বিসিএস তত্ত্ব
বিসিএস তত্ত্ব বা বার্ডিন-কুপার-শ্রিফার তত্ত্ব (জন বার্ডিন, লিয়ন কুপার এবং জন রবার্ট শ্রিফার এর নামে নাম দেয়া) ১৯১১ সালে হেইকে কামারলিং ওনেস এর অতিপরিবাহিতার উপর আবিস্কারের পর দেয়া প্রথম আণুবীক্ষণিক তত্ত্ব। এই তত্ত্ব অনুসারে কুপার জোড়ার বোসনের মত অবস্থায় ঘনীভূত হওয়ার কারণে আণুবীক্ষণিক ফল হিসেবে অতিপরিবাহিতার উদ্ভব ঘটে। নিউক্লিয় পদার্থবিদ্যায় পারমাণবিক নিউক্লিয়াসে নিউক্লিয়নগুলোর মধ্যে জোড় মিথস্ক্রিয়া ব্যাখ্যা করতেও এই তত্ত্ব ব্যবহার করা হয়।
১৯৫৭ সালে বার্ডিন, কুপার এবং শ্রাইফার এই তত্ত্বের প্রস্তাব করেন এবং সেজন্য ১৯৭২ সালে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]১৯৫০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে অতিপরিবাহিতা নিয়ে গবেষণা দ্রুত গতি অর্জন করে এবং অতিপরিবাহিতা ব্যাখ্যায় বেশকিছু সাফল্যও চলে আসে। ১৯৪৮ সালে ফ্রিজ লন্ডন তার "অতিপরিবাহিতার আণবিক তত্ত্বের সমস্যা",[১] প্রবন্ধে বলেন যে, ফেনোমোলজিকাল লন্ডন সমীকরণ, কোয়ান্টাম সঙ্গতির ফল। অনুপ্রবেশ পরীক্ষা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ব্রায়ান পিপার্ড ১৯৫৩ দালে প্রস্তাব করেন যে, লন্ডন সমীকরণগুলো অতিপরিবাহিতার সঙ্গতি দৈর্ঘ্য নামক চলকের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়। জন বার্ডিন ১৯৫৫ সালে প্রকাশিত "অতিপরিবাহকে মেইস্নার প্রভাব",[২] নামক প্রবন্ধে দাবি করেন যে, শক্তিস্তরের পার্থক্য জড়িত আছে এমন তত্ত্বগুলোতে এই পরিবর্তন প্রাকৃতিকভাবেই ঘটে। ১৯৫৬ সালে প্রকাশিত "ডিজেনারেট ফার্মি গ্যাসে আবদ্ধ বন্ধন জোড়"[৩] প্রবন্ধে আকর্ষণ শক্তি দ্বারা আবদ্ধ অবস্থার ইলেকট্রনগুলোর ক্ষেত্রে লিওন নেইল কুপারের হিসাব তার দাবির মূলভিত্তি ছিল।
১৯৫৭ সালে বার্ডিন ও কুপার, শ্রিফার এর সাথে মিলে এই তত্ত্বগুলোকে একত্র করে বিসিএস তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। "অতিপরিবাহিতার আণুবীক্ষণিক তত্ত্ব"[৪] নামে একটি চিঠিতে ১৯৫৭ সালের এপ্রিলে এই তত্ত্ব প্রকাশিত হয়। একই বছরের ডিসেম্বরে "অতিপরিবাহিতা তত্ত্ব"[৫] নামে প্রকাশিত প্রবন্ধে তারা উপপাদন করেন যে, দশা পরিবর্তন দ্বিতীয় ক্রমের, যার ফলে মেইস্নার প্রভাব দেখা যায়। একই সাথে তারা আপেক্ষিক তাপ এবং অনুপ্রবেশ গভীরতার হিসাব করে দেখান। ১৯৭২ সালে তারা এ তত্ত্বের জন্য পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৮৬ সালে কিছু পদার্থে উচ্চ তাপমাত্রায় অতিপরিবাহিতা আবিষ্কৃত হয় যা ১৩০ কেলভিন পর্যন্ত ছিল যা আগের ৩০ কেলভিন থেকে অনেক বেশি ছিল। এই ধারণা প্রতিষ্ঠিত ছিল যে শুধু বিসিএস তত্ত্ব দ্বারা এই ধর্ম ব্যাখ্যা করা সম্ভব ছিল না এবং এখানে অন্যান্য ফ্যাক্টরও কাজ করে।[৬] এই ফ্যাক্টরগুলো কিছু পদার্থে নিম্ন তাপমাত্রায় অতিপরিবাহিতাও নিয়ন্ত্রণ করে এবং এখনো তাদের পুরোপুরি জানা সম্ভব হয় নি।
