবং যুবদলের জন্য তিনটি করে মোট নয়টি মাঠ সংরক্ষিত আছে। অবশিষ্ট মাঠটি মূল দলের প্রীতি ম্যাচ ও অণুর্ধ ১৮ দলের লীগ ম্যাচের জন্য সংরক্ষিত থাকে।     

আর্সেনালের খেলোয়াড়দের জন্য ২০১১ এর অক্টবারে একটি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র তৈরী করা হয়। এতে অভিকর্ষ বিরোধী একটি ট্রেডমিলসহ স্ক্রিনিং এর জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আছে। চো্ট থেকে ফিরে খেলোয়াড়রা চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধায়নে বিশেষায়িত আলাদা আলাদা স্থানে তাদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেন। এছাড়াও অতিরিক্ত প্রশিক্ষণ মাঠ সংযোজনের কথা আছে। ২০১৫ এর ফেব্রুয়ারিতে আর্সেনাল সুইস প্রতিষ্ঠান টিস্কা টেয়ারার কে প্রশিক্ষণ মাঠের জন্য ১৪০০ বর্গ মিটার কৃত্রিম ঘাস সরবরাহের আদেশ দেয়।  

২০১৫ সালের মার্চে আর্সেনাল প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পুনঃউন্নয়নের ঘোষণা দেয়। এই পরিকল্পনার আওতায় আছে মূল ভবনের সম্প্রসারণ, একটি খেলোয়াড় পার্ফরমেন্স কেন্দ্র নির্মাণ করা। এছাড়া দর্শনার্থী, শিক্ষা এবং মিডিয়া কেন্দ্র নতুনভাবে সাজানোর পরিকল্পনা আছে। সুনির্দিষ্ট উন্নয়নের মধ্যে আছে নতুন একটি ৪০ মিটার রানিং ট্রাক তৈরী এবং যোগব্যায়াম, পীলাতের জন্য স্থান নির্ধারণ করা। স্কাউটিং টিম, একাডেমির কর্মকর্তাদের জন্য এবং উপাত্ত বিশ্লেশকদের জন্য নতুন অফিস কক্ষ নির্মাণ করা হবে। উন্নত চিকিৎসা ও অণুশীলনের জন্য একটি স্পা,একটি ক্রায়োচেম্বার ও বরফ স্নানের ব্যবস্থা করা হবে। এই অতিরিক্ত স্থাপনার জন্য ভবনটিতে আরো দুইতলা বৃদ্ধি করা হবে। সরঞ্জাম কক্ষকে স্থানান্তরিত করা হবে এবং উন্নয়ন প্রক্রিয়ার সময় কেঁটে ফেলা ১৪০ টি গাছের বদলে নতুন করে ২৮০টি গাছ লাগানো হবে।এই প্রকল্পটিকে স্পোর্ট ইংল্যান্ড সহায়তা করে এবং হার্টমেয়ার বরো কাউন্সিল এর পরিকল্পনা কমিটি অণুমোদন দেয়। ২০১৭-১৮ মৌসুম শুরুর পূর্বেই এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা আছে।

সমালোচনা[সম্পাদনা]

প্রশিক্ষণ শিবির স্থাপন করার কাজটি স্থানীয় অধিবাসীদের সমালোচনার মুখে পড়েছে।২০০১ এর অক্টোবরে প্যারিশ কাউন্সিল এক বিবৃতিতে প্রকাশ করে আর্সেনালের খেলোয়াড়রা স্থানীয়দের কার্যক্রমের সাথে সংযুক্ত নয়। অথচ প্রশিক্ষণ কেন্দটি তৈরীর সময় বলা হয়েছিল এটি খেলোয়াড়দের সাথে স্থানীয়দের সম্পৃক্ত করবে। বারবার অণুরোধ করা সত্ত্বেও আর্সেনালের খেলোয়াড়রা শেনলি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনে যাননি। প্রতুত্তরে আর্সেনাল তাদের প্রমীলা একাদশ এর অংশগ্রহণে স্থানীয় মাঠগুলোতে প্রতিযগিতার আয়োজন করে। নতুন ভবন নির্মাণ এবং রাস্তাগুলোর সংযোগ স্থাপনের ফলে যানবাহনের চলাচল বৃদ্ধি পাবে এবং দূষণের পরিমাণ বাড়বে বলে স্থানীয়রা মনে করেন।

দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ এর প্রতিবেদন মতে আর্সেনাল ইংরেজ যুবাদের উন্নতিতে ব্যর্থ হওয়ায় তারা উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগ-এ জুভেন্টাসের বিপক্ষে হারে।[৪] সেই ম্যাচে কোন ইংরেজ খেলোয়াড় মাঠে নামেননি। ক্লাবের প্রশিক্ষন কেন্দ্রটি অণুমোদনের ক্ষেত্রে একটি প্রধান কারণ ছিল তারা যুবদলের উন্নয়ন সাধন করবে।[৪] এ প্রসঙ্গে একটি বার্তায় আর্সেনাল পক্ষ হতে বলা হয়: "The Bell Lane site is within the Arsenal 'catchment area' and the club already has a very active youth policy in the area. In particular, the club currently works closely with 12 local clubs which would be maintained and enhanced if the Bell Lane proposal were to go ahead."[৪]

অন্যান্য ব্যবহার[সম্পাদনা]

২০০৩ সালে করা এক চুক্তি অনুযায়ী ইংল্যান্ড জাতীয় ফুটবল দল লন্ডনের খেলাগুলোর পূর্বে নিয়মিত ভিত্তিতে এখানে অণুশীলন করতো। ২০১২ সালে সেন্ট জর্জেস পার্ক জাতীয় ফুটবল সেন্টারে প্রশিক্ষণ শিবির সরিয়ে নেয়ার আগ পর্যন্ত এখানে তারা অণুশীলন চালিয়ে যায়। ২০১৩ সালের নভেম্বরেও চিলি এবং জার্মানীর বিপক্ষে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচের আগে ইংল্যান্ড জাতীয় দল অণুশীলনের জন্য আর্সেনাল প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি ব্যবহার করেছিল।

২০১১ ও ২০১৩ সালেউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগ-এর ফাইনাল লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম হওয়ায় বার্সেলোনা এবং বরুসিয়া ডর্টমুন্ড অণুশীলনের জন্য কেন্দ্রটি ব্যবহার করে। মার্কিন ফুটবল দল সেন্ট লুইস রামস ২০১২ সালের আন্তর্জাতিক এন.এফ.এল. সিরিজের জন্য এখানে অণুশীলন করে।

২০০৯ সালের নভেম্বরে এই মাঠে আটটি স্থানীয় দলের কর্মীদের দলের অংশগ্রহণে একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এতে ১,৫০০ পাউন্ড অর্থ জনহিতকর কাজের জন্য পাওয়া যায়।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; eg নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  2. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; aj নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  3. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; op নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  4. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; dt নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি