বেতিয়া ঘরানা
বেতিয়া ঘরানা হল উত্তর ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের হিন্দুস্তানি ধারার ধ্রুপদ সংগীতের একটি ঘরানা। প্রধানত ঊনিশ শতকের বিহারের বেতিয়া রাজ দরবারে এটির সূত্রপাত হয়। বেতিয়া অধুনা বিহার রাজ্যের পশ্চিম চম্পারণ জেলার সদর শহর। শৈলীগুণে বেতিয়া ঘরানা সমগ্র পূর্ব ভারতে বিশেষকরে বাংলায় জনপ্রিয়তা লাভ করে। কারণ,বাংলার বিষ্ণুপুর ঘরানার সাথে এর ঘনিষ্ঠ যোগ ছিল, কেননা বেতিয়ার উস্তাদেরা পরবর্তীতে বিষ্ণুপুর ঘরানার সঙ্গীতশিল্পীদের প্রশিক্ষিত করে। [১] তবে অতীতে এর জনপ্রিয়তা থাকলেও "ডাগর বাণী"র অধিক চর্চার কারণে এটি প্রতিকূলতার মধ্যে রয়েছে। [২] নেপাল রাজ দরবারের খ্যাতনামা সঙ্গীতজ্ঞ রহিমসেন ও করিমসেনর বিশিষ্ট শিষ্য শিবদয়াল মিশ্রের বেতিয়া আগমনে বেতিয়ার ঐতিহ্যবাহী ধ্রুপদী ধারার সূত্রপাত ঘটে। তিনিই রাজ পরিবারের দুই ভ্রাতা আনন্দকিশোর ও নওলকিশোর সিনহাকে প্রশিক্ষিত করেন এবং এরাই পরবর্তীতে উচ্চমানের সুরকার হিসাবে খ্যাতি লাভ করেন। আনন্দকিশোর রচিত ধ্রুপদ গান ছিল সৌকর্যগুণে নন্দিত ও শ্রুতিমধুর। বেতিয়া ঘরানার ধ্রুপদী সঙ্গীতের বৈশিষ্ট্য হল বাণীর তথা কথার উপর যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপের সাথে আপাত স্বাভাবিক স্বরপ্রক্ষেপন। বেতিয়া ঘরানার ধ্রুপদ গানের বাণী বা কথা বিভিন্ন রকমের হলেও 'গওহর' এবং 'খন্ডহর' বাণী বা গীতশৈলিই বেশি গুরুত্ব পেয়ে থাকে। তার ফলে আলঙ্কারিক ও ছান্দনিক প্রকরণ প্রকট হয় উপস্থাপিত গায়ন শৈলিতে। রাজ দরবারের ধ্রুপদিয়া কবি আনন্দ ও নওলকিশোর রচিত গীতে সুরারোপ ছিল বেতিয়া ঘরানার বৈশিষ্ট্য। সেনী ঘরানার প্যার খান এবং হায়দার খানের যথেষ্ট প্রভাব ছিল এই ঘরানায়।
বেতিয়া ঘরানার বৈশিষ্ট্য
[সম্পাদনা]ধ্রুপদ সঙ্গীতে বেতিয়া ঘরানার বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলি হল-
- স্বরের সহজসাধ্য ও সুন্দর প্রয়োগ
- সুর মাধুর্যে ভরপুর সুস্পষ্ট বাণী বা কথা
- রাগরূপ বিস্তারে চমৎকারিত্ব
- ধ্রুপদী মেজাজের সঙ্গে শ্রুতিমাধুর্যের সমন্বয়
- খোলা ও মধুর আওয়াজের প্রয়োগ
বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ
[সম্পাদনা]বেতিয়া ঘরানার বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞেরা ছিলেন-
- হাসান আলি খান (সরোদিয়া ফিদা হুসেনের পিতা)
- বীণকর সিদ্দিক আলি খান
- কালে খান
রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতা শেষ হলে, বেতিয়া ঘরানার ধারা বারাণসীতে বহন করে নিয়ে যান খ্যাতনামা সঙ্গীতজ্ঞেরা। তারা হলেন - শিবরাহাল মিশ্র, গুরুপ্রসাদ মিশ্র, জয়করণ মিশ্র, ভোলানাথ পাঠক, বীণকর শিবেন্দ্রনাথ বসু এবং শিব মিত্র। কথিত আছে যে, জয়করণ মিশ্রের 'ধামার' ও 'খেয়াল' এর সংগ্রহে ছিল প্রায় দু'হাজার বিভিন্ন বাণী বা কথার ধ্রুপদী সঙ্গীত। তিনি পরবর্তীতে এই সঙ্গীতে তার যোগ্য উত্তরসূরিদের প্রশিক্ষিত করেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন ভোলানাথ পাঠক। বারাণসী ছাড়াও বেশ কিছু সঙ্গীতজ্ঞ বাংলার বিষ্ণুপুরে চলে আসেন এবং সঙ্গীতের এই ধারাকে বয়ে নিয়ে চলেন বাংলার পণ্ডিত ফাল্গুনী মিত্র ও ইন্দ্রকিশোর মিশ্র'রা।[১]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ "Dhrupad Gharanas in North Indian Classical Music (ইংরাজীতে)"। Archived from the original on ২০১৫-০১-১০। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০১-১০।
- ↑ "Bettiah Gharana Music (ইংরাজীতে)"। ২০২২-০৪-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০১-১০।
- ↑ "গীত ঘরানা, কণ্ঠশিল্পী বা গানের ঘরানা [সঙ্গীতের ঘরানা]..."। ১১ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ জানুয়ারি ২০২২।