অতুল সুর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
অতুল সুর
জন্মঅতুল সুর
(১৯০৪-০৮-০৫)৫ আগস্ট ১৯০৪
শ্যামবাজার কলকাতা বৃটিশ ভারত (বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ)
মৃত্যু২ জানুয়ারি ১৯৯৯(1999-01-02) (বয়স ৯৪)
কলকাতা পশ্চিমবঙ্গ
ছদ্মনামযম, চন্দ্রাবতী
পেশাঅধ্যাপনা, ঐতিহাসিক, নৃতাত্ত্বিক
ভাষাবাংলা
জাতীয়তাভারতীয়
নাগরিকত্বভারতীয়
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্কটিশ চার্চ কলেজ
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
সময়কাল(১৯২৮ -১৯৯৯)

ড. অতুল সুর বা অতুলকৃষ্ণ সুর (৫ আগস্ট ১৯০৪ - ২ জানুয়ারি ১৯৯৯) ছিলেন বিশিষ্ট ঐতিহাসিক, নৃতাত্ত্বিক, অর্থনীতিবিদ, লেখক ও কলকাতা বিশেষজ্ঞ।[১][২] ভারতীয় সভ্যতার উৎস নির্ণয়ে যাদের অবদান উল্লেখযোগ্য তিনি ছিলেন তাদের অন্যতম।

জন্ম ও শিক্ষা জীবন[সম্পাদনা]

অতুলকৃষ্ণ সুরের জন্ম ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দের ৫ই আগস্ট বৃটিশ ভারতের রাজধানী কলকাতার শ্যামবাজারে এক সদগোপ পরিবারে। তার চিকিৎসক পিতা সেসময়ের গণ্যমান্য ব্যক্তি ছিলেন। অতুলকৃষ্ণ অসাধারণ স্মৃতিশক্তিধর ছিলেন। কলকাতার বিদ্যাসাগর স্কুল থেকে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে তিনি ম্যাট্রিক পাশ করেন। ইতিহাসে তিনি ১০০ নম্বরের মধ্যে নিরানব্বই নম্বর পেয়েছিলেন। এরপর স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে স্নাতক হন। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাচীন ভারতের ইতিহাস ও সংস্কৃতি এবং নৃতত্ত্ব বিষয়ে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করে স্বর্ণ পদক পান। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি জুরিখ থেকে ডি.এসসি ডিগ্রি লাভ করেন অর্থনীতিতে। তার গবেষণালব্ধ প্রবন্ধ ম্যান ইন ইন্ডিয়া প্রথম প্রকাশিত হয়। অতুল সুর অর্থথনীতিবিদ হলেও ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, সংখ্যাতত্ত্ব, নৃতত্ত্ব ইত্যাদি বিষয়ে তার অগাধ পাণ্ডিত্য ছিল।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

ভারতের প্রত্নতত্ত্ব সমীক্ষার অধিকর্তা স্যার মারশালের আহ্বানে তিনি মহেঞ্জাদড়ো যান এবং ভারতীয় সভ্যতার বহু তথ্য আবিষ্কার করেন। তিনি দশ বৎসরের বেশি সময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্টে ফলিত অর্থনীতির অধ্যাপক ছিলেন। কমার্সিয়াল গেজেট পত্রিকার সহযোগী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টের অতিথি অধ্যাপকও ছিলেন। দীর্ঘ চৌত্রিশ বৎসর অধ্যাপক সুর ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জ অ্যাসোসিয়েশনের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ছিলেন। একসময় তিনি হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ড ও বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার বিজনেস এডিটরের দায়িত্ব পালন করেছেন। যম ছদ্মনামে লেখা প্রবন্ধ প্রতিদিন কাগজে বের হত।

রচনাবলী[সম্পাদনা]

অতুলকৃষ্ণ সুর বিভিন্ন বিষয়ে অগাধ পাণ্ডিত্যে গবেষণাধর্মী তথ্যনির্ভর বহু গ্রন্থ যেমন রচনা করেছেন, তেমনি অর্থনীতি, ইতিহাস ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে প্রায় ১৫৪ টি গ্রন্থ লিখেছেন। তবে গ্রন্থগুলি তথ্য নির্ভর হলেও মননশীলতার ছোঁয়া ও ভাষাশৈলীর নান্দনিক দিকটিও সযত্নে বজায় রেখেছেন। ইংরাজী ও বাংলা উভয় ভাষাতেই গ্রন্থ রচনা করেছেন। কয়েকটি বই তিনি চন্দ্রাবতী ছদ্মনামে লিখেছেন। তার লেখা প্রবন্ধের সংখ্যা দশ হাজারেরও বেশি। উল্লেখযোগ্য প্রধান গ্রন্থগুলি হল-

গবেষণাধর্মী গ্রন্থ-
  • কেমব্রিজ হিস্ট্রি অফ ইন্ডিয়া
  • হিস্ট্রি অ্যান্ড কালচার অফ বেঙ্গল
  • ডাইন্যাস্টিক হিস্ট্রি অফ ইন্ডিয়া
অর্থনীতি বিষয়ে-
  • ভারতের মূলধনের বাজার
  • চ্যালেঞ্জ অফ রুরাল পভার্টি
নৃতাত্ত্বিক বিষয়ে-
  • হিন্দুসভ্যতার নৃতাত্ত্বিক ভাষ্য
  • বাঙালির নৃতাত্ত্বিক পরিচয় (১৯৭৭)
  • ভারতের নৃতাত্ত্বিক পরিচয় (১৯৮৮)
সমাজ ও ইতিহাস বিষয়ে-
  • ভারতের বিবাহের ইতিহাস (১৯৬০)
  • বাঙলা ও বাঙালি (১৯৫০)
  • আঠারো শতকের বাংলা ও বাঙালি (১৯৫৭)
  • চোদ্দ শতকের বাঙালি (১৯৯৯)
  • ফোক এলিমেন্ট ইন বেঙ্গলি লাইফ
  • ডায়ানামিক্স অফ সিন্থেসিজম ইন হিন্দু কালচার
  • হিস্টোরিয়ান কালচার অফ ইন্ডিয়া
  • হিস্ট্রি অ্যান্ড কালচার অফ ইন্ডিয়ান পিপ্ ল
  • বাংলার সামাজিক ইতিহাস (১৯৭৬)
অন্যান্য বিষয়ে -
  • বাংলা মুদ্রণের দু-শো বছর
  • দেবলোকের যৌনজীবন (১৯৮৩)
  • প্রমীলা প্রসঙ্গ (১৯৩৯)
  • কালের কড়চা (চন্দ্রাবতী ছদ্মনামে লেখা)
  • স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে আমরা কেমন আছি

জীবনাবসান[সম্পাদনা]

অতুল সুর ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২রা জানুয়ারি ৯৪ বৎসর বয়সে প্রয়াত হন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা ১০, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
  2. শিশিরকুমার দাশ (২০১৯)। সংসদ বাংলা সাহিত্যসঙ্গী। সাহিত্য সংসদ, কলকাতা। পৃষ্ঠা ৫। আইএসবিএন 978-81-7955-007-9