ফরযে কেফায়া

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ফরযে কেফায়া: যার মধ্যে কর্মীর পরিবর্তে কর্ম গ্রহণ করা উদ্দেশ্য হয়। যদি কারও দ্বারা কাজটি সম্পাদন করা হয়ে যায়, তাহলে আইন বা ফরযটির বাধ্যবাধকতা সবার উপর থেকে রহিত হয়ে যায়। যেমন: নামাজের জানাজা, সৎ কাজের আদেশ, শরিয়তেজ্ঞান অর্জন ইত্যাদি।

ফরযে কেফায়ার অর্থ[সম্পাদনা]

'ফরযে কেফায়ার অর্থ হলো- একটি জাতি বা কোন দলের কিছু লোক যদি এই ফরযটি আদায় করে নেয়, তবে অন্যান্য মুসলমানরা এর দায় থেকে মুক্ত হয়ে যায় আর যদি কেউ তা না করে তবে তারা সকলেই দোষী বা গুনাহগার হয়। [১] যদি শত্রুরা মুসলমানদের উপর আক্রমণ করে তাহলে মুসলমানদের উপর যুদ্ধ বা জিহাদ ফরযে আইন (অবশ্য কর্তব্য) হয়ে যায়। অন্যথায় জিহাদ ফরযে কেফায়া হয়। অবশ্য শর্ত হলো ফিকাহের কিতাবে জিহাদের যে শর্তাবলী রয়েছে তা উপস্থিত থাকতে হবে। [২]

ফরযে কেফায়া ও ফরযে আইনের মধ্যে পার্থক্য[সম্পাদনা]

আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ, সাধারণ পরিস্থিতিতে ফরযে কেফায়া। যদি একটি দল এই দায়িত্ব পালন করে, তখন অন্য সম্প্রদায়কে অন্যান্য বিষয়ে ধর্মীয় সেবা করার অনুমতি আছে। তবে যদি কোনো এক পরিস্থিতিতে মুসলিম সম্প্রদায়ের ইমাম বা শাষক জিহাদকে প্রয়োজনীয়তার দিকে লক্ষ্য করে জিহাদে অংশগ্রহণ করার জন্য ঘোষণা করেন তখন সকল মুসলমানকে জিহাদে অংশ গ্রহণ করা ফরযে আইন (অবশ্য কর্তব্য) হয়ে যায়। কুরআন শরীফে সূরা তাওবার মধ্যে ইরশাদ করেন: "" হে মুমিনগণ! তোমাদের কী হল যে, যখন তোমাদের বলা হয় আল্লাহর পথে অভিযানে বের হও, তখন তোমরা ভারাক্রান্ত হয়ে মাটির সাথে মিশে যাও? তোমরা কি আখেরাতের পরিবর্তে পার্থিব জীবন নিয়েই সন্তুষ্ট হয়ে গেছ? (তাই যদি হয়) তবে (স্মরণ রেখ), আখিরাতের বিপরীতে পার্থিব জীবনের আনন্দ অতি সামান্য।”” এই আয়াতে সাধারণ বিধিবিধানের কথা বলা হয়েছে। যদি কখনো কাফেররা ইসলামী রাষ্ট্রে আক্রমণ করে এবং সেনাবাহিনী তা প্রতিরোধ করতে সক্ষম না হয় তখন এই প্রতিরোধের দায়িত্ব সাধারণ অন্যান্য জনগনের উপর বর্তায়। যদি তারাও প্রতিরোধে অক্ষম হয় তাহলে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের উপর দায়িত্ব বর্তায়, এভাবে সাড়া পৃথিবীর মুসলমানের উপর জিহাদ ফরযে আইন বা অবশ্য কর্তব্য হয়ে যায়।

