বিছুটি
বিছুটি গাছ (ছুতরা পাতার গাছ)' | |
---|---|
বিছুটি গাছের পাতা | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | উদ্ভিদ |
শ্রেণীবিহীন: | সপুষ্পক উদ্ভিদ |
শ্রেণীবিহীন: | ইউডিকস |
শ্রেণীবিহীন: | রসিডস |
বর্গ: | মালপিঘিয়ালেস |
পরিবার: | ইভোলুকড়াটা |
গণ: | ত্রাজিয়া |
প্রজাতি: | টি.ইনভোলুক্রাতা |
দ্বিপদী নাম | |
ত্রাজিয়া ইনভোলুক্রাতা L. |
বিছুটি (বৈজ্ঞানিক নাম: Tragia involucrata - ত্রাজিয়া ইনভোলুক্রাতা) হলো ইউফোরবিয়াসেই পরিবারের একটি উদ্ভিদ। বিছুটিকে উত্তর বঙ্গের লোকেরা ছোতরা পাতার গাছ, ছোতরা গাছ বা চুলচুইল্লাগাছ বলে ডাকে। তবে এর প্রমীত নাম বিছুটি গাছ। এটি এমন একপ্রকার উদ্ভিদ যার পাতা/রস/পাতার গুড়ো শরীরে লাগলে শরীর চুলকানি শুরু হয়।[১]
বর্ণনা
[সম্পাদনা]বিছুটি (বৈজ্ঞানিক নাম: ত্রগিয়া ইভোলুকড়াটা) হলো উদ্ভিদ জগতের ইউফোরবিয়াসেই পরিবারের একটি উদ্ভিদ। এটি সপূষ্পক উদ্ভিদ । আর এরা সবুজ উদ্ভিদ । এই গাছটির পাতা, রস, পাতার গুড়ো প্রভৃতি যদি কোনো ক্রমে শরীরের কোথাও লেগে যায় তবে চুলকোতে শুরু করে। একপ্রকার অ্যালার্জীর মতো। পরে শরীরের সেই স্থান ফুলে যায়, রস হয়।[২] গাছটির কাণ্ড জুড়ে অতি সূক্ষ্ম লোমের মত ট্রাইকোম বিস্তৃত থাকে। গাছের গায়ে স্পর্শ করলে ট্রাইকোমের অগ্রভাগ ভেঙে যায় এবং এর ভেতর থেকে হিস্টামিন, অ্যাসিটাইলকোলিন, সেরোটোনিন সহ অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয়। বিছুটি গাছ স্পর্শ করলেই যে হুল ফোঁটার মতো যন্ত্রণা অনুভূত হয়, তার জন্য এই রাসায়নিক পদার্থগুলোই দায়ী।[৩]
প্রচলিত নামসমূহ
[সম্পাদনা]- অসমীয়া : ডুমুনি চুরাত
- বাংলা : বিছুটি এবং উত্তর বঙ্গের লোকেরা ছোতরা পাতা, সাতক্ষীরা অঞ্চলে বেশোতক্তা, ময়মনসিংহ অঞ্চলে এই গাছটি “চোতরা” নামে পরিচিত।
- ইংরেজি : (Indian stinging nettle) ইন্ডিয়ান স্টিঙ্গিং নেটল, (climbing nettle) ক্লাইম্বিং নেটল, (canchorie root-plant
- হিন্দি : (पीत पर्णी) পিত পারানি, (बढन्त) বারান্ত।
- কন্নড় : ( ತುರಿಕೆ ಬಳ್ಳಿ ) তুর্কি বাল্লি।
- মালয়ালম : কডিতুম্বা, ছেরিকোটিতোবা, চরিয়ানাম, (ചൊറിയണം) চরিয়ানাম, কডিৎতোভা।
- মারাঠি : (आग्या) আগ্য, (लघुमेडशिंगी) লাঘুমেদশিঙ্গি, (आग पान) আগ পান, (कळलावी) কল্লভি।
- নেপালি : (उट कटेरी) উট কেটারী
- ওড়িয়া: ବିଛୁଆତି(ট্রান্সিলেসন), কাসালাক্কু।
- সংস্কৃত: (दुःस्पर्ष ) দূস্পর্শ, (वृश्चिकाच्छद ) বৃশ্চিকাস্সাদ, (वृश्चिकापत्री) বৃশ্চিকাপত্রী, (वृश्चिकाली) বৃশ্চিকালী, (आगमावर्ता) আগমাবত্র, (कषाग्निः) কাসাগনি
- তামিল : (காஞ்சொறி) কান্চরী / (செந்தட்டி) সেনতাত্তী।
- তেলুগু : ( తేలుకొండిచెట్టు) তেলোকন্দিকেত্ত।
ঔষধি গুণ
[সম্পাদনা]আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য তাঁর চিরজ্ঞীব বনৌষধি বইতে চোতরার বিভিন্ন ভেষজ প্রয়োগের কথা উল্লেখ করেছেন। ফল ও শিকড় প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া, মাথাব্যথা, কুষ্ঠরোগ, চর্মরোগ, চুলপড়া, বুক ধড়ফড়ানি ইত্যাদি সমস্যায় নানাভাবে কাজে লাগে। প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ায় মাথাব্যথায় উপকার পাওয়া যায়। গায়ে খোসপাঁচড়া ও ঘা বেশ উপকার পাওয়া যাবে। সর্দি-কাশি, জ্বর ও ব্রঙ্কাইটিসে আধাকাপ পরিমাণ শিকড়ের রস দু-তিন দিন পান করলে উপশম হয়। চুল পড়া বন্ধ করতে গাছের শিকড় অল্প পানিতে পিষে আমলকীর রসের সঙ্গে মিশিয়ে মাথায় লাগাতে হয়। এসব ছাড়াও গাঁটে বাত, কোষ্ঠবদ্ধতা, কাশি, হাঁপানি ও মামস সমস্যায় বিছুটির মূল ও ফল বেশ কার্যকর।[৪]
আসাম অঞ্চলের কোন কোন বৈদ্য এটাকে উন্মাদ রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করেন। আয়ুর্বেদ এবং চরক সংহীতায় এর ভেষজ গুনের উল্লেখ রয়েছে। লোকালয়ে ঝোপ-ঝাড় ধ্বংস করে আবাদী জমি তৈরীর ফলে অন্যান্য মূল্যবান গাছের মত চোতরাও হারিয়ে যেতে বসেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, চোতরা ভেষজ চিকিৎসা ছাড়াও বন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "বিছুটির অনেক গুণ"। সমকাল (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০৮-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-০১।
- ↑ "জানেন কি বিছুটি পাতারও আছে রকমারি গুণ? জেনে নিন উপকারিতা - Banglalive"। Dailyhunt (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-০১।
- ↑ "রক্তাল্পতায় ভুগছেন? উপকার পেতে এই ঘরোয়া টোটকাগুলি জেনে নিন"। Zee24Ghanta.com (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৮-০৬-২৫। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-০১।
- ↑ Welle (www.dw.com), Deutsche। "নানা অসুখে জার্মানদের প্রিয় ৫টি ঔষধি গাছ | DW | 02.04.2015"। DW.COM। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-০১।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]উইকিমিডিয়া কমন্সে বিছুটি সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন।