বিষমচাক্রিক যৌগ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
পিরিডিন, একটি বিষমচক্রিক যৌগ

বিষমচক্রিক যৌগ বা হেটারোসাইক্লিক যৌগ (ইংরেজি: Heterocyclic compound) হচ্ছে সেই সব চক্রিক যৌগ বা রিং গঠন যুক্ত যৌগ (আবর্তনশীল যৌগ) যার চক্র বা রিং সৃষ্টিকারী সদস্যদের ভেতরে অন্তত একটি ভিন্ন উপাদানের পরমাণু আছে। সাধারণত একটি বিষমচক্রিক যৌগে বা হেটেরোসাইক্লিক যৌগ্র চক্রে অন্তত একটি কার্বন ভিন্ন অন্য উপাদানের পরমাণু থাকে।

সাধারণত, বিষমচক্রিক যৌগ বা হেটেরোসাইক্লিক যৌগ হচ্ছে জৈব যৌগ যাদের চক্রের মধ্যে কার্বন এবং কার্বন ভিন্ন অন্তত একটি উপাদানের পরমাণু আছে। কার্বন ভিন্ন অন্যান্য উপাদানের পরমাণু গুলো হতে পারে অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, সালফার।[১]

বৈশিষ্ট[সম্পাদনা]

মূলত দুইটি বৈশিষ্ট থাকলে কোন চক্রিক যৌগেকে বিষমচক্রিক যৌগ বা হেটেরোসাইক্লিক যৌগ বলে। প্রথমত চক্র বা রিং সৃষ্টিকারী সদস্যদের ভেতরে কার্বন ভিন্ন অন্তত একটি ভিন্ন উপাদানের পরমাণু থাকবে। দ্বিতীয়ত, চক্রটি যথেষ্ট স্থিতিশীল হবে এবং এতে (জৈব যৌগের অনন্য বিশিষ্ট) এরোমেটিক বৈশিষ্ট থাকবে।[১]

নামকরণ[সম্পাদনা]

বাংলায় বিষম শব্দটির অর্থ ভিন্ন, ইংরেজিতে হেটেরো শব্দটির অর্থও ভিন্ন। তাই যে সমস্ত চক্রিক যৌগের চক্রে কার্বন এবং কার্বন ভিন্ন অন্তত একটি উপাদানের পরমাণু আছে সাধারণত তাদের বিষমচক্রিক যৌগ বা হেটেরোসাইক্লিক যৌগ বলে।[২]

প্রকারভেদ[সম্পাদনা]

বিষমচক্রিক যৌগ বা হেটেরোসাইক্লিক যৌগ গুলোকে বিভিন্ন ভাবে প্রকারভেদ করা যায়।[১]

বিষমচক্রিক যৌগ বা হেটেরোসাইক্লিক যৌগ এর মূল চক্রে কতটি পরমাণু আছে তার উপর ভিত্তি করে প্রকারভেদ

  • তিন পরমাণু চক্র বিশিষ্ট বিষমচক্রিক যৌগ বা হেটেরোসাইক্লিক যৌগঃ এজিরিন, এজিরিডিন
  • চার পরমাণু চক্র বিশিষ্ট বিষমচক্রিক যৌগ বা হেটেরোসাইক্লিক যৌগঃ এজিটিডিন, এজিটি
  • পাঁচ পরমাণু চক্র বিশিষ্ট বিষমচক্রিক যৌগ বা হেটেরোসাইক্লিক যৌগঃ পাইরোল, পাইরোলিডিন, ফিউরান, থায়োফেন
  • ছয় পরমাণু চক্র বিশিষ্ট বিষমচক্রিক যৌগ বা হেটেরোসাইক্লিক যৌগঃ পারিডিন, পাইপারিডিন, পাইরান, থায়োপাইরান
  • সাত পরমাণু চক্র বিশিষ্ট বিষমচক্রিক যৌগ বা হেটেরোসাইক্লিক যৌগঃ এজিপিন, থায়োপিন
  • বিষমচক্রিক যৌগ বা হেটেরোসাইক্লিক যৌগের মূল চক্রে যে বিষম পরমাণু আছে তার উপর ভিত্তি করে প্রকারভেদ
  • অক্সিজেন বিষম পরমাণু বিশিষ্ট বিষমচক্রিক যৌগ বা হেটেরোসাইক্লিক যৌগঃ ফিউরান, পাইরান
  • নাইট্রোজেন বিষম পরমাণু বিশিষ্ট বিষমচক্রিক যৌগ বা হেটেরোসাইক্লিক যৌগঃপাইরোল, পাইরিডিন
  • সালফার বিষম পরমাণু বিশিষ্ট বিষমচক্রিক যৌগ বা হেটেরোসাইক্লিক যৌগঃ থায়োফিন, থায়োপাইরান
  • মোট কতটি চক্র বিষমচক্রিক যৌগ বা হেটেরোসাইক্লিক যৌগ গঠন করে তার ওপর ভিত্তি করে প্রকারভেদ
  • এক চক্র বিশিষ্ট বিষমচক্রিক যৌগ বা হেটেরোসাইক্লিক যৌগঃ ফিউরান, পাইরান, পাইরোল, পাইরিডিন
  • দুই চক্র বিশিষ্ট বিষমচক্রিক যৌগ বা হেটেরোসাইক্লিক যৌগঃ ইন্ডোল, কুইনোলিন, পিঊরিন

বিষমচক্রিক রসায়ন[সম্পাদনা]

বিষমচক্রিক রসায়ন বা হেটেরোসাইক্লিক রসায়ন হল বিষমচক্রিক যৌগের বা হেটেরোসাইক্লিক যৌগের একটি শাখা যাতে বিষমচক্রিক যৌগের বা হেটেরোসাইক্লিক যৌগের রসায়ন, সংশ্লেষণ, বৈশিষ্ট্য, এবং এদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োগ অলোচনা করা হয়।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

বিষমচক্রিক রসায়ন বা হেটেরোসাইক্লিক রসায়নের ইতিহাস শুরু হয় ১৮০০ সালে জৈব রসায়নের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে। তখন থেকেই এই ইতিহাস ধাপে ধাপে সামনে অগ্রসর হচ্ছে। কিছু উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হল-

  • ১৮১৮: Brugnatelli ইউরিক অ্যাসিড থেকে alloxan নিষ্কাষন ক্রেন
  • ১৮৩২: Dobereiner সালফিউরিক অ্যাসিড সঙ্গে স্টার্চ এর বিক্রিয়া দ্বারা furfural (একটি ফুরান যৌগের জাতক) উৎপাদন করেন
  • ১৮৩৪: Rung হাড়ের শুষ্ক পাতন (dry distillation) দ্বারা pyrrole উৎপাদন করেন
  • ১৯০৬: Friedlander: Indole রঞ্জক উৎপাদন করেন
  • ১৯৩৬: Treibs পেট্রোলিয়াম জৈব মূল বা অশোধিত তেল থেকে chlorophyl জাতক নিষ্কাষন ক্রেন এবং পেট্রোলিয়াম এর প্রনীজ উৎস ব্যাখ্যা করেন
  • ১৯৫১: Chargaff এর নিয়ম ব্যাখ্যা করা হয় যাতে জেনেটিক কোডে হেটেরোসাইক্লিক যৌগের (purines এবং pyrimidines) ভূমিকার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Textbook of Organic Chemistry, Arun Bahl, B. S. Bahl
  2. Organic Chemistry By T. W. Graham Solomons, Craig Fryhle