কুরআনের বর্ণিত সমস্ত আয়াত অধ্যয়ন করে ফিকাহবিদদের অধিকাংশমুহাদ্দিসিনরা এই সিদ্ধান্তে পৌছেছেন যে, সাধারণ অবস্থায় জিহাদ হলো ফরযে কেফায়ামাসআলা: যতক্ষণ পর্যন্ত জিহাদ ফরযে কেফায়া হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত পিতামাতার অনুমতি ব্যতীত কারো জিহাদ করতে যাওয়া জায়েয নয়।
মাসআলা: যে ব্যক্তির ঋণ রয়েছে যতক্ষণ পর্যন্ত ঋণ আদায় করা না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত জিহাদে যাওয়া বৈধ নয়। তবে যদি জিহাদ ফরযে আইন হয়ে যায় তবে সে জিহাদে অংশগ্রহণ করতে পারবে, কারো অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হবে না। [৩] এই জন্যই আল্লাহ তায়ালা নিজের নফস বা আত্মার সাথে জিহাদ করা ফরয আইন করেছেন, আর কাফেরের সাথে জিহাদ করা ফরযে কেফায়া করেছেন। [৪]

মাসআলা: শরিয়ত হজ্জ , রোজা, যাকাত এবং ইদ্দত ইত্যাদি ইবাদত বা কর্ম সম্পাদন করার জন্য চন্দ্রবছরকে নির্ধারণ করেছে। হজ্জ এবং যাকাতের ক্ষেত্রে চন্দ্রবছরকে নির্ধারণ করা হয়েছে, সৌরবর্ষ এক্ষেত্রে ধর্তব্য নয়। পার্থিব বিষয়াবলীর ক্ষেত্রে সৌরবর্ষ গণনা যেতে পারে তবে শরীয়তের বিষয়াবলীর ব্যাপারে চন্দ্রবর্ষ ও মাস গণনা করা ফরযে কেফায়া। যদি কেউ গণনা না করে,সবাই গণনা করা ছেড়ে দেয়, তাহলে সবাই গুনাহগার হবে।[৫] 
মাসআলা: যদি অন্য কোন সাক্ষী না থাকে তবে সাক্ষীর পক্ষে সাক্ষ্যদান ফরযে আইন। যদি অন্য কোনো সাক্ষী থাকে তাহলে ফরযে কেফায়া[৬]
মাসআলা: এমন একদল লোক থাকা উচিত যারা সৎকাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজের নিষেধ করবে। আয়াতে বর্ণিত আদেশ সকলের উপর অর্পিত হয়, যদি কেউ এই কাজ সম্পন্ন করে তাহলে সকলের উপর থেকে আদেশ মুক্ত যায়। কেউ যদি অসৎকাজের বাধা দিতে না পারে অন্তত অসৎ কাজের প্রতি অন্তর থেকে ঘৃণা থাকতে হবে।

মাসআলা: সালাম দেওয়া সুন্নাত। এক দল লোকের মধ্য থেকে যদি কেউ সালাম দিয়ে দেয় তাহলেই যথেষ্ট। আর যদি সালাম না দেয় সুন্নাত বাদ দিয়েছে গণ্য হবে। সালাম উত্তর দেওয়া হলো ফরযে কেফায়া। এক দল লোকের মধ্যে থেকে যদি কেউ সালামের উত্তর দিয়ে দেয় তাহলে যথেষ্ট অন্যথায় সবাই গুনাহগার হব। [৭]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. تفسیر معارف القرآن مفتی محمد شفیع ،المائدہ،12 (উর্দু ভাষায়)
  2. تفسیر عثمانی مفسر مولانا شبیر احمد عثمانی،سورۃ البقرہ،آیت216 (উর্দু ভাষায়)
  3. تفسیر جلالین،جلال الدین سیوطی ،سورۃ البقرہ،آیت217. (উর্দু ভাষায়)
  4. تفسیر مظہری قاضی ثناءاللہ پانی پتی ،سورۃ النساء،77 (উর্দু ভাষায়)
  5. تفسیر معارف القرآن مولاناادریس کاندہلوی،سورۃ البقرہ،آیت189 (উর্দু ভাষায়)
  6. تفسیر مظہری قاضی ثناءاللہ پانی پتی ،سورۃ البقرہ۔ آیت282 (উর্দু ভাষায়)
  7. تفسیر احسن التفاسیر۔ حافظ محمد سید احمد حسن،النساء،86 (উর্দু ভাষায়)