ক্ষুধা
ক্ষুধা হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য একজন ব্যক্তি মৌলিক পুষ্টিগত চাহিদা পূরণে পর্যাপ্ত খাবার খেতে অক্ষম। রাজনীতি, মানবিকতায়, সামাজ বিজ্ঞান প্রভৃতির ক্ষেত্রে ক্ষুধা মুক্তির ক্ষেত্রে ক্ষুধা শব্দটি খাবারের জন্য মানুষের সাধারণ চাহিদাকে ছাড়িয়ে যাওয়া অর্থে ব্যবহৃত হয়।
ইতিহাস জুড়ে, বিশ্বের জনসংখ্যার বিভিন্ন অংশ মাঝেমধ্যেই ক্ষুধার্ত সময় অতিবাহিত করেছে। অনেক ক্ষেত্রে, যুদ্ধ, দুর্যোগ, বা প্রতিকূল আবহাওয়ার ফলে খাদ্য সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী দশক গুলোতে, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ও উন্নত রাজনৈতিক সহযোগিতা ইঙ্গিত দিয়েছিল যে ক্ষুধা ভোগকারী মানুষের সংখ্যা হ্রাস করা সম্ভব। যদিও অগ্রগতি অসম্মানজনক ছিল,তথাপি ২০১৫ সালের মধ্যে তীব্র ক্ষুধা হুমকি বিশ্বের অনেক মানুষের জন্য হ্রাস পেয়েছিল। ২০১৮ সালে এফএও কর্তৃক প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দীর্ঘস্থায়ী ক্ষুধা ভোগকারী মানুষের সংখ্যা গত তিন বছরে বেড়েছে। ২০১৭ সালে বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যার শতকরা এক ভাগ অর্থাৎ প্রায় ৮২১ মিলিয়ন মানুষ সম্পূর্ণরূপে ক্ষুধা কর্তৃক আক্রান্ত হয়েছিল।
যদিও বিশ্বের বেশিরভাগ ক্ষুধার্ত মানুষ এশিয়াতে বাস করে থাকে, তবুও ২০১৫ সালে ক্ষুধার্তদের সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি ঘটেছে আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকায়। এফএও এর ২০১৭ রিপোর্টে সাম্প্রতিক ক্ষুধার্ত বৃদ্ধির তিনটি প্রধান কারণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে: জলবায়ু, দ্বন্দ্ব, এবং অর্থনৈতিক মন্দা।২০১৮ সালের রিপোর্টটি ক্ষুধার্ত বৃদ্ধির প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে চরম আবহাওয়ার উপর গুরুত্ত প্রদান করে, বিশেষ করে যেসব কৃষি প্রধান দেশ এর কৃষি ব্যবস্থা আবহাওয়ার প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল ছিল এমন দেশগুলিতে বৃদ্ধি বিশেষত গুরুতর ছিল।
হাজার হাজার সংগঠন ক্ষুধা মুক্তির সাথে জড়িত; যারা স্থানীয়, জাতীয়, আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সক্রিয়। এই প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে কিছু ক্ষুধা মুক্তির জন্য নিবেদিত, অন্যেরা বিভিন্ন ক্ষেত্রগুলিতে কাজ করে থাকে। সরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে, বিভিন্ন জাতীয়, স্থানীয় উদ্যোগ রয়েছে। অনেকেই ছাতার ন্যায় নেটওয়ার্কগুলিতে অংশগ্রহণ করে যা হাজার হাজার ক্ষুধা ত্রাণ সংস্থাকে একত্রিত করে। বিশ্বব্যাপী, বেশিরভাগ ক্ষুধার্ত মুক্তির প্রচেষ্টা জাতিসংঘের সমন্বয়ে গঠিত, এবং ২০৩০ সালের মধ্যে " শূন্য ক্ষুধার্ত " এর লক্ষ্য অর্জনে পরিচালিত হচ্ছে।
সংজ্ঞা এবং সম্পর্কিত বিষয়সমূহ
[সম্পাদনা]ক্ষুধাকে সামাজিক সমস্যা হিসাবে সংজ্ঞায়িত ও পরিমাপ করার জন্য বিশ্বব্যাপী শুধুমাত্র একটি স্বীকৃত পদ্ধতি রয়েছে যেটি সাধারণত ক্ষুধা উপশম করার জন্য অধ্যয়নরত বা কাজ করে এমন মানুষদের দ্বারা ব্যবহার হয়ে থাকে। এটি জাতিসংঘের এফএও এর পরিমাপ, সাধারণত যেটিকে তারা অনাহার হিসাবে উল্লেখ করে, কখনও কখনও সেটিকে ক্ষুধা বা 'খাদ্য বঞ্চনা' হিসেবেও উল্লেখ করে থাকে। এফএও এর জন্য:
