কাতার–মিশর সম্পর্ক
মিশর |
কাতার |
---|
মিশর-কাতার সম্পর্ক হল মিশর এবং কাতার রাষ্ট্রদ্বয়ের মধ্যকার দ্বিপাক্ষীয় সম্পর্ক। ১৯৭২ সালে এর সূত্রপাত হয়।[১]
রাজনৈতিক বিবাদ
[সম্পাদনা]মিশরের আন্দোলনরত সংস্থাগুলোকে কাতার অর্থনৈতিকভাবে সাহায্য করছে - এমন অভিযোগে ১৯৯৭ সালে মিশ্র কাতারে অনুষ্ঠেয় এমইএমএ সম্মেলন বয়কট করে। তারা কাতারের গণমাধ্যমকে মিশরবিরোধী কর্মসূচী জিয়ে রাখার অভিযোগও করে।[২][৩] পরবর্তীতে ঐ বছর সৌদি আরব বিরাজমান বিবাদের মধ্যস্থতা করলেও এর কয়েক সপ্তাহ পরেই কাতার প্রায় ৭০০ মিশরীয় কর্মকর্তাদের সরকারি এবং বেসরকারি কর্মস্থল থেকে অব্যাহতি দেয়।[৪] সম্মেলন চলাকালীন কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী মিশরের বিরুদ্ধে 'ষড়যন্ত্রকারীদের' সহযোগিতার অভিযোগ আনেন। মূলত তিনি ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঘটে যাওয়া আমির মাদ বিন খলিফা আল থানির বিরুদ্ধে পাল্টা-অভ্যুত্থানের ব্যাপারেই অভিযোগ করেন।[২] কাতার মিশরীয় নাগরিকদের ভিসা দেয়া থেকে বিরত থাকে এবং মিশরীয় কর্মকর্তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করতে শুরু করে।[২]
২০১৩ সালে মিশরীয় সামরিক বাহিনী কাতার-সমর্থিত রাষ্ট্রপতি মুহাম্মাদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যূত করে। এর ফলে কাতার এবং মিশরের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করে। কিছু আরব রাষ্ট্র চলমানে বিবাতে মিশরে পক্ষাবলম্বন করে।[৫] আরব রাষ্ট্রসমূহের কাতারের বিরুদ্ধে অবস্থান করার অন্যতম কারণ হল ইউসূফ আল-কারযাভীর প্রতি কাতারের সমর্থন। ইউসূফ আল-কারযাভী একজন ইসলামিক চিন্তাবিদ, যার বিরুদ্ধে মুসলিম ব্রাদারহুডের বুদ্ধিজীবী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার জন্য অভিযোগ রয়েছে।[৬]
২০১৪ সালের মার্চ মাসে অন্যান্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কাতারের হস্তক্ষেপের অভিযোগে তিনটি আরব রাষ্ট্র কাতার থেকে তাদের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নেয়। অভিযোগের মধ্যে মিশরের ব্রাদারহুডকে অর্থনৈতিকভাবে সহায়তাও ছিল।[৭] ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের দিকে কাতার সৌদি আরবসহ পারস্য উপসাগরের অন্যান্য দেশের ক্রমাগত চাপের ফলে মিশরের সাথে তাদের সম্পর্ক ঠিক করার চেষ্টা করে।[৮][৯]
ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সালে, সৌদি আরবের আব্দুল্লাহর মৃত্যুর একমাস পর মিশর লিবিয়ায় আইএসআইএল কর্তৃক মিশরীয় কিবতীদের শিরশ্ছেদের ঘটনার প্রেক্ষিতে তাদের উপর বিমানহামলা চালায়। এর ফলে মিশরের সাথে কাতারের সম্পর্কে আবারও ফাটল ধরে।[১০][১১] আল জাজিরা এ ঘটনার ফলে নিহত সাধারণ ব্যক্তিবর্গের কথা তুলে ধরে বিমানহামলা ঘটনার নিন্দাজ্ঞাপন করে।[১১] তদপরি কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিমানহামলা ঘটনার প্রতি সংশয় প্রকাশ করে। এর ফলে আরব লীগের অন্যতম মিশরীয় প্রতিনিধি তারিক আদেল কাতারের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদ সমর্থনের অভিযোগ করেন। মিশরীয় নাগরিকেরা অনলাইনে কাতারের প্রতি নিন্দাজ্ঞাপন করে।[১২] জিসিসি মিশরের অভিযোগকে অস্বীকার করেন এবং সংস্থাটির মহাসচিব বিবৃতিকে মিথ্যা বলে অভিহিত করেন।[১৩] এর কিছুদিন পরেই কাতার পরামর্শের মিশরের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠায়।[১২]
আল জাজিরা
[সম্পাদনা]১৯৯৬ সালে আল জাজিরার প্রতিষ্ঠার পর এটি প্রায়শই হোসনি মুবারকের সমালোচনা করত, যার বিরুদ্ধে মুবারক এবং মিশরীয় গণমাধ্যমের ভূমিকা পাল্টাপাল্টি ছিল। ১৯৯৭ সালে মিশর তাদের ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির প্রধান, ওমর সুলায়মানকে মিশর সরকারের ক্রমাগত সমালোচনার প্রেক্ষিতে কাতারে পাঠায়।[৩] ২০০২ সালের একটি সাক্ষাৎকারে, মুবারক আল জাজিরাকে "আরব দেশগুলোর মধ্যে ঝামেলা, শত্রুতা ও অস্থিরতা ছড়ানো"র অভিযোগ করেন।[১৪] ২০১০ সালে ফাঁস হওয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি নথির মাধ্যমে জানা যায় যে হামাদ বিন জসিম আল থানি ইউএস সিনেটর জন কেরিকে জানায় যে তিনি মুবারককে একটি প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যা 'এক বছরের জন্য আল জাজিরাকে বন্ধ' করে দিতে পারবে, যদি মিশর প্যালেস্টাইনের সাথে ঐ সময়ে দীর্ঘস্থায়ী চুক্তি করে।[১৫]