সংক্ষিপ্ত বিবরণ
[সম্পাদনা]যথেষ্ট নিম্ন তাপমাত্রায় নিয়ে গেলে কুপার জোড়ার ইলেক্ট্রনগুলো ফার্মি পৃষ্ঠের কাছে অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। কুপার দেখান যে এই বন্ধন আকর্ষণ বিভবের উপস্থিতিতে ঘটে, তা যত দুর্বল হোক না কেন। সাধারণ অতিপরিবাহকে এই আকর্ষণ ইলেকট্রন- ল্যাটিস এর মিথস্ক্রিয়ায় আরোপিত হয়। উৎপত্তিস্থল যেখানেই হোক না কেন, বিসিএস তত্ত্বের প্রয়োজন এই আকর্ষণ বিভবের। বিসিএস তত্ত্ব অনুসারে, কুপার জোড়ের ঘনীভবনের বৃহৎ প্রভাব হল অতিপরিবাহিতা। এদের কিছু বোসনিক ধর্ম দেখা যায় এবং বোসনও যথেষ্ট নিম্ন তাপমাত্রায় বড়ধরনের বোস-আইনস্টাইন ঘনীভবন তৈরি করে। একই সময়ে বোগলিবভ রুপান্তর এর সাহায্যে নিকলে বোগলিবভ অতিপরিবাহিতা ব্যাখ্যা করেন।
অনেক অতিপরিবাহকে ইলেকট্রন এবং কম্পনশীল ক্রিস্টাল ল্যাটিস এর মিথস্ক্রিয়ায় পরোক্ষভাবে এই আকর্ষণ বিভব (ফোনন) তৈরি হয়। নিচে এর একটি খসড়া চিত্র দেয়া হল।
পরিবাহকের মধ্যে গতিশীল একটি ইলেকট্রন ধনাত্মক আধান দ্বারা আকৃষ্ট হয়। এর ফলে ল্যাটিসে বিকৃতি ঘটে এবং বিপরীত স্পিনযুক্ত ইলেকট্রন উৎপন্ন হয় যা উচ্চ ধনাত্মক আধানবিশিষ্ট অঞ্চলে প্রবেশ করে। এই ইলেকট্রন দুটি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত হয়। অতিপরিবাহকে এইরকম অনেক ইলেকট্রন জোড় থাকার কারণে এই জোড়ের মধ্যে শক্তিশালী সমপাতন ঘটে, ফলে উচ্চতর সমষ্টিগত কনডেনসেট তৈরি হয়। এই ঘনীভূত অবস্থায় একটি ইলেকট্রন জোড় ভাঙনের ফলে পুরো কনডেনসেটের শক্তির পরিবর্তন ঘটে। এভাবে একটি জোড়ের ভাঙনের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সবগুলো জোড় ভাঙনের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির সাথে সম্পর্কযুক্ত হয়। এভাবে জোড়ের কারণে শক্তি প্রতিবন্ধকতার বৃদ্ধি ঘটে, যার ফলে, পরিবাহকের দোদুল্যমান পরমাণু থেকে যে ধাক্কা পাওয়া যায় তা কন্ডেন্সেটের উপর বা তার সদস্য জোড়ের উপর তেমন কোন প্রভাব ফেলে না। ফলে সব ধাক্কা উপেক্ষা করে ইলেকট্রনগুলো জোড়া বেঁধে থাকে এবং কোন বাধা অনুভব করে না। অর্থাৎ, কনডেনসেটের এই সমষ্টিগত আচরণ অতিপরিবাহিতার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান।
বিস্তারিত
