বিপরীত লিঙ্গবাদ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

বিপরীত লিঙ্গবাদ (Reverse sexism) দ্বারা বৃহৎ অর্থে কর্তৃত্বপূর্ণ লিঙ্গের বিরুদ্ধে লিঙ্গবাদকে বোঝায়, এবং ক্ষুদ্র অর্থে পুরুষের বিরুদ্ধে লিঙ্গবাদকে বোঝায়।[১] ১৯৮৬ সালে সিমউর এইচ. সারজেন্ট এই শব্দটিকে "পুরুষের রূচি ও স্বার্থের দিকে সমান মনোযোগ দিতে অস্বীকার" দ্বারা সংজ্ঞায়িত করেন।[২][যাচাইকরণ ব্যর্থ হয়েছে]

বিপরীত বর্ণবাদ, এবং "বিপরীত স্বাজাত্যবোধ" এর সাথে বিপরীত লিঙ্গবাদ শব্দটির তুলনা করা হয়। সকল ক্ষেত্রেই দেখা যায় প্রাতিষ্ঠানিক লিঙ্গবাদ ও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে যে ইতিবাচক ক্রিয়ার নীতি গ্রহণ করা হয়েছে সেগুলোর বিরুদ্ধে একটি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার জন্ম হয়েছে। সংখ্যাগুরু সম্প্রদায় (যেমন পুরুষ, শ্বেতাঙ্গ অথবা এংলো) এক্ষেত্রে বৈষম্যবোধ করেছে, এবং এখান থেকেই বিপরীত লিঙ্গবাদ, বিপরীত বর্ণবাদ ও বিপরীত স্বাজাত্যবোধ ধারণার জন্ম।[৩][৪] এই মতবাদের আরও কিছু শক্ত সংস্করণ আছে, যেগুলো ধরে নেয় যে, পুরুষের সুবিধা দানকারী ঐতিহাসিক ভারসাম্যহীনতা বর্তমান যুগে আর গ্রহণযোগ্য নয়,[৫] অথবা বর্তমানে নারীদেরকে উচ্চতর লিঙ্গ বলে ভাবা হচ্ছে।[৬]

বিপরীত লিঙ্গবাদকে প্রায়ই বৈষম্যের একটি ধরন হিসেবে দেখা হয় যা নারীবাদের বাড়াবাড়ির কারণে হয়েছে।[৭] নারীবাদের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হিসেবে এই ধারণাটি জনপ্রিয় হয়, যার প্রবক্তাগণ এই বিশ্বাস করতেন যে, নারীবাদী আন্দোলন সমাজকে এমনভাবে পুনর্গঠিত করেছে যে এখন এখানে নারীদেরকে অধিক সুবিধা দান করা হয় এবং পুরুষদেরকে শোষণ করা হয়।[৮]

লেখক ডেভিড বেনাটার পুরুষের বিরুদ্ধে লিঙ্গবাদকে "দ্বিতীয় লিঙ্গবাদ" হিসেবে উল্লেখ করেন, কারণ পুরুষের বিরুদ্ধে এই বৈষম্য প্রায়শই নজরের বাইরে থেকে যায় এবং একে নারীর বিরুদ্ধে বৈষম্যের তুলনায় কম গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়।[৯]

অনেক বিশেষজ্ঞ এবং পণ্ডিত "বিপরীত লিঙ্গবাদ" এর অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। যেমন স্টিভ বিয়ারম্যান, নেইল করোবভ এবং এভরিল থরন বলেন, বিপরীত লিঙ্গবাদ কোন "অর্থবহ শব্দসমষ্টি" নয়, কারণ "কোন একক নারী, বা সমগ্র নারী জাতি কোন নির্দিষ্ট পুরুষ বা পুরুষের দলের বিরুদ্ধে পূর্বসংস্কারগত পক্ষপাতিত্ব দেখাতে পারে বা সে অনুযায়ী কাজ করতে পারে, কিন্তু এটা কোন প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতার সমাজব্যবস্থার সমর্থন ছাড়াই করা হয়।"[১০] অধ্যাপক ওজলেম সেনসয় এবং রবিন ডিএনজেলো এর মতে, বিপরীত লিঙ্গবাদের অস্তিত্ব নেই, কারণ "লিঙ্গবাদ" বলতে একটি "ক্ষমতা সম্পর্ক বোঝায় যা ঐতিহাসিক এবং সমাজে প্রোথিত, এবং এই সম্পর্ক সামনে ও পেছনে স্থানের অদলবদল করে না।" এবং "একই দল যারা যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় ঐতিহাসিকভাবে ব্যবস্থাগত ক্ষমতা ধারণ করেছিল, তারা এখনও তাই ধারণ করে আছে।"[১১] বিপরীত লিঙ্গবাদের বিরুদ্ধ যুক্তিগুলো পিতৃতন্ত্রের অস্তিত্ব থেকে আসে, যেটা একটি ব্যবস্থা যা থেকে বেশিরভাগ সমাজই গঠিত হয়েছে। পিতৃতন্ত্রকে একটি সামাজিক সংগঠন হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যায় যা লিঙ্গের ক্রমোচ্চ শ্রেণিবিভাগ দ্বারা গঠিত হয়, যেখানে পুরুষকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এবং উত্তরাধিকারসূত্রে কর্তৃত্বপূর্ণ লিঙ্গ হিসেবে ধরা হয়।[১২] বিস্তৃত অর্থে পিতৃতন্ত্রকে পুরুষের শাসন হিসেবে উল্লেখ করা যায়। বিপরীত লিঙ্গবাদের বিরুদ্ধের যুক্তিদাতাদের মতে, বিপরীত লিঙ্গবাদ ধারণার উদ্ভব হচ্ছে পিতৃতন্ত্রের একটি লক্ষণ, অর্থাৎ নারীবাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ।

