পাওয়ারপ্লে (ক্রিকেট)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

পাওয়ারপ্লে (ইংরেজি: powerplay) পরিভাষাটি দ্বারা সীমিত ওভার ক্রিকেটে মাঠে ফিল্ডার স্থাপনের ওপর আরোপিত সীমাবদ্ধতার নিয়মাবলিকে নির্দেশ করা হয়।

টেস্ট ক্রিকেটের সাথে বৈসাদৃশ্যপূর্ণভাবে, সীমিত পরিসরের ক্রিকেটে রান বাঁচানোর উদ্দেশ্যে, ফিল্ডারদের পুরো মাঠজুড়ে বিভিন্ন স্থানে দাঁড় করানো হয়। আধুনিক এক দিনের আন্তর্জাতিক খেলায়, পাওয়ারপ্লে নিয়ম (ফিল্ডার স্থাপনের ওপর সীমাবদ্ধতা), এবং সেই সাথে আরো কয়েকটি কারণে, দলগুলোকে অহরহ বড় ধরনের রান সংগ্রহ (৩০০+) করতে দেখা যায়।[১]

নিয়মাবলি[সম্পাদনা]

এক দিনের আন্তর্জাতিক (ওডিআই) এবং টি-টোয়েন্টি ম্যাচের কোন ওভারগুলোতে বাধ্যতামূলক পাওয়ারপ্লে প্রযোজ্য হবে, তার নিয়মের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। নিম্নোল্লিখিত নিয়মাবলি কেবল অবিঘ্নিত খেলার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে (দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, আলোকস্বল্পতা কিংবা অন্য কোন অনিবার্য কারণে খেলা বিঘ্নিত হলে, খেলার পুনঃনির্ধারিত দৈর্ঘ্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে পাওয়ারপ্লে-ও পুনঃনির্ধারিত হবে)।

ওডিআই[সম্পাদনা]

এক দিনের আন্তর্জাতিক খেলায় প্রতিটি দল পঞ্চাশ ওভারের ইনিংস খেলার সুযোগ পায়। প্রতি ইনিংসে,

  • প্রথম দশ ওভারে (১-১০), ফিল্ডিং দলের সর্বোচ্চ দুই জন খেলোয়াড় ৩০-গজ বৃত্তের (২৭ মিটার) বাইরে অবস্থান করতে পারবে। একে প্রথম পাওয়ারপ্লে বলা হয়।[২]
  • একাদশ থেকে চল্লিশতম ওভার (১১-৪০) পর্যন্ত, ৩০-গজ বৃত্তের বাইরে সর্বোচ্চ চারজন ফিল্ডার থাকতে পারবে।[২]
  • শেষ ১০ ওভারে (৪১-৫০), ৩০-গজ বৃত্তের বাইরে সর্বোচ্চ পাঁচজন খেলোয়াড় থাকতে পারবে।[২]

টোয়েন্টি-২০[সম্পাদনা]

কোন ইনিংসের প্রথম ছয় ওভার হচ্ছে বাধ্যতামূলক পাওয়ারপ্লে, ৩০-গজ বৃত্তের বাইরের মাত্র দু'জন ফিল্ডার রাখা যাবে। সপ্তম ওভার থেকে শুরু করে, অনধিক পাঁচজন খেলোয়াড় ৩০-গজ বৃত্তের বাইরে অবস্থান করতে পারবে।

১০০-বলের ক্রিকেট[সম্পাদনা]

১০০-বলের ক্রিকেটে, প্রতি ইনিংসের প্রথম পঁচিশটি বৈধ ডেলিভারিতে পাওয়ারপ্লে'র বাধ্যবাধকতা থাকে, মাত্র দু'জন খেলোয়াড় ৩০-গজ সীমানার বাইরে থাকতে পারে।[৩]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

১৯৭০ এর দশক জুড়েই ফিল্ডিং সীমাবদ্ধতার বিবর্তন ঘটেছে, বিশেষ করে বিশ্ব সিরিজ ক্রিকেটে[৪]ওডিআই ম্যাচে প্রথম তার প্রচলন ঘটে অস্ট্রেলিয়ায়, ১৯৮০ সালে। সবচেয়ে প্রচলিত নিয়মটি ছিল, ইনিংসের প্রথম পনের ওভারে ৩০-গজ বৃত্তের বাইরে দু'জন ফিল্ডার থাকতে পারবে, অবশিষ্ট ওভারগুলোতে সর্বোচ্চ পাঁচজন ফিল্ডার বৃত্তের বাইরে রাখা যাবে।