[সম্পাদনা]কুলম্ব বিকর্ষণ উপেক্ষা করতে পারে, ইলেকট্রনগুলোর মধ্যে এমন আকর্ষণের ধারণা দিয়ে বিসিএস তত্ত্ব শুরু হয়। বেশিরভাগ পদার্থে(নিম্ন তাপমাত্রায়) ক্রিস্টাল ল্যাটিস এর সাথে এই আকর্ষণের পরোক্ষ সংযোগ ঘটে। যাইহোক, বিসিএস তত্ত্বের ফল এই আকর্ষণের উৎপত্তিস্থলের উপর নির্ভর করে না। চরমশীতল গ্যাসে ফার্মিয়নের মধ্যেও কুপার জোড়া দেখা যায় এবং সেখানে সম-চৌম্বক ক্ষেত্র ফেসবাক রেজোন্যান্স এর সাথে যুক্ত থাকে। প্রকৃত বিসিএস তত্ত্ব (নিচে আলোচিত) এস-ওয়েভ অতিপরিবাহিতা অবস্থায় বর্ণনা করা হয় যা প্রকৃতপক্ষে নিম্ন তাপমাত্রার অতিপরিবাহকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু ব্যতিক্রম অতিপরিবাহকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য উচ্চ তাপমাত্রার অতিপরিবাহকীয় ডি-ওয়েভ এর ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হয় না।
এই ব্যতিক্রম ক্ষেত্রগুলো ব্যাখ্যায় বর্ধিত বিসিএস তত্ত্ব ব্যবহার করা হয়, যদিও উচ্চ তাপমাত্রার অতিপরিবাহিতার বৈশিষ্ট্যগুলো ব্যাখ্যার জন্য তা যথেষ্ট নয়।
বিসিএস তত্ত্ব ধাতুর মধ্যে ইলেকট্রনগুলোর মধ্যকার কোয়ান্টাম মেকানিকাল বহু-দেহ অবস্থার ধারণা দিতে সক্ষম। এই অবস্থাকে বিসিএস অবস্থা বলে। স্বাভাবিক অবস্থায় ইলেকট্রন স্বাধীনভাবে চলে, কিন্তু বিসিএস অবস্থায় তারা আকর্ষণ মিথস্ক্রিয়ার দ্বারা কুপার জোড়ায় আবদ্ধ থাকে। ইলেকট্রনগুলোর এই আকর্ষণের ফলে বিভব কমে যায় এবং এর ফলে বিসিএস অবস্থা তৈরি হয়। এই বিভবের ফলে উৎপন্ন তরঙ্গ ফাংশনের যে ভ্যারিয়েশনাল অ্যানসাজ ঘটে তার প্রস্তাব করা হয়। এই অ্যানসাজ কুপার জোড়ের ঘনত্বের সীমার সাথে মিলে যায়। এখানে উল্লেখ্য যে ফার্মিয়নের আকর্ষিক জোড়ের অঞ্চলে মধ্যে মিশ্রণ এবং ঘনত্বের মধ্যে ক্রমাগত ক্রসওভার ঘটে, যা একটি বড় সমস্যা। চরমশীতল গ্যাসের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বর্তমানে গবেষণার একটি ক্ষেত্র।
অন্তর্নিহিত প্রমাণ
[সম্পাদনা]হাইপারফিজিক্স ওয়েবসাইটের পৃষ্ঠাগুলোতে বিসিএস তত্ত্ব এর কিছু সারসংক্ষেপ দেয়া হয়েছে।[৭]
- ফার্মি স্তরে শক্তিফাঁক এর অস্তিত্ব ( একে"ধাঁধার মূল অংশ"ও বলা হয়)
- ক্রান্তি তাপমাত্রা এবং ক্রান্তি চৌম্বকক্ষেত্র ব্যান্ড ফাঁক এর তৈরি করে, ফলে দশা রুপান্তরের একটি পথ তৈরি হয়। কিন্তু পলির বর্জন নীতির কারণে একক ইলেকট্রনের জন্য একই শক্তিস্তর অর্জন করা সম্ভব হয় না। এই সাইট অনুসারে "পরিবাহিতায় হঠাৎ পরিবর্তনের জন্য ইলেকট্রনের আচরণেরও হঠাৎ পরিবর্তন দরকার হয়"। বোধগম্যভাবেই,ইলেকট্রন জোড় ঘনীভবনের বিভিন্ন নিয়ম দ্বারা আবদ্ধ বোসনের মত আচরণ করে এবং এদের সীমাবদ্ধতা এক নয়।
- ক্রান্তি তাপমাত্রার উপর আইসোটোপ ক্রিয়া যা ল্যাটিস মিথস্ক্রিয়া তৈরি করে
- ল্যাটিসে ফোননের দেব্যি কম্পাংক ল্যাটিস আয়নের ভরের বর্গমূলের ব্যস্তানুপাতিক। স্বাভাবিক পারদ না নিয়ে, পারদের ভিন্ন একটি আইসোটোপ নিয়ে অতিপরিবাহিতায় রূপান্তরের তাপমাত্রা দেখানো হয়েছিল।198Hg.[৮]
