গেলাগুয়েতজা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
২৭ জুলাই, ২০১৫ তারিখে গেলাগুয়েতজা উৎসবের স্থিরচিত্র

গেলাগুয়েতজা বা লস লানেস ডেল সারো (স্পেনীয়: Guelaguetza) মেক্সিকোয় অনুষ্ঠিত আদিবাসীদের বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ওয়াজাকা প্রদেশের রাজধানী ওয়াজাকা শহর ও তার পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোয় এ অনুষ্ঠান বার্ষিকাকারে উদযাপিত হয়। অনুষ্ঠানস্থলে ঐতিহ্যবাহী নৃত্যসহকারে দলবদ্ধভাবে যা প্রায়শঃই যুগলবন্দীরত অবস্থায় আদিবাসীরা পোশাক পরিধান করে আসেন।

আদিবাসীরা পায়ে হাটা উপযোগী ব্যান্ড নিয়ে শোভাযাত্রা সহযোগে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানের পাশাপাশি স্থানীয় খাবার ও প্রদেশের সর্বত্র ব্যবহৃত পোশাক পরিধেয় অবস্থায় থাকে। এ উৎসব পর্যটন আকর্ষণের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদানরূপে বিবেচিত। এছাড়াও এ উৎসবটি প্রদেশের অধিবাসীদের গভীর সাংস্কৃতিক গুরুত্বতা ধারণ করছে ও ঐ ধরনের সংস্কৃতি রক্ষার্থে ধারাবাহিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

ওয়াজাকায় ব্যাপকসংখ্যক আদিবাসী বসবাস করছেন। ৫০ শতাংশের অধিক আদিবাসী এখানে রয়েছেন যা সমগ্র মেক্সিকোয় তুলনান্তে ২০ শতাংশ আদিবাসী রয়েছেন। অদ্যাবধি ওয়াজাকায় আদিবাসীদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড অত্যন্ত সুসংগঠিত। তিন লক্ষাধিক ব্যক্তি এ প্রদেশে বসবাস করছেন। তাঁরা আদিবাসীদের স্থানীয় ভাষাকে ব্যাপকভাবে গ্রহণ করেছে ও অনেকেই দোভাষীরূপে স্পেনীয় ভাষা বা আদিবাসীদের জীবনধারায় অনুসরণ করে আসছে। গেলাগুয়েতজা উৎসব স্পেনীয়দের আগমনের অনেকবছর পূর্বে থেকেই প্রচলিত।[১] ওয়াজাকা সংস্কৃতির স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যরূপে অদ্যাবধি বিদ্যমান। এর উৎপত্তি ও প্রচলন ঘটেছে প্রাক-হিস্পানিক যুগের পৃথিবীভিত্তিক ধর্মীয় উৎসব উদযাপনে ‘শস্যের পূজা’ ও ‘শস্যের দেবতাকে’ ঘিরে।[২] সমসাময়িককালে ওয়াজাকায় রাষ্ট্রে অবস্থানকারী সকল আদিবাসী সম্প্রদায় গেলাগুয়েতজায় সমবেত হয়। সেখানে প্রধানত বিভিন্ন ধরনের সঙ্গীত চর্চা প্রদর্শন, পোশাক প্রদর্শন, নৃত্য প্রদর্শন ও খাবারের আয়োজন করা হয়। মেক্সিকোয় এ ধরনের উৎসবে আদিবাসীদের সমবেত হওয়া সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।[২]