২০০৫ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) কর্তৃক পাওয়ারপ্লে পরিভাষাটির প্রচলন ঘটে, যেখানে ফিল্ডিং এ সীমাবদ্ধতাকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়: ইনিংসের প্রথম দশ ওভার বাধ্যতামূলক পাওয়ারপ্লে এবং পাঁচ-ওভার করে আরও দুটি পাওয়ারপ্লে, যার সময় ফিল্ডিংরত দলের ইচ্ছাধীন ছিল।[৫] বাস্তবে যদিও পরের পাওয়ারপ্লে দুটিও ইনিংসের শুরুর দিকেই নিয়ে নেওয়া হত, ফলে ইনিংসের প্রথম বিশ ওভারই পাওয়ারপ্লে'র অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেত। এই চর্চা কমানোর উদ্দেশ্যে, ২০০৮ সালে ব্যাটিংরত দলকে একটি পাওয়ারপ্লে'র সময় বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।[৬]

১ অক্টোবর ২০১১ হতে, ব্যাটিং ও বোলিং পাওয়ারপ্লে'র নিয়মে আইসিসি আরও কিছু পরিবর্তন আনে। নতুন আইনের অধীনে, কোন ৫০-ওভারের ম্যাচে, ১৬শ ওভারের আগে কোন পাওয়ারপ্লে-ই নেওয়া সম্ভব ছিল না, এবং উভয়ই আবার ৪১-তম ওভার শুরুর আগেই সম্পন্ন করার নিয়ম করা হয়েছিল। সুতরাং, ১১শ থেকে ১৫শ ওভার এবং ৪১তম থেকে ৫০তম ওভারে কোন পাওয়ারপ্লে নেওয়া সম্ভব ছিল না। যদি একটি বা উভয় দলই তাদের পাওয়ারপ্লে'র সময় বেছে না নিত, সেক্ষেত্রে সর্বশেষ সম্ভাব্য সময়ে স্বয়ক্রিয়ভাবেই আম্পায়ার পাওয়ারপ্লে শুরুর সংকেত দিতেন (উদাহরণস্বরূপ, যদি ৫০-ওভার ম্যাচের কোন ইনিংসে একটি ৫-ওভারের পাওয়ারপ্লে না নেওয়া হয়, তাহলে ৩৬তম ওভার থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ঐ পাওয়ারপ্লে শুরু হয়ে যাবে)।[৭]

২৯ অক্টোবর ২০১২ হতে, আইসিসি পাওয়ারপ্লে আইনের উপর্যুপরি সংশোধন করে পাওয়ারপ্লে তিনটি থেকে কমিয়ে দুটি ভাগে নিয়ে আসে।[৮]

১৯৯২ হতে ২০১২ পর্যন্ত, পাওয়ারপ্লে-বহির্ভূত ওভারগুলোতে সর্বোচ্চ পাঁচজন ফিল্ডার বৃত্তের বাইরে রাখার বিধান ছিল। অক্টোবর ২০১২ তে তা কমিয়ে চারজন করা হয়।[৮] এছাড়াও, ১৯৯২ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত, প্রথম পনের ওভারে দুইজন ফিল্ডারকে ক্যাচিং এর অবস্থানে রাখা বাধ্যতামূলক ছিল। জুলাই ২০০৫ থেকে, এই বাধ্যবাধকতা পনের ওভার থেকে কমিয়ে প্রথম দশ ওভার পর্যন্ত বহাল করা হয়েছে।

৫ জুলাই ২০১৫ হতে, আইসিসি নিয়ম পুনরায় সংশোধন করে ইনিংসে তিন পাওয়ারপ্লে প্রথা পুনর্বহাল করে, তখন পূর্বে সূচিত ব্যাটিং পাওয়ারপ্লে বাতিল হয়ে যায়।[৯] প্রথম পাওয়ারপ্লে-তে দু'জন ক্যাচিং ফিল্ডার রাখার বাধ্যবাধকতাও শিথিল করা হয়।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Suresh Menon (২ নভেম্বর ২০১৩)। "Are bowlers under threat in one-day cricket?"BBC News 
  2. "Standard one-day international match playing conditions" (পিডিএফ)। জুলাই ২০১৫। 
  3. "Competition Rules"www.ecb.co.uk (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-২৬ 
  4. Cricket's Turning Points: Fifteen-over field restrictions, ESPNcricinfo, 1 May 2011
  5. "Those new one-day rules explained ..."Cricinfo। ৮ জুলাই ২০০৮। 
  6. "ICC allows batting team to choose one Powerplay"Cricinfo। ৩০ সেপ্টেম্বর ২০০৮। 
  7. "Powerplay tweaks and end of runners"ESPNcricinfo। ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১১। 
  8. "Amended playing conditions to take effect"ESPNcricinfo। ২৯ অক্টোবর ২০১২। 
  9. Nagraj Gollapudi (২৬ জুন ২০১৫)। "Bowlers benefit from ODI rule changes"ESPNcricinfo