- কিছু পরিবাহকের ক্ষেত্রে ক্রান্তি তাপমাত্রার কাছাকাছি তাপমাত্রায় আপেক্ষিক তাপে এক্সপোনেন্সিয়াল বর্ধন দেখা যায়
- ক্রান্তি তাপমাত্রার কাছাকাছি তাপমাত্রায় আপেক্ষিক তাপ এক্সপোনেন্সিয়ালভাবে বেড়ে যাওয়া অতিপরিবাহক পদার্থে শক্তি ব্যান্ড ফাঁকের ধারণা দেয়। অতিপরিবাহক ভ্যানাডিয়াম কে ক্রান্তি তাপমাত্রার দিকে নিয়ে গেলে মাত্র কয়েক ডিগ্রি তাপমাত্রা পরিবর্তনে এর তাপ ধারণ ক্ষমতা অনেক বেড়ে যায়। এ থেকে ধারণা পাওয়া যায় যে তাপশক্তির সাথে শক্তি ব্যান্ডগ্যাপ এর একটা সম্পর্ক আছে।
- ক্রান্তি তাপমাত্রার দিকে নির্ণীত শক্তি-ফাঁক কমে যায়
- এটা এই ধারণা দেয় যে, ক্রান্তি তাপমাত্রার দিকে এগিয়ে গেলে বন্ধন শক্তি আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে যায়। অতিপরিবাহিতা অবস্থায় দুই বা ততোধিক কণা বা সত্ত্বার মধ্যে বন্ধন যে শক্তির কারণে হয় তার একটি ধারণা পাওয়া যায় এই বন্ধন শক্তি থেকে। এর ফলে আবদ্ধ কণার ধারণার উদ্ভব ঘটে, বিশেষ করে ইলেকট্রন জোড়ের - যা জোড় ইলেকট্রন এবং ল্যাটিস মিথস্ক্রিয়ার একটি ধারণা দিতে সক্ষম হয়।
প্রয়োগ
[সম্পাদনা]বার্ডিন,কুপার ও শ্রিফার বেশকিছু তত্ত্বীয় পূর্বাভাস উপপাদন করেন যেগুলো মিথস্ক্রিয়ার উপর নির্ভরশীল না। ইলেক্ট্রনের মধ্যে এই দুর্বল আকর্ষণের যে পরিমাণগত পূর্বাভাস এতে দেয়া হয় তা তথাকথিত দুর্বল সংযোগের ক্ষেত্রে নিম্ন তাপমাত্রার পরিবাহকে এই শর্ত পূর্ণ হয়। অনেক পরীক্ষা দ্বারা এই ধারণা প্রতিষ্ঠা পেয়েছে
- ইলেকট্রনগুলো কুপার জোড়ে আবদ্ধ থাকে এবং যে ইলেকট্রন গুলো দ্বারা এই জোড়গুলো তৈরি হয়, সেগুলো পলির বর্জন নীতি দ্বারা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত হয়। এ কারণে একটি জোড় ভাঙতে চাইলে, সবগুলো জোড়েরই শক্তি পরিবর্তিত হয়ে যায়। এর অর্থ হল এই যে, একক কণার উদ্দীপনার জন্য এখানে একটি শক্তিফাঁক রয়েছে, যা স্বাভাবিক ধাতুর মত না (যেখানে ইলেকট্রনের অবস্থা ইচ্ছামত সামান্য শক্তি যোগ করে পরিবর্তন করা যায়)। নিম্ন তাপমাত্রায় এই শক্তিফাঁক সর্বোচ্চ অবস্থায় উঠে, কিন্তু অবস্থান্তর তাপমাত্রায় পৌঁছামাত্রই তা অদৃশ্য হয়ে যায়। ফার্মি স্তরে একক কণার অবস্থা ঘনত্ব এবং আকর্ষণ মিথস্ক্রিয়ার শক্তিশালী হওয়ার সাথে সাথে এই ফাঁক বেড়ে যায়, এমন একটি ধারণা বিসিএস তত্ত্ব থেকে পাওয়া যায়। অধিকন্তু, এটা আরো বর্ণনা করে, যেখানে ফার্মি লেভেলের কাছে কোন ইলেকট্রনীয় অবস্থা নেই, সেখানে অতিপরিবাহী অবস্থায় পৌঁছামাত্রই অবস্থা ঘনত্ব কীভাবে পরিবর্তিত হয়ে যায়। টানেলিং পরীক্ষায়[৯] এবং অতিপরিবাহকে অণুতরঙ্গ প্রতিফলনে এই শক্তিফাঁক সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা যায়।