২০১৩-এর মিশরীয় অভ্যুত্থানের পর আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি মুসলিম ব্রাদারহুড সমর্থিত মুহাম্মাদ মুরসিকে মিশরের রাষ্ট্রপতি পদ থেকে প্রতিস্থাপন করেন। সিসি ক্ষমতায় এসে মুসলিম ব্রাদারহুডের মিডিয়া সহচরদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থাগ্রহণ করেন, যার মধ্যে আল জাজিরাও ছিল, যারা মুসলিম ব্রাদারহুডের নানা মুখপাত্রকে গণমাধ্যমে কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছিল।[১৬] ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে আল জাজিরার সাংবাদিক মোহাম্মদ ফাহমি, পিটার গ্রেস্টে এবং বাহের ঘোরেবকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে এই অবস্থা চরমে পৌছায়।[১৭] ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মিশরে আল জাজিরার সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়। বন্ধ করে দেয়ার পিছনে অভিযোগ ছিল, যে আল জাজিরা দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে।[১৮]
অর্থনৈতিক সম্পর্ক
[সম্পাদনা]২০০৩ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০১৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত মিশরে কাতারের ফার্মগুলোর বিনিয়োগের সর্ববৃহৎ অংশ নিয়োজিত ছিল, যা মোট বিনিয়োগের প্রায় ৩১.১%।[১৯]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Bilateral Relations"। Ministry of Foreign Affaris of Qatar। ২৪ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০১৫।
- ↑ ক খ গ Maddy-weitzman, Bruce (১৯৯৯)। Middle East Contemporary Survey: Volume 21। Westview Press। পৃষ্ঠা 124। আইএসবিএন 978-0813337623।
- ↑ ক খ Fendy, Mamoun (২০০৭)। (Un)Civil War of Words: Media and Politics in the Arab World (Praeger Security International)। Praeger। পৃষ্ঠা 46। আইএসবিএন 978-0275993931।
- ↑ El-nawawy, Mohammed; Iskander, Adel (২০০৩)। Al-jazeera: The Story Of The Network That Is Rattling Governments And Redefining Modern Journalism Updated With A New Prologue And Epilogue। Basic Books; Reprint edition। পৃষ্ঠা 131–132। আইএসবিএন 978-0813341491। ১৫ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ নভেম্বর ২০১৬।
- ↑ "Egypt's break with Qatar could contribute to a scorching summer for country's residents"। Washington Post। ২১ মে ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জানুয়ারি ২০১৫।
- ↑ Olivier Guitta (২০ ফেব্রুয়ারি ২০০৬)। "The Cartoon Jihad: The Muslim Brotherhood's project for dominating the West"। দ্য উইকলি স্ট্যান্ডার্ড। পৃষ্ঠা Volume 11, Issue 22। ১৬ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ নভেম্বর ২০১৬।
- ↑ "Arab states withdraw ambassadors from Qatar in protest at 'interference'"। দ্য গার্ডিয়ান। ৫ মার্চ ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জানুয়ারি ২০১৫।
- ↑ "Qatar moves to cut ties with Hamas and repair relations with Egypt"। National Post। ৩০ ডিসেম্বর ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জানুয়ারি ২০১৫।
- ↑ "Egypt, Qatar Accept Saudi Initiative to Mend Ties"। The Wall Street Journal। ২০ ডিসেম্বর ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জানুয়ারি ২০১৫।
- ↑ Kirkpatrick, David (১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫)। "Egypt Launches Airstrike in Libya Against ISIS Branch"। New York Times। সংগ্রহের তারিখ ২৩ মার্চ ২০১৫।
- ↑ ক খ Hussein, Walaa (১ মার্চ ২০১৫)। "Qatar rejects Egypt's war on terrorism"। Al Monitor। সংগ্রহের তারিখ ২৩ মার্চ ২০১৫।
- ↑ ক খ "Qatar recalls ambassador to Egypt over ISIL row"। Al Jazeera। ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৩ মার্চ ২০১৫।
- ↑ "GCC rejects accusation of Egypt to Qatar supporting terrorism"। BBC Arabic। ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৩ মার্চ ২০১৫।
- ↑ Thusu, Daya Kishan; Freedman, Des (২০০৩)। War and the Media: Reporting Conflict 24/7। SAGE Publications Ltd। পৃষ্ঠা 157। আইএসবিএন 978-0761943129।
- ↑ Bridges, Scott (২০১৩)। 18 days: Al Jazeera English and the Egyptian Revolution। Amazon Digital Services, Inc.। পৃষ্ঠা 283।
- ↑ "Why Egypt Hates Al Jazeera"। foreignpolicy.com। ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জানুয়ারি ২০১৫।
- ↑ El Deeb, Sarah (৩১ মার্চ ২০১৪)। "Canadian journalist asks Egyptian judge to free him: 'I ask for acquittal'"। The Star।
- ↑ "Egypt Court Orders Broadcast Ban Of Al Jazeera"। Huffington Post। ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জানুয়ারি ২০১৫।
- ↑ "Qatari firms top list of investors in Arab countries"। The Peninsula। ২৯ ডিসেম্বর ২০১৫। ২৪ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ২০১৫।