চাঁদের উৎপত্তি ও পরিবর্ধন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
চাঁদের দূর পার্শ্বের খাদ

চাঁদের উৎপত্তি ও পরিবর্ধন বলতে পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ চাঁদের গঠন সম্পর্কিত বিভিন্ন ব্যাখ্যাকে বুঝানো হয়। এই সম্পর্কিত তত্ত্বের মধ্যে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্যটি হল জায়ান্ট-ইম্প্যাক্ট তত্ত্ব।[১][২] এটি নিয়ে এখনও ব্যাপক গবেষণা চলছে এবং একাধিক ভিন্ন অভিমত রয়েছে।[১] অন্যান্য প্রস্তাবিত তত্ত্বের মধ্যে রয়েছে ফিশন, গঠন একত্রীক্করণ (ঘনীভবন তত্ত্ব), গ্রহাণু তত্ত্ব এবং মহাকাশীয় সংঘর্ষ তত্ত্ব।[৩] আদর্শ দৈত্যাকার সংঘর্ষ তত্ত্বমতে মঙ্গল গ্রহের সমান আকৃতির থিইয়া পৃথিবীর সাথে সংঘর্ষের ফলে পৃথিবীকে ঘিরে একটি ডেবরিস বলয়ে তৈরি হয়। যা পরবর্তীতে চাঁদ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। চাঁদের অক্সিজেন আইসোটপিক অনুপাত মূলতঃ পৃথিবীর মতই।[৪] কিন্তু থিইয়া যদি ভিন্ন কোন গ্রহ বা প্রোটোপ্লানেট হত, তবে অবশ্যই এর আইসোটপিক অনুপাত পৃথিবীর চেয়ে ভিন্ন হত।[৫]

গঠন[সম্পাদনা]

"বিগ মুলে", চন্দ্র নমুনা ৬১০১৬

কিছু তত্ত্বে বলা হয় ৪.৬ বিলিয়ন বছর পূর্বে, সৌরজগতের গঠনের শুরুর দিকে, পৃথিবী পাথর এবং লাভায় পূর্ণ ছিল এবং পৃথিবীর কোন বড় আকারের চাঁদ ছিল না। মঙ্গল গ্রহাকৃতির আদিম প্রোটোপ্লানেট থিইয়া পৃথিবীর সাথে সংঘর্ষিত হলে পৃথিবী থেকে একটি অংশ বিচ্যুত হয়ে ছিটকে পড়ে। মহাশূন্যে ছিটকে পড়া অংশ হারিয়ে গেলেও এরই মাঝে কিছু অংশ আবার পৃথিবীর কক্ষপথে একীভূত হয়ে চাঁদ গঠন করে। এই তত্ত্ব অনুসারে, চাঁদের উদ্ভব পৃথিবীর বর্তমান আকারের সাথে অন্তত ৯০% সামঞ্জস্য পূর্ণ কোন বস্তুর সাথে সংঘর্ষ হলেই সম্ভব।বেশিরভাগ সময়ই সাংঘর্ষিক বস্তুটিকে থিইয়া বলা হয়। গ্রীক পুরাণে উল্লেখিত চাঁদের দেবী সেলেন এর মা থিইয়া থেকে এরূপ নামকরণ করা হয়েছে। কিন্তু আধুনিক কম্পিউটার ব্যবহার করে দেখা গিয়েছে, এই সংঘর্ষের ফলে যে শক্তি উৎপন্ন হতে পারে তার পরিমান অত্যন্ত বেশি। এরূপ বিশাল সংঘর্ষে ট্রিলিয়ন টনেরও বেশি বস্তু বাষ্পীভূত এবং গলে যাওয়ার কথা। এমনকি এতে পৃথিবীর কোন কোন অংশের তাপমাত্রা ১০,০০০°C (১৮০০০ °F) এর মত হয়েছিল।

গ্রহণ[সম্পাদনা]

এই তত্ত্বমতে চাঁদ পৃথিবী কর্তৃক অধিগ্রহিত হয়েছিল।[৬] ১৯৮০-এর আগ অব্দি এই ধারণা বেশ জনপ্রিয় ছিল। চাঁদের আকৃতি, কক্ষপথ এবং জোয়ার-ভাটা সংক্রান্ত ইস্যু এই ধারণাকে সমর্থন করে।[৬] 