- T তাপমাত্রায় শক্তিফাঁক Δ কীভাবে ক্রান্তি তাপমাত্রা Tc এর উপর নির্ভরশীল বিসিএস তত্ত্ব তার আভাস প্রদান করে। শূন্য তাপমাত্রায় এর মান এবং অতিপরিবাহিতায় রুপান্তর তাপমাত্রায় এর মানের অনুপাতের একটি সার্বজনীন মান থাকে।[১০]
- যা পদার্থের উপর নির্ভরশীল নয়। ক্রান্তি তাপমাত্রার কাছে এই মান হয়[১০]
- যা আগের বছরে এম. জে. বাকিংহাম প্রস্তাব করেছিলেন।[১১] অতিপরিবাহিতার দশা রুপান্তর দ্বিতীয় ঘাতের এবং অতিপরিবাহী দশার ভর ফাঁক আছে এবং অতিপরিবাহিতার মাধ্যমে মিলিমিটার তরঙ্গের উপর বেলভিন্স, গর্ডি ও ফেইরব্যাঙ্ক এর করা পরীক্ষার ফলাফল, এসবের উপর ভিত্তি করে বাকিংহাম এই প্রস্তাবনা দিয়েছিলেন।
- শক্তিফাঁকের কারণে নিম্ন তাপমাত্রায় অতিপরিবাহকের আপেক্ষিক তাপ এক্সপোনেন্সিয়ালি কমে যায় এবং কোন তাপীয় উদ্দীপনা থাকে না। যাইহোক, অবস্থান্তর তাপমাত্রায় পৌঁছানোর আগে আপেক্ষিক তাপ স্বাভাবিক পরিবাহীর চেয়েও বেড়ে যায় এবং এই দুই মানের অনুপাত হয় সার্বজনীন, ২.৫।
- বিসিএস তত্ত্ব তাপমাত্রার সাথে মেইস্নার প্রভাব এবং অনুপ্রবেশ গভীরতার পরিবর্তনেরও ধারণা দেয়, যা ১৯৩৩ সালে ওয়ল্টার মেইস্নার এবং রবার্ট ওশ্চেনফেল্ড পরীক্ষার মাধ্যমে প্রদর্শন করেন।[১২]
- এই তত্ত্ব তাপমাত্রার সাথে ক্রান্তি চৌম্বক ক্ষেত্রের (যার উপরে অতিপরিবাহী চৌম্বক ক্ষেত্রকে আর উপেক্ষা করতে পারে না এবং স্বাভাবিক পরিবাহীতে পরিণত হয়) পরিবর্তনকেও ব্যাখ্যা করে। বিসিএস তত্ত্ব শূন্য তাপমাত্রায় ক্রান্তি চৌম্বক ক্ষেত্রের সাথে অবস্থান্তর তাপমাত্রায় এর মান ও ফারমি স্তরে অবস্থা ঘনত্বের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে।
- সহজ কথায়, বিসিএস তত্ত্ব অতিপরিবাহী অবস্থান্তর তাপমাত্রা Tc কে ইলেকট্রন-ফোনন সংযুক্তি বিভব V এবং দিব্যে কম্পাঙ্কে শক্তি ED:[৫] এর মাধ্যমে প্রকাশ করে।
- যেখানে N(0) ফার্মি স্তরে ইলেকট্রনীয় অবস্থা ঘনত্ব নির্দেশ করে।
- বিসিএস তত্ত্ব আইসোটোপ প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে যা ছিল পরীক্ষণীয় পর্যবেক্ষণ। এ প্রভাব অনুযায়ী, ক্রান্তি তাপমাত্রা ব্যবহৃত পদার্থের আইসোটোপের ভরের সাথে ব্যস্তানুপাতে পরিবর্তিত হয়। ১৯৫০ সালের ২৪শে মার্চে দুটি দল আইসোটোপ প্রভাব ব্যাখ্যা করেন। দলদুটি স্বাধীনভাবে ভিন্ন পারদ আইসোটোপ নিয়ে কাজ করে এবং আটলান্টায় ওএনআর সম্মেলনে পরস্পরের কথা জানতে পারে। দলদুটির একটি দলে ছিল এমানুয়েল ম্যাক্সওয়েল যিনি "পারদের অতিপরিবাহিতায় আইসোটোপ প্রভাব"[১৩] তে ফল প্রকাশ করেন এবং অন্য দলে ছিলেন সি. এ. রেনোল্ড, বি. সেরিন, ডব্লিও. এইচ. রাইট ও এল. বি. নেসবিট যারা "অতিপরিবাহিতায় আইসোটোপ প্রভাব"[১৪] এ দশপাতা পরে তাদের ফল প্রকাশ করেন। আইসোটোপ নির্বাচনের উপর পদার্থের তড়িৎ ধর্ম তেমন ভাবে নির্ভর করে না কিন্তু তা ল্যাটিস কম্পনের কম্পাঙ্কের উপর প্রভাব ফেলে। এটি এই ধারণা দেয় যে, অতিপরিবাহিতা ল্যাটিস কম্পনের সাথে সম্পর্কযুক্ত। এটি বিসিএস তত্ত্বের অন্তর্ভুক্ত যেখানে বলা হয়েছে, ল্যাটিস কম্পন কুপার জোড়ের ইলেকট্রনের বন্ধন শক্তির যোগান দেয়।
- লিটল-পার্কস ইফেক্ট [১৫] কুপার জোড়েরই একটি প্রদর্শন মাত্র।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ London, F. (সেপ্টেম্বর ১৯৪৮)। "On the Problem of the Molecular Theory of Superconductivity"। Physical Review। 74 (5): 562–573। ডিওআই:10.1103/PhysRev.74.562। বিবকোড:1948PhRv...74..562L। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ৩, ২০১২।
- ↑ Bardeen, J. (মার্চ ১৯৫৫)। "Theory of the Meissner Effect in Superconductors"। Physical Review। 97 (6): 1724–1725। ডিওআই:10.1103/PhysRev.97.1724। বিবকোড:1955PhRv...97.1724B।
- ↑ Cooper, Leon (নভেম্বর ১৯৫৬)। "Bound Electron Pairs in a Degenerate Fermi Gas"। Physical Review। 104 (4): 1189–1190। আইএসএসএন 0031-899X। ডিওআই:10.1103/PhysRev.104.1189। বিবকোড:1956PhRv..104.1189C।
- ↑ Bardeen, J.; Cooper, L. N.; Schrieffer, J. R. (এপ্রিল ১৯৫৭)। "Microscopic Theory of Superconductivity"। Physical Review। 106 (1): 162–164। ডিওআই:10.1103/PhysRev.106.162। বিবকোড:1957PhRv..106..162B। সংগ্রহের তারিখ মে ৩, ২০১২।
- ↑ ক খ Bardeen, J.; Cooper, L. N.; Schrieffer, J. R. (ডিসেম্বর ১৯৫৭)। "Theory of Superconductivity"। Physical Review। 108 (5): 1175–1204। ডিওআই:10.1103/PhysRev.108.1175। বিবকোড:1957PhRv..108.1175B। সংগ্রহের তারিখ মে ৩, ২০১২।
- ↑ Mann, A. (জুলাই ২০১১)। "High Temperature Superconductivity at 25: Still In Suspense"। Nature। 475 (7356): 280–2। ডিওআই:10.1038/475280a। পিএমআইডি 21776057। বিবকোড:2011Natur.475..280M। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ১৮, ২০১২।
- ↑ http://hyperphysics.phy-astr.gsu.edu/hbase/solids/bcs.html
- ↑ Maxwell, Emanuel। "Isotope Effect in the Superconductivity of Mercury"। Physical Review। 78 (4): 477–477। ডিওআই:10.1103/PhysRev.78.477। বিবকোড:1950PhRv...78..477M। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুলাই ২০১৪।
- ↑ Ivar Giaever - Nobel Lecture. Nobelprize.org. Retrieved 16 Dec 2010. http://nobelprize.org/nobel_prizes/physics/laureates/1973/giaever-lecture.html
