বিষয়বস্তুতে চলুন

অ্যালিশিয়া ন্যাশ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
অ্যালিশিয়া ন্যাশ
ইংরেজি: Alicia Nash
২০০৬ সালে ন্যাশ
জন্ম
অ্যালিশিয়া এস্থার লার্দে লোপেজ-হ্যারিসন

(১৯৩৩-০১-০১)১ জানুয়ারি ১৯৩৩
মৃত্যুমে ২৩, ২০১৫(2015-05-23) (বয়স ৮২)
মাতৃশিক্ষায়তনম্যাসাচুসেট্‌স ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি
দাম্পত্য সঙ্গীজন ফোর্বস ন্যাশ জুনিয়র
(বি. ১৯৫৭; বিচ্ছেদ. ১৯৬৩)

(বি. ২০০১; তাদের মৃত্যু ২০১৫)
সন্তান

আ্যালিশিয়া এস্থার ন্যাশ (লার্দে লোপেজ হ্যারিসন; ১ জানুয়ারি ১৯৩৩ - ২৩ মে ২০১৫) একজন সালভাদোরীয়-মার্কিন পদার্থবিদ ছিলেন। তিনি গণিতবিদ জন ফোর্বস ন্যাশ জুনিয়রের স্ত্রী, যিনি তার সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত স্বামী এবং ছেলের সেবার জন্য তার পেশাগত উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছেড়ে দিয়েছিলেন।

ন্যাশের সাথে তার অতিবাহিত জীবন সিলভিয়া নাসারের ১৯৯৮ সালের বই আ বিউটিফুল মাইন্ড-এ লিপিবদ্ধ করা হয়, এবং ২০০১ সালে রন হাওয়ার্ড পরিচালিত একই শিরোনামের চলচ্চিত্রে দেখানো হয়, যাতে তার ভূমিকায় অভিনয় করেন জেনিফার কনেলি[][]

ব্যক্তিগত জীবন

[সম্পাদনা]

অ্যালিশিয়া লার্দে লোপেজ-হ্যারিসন ১৯৩৩ সালের ১লা জানুয়ারি এল সালভাদোরের সান সালভাদোরে জন্মগ্রহণ করেন। তার মাতা অ্যালিশিয়া (জন্মনাম: লোপেজ-হ্যারিসন) এবং পিতা কার্লোস লার্দে একজন ডাক্তার ছিলেন। তার দুইভাই ছিল, তারা হলেন কার্লোস ও রোলানদো লার্দে। তার পিতামাতা দুজনেই সামাজিকভাবে বিত্তশালী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং একাধিক ভাষায় কথা বলতেন। তার ফুফু অ্যালিস লার্দে দে ভেঞ্চুরিনো একজন কবি ছিলেন এবং পিতামহ হোর্হে লার্দে রাসায়নিক প্রকৌশলী ছিলেন।[]

অ্যালিশিয়ার শৈশবে তার পিতা কয়েকবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করেন এবং ১৯৪৪ সালে স্থায়ীভাবে পরিবার নিয়ে সেখানে পাড়ি জমান। প্রথমে তারা মিসিসিপি অঙ্গরাজ্যের বিলক্সিতে বসবাস করেন এবং পরে নিউ ইয়র্ক সিটিতে চলে যান।[] অ্যালিশিয়া ম্যারিমন্ট স্কুলে ভর্তি হন। ম্যারিমন্ট থেকে পাস করে ম্যাসাচুসেট্‌স ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে পদার্থবিজ্ঞান অধ্যয়নের জন্য ভর্তি হন। তিনি ১৯৫০-এর দশকে এমআইটিতে অধ্যয়ন করা অল্প কয়েকজন নারীর একজন ছিলেন। সেখানেই তিনি তার ভবিষ্যৎ স্বামী গণিতবিদ জন ফোর্বস ন্যাশ জুনিয়রের সাথে পরিচিত হন।[]