২০০৫ সালে গেলাগুয়েতজায় জনস্রোত।

মেক্সিকোয় অনেক ধরনের আদিবাসী প্রচলিত ধারার মধ্যে এ উৎসবকে গ্রহণ করা হয়েছে এবং এতদাঞ্চলে স্পেনীয় দখলদারিত্বের ফলে খ্রিস্টীয় সংস্কৃতির সাথে এটি মিশে গেছে। কুমারী কৃতদাসীকে উৎসর্গ করা হয় যা এ উৎসব থেকে বাদ দেয়া হয়েছে ও এর পরিবর্তে গুলাগুয়েতজায় আওয়ার লেডি মাউন্ট কারমেলের (ভার্জেন ডেল কারম্যান) সম্মানে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মিশে গেছে। কুমারী মেরিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে যাতে তিনি তাঁর বিশ্বাসীদেরকে রক্ষা করতে পারেন। ২০শ শতাব্দীর শুরুতে ১৯২০-এর দশকে বেশ কয়েকবার ভূমিকম্প হলে শহরের অধিকাংশ এলাকা ধ্বংস হয়ে যায়। ফলে এ উৎসবকে পুনরায় রাষ্ট্রের সর্বত্র সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হিসেবে আয়োজন করা হয় ও ওয়াজাকা জনগোষ্ঠী ‘লা গেলাগুয়েতজা ডে লা রাজা’ নামে অনুষ্ঠান করতে থাকে যাতে তাঁদের মধ্যে নৈতিকতাবোধ পুনরায় জাগ্রত হয়।[২] আরও আধুনিক ধাঁচে শোভাযাত্রা প্রদর্শনে প্রত্যেক জনগোষ্ঠী বা অঞ্চলের অভিন্ন নৃত্য প্রদর্শনী শুরু হয়। এরফলে উৎসবটি পূর্বের তুলনায় আরও দৃষ্টিনন্দন উৎসবে পরিণত হতে থাকে। ১৯৭০-এর দশকে গেলাগুয়েতজাকে উপলক্ষ করে একটি স্টেডিয়াম শহরের কেন্দ্রস্থল ফোরটিন হিলের ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নির্মাণ করা হয়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের পর্যটন উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে যখন ১৯৮৭ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী শহর হিসেবে প্রাচীন ওয়াজাকা শহরের নাম ঘোষণা করে। ১৯৯৪ সালের নভেম্বর মাসে একে ঘিরে আধুনিককালের সীমিত প্রবেশাধিকার সমৃদ্ধ হাইওয়ে নির্মাণ করা হয়। হাইওয়ে নির্মাণের পূর্বে যাতায়াত ব্যবস্থায় খুবই ধীরলয়ে হতো। এতোটাই ধীরে ছিল যে, দৃশ্যতঃ এবড়োথেবড়ো দূরবর্তী পর্বতসঙ্কুলময় উঁচু এলাকার ভূমি দিয়ে অন্যান্য শহর বিশেষ করে ওয়াজাকা শহর থেকে মেক্সিকো সিটি হয়ে গেলাগুয়েতজায় পৌঁছতে এক সপ্তাহ লেগে যেতো। রাষ্ট্রের শহরগুলোয় জুলাইয়ে শেষ সোমবার থেকে শুরু হয়। জাপোটেক ভাষা থেকে গুলাগুয়েতজা শব্দটি এসেছে। উপহার ও সেবার স্মারকসূচক ভাব বিনিময়ের মাধ্যমে আদিবাসী সংস্কৃতি ও বিস্তৃত সম্প্রদায়ের গুরুত্বতা রক্ষা করা হয়।[১] গেলাগুয়েতজা উৎসবের পাশাপাশি অনেকগুলো অতিরিক্ত বিষয় যুক্ত করা হয়। এতে ‘প্রিন্সেস দোনাজি’ নামীয় প্রাক-হিস্পানিক মঞ্চ নাটক উৎসবের পূর্ব দিন মঞ্চস্থ করা হয়।

সময়কাল[সম্পাদনা]

প্রত্যেক বছরই গেলাগুয়েতজা উৎসব ১৬ জুলাইয়ের পরবর্তী দুই সোমবারে অনুষ্ঠিত হয়। কোন কারণে ১৮ জুলাই সোমবার পড়লে মেক্সিকোর প্রথম আদিবাসী ও ২৬তম রাষ্ট্রপতি বেনিতো জুয়ারেজের দেহাবসানের কারণে তা বাতিল হয়ে যায়। এরফলে এক সপ্তাহ পর ২৫ জুলাই ও ১ আগস্ট উৎসবের আয়োজন করা হয় যা ২০১১ সালে সংঘটিত হয়েছিল।[১] তবে উৎসবের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি যেমন: সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা, নাটক ইত্যাদি পুরো জুলাই মাস জুড়েই অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।[২]

২০১০ সালে গেলাগুয়েতজা মিলনায়তনের অবকাঠামো নির্মাণকার্য শেষ হয়।

উৎসবটি পর্যটকদের ব্যাপক আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। তবে যৌন উত্তেজক বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে প্রাচীন ঐতিহ্যগাঁথাকে তুলে ধরার প্রেক্ষিতে প্রগতিশীলদের মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Cohen, Jeffrey H. (১৯৯৯)। Cooperation and Community: Economy and Society in OaxacaUniversity of Texas Pressআইএসবিএন 0-292-71221-9 
  2. Quintanar Hinojosa, Beatriz (আগস্ট ২০০৭)। "La Guelaguetza"Guía México Desconocido: Oaxaca137: 22। 

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]