আফরিনে তুর্কি সামরিক অভিযান

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সামরিক অভিজান।

২০১৮ এর জানুয়ারিতে তুর্কি সামরিক বাহিনী সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের শাবা কান্তন এলাকার কুর্দি অধ্যুষিত আফরিন ক্যান্টন ও টেল রিফাত এলাকায় অভিযান শুরু করে। তুর্কি সামরিক বাহিনী এর নামকরণ করে অপারেশন অলিভ ব্রাঞ্চ (Operation Olive Branch) (Turkish: Zeytin Dalı Harekâtı)। আক্রমণ মূলত সিরিয়ার শহর আফরিনকে ঘিরে সিরিয়ার কুর্দি নেতৃত্বাধীন ডেমোক্রাটিক ইউনিয়ন পার্টি (PYD), এর সশস্ত্র শাখা পিপলস প্রোটেকসান ইউনিট (YPG) এবং সিরিয়ান ডেমোক্রাটিক ফোর্সের (SDF) অবস্থানের উপর লক্ষ্য করে চালানো হয়। যদিও আইএস জঙ্গির কোন অস্তিত্ব আফরিনে নেই তবুও তুরস্ক বলছে তারা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। আফরিন অঞ্চলের, আফরিন ক্যান্টনের মতো, আফরিন ও এর আশেপাশের এলাকা 'ডেমোক্রাটিক ফেডারেশন অফ নর্দান সিরিয়া' দ্বারা অধিকৃত। অপারেশন ইউফ্রেটিস শিল্ড এর পর সিরিয়ায় তুরস্কের এটি অন্যতম প্রথম অভিযান।

তুর্কি প্রেসিডেন্ট রেজেপ তাইয়িপ এরদোয়ান বিবৃতি দিয়েছেন যে এ অভিযান উত্তরাঞ্চলীয় শহর মানবিজ পর্যন্ত চলবে, যা যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত কুর্দি বাহিনী ২০১৬ সালে আইএস এর কাছ থেকে দখল করে। মার্কিন জেনারেলরা বলেছেন যে তারা আক্রমণাত্মক ভাবেই সাড়া দিবে যদি তাদের বিরুদ্ধে এরকম উত্তেজক কিছু শুরু হয়। তুরস্ক, ফ্রি সিরিয়ান আর্মিকে সাথে নিয়ে YPG সহ অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মুখোমুখি হচ্ছে। YPG ঘোষণা দিয়েছে যে তারা তাদের জনগণকে রক্ষা করবে এবং তুরষ্কেরও জবাব দিবে। অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে ৮৫-১১৫ জন মানুষ মারা গেছে এবং ১৬০০০ মানুষ বাসচুত্য হয়েছে।

পটভূমি[সম্পাদনা]

২০১২ এর বসন্তে সিরিয়ায় গৃহ যুদ্ধ চলাকালীন আসাদ সরকারের বাহিনী আফরিন থেকে পিছু হটে। পরবর্তীতে YPG শহরটি দ্রুত নিয়ন্ত্রণ নেয়। ২০১৪ এর ২৯ শে জানুয়ারি আফরিন ক্যান্টনকে স্বাধীন অংশ হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং অঞ্চলটি ফলত গৃহযুদ্ধ থেকে মুক্ত থাকে, তার সাথে আইএসও আক্রমণ করেনি। আফরিন সিরিয় সরকার ও প্রতিবেশী বিদ্রোহী গোষ্ঠীসমূহ উভয়েরই বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়। ২০১৬ এর ফেব্রুয়ারিতে আলেপ্পো যুদ্ধের পরবর্তী অংশে সিরিয় বাহিনী আলেপ্পতে বিদ্রোহীদের মজুদ পরিবহন পথ বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীকালে কুর্দি বাহিনী আফরিনের বাইরে পূর্বে এগিয়ে যায় মেনাঘ সামরিক বিমান ঘাঁটি এবং টেল রিফাত শহর দখল করে, বিদ্রোহীদের উপর সফলভাবে আক্রমণ করে। জবাবে তুর্কি বাহিনী সীমান্তের ওপারে কুর্দি বাহিনীকে দমন করে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত শহর এজাজ রক্ষার জন্য। ২০১৭ তে রুশ সামরিক বাহিনী চুক্তি অনুসারে YPG কে তুর্কি বাহিনীর অন্তর্বর্তীকালীন হামলা থেকে রক্ষা করার জন্য আফরিনে ঘাঁটি স্থাপন করে।

