সুবোধ মুখার্জী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সুবোধ মুখার্জী
জন্ম১৯১৮
মৃত্যু১৯৫৯
আন্দোলনমায়ানমারের সাম্যবাদী আন্দোলন

সুবোধ চন্দ্র মুখার্জী (১৯১৮-১৯৫৯) একজন বর্মার বিপ্লবী আন্দোলনের সাম্যবাদী নেতা।[১] তিনি সারা বর্মা ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন এবং সেই সূত্রে বিপ্লবী আন্দোলনের অগ্রগণ্য ব্যক্তিত্ব।[২]

প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

সুবোধ মুখার্জীর পিতা ছিলেন দেবেন্দ্রনাথ মুখার্জী এবং মা ছিলেন চারুবালা দেবী। তিনি বাংলাদেশের যশোর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতার চাকরি অনুসারে তিনি বর্মার রেঙ্গুনে আসেন এবং তার ছাত্রজীবন বর্মায় (অধুনা মায়ানমার) কাটে। তিনি ১৯৩০ সালে রেঙ্গুনের বেঙ্গল আকাদেমি স্কুল থেকে অ্যাংলো-ভার্নাকুলার মিডল স্কুল পরীক্ষায় পাশ করেন। তিনি সেদেশের বেঙ্গলী স্টুডেন্ট এসোসিয়েশনের ছাত্র নেতা হরিনারায়ণ ঘোষালের প্রেরণায় কমিউনিস্ট মতবাদে আগ্রহী হন। এই বেঙ্গলী স্টুডেন্ট এসোসিয়েশন বর্মার মুক্তিসংগ্রামে ও চট্টগ্রাম যুববিদ্রোহে গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করেছিল। অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন ডাক্তার অমর নাগ, বারীন দে, সাধন ব্যানার্জী, গোপাল মুন্সী, অমর দে, মাধব মুন্সী প্রমুখ। তিনি বর্মা কমিউনিস্ট পার্টির সংগঠকদের মধ্যেও একজন ছিলেন।

বিপ্লবী কর্মকাণ্ড[সম্পাদনা]

১৯৪০ সালের গোড়ার দিকে রেঙ্গুনের শহরতলী কামায়ুতে একটি গোপন স্থানে বর্মা কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান নেতা অং সান, থাকিন সো, থান টুন, থাকিন বা হিয়েন প্রমুখদের সাথে পার্টি প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুবোধ মুখার্জী। অন্যান্য বাঙালি বিপ্লবীদের সাথে ট্রেড ইউনিয়ন গড়ার দায়িত্ব ন্যস্ত ছিল তার ওপর।[৩][৪] ১৯৪১ এর ফেব্রুয়ারি মাসে প্রায় সমস্ত বাঙালি কমিউনিস্ট কর্মীরা গ্রেপ্তার হয়ে যান। হরিনারায়ণ ঘোষাল, অমর দে'র সাথে তাকে ইরাওয়াডি অঞ্চলের হেনজাদা জেলে পাঠানো হয়। এর কিছুকাল পর ১৯৪১ সালের ডিসেম্বর মাসে জাপানি আক্রমনে ইংরেজরা বর্মা ছেড়ে পালাতে শুরু করে। জাপানী বোমাবর্ষণে প্রচুর ভারতীয় পরিবারও বর্মা ত্যাগ করে। হরিনারায়ন ঘোষাল, অমর নাগ, অমর দে, অরবিন্দ দত্ত, সাধন ব্যানার্জী প্রমুখেরা বিপদসংকুল পথ পেরিয়ে পদব্রজে ভারতে আসেন বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে। পথশ্রমে ও কলেরায় এই সময় বহু ভারতীয় পথেই মারা যান। কিন্তু আস্তে পারেননি সুবোধ মুখার্জী; জাপানী ফৌজের ঘেরের মধ্যে আটকে পড়ার ফলে।[২] পরে জেল থেকে বেড়িয়ে বর্মাতেই থেকে যান সুবোধ মুখার্জী। বহু পরিবারকে নিরাপত্তার সংগে দেশত্যাগের সুযোগ করে দিলেও তিনি জাপান অধিকৃত বর্মায় ঝুঁকি নিয়েও থেকে যান ও শ্রমিক সংগঠনের কাজ করতে থাকেন গোপনে। ফ্যাসিবিরোধী লিবারেশন ফ্রন্টের অন্যতম নেতা ছিলেন।[৩][৪]

