রস
রস হচ্ছে বিভিন্ন ফল ও সবজীর ভিতরে সঞ্চিত একধরনের তরল পানীয় যা চাপ প্রয়োগে বের করা হয়। অনেক সময় রস বলতে এইসব (সবজী বা ফলমূলের) স্বাদযুক্ত তরল পানীয় কিংবা অন্য যেকোন জৈবিক খাদ্যের উৎস যেমন মাংস ও সামুদ্রিক খাবার থেকে প্রাপ্ত তরল পদার্থকেও বুঝায় (উদাহরণস্বরুপ: ঝিনুকের রস)। সাধারণভাবে রস একপ্রকার পানীয় হিসেবে কিংবা অন্যকোন খাবার বা পানীয়তে স্বাদযুক্তকারী উপাদান হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। গাঁজন (মদ প্রস্তুতির পদ্ধতি) প্রক্রিয়া ছাড়াই পাস্তুরায়ন প্রক্রিয়ায় রস সংরক্ষণ শুরু হওয়ার পরে থেকেই রস গণমানুষের পছন্দের তালিকার পানীয় হিসেবে উদিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) এর মতে ২০১২ সালে সারা পৃথিবীতে ১২,৮৪০,৩১৮ টন সাইট্রাস ফলের রস উৎপাদিত হয়। [১] ফলের রসের সবচেয়ে বড় ভোক্তা হচ্ছে নিউজিল্যান্ড (প্রতিদিন প্রায় এক কাপ বা ৮ আউন্স) এবং কলম্বিয়া (প্রতিদিন এক কাপের তিন চতুর্থাংশের বেশি)। একটি দেশের গড় আয় বৃদ্ধির সাথে সাথে ফলের রস গ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
ব্যুৎপত্তি
[সম্পাদনা]ইংরেজি জুস (Juice) শব্দটি প্রাচীন ফরাসি শব্দ থেকে ১৩০০ সালের দিকে আসে। এর মূল ফরাসি শব্দ ''জুস (jus), জুইস (juis), জোইস (jouis)'' যার অর্থ হচ্ছে ''গুল্ম সেদ্ধ করে বের করা তরল''।[২] ১৪শ সতকের শুরু হতে ইংরেজি Juice শব্দটি "ফলমূল বা সবজীর ভিতরের তরল" বুঝাতে ব্যবহার শুরু হয়। বাংলায় কবে থেকে '''রস''' শব্দটি আশে তা জানা যায়নি।
প্রস্তুতি
[সম্পাদনা]তাপ প্রয়োগ ও দ্রাপকের অনুপস্থিতে ফলমূল বা সবজী কে যান্ত্রিক ভাবে পেষণ করে রস তৈরি করা হয়। উদাহরণস্বরুপ, কমলার রস হচ্ছে কমলা গাছের ফলের নির্যাস, টমেটোর রস হচ্ছে টমেটো গাছের ফল থেকে চাপ দিয়ে বের করে আনা তরল। বাড়িতে হাত অথবা রস তৈরি করার যন্ত্রের মাধ্যমে ফলমূল বা সবজী থেকে রস প্রস্তুত করা যায়। বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে অনেক সময় রস থেকে আঁশ বা মজ্জা ছেঁকে আলাদা করা হয়। কিন্তু অন্যদিকে বেশি মজ্জাযুক্ত কমলার জুস আবার জনপ্রিয় পানীয়। অনেক সময় রসের সাথে অতিরিক্ত চিনি, কৃত্রিম স্বাদ ও গন্ধ যুক্ত করা হয়। রস সংরক্ষণ করার অনেকগুলো পদ্ধতির মাঝে উল্লেখযোগ্য হল বোতলজাতকরণ, পাস্তুরায়ন, ঘনীভূতকরণ, ফ্রিজিং ইত্যাদি।
যদিও রসের প্রকৃতি অনুযায়ী রস প্রস্তুত করার পদ্ধতিতে ভিন্নতা আছে তবুও রস প্রস্তুতির সধারণ পদ্ধতি নিম্নরূপঃ:[৩]
- ধৌতকরণ ও বাছাইকরণ
- রস নিষ্কাশন
- ছাঁকন, পরিস্রুতকরণ ও শোধন
- মিশ্রণ করা ও পাস্তুরায়ন
- বোতলজাতকরণ
- শীতলীকরণ ও প্যাকেটজাতকরণ
ফল সংগ্রহ ও ধৌতকরণের পর দুইটি স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির একটি দ্বারা ফল থেকে রস আলাদা করা হয়। প্রথম পদ্ধতিতে ধাতব নল যুক্ত দুইটি ধাতব কাপ একত্রিত হয়, ফলের খোসা ছাড়ায় এবং ফলের মজ্জাকে চাপ দিয়ে ধাতব নলের মধ্য দিয়ে নেয়া হয়। ফলে নলের ভিতরের ছোট ছোট ছিদ্র দিয়ে ফলের রস বের হয়ে যায়। ফলের খোসা রেখে দেয়া হয় পরে ব্যবহারের জন্য। দ্বিতীয় পদ্ধতি অনুযায়ী যে যন্ত্রে রস নিষ্কাশন করা হবে তাতে ফল দেয়ার আগে ফল দুই ভাগে দুই ভাগে কেটে নেয়া হয়। [৪]
রস পরিস্রুত করার পর বাষ্পিভবনের মাধ্যমে রস্কে ঘন করা হয়। এতে রসের আয়তন পাঁচ ভাগের একভাগ হয়ে যায়। এতে রস পরিবহন যেমন সহজ হয় তেমনি এর মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার সময় ও দীর্ঘায়িত হয়। রস নিয়ে বায়ুশূন্য অবস্থায় তাপ দিয়ে ঘন করা হয় যাতে রসের মঝের জলীয় অংশ অপসারিত হয়ে যায়। রসের দুই তৃতিয়াংশ পানি অপসারণ করা হয়। পরে রস আবার পুণর্গঠিত করা হয়। ঘন রসের মাঝে প্রয়োজনীয় পানি মেশানো হয় এবং অন্যান্য ব্যাপার যেমন হারিয়ে যাওয়া স্বাদ ও গন্ধ ফিরিয়ে আনা হয়। অনেকসময় ঘন অবস্থার রসই বিক্রয় করা হয়, এক্ষেত্রে ভোক্তা ব্যবহারের সময় প্রয়োজনীয় পানি মিশিয়ে নেয়।
এরপর রস পাস্তুরায়ন করা হয় এবং পাত্রপূর্ণ করা হয়, কখনো কখনো গরম অবস্থাতেই। যদি গরম অবস্থাতেই রস পাত্রে রাখা হয় তাহলে যত তড়াতাড়ি সম্ভব তা ঠান্ডা করা হয়। .
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Faostat"। Faostat.fao.org। ২০১২-০৬-১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-১২-২৭।
- ↑ "Online Etymology Dictionary"। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জানুয়ারি ২০১৭।
- ↑ "Fruit Juice Processing,Fruit Juice Powder Plant,Fruit Juice Processing Plant,Juice Powder Plant"। sspindia.com। ১০ নভেম্বর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ মে ২০১৫।
- ↑ "How orange juice is made - production process, making, used, processing, product, industry, Raw Materials, The Manufacturing Process of orange juice, Byproducts/Waste, Quality Control"। madehow.com। সংগ্রহের তারিখ ৭ মে ২০১৫।