বিপরীত লিঙ্গবাদের ইতিহাস[সম্পাদনা]

বিপরীত লিঙ্গবাদের ধারণাটি প্রথম পাওয়া যায় ১৯৬০ এর দশকে, ঠিক যখন নারী স্বাধীনতা এবং নারীবাদী আন্দোলনের আবির্ভাব ঘটে। মনোবিজ্ঞানীদের দ্বারা একটি পুরুষ স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্ম হয়, যেখান থেকে বলা হয় যে, নারীত্ব ও পুরুষত্ব উভয়ই সমাজ দ্বারা তৈরি আচরণ এবং এখানে জিনের ভূমিকা নেই। এই পুরুষ অধিকার আন্দোলন এই দুটো ধারণার মধ্যে ভারসাম্য আনার চেষ্টা করেছিল যে, পুরুষেরা নারীর উপর নিপীড়নের জন্য দায়ী, কিন্তু পুরুষেরা কঠোর লৈঙ্গিক ভূমিকার মাধ্যমে পুরুষদেরকেও নিপীড়ন করে। যাই হোক, ১৯৭০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে এই আন্দোলন পুরুষের উপর নিপীড়নে অধিক মনোনিবেশ করে, এবং নারীদের উপর লিঙ্গবাদে কম মনোযোগ দেয়। আন্দোলনের এই পরিবর্তনটি লেখক ওয়ারেন ফ্যারেল এর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল যিনি "দ্য মিথ অফ মেল পাওয়ার" নামের একটি বই লেখেন। তিনি জোড় দিয়ে এটা দেখাবার চেষ্টা করেন যে কীভাবে পুরুষ লৈঙ্গিক ভূমিকা পুরুষের আবেগ ধারণ করতে এবং যত্নশীল হতে নিষেধ করে পুরুষের ক্ষতি করেছে। ১৯৮০ এর দশকে একটি নতুন পুরুষ অধিকার আন্দোলন শুরু হয় যা লৈঙ্গিক ভূমিকার দ্বারা উভয় লিঙ্গ কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেদিকে না গিয়ে দেখিয়ে লৈঙ্গিক ভূমিকা কীভাবে পুরুষের বিরুদ্ধেই বৈষম্যের সৃষ্টি করে সেদিকে মনোনিবেশ করে। লেখক হার্ব গোল্ডবার্গ দাবি করেন যে, যুক্তরাষ্ট্র একটি "মাতৃতান্ত্রিক সমাজ" ছিল, কারণ তখন নারীদের কাছে লৈঙ্গিক ভূমিকাকে লঙ্ঘণ করার ক্ষমতা ছিল এবং তারা পুরুষ ও নারী উভয় লৈঙ্গিক ভূমিকা পালন করতে পারত। অন্যদিকে পুরুষেরা কেবল তাদের পুরুষত্বের লৈঙ্গিক ভূমিকাই পালন করতে পারত।[১৩]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Neely, Carol Thomas (১৯৮১)। Feminist modes of shakespearean criticism: Compensatory, justificatory, transformational। পৃষ্ঠা 3–15। 
  2. Sargent, Seymour H. "Sexism & Reverse-Sexism in the Periodicals Room". Library Journal, vol. 111, no. 18, Nov. 1, 1986, p. 40. EBSCOhost, search.ebscohost.com/login.aspx?direct=true&db=f5h&AN=7413882&site=ehost-live&scope=site.
  3. Zack, Naomi (২০১৬)। Race/Sex: Their Sameness, Difference and Interplay। পৃষ্ঠা 46। 
  4. Ward, Amanda (২০১৩)। Handbook of Social Psychology। পৃষ্ঠা 496। 
  5. Sociological Abstracts: Supplement — Issues 67-77। ১৯৭৭। পৃষ্ঠা 202। 
  6. Collins, Georgia (১৯৮৪)। Women, art, and education। পৃষ্ঠা 14। 
  7. García-Farvaro, Laura; Gill, Rosalind (২০১৫)। ""Emasculation nation has arrived": sexism rearticulated in online responses to Lose the Lads' Mags campaign"Feminist Media Studies16 (3): 379–397। 
  8. Leidholdt, Dorchen; Raymond, Janice G. (১৯৯০)। The Sexual Liberals and the Attack on Feminism (পিডিএফ)। পৃষ্ঠা 165। 
  9. David., Benatar, (২০১২)। The second sexism : discrimination against men and boys। Malden, MA: Wiley-Blackwell। আইএসবিএন 9780470674512ওসিএলসি 780444609 
  10. Bearman, Steve; Korobov, Neill; Thorne, Avril (২০০৯)। "THE FABRIC OF INTERNALIZED SEXISM" (পিডিএফ)Journal of Integrated Social Sciences1 (1): 14। 
  11. http://journals.sagepub.com/doi/pdf/10.1177/003172170909000508
  12. "Definition of PATRIARCHY"www.merriam-webster.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-২৭ 
  13. Coston, Bethany M.; Kimmel, Michael (২০১৩)। "White Men as the New Victims: Reverse Discrimination Cases and the Men's Rights Movement"। Nevada Law Journal13: 368–385 – HeinOnline-এর মাধ্যমে।