লুইস অম্ল ও ক্ষার
রসায়নে অম্ল ও ক্ষারকে সংজ্ঞায়িত করার জন্য অন্যতম পদ্ধতি হল লুইস পদ্ধতি। এই পদ্ধতি অনুসারে যারা আম্লিক হিসাবে বিবেচিত তাদেরকে লুইস অম্ল বা লুইস অ্যাসিড এবং যারা ক্ষারীয় হিসাবে বিবেচিত হয় তাদেরকে লুইস ক্ষার বলা হয়। মার্কিন বিজ্ঞানী গিলবার্ট নিউটন লুইস এই ধারার জনক।[১]
এই মতানুসারে যে সমস্ত যৌগ নিঃসঙ্গ ইলেকট্রন জোড় গ্রহণে সক্ষম তাদেরকে লুইস অম্ল বলা হয় এবং যারা নিঃসঙ্গ ইলেকট্রন প্রদান করতে পারে তাদের লুইস ক্ষার বলা হয়। সাধারণত এই ইলেকট্রন গ্রহণ ও প্রদান অসমযোজী বন্ধন গঠনের মাধ্যমে সাধিত হয়।[২] যেমন অ্যামোনিয়া একটি লুইস ক্ষার যা তার নিজের ইলেকট্রন অন্য যৌগকে প্রদান করতে পারে (যেমন- বোরন ট্রাইফ্লুরাইড)। এক্ষেত্রে বোরন ট্রাইফ্লুরাইড হল লুইস অম্ল।
আবার অপর পক্ষে, লুইস অম্ল ও লুইস ক্ষারকে যথাক্রমে ইলেকট্রোফাইল[২][৩] ও নিউক্লিওফাইল বলা হয়।[৪]দুর্বল লুইস ক্ষারক ভালো নিউক্লিওফাইল হিসেবে কাজ করে।
লুইস অম্ল
[সম্পাদনা]বিভিন্ন ধরনের পদার্থই ইলেকট্রন জোড় গ্রহণ করতে পারে কিন্তু তাদের প্রকৃতি সবসময় একই রকম হয় না। নিম্নে বিভিন্ন ধরনের লুইস অম্লের উদাহরণ দেওয়া হল:
সরল লুইস অম্ল
[সম্পাদনা]জৈববোরন যৌগ এবং বোরন ট্রাই হ্যালাইড যৌগগুলি এই প্রকৃতির অন্তর্ভুক্ত।[৫]
- BF3 + F− → BF−4
এইগুলি সাধারণত একটি লুইস ক্ষারের সাথেই যুক্ত হতে পারে। কিন্তু এমন লুইস অম্ল আছে যারা একাধিক লুইস খানের সাথে যুক্ত হতে পারে। যেমন হেক্সাফ্লুওরোসিলিকেট তৈরী:
- SiF4 + 2 F− → SiF2−6
জটিল লুইস অম্ল
[সম্পাদনা]কিছু লুই অম্লের রাসায়নিক বিক্রিয়ার সুবিধার্থে একক হিসেবে ধরে নেওয়া হয়, কিন্তু তারা একাধিক যুক্ত থাকে বা পলিমার গঠন করতে পারে, যেমন অ্যালুমিনিয়াম ট্রাইক্লোরাইড, বোরেন।[৬]
কিছু জটিল যৌগ লুইস অম্ল হিসাবে কাজ করতে পারে যেহেতু তাদের ফাঁকা অরবিটাল বর্তমান।
- [Mg(H2O)6]2+ + 6 NH3 → [Mg(NH3)6]2+ + 6 H2O
লুইস অম্ল হিসেবে H+
আয়ন
[সম্পাদনা]- H+ + NH3 → NH+4
- H+ + OH− → H2O
লুইস অম্লের প্রয়োগ সমূহ
[সম্পাদনা]ফ্রিডেল–ক্রাফট বিক্রিয়ায় লুইস তত্ত্বের বহুল ব্যবহার করা হয়। এখানে অ্যালুমিনিয়াম ট্রাইক্লোরাইড (AlCl3) ব্যবহার করা হয়, যা একটি লুইস অম্ল।[৭] AlCl3 রাসায়নিক মাধ্যম থেকে Cl− (লুইস ক্ষার) আয়ন গ্রহণ করে বিক্রিয়ার সূচনা করে।
- RCl +AlCl3 → R+ + AlCl−4
লুইস ক্ষার
[সম্পাদনা]বিভিন্ন ধরনের পদার্থই ইলেকট্রন জোড় দান করতে পারে কিন্তু তাদের প্রকৃতি সবসময় একই রকম হয় না। নিম্নে বিভিন্ন ধরনের লুইস ক্ষারের উদাহরণ দেওয়া হল:
- সরল অ্যানায়ন, যেমন H− ও F−
- নিঃসঙ্গ ইলেকট্রন জোড়যুক্ত অণু/আয়ন, H2O, NH3, HO−, ও CH3−
- জটিল অ্যানয়ন, যেমন সালফেট
- ইলেকট্রনের আধিক্য যুক্ত π-সিস্টেম, যেমন ইথাইন, ইথিন, ও বেঞ্জিন
- অ্যামিন (NH3−xRx, যেখানে R = অ্যালকিল বা অ্যারাইল)। এছাড়াও পিরিডিন ও পিরিডিন জাত যৌগসমূহ।
- ফসফিন, যাদের সংকেত PR3−xArx।