কয়েক যুগ ধরে দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কে, তুরস্ক, পিকেকে ও অন্যান্য গোষ্ঠীর সাথে লড়াই করছে। কুর্দি-তুর্কি সংঘর্ষে অনুমিত ৪০০০০ প্রাণ হারিয়েছে। তুরস্ক সরকারের বিবৃতিতে তারা সিরিয় YPG বাহিনী ও পিকেকের মধ্যে কোন পার্থক্য দেখেনা এবং উভয় কেই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে দাবি করে। পিকেকেকে যুক্তরাষ্ট্র দ্বারা পরিচালিত বিদেশী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে মনোনীত করা হয়,YPG এর ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এর অবস্থান হলো তারা একে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী মনে করেনা, এই এক অবস্থান যা ২ ন্যাটো মিত্রের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি করে। যদিও সিআইএ পিকেকে কে YPD এর সিরিয়ান উইং হিসেবে দাবি করেছে ২০১৮ এর ২৩শে জানুয়ারিতে। কিন্তু সিরিয়ান অবজারভেটরি অব হিউম্যান রাইটস এর প্রধান মন্তব্য করেছেন,"তুরস্ক যেকোন কিছুকেই সমর্থন করে যারা কুর্দিদের ক্ষতি করে" এবং বিবৃতি দিয়েছে যে সিরিয় গৃহ যুদ্ধের শুরু থেকেই তুরস্ক জিহাদী যোদ্ধাদের সীমান্ত পার হতে দিচ্ছে সিরিয়ায় কুর্দিদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য।

আক্রমণের বিষয়টি সাধারণভাবে YPG এর কুর্দি যোদ্ধাদের নিয়ে তৈরি সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সকে সমর্থন করার পরবর্তীতে যেটিকে তুরস্ক PKK এর শাখা হিসেবে দেখে, তুরস্ক ও আমেরিকার বৃদ্ধিজনক উত্তেজনার মাঝে আসে। বিষদভাবে তুরস্ক সীমান্তে যুক্তরাষ্ট্রের ৩০০০০ যোদ্ধাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া ও তাদের অস্ত্র দিয়ে সজ্জিত করার পরিকল্পনার প্রতিবাদ করে এবং এটিকে তুরস্কের জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হুমকি হিসেবে দাবি করে।

সিরিয় কুর্দি নেতৃত্বের উৎস উল্লেখ করে গণ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে,তুরস্কের আক্রমণের আগে,বিকল্প উপায় হিসেবে রাশিয়া প্রস্তাব দিয়েছিল যে আফরিনে কুর্দি কর্তৃপক্ষ সিরিয় সরকারকে স্বীকৃতি দেয়; প্রস্তাবটি তখনি বাতিল করা হয়।

আক্রমণের কিছুদিন পূর্বে আফরিনের কাছে তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তে, তুরস্ক ও তুরস্ক সমর্থিত ফ্রি সিরিয়ান আর্মি YPG জঙ্গিদের সাথে গোলাগুলি বিনিময় করে। TFSA অধিকৃত এজাজ শহরটিকে YPG আবরণ হিসেবে ব্যবহৃত করে। তুরস্ক থেকে পরিচালিত আনাদলু এজেন্সি প্রতিবেদন দিয়েছিল যে, আফরিনে YPG এর অবস্থানের উপর তুর্কি আক্রমণ আঁচ করার পর ১৯ জানুয়ারি ২০১৮ তে রুশ সেনাবাহিনী তাদের পর্যবেক্ষকদের সরিয়ে নেওয়া শুরু করে।

আক্রমণ[সম্পাদনা]

প্রাথমিক FSA-তুর্কি অগ্রগতি[সম্পাদনা]

১৯ শে জানুয়ারি ২০১৮ তে তুর্কি সরকার অভিযান শুরু করার ঘোষণা দেয়, সাথে তুর্কি প্রতিরক্ষামন্ত্রী নুরেত্তিন কানিকলি বিবৃতি দেয়, " অভিযান আসলে শুরু হয়েছে আন্তঃসীমান্তে বোমা বর্ষনের মাধ্যমে। " তিনি আরও বলেছেন কোন সৈন্যবাহিনী সীমান্ত অতিক্রম করেনি। তুরস্ক পরে বোমাবর্ষন তীব্র করলেও, পিপলস প্রোটেকসান ইউনিট (YPG) রাতভর ৭০ টি বোমা বর্ষনের দাবি করেছে। বোমা বর্ষনের কয়েকদিন পর ,২০ শে জানুয়ারি ২০১৮ তে তুর্কি ফাইটার জেট সমূহ সীমান্ত জেলায় PYD ও YPG বাহিনীর অবস্থানের উপর লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায়।

তুর্কি গণমাধ্যমসমূহ প্রতিবেদন দিয়েছে যে ২০ টি বাসে করে তুর্কি সমর্থিত সিরিয় বিদ্রোহীদের বিরোধীরা অনকুপার সীমান্ত ক্রসিং এর মাধ্যমে সিরিয়ায় প্রবেশ করেছে। একজন এএফপি এর ফটোগ্রাফার বিবৃতি দিয়েছেন যে সিরিয় যোদ্ধাদের বহনকারী ৩০ টি বাস কিলভেগজু সীমান্ত ক্রসিংয়ের মাধ্যমে সিরিয়ায় প্রবেশ করেছে।