আর্নেস্ট বিনফিল্ড হ্যাভেল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আর্নেস্ট বিনফিল্ড হ্যাভেল
জন্ম(১৮৬১-০৯-১৬)১৬ সেপ্টেম্বর ১৮৬১
রেডিং, বার্কশায়ার, ইংল্যান্ড
মৃত্যু৩১ ডিসেম্বর ১৯৩৪(1934-12-31) (বয়স ৭৩)
জাতীয়তাব্রিটিশ
অন্যান্য নামআ বি হ্যাভেল
পেশাশিল্প প্রশাসক, শিল্প ইতিহাসবিদ, শিল্প সমালোচক
পরিচিতির কারণকলকাতার গভর্নমেন্ট স্কুল অফ আর্ট -এর অধ্যক্ষ

আর্নেস্ট বিনফিল্ড হ্যাভেল বা আ বি হ্যাভেল (১৬ সেপ্টেম্বর ১৮৬১ - ৩১ ডিসেম্বর ১৯৩৪) ছিলেন একজন খ্যাতনামা ব্রিটিশ শিল্প প্রশাসক, শিল্প ইতিহাসবিদ এবং ভারতীয় শিল্প ও স্থাপত্য সম্পর্কে অসংখ্য গ্রন্থের রচয়িতা। তিনি ভারতশিল্পকলার পুনরুজ্জীবনের বিশ্ববিশ্রুত প্রবক্তা।[১]তিনি ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৯০৫  খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কলকাতার গভর্নমেন্ট স্কুল অফ আর্ট -এর অধ্যক্ষ ছিলেন। তিনি পাশ্চাত্য মডেলের পরিবর্তে ভারতীয়  শিল্প শিক্ষার একটি শৈলী গড়ে তুলেছিলেন। অবনীন্দ্রনাথ  প্রবর্তিত নব্যবঙ্গীয় চিত্রকলারীতির মন্ত্রগুরু ও পৃষ্ঠপোষক এবং যার ফলে বেঙ্গল স্কুলের ভিত্তি তৈরি হয়েছিল। [২] [৩]ফলত, যে চিত্রকলাশৈলী ভারতীয় জাতীয়তাবাদ ও (স্বদেশী আন্দোলনের) সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে আধুনিক ভারতীয় চিত্রশৈলীতে উন্নীত হয়।

জীবনের প্রথমার্ধ[সম্পাদনা]

ই বি হ্যাভেল  ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের ১৬ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যের বার্কশায়ারের ইংলিশ কাউন্টির রেডিং জেসি টেরেসে জন্মগ্রহণ করেন। [৪] পিতা চার্লস রিচার্ড হ্যাভেল ছিলেন একজন শিল্পী। মাতা শার্লট অ্যামেলিয়া লর্ড। তার পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যই ছিলেন শিল্প ও প্রকাশনা জগতের সঙ্গে যুক্ত। আর্নেস্টের পড়াশোনা বার্কশায়ারের রিডিং স্কুলে। সাউথ  কেনসিংটনের রয়াল কলেজ অব আর্টস-এ ভাস্কর্য ও চারুকলা বিষয়ে শিক্ষা লাভ করেন এবং আর সি এ তথা অ্যাসোসিয়েট অফ দ্য  রয়্যাল কলেজ অফ আর্ট ডিগ্রি লাভ করেন। এছাড়া তিনি  প্যারিস এবং ইতালিতেও শিল্প বিষয়ে শিক্ষা নেন।

শিল্প ইতিহাস[সম্পাদনা]

ই বি হ্যাভেল তেইশ বৎসর বয়সে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির গভর্নর স্যার মাউন্ট স্টুয়ার্ট এলফিনস্টোন গ্রান্ট ডাফ-এর সুপারিশে ভারতসচিব লর্ড কিম্বার্লি কর্তৃক মনোনীত হয়ে ভারতে আসেন এবং ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দের ২১ জানুয়ারি মাদ্রাজ সরকারি আর্ট স্কুলে প্রথমদিকে সুপারিনটেনডেন্ট পদে এবং পরে এক দশকের জন্য অধ্যক্ষের কার্যভার গ্রহণ করেন। কিন্তু আট বৎসর পর তিনি ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইউরোপে ফিরে যান এবং চার বৎসর ফ্রান্স ও ইতালিতে চারুকলাচর্চায় অতিবাহিত করেন। এই সময়ে তিনি ডেনিশ নৌবাহিনীর অফিসার জর্জ জ্যাকবসনের কন্যা ভাস্কর লিলি জ্যাকবসনকে বিবাহ করেন।[১] ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দের ৫ জুলাই তিনি পুনরায় ভারতে আসেন এবং পরের দিনই কলকাতার গভর্নমেন্ট স্কুল অফ আর্ট- এর সুপারিনটেনডেন্ট পদে যোগদান করেন। এর মধ্যে, তিনি ১৯০২ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল  থেকে ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দের মার্চ পর্যন্ত এক বছরের জন্য ইংল্যান্ডে যান। ইংল্যান্ডে থাকাকালীন, তিনি লন্ডনের একটি বিখ্যাত আর্ট জার্নাল, দ্য স্টুডিও -এর ১৯০২ খ্রিস্টাব্দের  অক্টোবর  এবং ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি সংখ্যায় ভারতীয় শিল্পের উপর দুটি মূল্যবান নিবন্ধ লেখেন। এখানেই তার সঙ্গে পরিচয় হয় অবনীন্দ্রনাথ, অন্নদাপ্রসাদ বাগচী প্রমুখ শিল্পীর সঙ্গে। প্রায় নয় বৎসর অধ্যক্ষতার পর হ্যাভেল উন্মাদ রোগগ্রস্ত হন এবং ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ১ মার্চ দীর্ঘ ছুটিতে ইংল্যান্ডে ফিরে যান এবং অবশেষে ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে তাকে পদ থেকে অপসারণ করা হয়।। [৫]