১৯৫০-এর দশকের শুরুতে ন্যাশের মানসিক অসুস্থতার ইঙ্গিত দেখা দিলেও,[][] তারা ১৯৫৭ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৫৮ সালে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হন এবং তাদের সন্তান জন চার্লস মার্টিন ন্যাশও ভগ্নমনস্কতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করার সম্ভাবনা দেখা যায়।[] ১৯৫৯ সালে তাদের সন্তান জন্মের কিছুদিন পূর্বে ন্যাশকে তার অসুস্থতার চিকিৎসার জন্য ম্যাকলিন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।[] ৫০ দিন হাসপাতালে অতিবাহিত করার পর তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়,[] কিন্তু পরের কয়েক বছরে তাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার বোন আরও তিনবার হাসপাতালে ভর্তি করেন।[] ১৯৬৩ সালে এই দম্পতির বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে, কিন্তু ১৯৬৮ সালে জনের মাতা মারা যাওয়ার পর, তিনি অ্যালিশিয়াকে তার সাথে থাকার জন্য অনুরোধ করে। ১৯৭০ সালে জন তার সাথে থাকতে শুরু করে এবং অ্যালিশিয়া তার সাবেক-স্বামীর সেবাশুশ্রূষা করতে থাকেন। ২০০১ সালে তারা পুনরায় বিয়ে করেন।[]

২০০২ সালে তারা অ্যালিশিয়ার দেশ এল সালভাদোরে যান, সেখানে তার জীবনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে রাষ্ট্রপতি ফ্রান্সিস্কো ফ্লোরেস পেরেস তাকে সম্মানিত করেন।[]

কর্মজীবন

[সম্পাদনা]

ম্যাসাচুসেট্‌স ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে স্নাতক সম্পন্ন করার পর ন্যাশ গবেষণাগারের পদার্থবিদ হিসেবে ব্রুকহেভেন নিউক্লিয়ার ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশনে কাজ শুরু করেন। ১৯৬০-এর দশকের শুরুতে তিনি অ্যারোস্পেস প্রকৌশলী হিসেবে আরসিএ কর্পোরেশনে যোগদান করেন, কিন্তু কিছুদিন পর চাকরি ছেড়ে দেন। এরপর তিনি কন এডিসনে সিস্টেম প্রোগ্রামার হিসেবে কয়েক বছর কাজ করেন এবং পরে নিউ জার্সি ট্রানজিট ব্যবস্থায় কম্পিউটার প্রোগ্রামার ও ডেটা অ্যানালিস্ট হিসেবে কাজ করেন।[][] তিনি একাধিক নারী প্রকৌশলী সংস্থার সদস্য ছিলেন। যখন আ বিউটিফুল মাইন্ড মুক্তি পায়, তখন অ্যালিশিয়া ন্যাশ এমআইটি'র অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন বোর্ডের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন।[]

মানসিক স্বাস্থ্যের মুখপাত্র

[সম্পাদনা]

অ্যালিশিয়া ভগ্নমনস্কতা ও মানসিক অসুস্থতার মুখপাত্র হয়ে ওঠেন। ২০০৫ সালে তাকে ব্রেইন অ্যান্ড বিহ্যাভিয়ার রিসার্চ ফাউন্ডেশন থেকে লুমিনারি পুরস্কার প্রদান করা হয়। তিনি মানসিক অসুস্থতা নিয়ে আলোচনা করতে বিভিন্ন দেশে গমণ করেন এবং ২০০৯ সালে তিনি নিউ জার্সির অঙ্গরাজ্যের আইনপ্রণেতাদের সাথে অঙ্গরাজ্যের মানসিক স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থার উন্নতি নিয়ে আলোচনা করেন। ২০১২ সালে ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট অস্টিনের জন ও অ্যালিশিয়া ন্যাশ সম্মেলনে মানসিক অসুস্থতায় পাশে থাকার জন্য তাকে সম্মানিত করেন এবং সেখানে তিনি সম্মেলনের প্রধান বক্তৃতা পেশ করেন।[][১০][১১][১২]

মৃত্যু

[সম্পাদনা]

অ্যালিশিয়া ও তার স্বামী জন ন্যাশ ২০১৫ সালের ২৩শে মে নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যের মনরো টাউনশিপের নিউ জার্সির টার্নপাইকে এক গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃতুবরণ করেন। তারা জন ন্যাশের আবেল পুরস্কার গ্রহণের পর নরওয়ে থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। নিওয়ার্ক বিমানবন্দর থেকে ফেরার পথে যে ট্যাক্সিক্যাব চালক গাড়ি চালাচ্ছিলেন তিনি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গার্ডরেলে আঘাত করেন। দুজন যাত্রীই গাড়ি থেকে বের করার পর মারা যান।[১৩][১৪][১৫][১৬][১৭]