অধিগ্রহণ তত্ত্বের মূল সমস্যা হল,[৬] পৃথিবীর সাথে এরূপ ঘটনা সাধারনত বিস্ফোরণ কিংবা কক্ষপথের বিচ্যুতি ঘটায়। তাই ধারণা করা হয়, আদিম পৃথিবীতে একটি বিশাল বায়ুমন্ডল থাকতে পারে যা সঙ্ঘর্ষকে ধীর গতিতে ঘটতে সাহায্য করে। এই তত্ত্বমতে বৃহস্পতি এবংশনির অনিয়ত উপগ্রহীয় কক্ষপথের কারণও ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।[৭] তবে দুই জায়গার প্রয়োজনীয় অভিন্ন  অক্সিজেন আইসোটপের অনুপাতের কারণ বিশ্লেষণ করতে এই তত্ত্ব ব্যবহার সুবিধাজনক নয়।[৪]

পৃথিবী এবং চাঁদের স্কেল, ৫০০ কি.মি প্রতি পিক্সেল

ফিশন[সম্পাদনা]

বিখ্যাত জীববিজ্ঞানী চার্লস ডারউইনের পুত্র জর্জ ডারউইন সপ্তদশ শতকের দিকে সর্বপ্রথম ফিশন তত্ত্বের সূচনা করেন। এই তত্ত্ব অনুসারে ক্রম ঘূর্ণায়মান পৃথিবী থেকে একটি অংশ ছিটকে গিয়ে চন্দ্রের সূচনা করে।[৬] অস্ট্রিয়ান ভূতত্ত্ববিদ অটো এমফারার ১৯২৫ সালে মহাদেশীয় প্রবাহের দরুণ চন্দ্রের সৃষ্টি বলে প্রস্তাবনা দেন।[৮]

পরিবৃদ্ধি[সম্পাদনা]

পরিবৃদ্ধির তত্ত্বানুসারে পৃথিবী এবং চন্দ্র সৌরজগতের আদিম পরিবৃদ্ধি চাকতিতে একই সাথে গঠিত হয়েছে। কিন্তু এই তত্ত্ব পৃথিবী এবং চাঁদের মধ্যবর্তী কৌণিক ভরবেগের ব্যাখ্যা দিতে পারে না। পৃথিবীর তুলনায় চাঁদের লৌহ অংশ অপেক্ষাকৃত কম (পৃথিবীর ব্যাসার্ধের প্রায় ৫০ শতাংশ কিন্তু চাঁদের ব্যাসার্ধের মাত্র ২৫%)  কেন তার উত্তরও এই তত্ত্ব দিতে অক্ষম।[৯]

অতিরিক্ত তত্ত্ব এবং গবেষণা[সম্পাদনা]

চন্দ্র বিবর্তন, নাসা ২০১২ এর ভিডিও।[১০]

২০১১ সালে একটি তত্ত্বে বলা হয় ৪.৫ বিলিয়ন বছর পূর্বে দ্বিতীয় একটি চন্দ্রের অস্তিত্ব ছিল। পরবর্তীতে যার সাথে বর্তমান চন্দ্রের একটি সংঘর্ষ হয় এবং এই সংঘর্ষ বর্তমান চন্দ্রের গঠন তরান্বিত করে।

অপর একটি সম্ভাব্য তত্ত্বে বলা হয় পৃথিবীর চাঁদ শুক্র গ্রহ থেকে এসেছে।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

টিকা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "NASA Lunar Scientists Develop New Theory on Earth and Moon Formation"। ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০১৬ 
  2. Staff (সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৪)। "Revisiting the Moon"New York Times। সংগ্রহের তারিখ সেপ্টেম্বর ৮, ২০১৪ 
  3. Theories of Formation for the Moon
  4. Wiechert, U.; Halliday, A. N.; Lee, D.-C.; Snyder, G. A.; Taylor, L. A.; Rumble, D. (অক্টোবর ২০০১)। "Oxygen Isotopes and the Moon-Forming Giant Impact"ScienceScience (journal)294 (12): 345–348। ডিওআই:10.1126/science.1063037পিএমআইডি 11598294বিবকোড:2001Sci...294..345W। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৭-০৫ 
  5. Nield, Ted (সেপ্টেম্বর ২০০৯)। "Moonwalk" (পিডিএফ)। Geological Society of London। পৃষ্ঠা 8। ২০১১-০৬-০৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৩-০১ 
  6. "Lunar Origin Models"LunarOrigin.com। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৬  |ওয়েবসাইট= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)
  7. Jewitt, David; Haghighipour, Nader (২০০৭), "Irregular Satellites of the Planets: Products of Capture in the Early Solar System", Annual Review of Astronomy and Astrophysics, 45, পৃষ্ঠা 261–295, arXiv:astro-ph/0703059অবাধে প্রবেশযোগ্য, ডিওআই:10.1146/annurev.astro.44.051905.092459, বিবকোড:2007ARA&A..45..261J 
  8. Die Naturwissenschaften, July 1925 (in German)
  9. "GSFC"। ৩ মার্চ ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০১৬ 
  10. doi:10.1038/nature10289

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]