হ্যাভেল অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সহযোগিতায় ভারতীয় শিল্প ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীবনে হ্যাভেলের অপরিসীম আগ্রহ ছিল। তিনি নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করার লক্ষ্যে কাজ করেছিলেন। তিনি ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ওরিয়েন্টাল আর্ট প্রতিষ্ঠা করেন। যার মাধ্যমে তিনি শিল্প শিক্ষায় ইউরোপীয় ঐতিহ্যের উপর জোর না দিয়ে ভারতের আদি শিল্প শৈলী বিশেষকরে মুঘল ঐতিহ্যের পুনরুজ্জীবনে সচেষ্ট ছিলেন। হ্যাভেল এই কাজে কেবল অবনীন্দ্রনাথ উৎসাহিত করেননি, তার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন ভগিনী নিবেদিতা, আনন্দকুমার স্বামী ও রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়[১] তিনি ইন্ডিয়ান স্কাল্পচার অ্যান্ড পেন্টিং (১৯০৮) এবং দ্য আইডিয়ালস অফ ইন্ডিয়ান আর্ট (১৯১১) সহ ভারতীয় শিল্পের উপর বেশ কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেন। ভারতীয় শিল্পের উপর স্যার জর্জ বার্ডউডের নেতিবাচক মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ার উত্তরে ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে উইলিয়াম রোথেনস্টাইনের সঙ্গে যৌথ প্রচেষ্টায় রয়েল ইন্ডিয়া সোসাইটি প্রতিষ্ঠায় অংশ নেন।

ব্যক্তিগত জীবন[সম্পাদনা]

ই বি হ্যাভেল ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে   সেন্ট জাইলস, লন্ডন , মিডলসেক্সে ইংল্যান্ডে ডেনিশ নৌবাহিনীর অফিসার জর্জ জ্যাকবসেনের কন্যা অ্যাঞ্জেলিক উইলহেলমিনা লিলি জ্যাকবসেনকে বিবাহ করেন । ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে তাদের কন্যা সোনিয়া জয়েস হ্যাভেল জন্ম গ্রহণ করে। [৪]ই বি হ্যাভেল ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডের অ্যাকল্যান্ড নার্সিং হোমে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

শিল্পকর্ম[সম্পাদনা]

ই বি হ্যাভেলের পত্নী অ্যাঞ্জেলিক উইলহেলমিনা লিলি জ্যাকবসেনও একজন ভাস্কর ছিলেন। তার গড়া মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আবক্ষ-মূর্তিটি কলকাতার বঙ্গীয় বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদে রক্ষিত আছে। হ্যাভেলের মৃত্যুর পর তার পত্নী হ্যাভেলের চিত্র ও বহু পাণ্ডুলিপি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়কে উপহার দেন। [১]

রচনাসম্ভার[সম্পাদনা]

হ্যাভেল ভারতীয় শিল্প ও ইতিহাসের উপর অসংখ্য বই লিখেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল-

মন্তব্য[সম্পাদনা]

  1. সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬ পৃষ্ঠা ৮৮৪, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  2. Mitter, Partha (২০০১)। Indian art। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 177আইএসবিএন 0-19-284221-8 
  3. Cotter, Holland (১৯ আগস্ট ২০০৮)। "Art Review: Indian Modernism via an Eclectic and Elusive Artist"New York Times 
  4. Descendants of Luke Havell
  5. Bagal, Jogesh Chandra (1966). History of the Govt. College of Art and Craft in the Centenary: Government College of Art & Craft, Calcutta, Calcutta: Government College of Art & Craft, pp.21–34

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]