১৯৫৬ সালে তিনি পেনডুইয়োনা পর্বতমালার অতিদুর্গম অঞ্চলের এক গোপন আস্তানায় ছিলেন। ইতিহাসবিদ চিন্মোহন সেহানবীশের লেখা থেকে জানা যায় এই আস্তানা থেকে বার্তাবাহী দ্বারা চিঠিতে তিনি চেয়ে পাঠান রবীন্দ্রনাথের কাব্য সংকলন সঞ্চয়িতা। রেঙ্গুনে কোথাও বইটা না পেয়ে লোক মারফত কলকাতা থেকে আনিয়ে বইটা পাঠানো হয়েছিল। পরে সুবোধ মুখার্জীর সাথে সাক্ষাৎ হলে জিজ্ঞাসা করেন সশস্ত্র সংগ্রামের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের লেখার সম্পর্ক। প্রশ্নকর্তার কথায় "স্বভাবসিদ্ধ প্রাণখোলা অট্টহাসি হেসে বললেন, তোকে কত কবিতা শুনিয়েছে ছাত্রজীবনে, ভুলে গেলি। আবৃত্তি করে গেলেন - হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বী..."।[৫][৬]

মৃত্যু[সম্পাদনা]

তিনি সারা বর্মা ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন এবং সেই সূত্রে বিপ্লবী আন্দোলনের অগ্রগণ্য ব্যক্তিত্ব। জীবিত বা মৃত ধরার উদ্দেশ্যে সারা দেশে পুলিশ পুরস্কার ঘোষণা করে। এক লক্ষ টাকা পুরস্কার ছিল তার মাথার ওপর। ১৯৫৯ সালে উত্তর বর্মার পাক্কাউকু জেলায় এক গোপন আস্তানায় শত্রুপক্ষের অতর্কিত আক্রমণে সুবোধ মুখার্জী গুলিবিধ হয়ে মারা যান।[২] সরকারি দলপতি তার মাথাটি কেটে নিয়ে যায়। রেঙ্গুনের খবরের কাগজে সেইভাবেই ছবি প্রকাশিত হয়েছিল।[৩][৫][৭]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. রায়, উৎপল (২০১২)। আলাপচারিতার নেপথ্যে। কলকাতা: পারুল। পৃষ্ঠা ৬১, ৬২। আইএসবিএন 978-93-81140-80-2 
  2. মুখোপাধ্যায়, সরোজ (১৯৮৫)। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ও আমরা। কলকাতা: ন্যাশনাল বুক আজেন্সি। পৃষ্ঠা ৪৮৮। আইএসবিএন 81-7626-199-0 |আইএসবিএন= এর মান পরীক্ষা করুন: checksum (সাহায্য) 
  3. গৌতম চট্টোপাধ্যায় (১৯৯২)। সমাজতন্ত্রের অগ্নিপরীক্ষা ও ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলন। কলকাতা: পুস্তক বিপণি। পৃষ্ঠা ৬৮, ৭০, ৭২। আইএসবিএন 81-85471-11-8 
  4. সাধন ব্যানার্জী (২০০২, সেপ্টেম্বর)। দাঙ্গা প্রতিরোধে ট্রাম শ্রমিকদের অসামান্য বীরগাথা। কলকাতা: উজানে, ত্রৈমাসিক। পৃষ্ঠা ১১৫।  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  5. সেহানবীশ, চিন্মোহন (১২ মার্চ ১৯৬৬)। "সুবোধ মুখার্জী" – আনন্দবাজার পত্রিকা-এর মাধ্যমে। 
  6. Sehanavis, Chinmohan (১৯৮৫)। Rabīndranātha o biplabisamāja। Biśvabhāratī Granthanabibhāga। 
  7. প্রথম খন্ড, সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত (২০০২)। সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান। কলকাতা: সাহিত্য সংসদ। পৃষ্ঠা ৫৮৬।