- ক্ষুধা বা অপুষ্টি অনুভূত হয় যখন "ক্যালোরি গ্রহণের পরিমাণ ন্যূনতম খাদ্যতালিকাগত (MDER) শক্তির চেয়ে কম হয়ে থাকে। হালকা কার্যকলাপ সম্পাদন এবং উচ্চতা অনুযায়ী ন্যূনতম গ্রহণযোগ্য ওজন বজায় রাখার জন্য যে পরিমাণ ক্যালরি গ্রহণ করতে হয় তার পরিমাণ-ই MDER।" [২] জলবায়ু এবং সাংস্কৃতিগত বৈচিত্র্যের কারণে FAO বিভিন্ন দেশে MDER এর বিভিন্ন সীমা ব্যবহার করে। সাধারণত একটি বার্ষিক "ভারসাম্য শীট" পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, ন্যূনতম খাদ্যশস্য শক্তি প্রয়োজন বছরে ব্যবহৃত আনুমানিক মোট ক্যালোরির । এফএও এর সংজ্ঞাগুলি ক্ষুধাকে অপুষ্টি এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা থেকে পৃথক করে থাকে। [৩][৪][৫]
- মাইক্রো নিউট্রিইয়েন্ট/ম্যাক্রো নিউট্রিইয়েন্ট এর অতিমাত্রায় বা স্বল্পমাত্রায় গ্রহণ এবং ভারসাম্যহীনতার ফলে অপুষ্টি হয়ে থাকে । এফএও সংজ্ঞামতে, সকল ক্ষুধার্ত মানুষ অপুষ্টির শিকার হয়ে থাকে, কিন্তু যারা অপুষ্ট হয় তারা ক্ষুধার্ত নাও হতে পারে। তারা ক্ষুধা এড়ানোর জন্য যথেষ্ট পরিমাণ ক্যালোরি পেতে পারে, তবে অপরিহার্য মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট এর অভাব থাকতে পারে, বা তারা ক্যালোরি অতিরিক্ত পরিমাণেও গ্রহণ করতে পারে এবং এর ফলে পরবর্তীতে স্থূলতা ভোগ করে। [৩][৪][৫]
- খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা যখন মানুষজন ঝুঁকিতে থাকে, বা চিন্তিত থাকে, তাদের পছন্দ অনুযায়ী খাদ্য , কাঁচা ক্যালোরি এবং পুষ্টির মূল্য সহ। FAO সংজ্ঞাতে, সব ক্ষুধার্ত মানুষ খাদ্য অনিরাপদ, কিন্তু সব খাদ্য অনিরাপদ মানুষ ক্ষুধার্ত হয় না (যদিও ক্ষুধা এবং গুরুতর খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা মধ্যে খুব শক্তিশালী overlap হয়।)। FAO জানিয়েছে যে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা প্রায়শই বাচ্চাদের জন্য একযোগে স্থির বৃদ্ধি, এবং প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য স্থূলতা। [৩][৪][৫]
বৈশিক ক্ষুধা সূচক
[সম্পাদনা]- গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স প্রকাশিত বৈশিক ক্ষুধা সূচকে ২০২৪ সালে ১২৭টি দেশের মধ্যে ১৯ দশমিক ৪ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৪তম। ২০২৩ সালে ১২৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৮১তম। ২০২২ সালে ১২১টি দেশের মধ্যে ছিল ৮৪তম, ২০২১ সালে ছিল ৭৬তম, ২০২০ সালে ১০৭টি দেশের মধ্যে ছিল ৭৫তম।
- ২০২৪ সালে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শ্রীলঙ্কার অবস্থান ৫৬তম। নেপালের অবস্থান ৬৮। এরপরেই রয়েছে বাংলাদেশ ৮৪। ভারতের অবস্থান ১০৫, পাকিস্তানের অবস্থান ১০৯।
- ২০২৪ সালে বিশ্বের ৬টি দেশ বুরুন্ডি, শাদ, মাগাগাস্কার, সোমালিয়া, দক্ষিণ সুদান ও ইয়েমেনে ক্ষুধার মাত্রা উদ্বেগজনক। ৩৬টি দেশে ক্ষুধার মাত্রা গুরুতর পর্যায়ে। ২২টি দেশে ক্ষুধার মাত্রা একেবারেই নিম্ন পর্যায়ে।[৬]
নোট এবং রেফারেন্স
[সম্পাদনা]- ↑ "passim, see esp Introduction; Historiography of Food, Hunger and famine; Hunger and Starvation"। Food and Famine in the 21st Century: Vol 1, Topics and Issues। ABC-CLIO। ২০১২। আইএসবিএন 1598847309।
- ↑ "FAO Statistical Yearbook 2012: Part 2 Hunger dimensions" (পিডিএফ)। FAO। ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮।
- ↑ ক খ গ Patrick Webb, Gunhild Anker Stordalen, Sudhvir Singh, Ramani Wijesinha-Bettoni, Prakash Shetty, Anna Lartey (২০১৮)। "Hunger and malnutrition in the 21st century"। ডিওআই:10.1136/bmj.k2238।
- ↑ ক খ গ "The state of food security and nutrition in the world (2018)" (পিডিএফ)। FAO। ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮।
- ↑ ক খ গ "An Introduction to the Basic Concepts of Food Security" (পিডিএফ)। FAO। ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮।
- ↑ বৈশিক ক্ষুধা সূচকে ৩ ধাপ পেছালো বাংলাদেশ, ইত্তেফাক, ১১ অক্টোবর ২০২৪