- ↑ ক খ Tinkham, Michael (১৯৯৬)। Introduction to Superconductivity। Dover Publications। পৃষ্ঠা 63। আইএসবিএন 0-486-43503-2।
- ↑ Buckingham, M. J. (ফেব্রুয়ারি ১৯৫৬)। "Very High Frequency Absorption in Superconductors"। Physical Review। 101: 1431–1432। ডিওআই:10.1103/PhysRev.101.1431। বিবকোড:1956PhRv..101.1431B।
- ↑ Ein neuer Effekt bei Eintritt der Supraleitfähigkeit
- ↑ Isotope Effect in the Superconductivity of Mercury
- ↑ Superconductivity of Isotopes of Mercury
- ↑ W. A. Little and R. D. Parks, “Observation of Quantum Periodicity in the Transition Temperature of a Superconducting Cylinder”, Physical Review Letters 9, 9 (1962), doi:10.1103/PhysRevLett.9.9
প্রাথমিক উৎস
[সম্পাদনা]- L. N. Cooper, "Bound Electron Pairs in a Degenerate Fermi Gas", Phys. Rev 104, 1189 - 1190 (1956) ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১০ মার্চ ২০১১ তারিখে.
- J. Bardeen, L. N. Cooper, and J. R. Schrieffer, "Microscopic Theory of Superconductivity", Phys. Rev. 106, 162 - 164 (1957) ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৯ জুলাই ২০০৮ তারিখে.
- J. Bardeen, L. N. Cooper, and J. R. Schrieffer, "Theory of Superconductivity", Phys. Rev. 108, 1175 (1957).
আরো পড়ুন
[সম্পাদনা]- John Robert Schrieffer, Theory of Superconductivity, (1964), আইএসবিএন ০-৭৩৮২-০১২০-০
- Michael Tinkham, Introduction to Superconductivity, আইএসবিএন ০-৪৮৬-৪৩৫০৩-২
- Pierre-Gilles de Gennes, Superconductivity of Metals and Alloys, আইএসবিএন ০-৭৩৮২-০১০১-৪.
- Cooper, Leon N; Feldman, Dmitri, সম্পাদকগণ (২০১০)। BCS: 50 Years (book)। World Scientific। আইএসবিএন 978-981-4304-64-1।
- Schmidt, Vadim Vasil'evich. The physics of superconductors: Introduction to fundamentals and applications. Springer Science & Business Media, 2013.
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- ScienceDaily: Physicist Discovers Exotic Superconductivity (University of Arizona) August 17, 2006
- Hyperphysics page on BCS
- BCS History
- Dance analogy ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৯ জুন ২০১১ তারিখে of BCS theory as explained by Bob Schrieffer (audio recording)
- Mean-Field Theory: Hartree-Fock and BCS in E. Pavarini, E. Koch, J. van den Brink, and G. Sawatzky: Quantum materials: Experiments and Theory, Jülich 2016, আইএসবিএন ৯৭৮-৩-৯৫৮০৬-১৫৯-০