গণমাধ্যমে চিত্রায়ন

[সম্পাদনা]

২০০১ সালের আ বিউটিফুল মাইন্ড চলচ্চিত্রে জেনিফার কনেলি তার ভূমিকায় অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে একাডেমি পুরস্কার অর্জন করেন, এবং পুরস্কার গ্রহণকালে ন্যাশের নাম উল্লেখ করেন।[][১৮] লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস-এর লিসা নাভারেট কনেলিকে অভিনয়শিল্পী নিয়ে নেওয়ার সমালোচনা করে লিখেন যে এটি হোয়াইটওয়াশিং তথা অ-শ্বেতাঙ্গ চরিত্রে শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তিকে নেওয়ার উদাহরণ।[১৯]

আরও পড়ুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Alicia Nash's beautiful, complex, rebellious life"দ্য স্টার। ২৯ মে ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০২৩ 
  2. হেইবোর, কেলি (২৬ মে ২০১৫)। "John Nash's funeral to be private: Alumni plan tribute"নিউ জার্সি অ্যাডভান্স (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০২৩ 
  3. "Alicia Nash biography"পিবিএস। ২ মার্চ ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০২৩ 
  4. বাস্কেস, বেরোনিকা; গেরেরো, ফ্রান্সিস্কা (২২ মার্চ ২০০২)। "Alicia Lardé de Nash: Refugio de un Genio" [Alicia Lardé Nash: Refuge of a genius]। লা প্রেনসা গ্রাফিকা (স্পেনীয় ভাষায়)। এল সালভাদোর। পৃষ্ঠা ১১৮–১১৯। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০২৩ 
  5. ডিডিওন, জোন (২৩ এপ্রিল ১৯৯৮)। "Varieties of Madness"দ্য নিউ ইয়র্ক রিভিউ অব বুকস। নিউ ইয়র্ক সিটি। আগস্ট ১৩, ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০২৩ 
  6. "The Lost Years of a Nobel Laureate"দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস। ৫ জুন ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০২৩ 
  7. "Fallecen la salvadorena Alicia Larde y nobel de economia John Nash en accidente" [সালভাদোরীয় অ্যালিশিয়া লার্দে এবং নোবেল পুরস্কার বিজয়ী জন ন্যাশ দুর্ঘটনায় মারা যান]। লা প্রেনসা গ্রাফিকা (স্পেনীয় ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০২৩ 
  8. লিভিও, সুজান কে. (২৮ মে ২০১৫)। "Wife was loyal heart to John Nash's 'Beautiful Mind'"নিউ জার্সি অ্যাডভান্স (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০২৩ 
  9. UTA Symposium ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত মে ২৯, ২০১৫ তারিখে
  10. লিভিও, সুজান কে. (১৫ মার্চ ২০০৯)। "Mathematician John Nash and family advocate for mental health care"নিউ জার্সি অ্যাডভান্স (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০২৩ 
  11. নাট, অ্যামি এলিস (২৭ মে ২০১৫)। "Alicia Nash, wife of Nobel laureate, dies at 82"দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০২৩ 
  12. Alicia Nash dies at 82. Retrieved May 28, 2015
  13. মা, মাইলস (২৩ মে ২০১৫)। "Famed 'A Beautiful Mind' mathematician John Nash, wife, killed in N.J. Turnpike crash"দ্য স্টার লেজার। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০২৩ 
  14. "'A Beautiful Mind' mathematician John Nash, wife killed in crash"ইউএসএ নিউজ। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০২৩ 
  15. "'Beautiful Mind' mathematician John Nash killed in crash"বিবিসি নিউজ। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০২৩ 
  16. "Princeton mathematician John Nash and his wife, Alicia, are killed in a car accident"। কোয়ার্টজ। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০২৩ 
  17. "John Nash, mathematician who inspired 'A Beautiful Mind', killed in car crash"রয়টার্স। ২৪ মে ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০২৩ 
  18. "Academy Awards database"অস্কার। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০২৩ 
  19. নাভারেট, লিসা (১ এপ্রিল ২০০২)। "Why the Whitewashing of Alicia Nash?"লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০২৩ 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]