- O, S, Se ও Te এর যৌগ যাদের জারণ সংখ্যা –২; যেমন জল, ইথার, কিটোন।
লুইস ক্ষারের ক্ষমতা লুইস অম্লের সাথে বিক্রিয়ার হার থেকে নির্ণয় করা হয়।
ফ্রিডেল–ক্রাফট বিক্রিয়ায় লুইস ক্ষারের বিক্রিয়া ভাল হয়না। যেমন অ্যানিলিন যৌগের অ্যালকাইলেশন। এখানে নাইট্রোজেন নিজের নিঃসঙ্গ ইলেকট্রন জোড় মাধ্যমের H+ কে দান করে ও NH+3 তৈরি করে। ফলে বিক্রিয়ার হার অনেক কমে যায়।
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Lewis, Gilbert Newton (১৯২৩)। Valence and the Structure of Atoms and Molecules। American chemical society. Monograph series। New York, New York, U.S.A.: Chemical Catalog Company। পৃষ্ঠা 142। আইএসবিএন 9780598985408। পাতা ১৪২: "We are inclined to think of substances as possessing acid or basic properties, without having a particular solvent in mind. It seems to me that with complete generality we may say that a basic substance is one which has a lone pair of electrons which may be used to complete the stable group of another atom, and that an acid substance is one which can employ a lone pair from another molecule in completing the stable group of one of its own atoms. In other words, the basic substance furnishes a pair of electrons for a chemical bond, the acid substance accepts such a pair."
- ↑ ক খ International Union of Pure and Applied Chemistry. "Lewis acid". Compendium of Chemical Terminology Internet edition.
- ↑ International Union of Pure and Applied Chemistry. "Electrophile (Electrophilic)". Compendium of Chemical Terminology Internet edition.
- ↑ Anslyn, Eric V. (২০০৬)। Modern physical organic chemistry। Dougherty, Dennis A., 1952-। Sausalito, CA: University Science। আইএসবিএন 1891389319। ওসিএলসি 55600610। [পৃষ্ঠা নম্বর প্রয়োজন]
- ↑ Rowsell, Bryan D.; Gillespie, Ronald J.; Heard, George L. (১৯৯৯)। "Ligand Close-Packing and the Lewis Acidity of BF3 and BCl3"। Inorganic Chemistry। 38 (21): 4659–4662। ডিওআই:10.1021/ic990713m। পিএমআইডি 11671188।
- ↑ Greenwood, N. N.; & Earnshaw, A. (1997). Chemistry of the Elements (2nd Edn.), Oxford:Butterworth-Heinemann. আইএসবিএন ০-৭৫০৬-৩৩৬৫-৪.[পৃষ্ঠা নম্বর প্রয়োজন]
- ↑ March, J. “Advanced Organic Chemistry” 4th Ed. J. Wiley and Sons, 1992: New York. আইএসবিএন ০-৪৭১-৬০১৮০-২.[পৃষ্ঠা নম্বর প্রয়োজন]
আরও পড়ুন
[সম্পাদনা]- Jensen, W.B. (১৯৮০)। The Lewis acid-base concepts : an overview। New York: Wiley। আইএসবিএন 0-471-03902-0।
- Yamamoto, Hisashi (১৯৯৯)। Lewis acid reagents : a practical approach। New York: Oxford University Press। আইএসবিএন 0-19-850099-8।