রাজা সেজোং
রাজা সেজোং | |||||
---|---|---|---|---|---|
জোসনের রাজা | |||||
রাজত্ব | ১৪১৮-১৪৫০ | ||||
রাজ্যাভিষেক | ১৮ সেপ্টেম্বর ১৪১৮ | (বয়স ২১)||||
পূর্বসূরি | তাইজং(ই বাং-উন | ||||
উত্তরসূরি | মুঞ্জং (ই হায়াং) | ||||
রাজপ্রতিভূ | তাইজং সাবেক রাজা হিসাবে (১৪১৮–১৪২২) মুঞ্জং,সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসাবে(১৪৪২-১৪৫০) | ||||
জন্ম | হানসুং, জোসন[১] | ১৫ মে ১৩৯৭||||
মৃত্যু | এপ্রিল ৮, ১৪৫০ হানসুং, জোসনের | (বয়স ৫২)||||
রাণী হিসাবে
“রাজ সঙ্গী”
| |||||
| |||||
রাজবংশ | জিয়ং জু ই | ||||
পিতা | তাইজং(ই বাং-উন] | ||||
মাতা | উং ইয়ং, জোসনের | ||||
ধর্ম | কনফুশিয়ানিজম(দর্শন), পরবর্তিতে বৌদ্ধ ধর্ম |
সেজোং দা গ্রেইট(জন্মঃ মে ১৫, ১৩৯৭ – এপ্রিল ৮, ১৪৫০ , রাজত্বকাল ১৪১৮-১৪৫০) ছিলেন কোরিয়ার জোসন রাজবংশের চতুর্থ রাজা। জন্মগ্রহণ করেন পারিবারের দেয়া নাম “ই ড” নামে। তিনি ছিলেন রাজা তেজং এর তৃতীয় ছেলে। তিনি ১৪১৮ সালে সিংহাসন অধিগ্রহণ করেন। তার রাজত্বের প্রথম চার বছর তাইজং শাসনকার্য পরিচালনা করেন এবং এরপর তার শ্বশুর, এবং ঘনিষ্ঠদের হত্যা করা হয়। সেজং কোরিয়ান দর্শনকে চাঙ্গা করে তুলেন এবং প্রধান প্রধান আইন সংশোধন করেন। তিনি কোরিয়ান লিপি “হাঙ্গুল” তৈরি করেন, বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি অগ্রসরে উৎসাহ প্রধান করেন, এবং জারি প্রকাশ করেন সমৃদ্ধি স্থির ও উন্নতি করতে। তিনি উত্তরে সামরিক অভিযান বরখাস্থ করেন এবং সামিন নীতি জারি করেন যাতে ঔপনিবেশিকরা আকর্ষিত হয়। দক্ষিণে জাপানী আক্রমণকারীদের বশ করেন এবং টুশিমা দ্বীপ দখল করেন। তার রাজত্বের ১৪১৮ থেকে ১৪৫০ এ, শাসক হিসাবে ছিলেন ১৪২২ থেকে ১৪৪২ এবং মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ১৪৪২ থেকে ১৪৫০ এ তার ছেলে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী যুবরাজ মুনজং এর সময়ে শাসনকার্য পরিচালনা করেন। যদিও “দা গ্রেইট”/ "大王" উপাধি গোরিও এবং জোসন রাজবংশের সকল শাসককেই দেয়া হয় কিন্তু এটি গুনাগাত এবং সেজং এর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।
প্রাথমিক জীবন
[সম্পাদনা]সেজং জন্মগ্রহণ করেন ১৩৯৭ সালের ১৫ই মে, রাজা তাইজং এর তৃতীয় ছেলে। যখন তার বয়স বার তখন তিনি যুবরাজ চুংইয়ং হন।[২] তরুণ যুবরাজ হিসাবে সেজং তার বাকি দুই ভাইয়ের চেয়ে বিভিন্ন পড়াশুনায় পারদর্শি হন এবং তার পিতার বিশেষ অধিকারভোগ করেন। তাইজং এর তৃতীয় ছেলে হিসাবে সেজং এর সিংহাসন উত্তরণ ছিল অনন্য। তাইজং এর বড় ছেলে ইয়াংইয়ং কে ১৪০৪ সালে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ইয়াংইয়ং এর মুক্তমণা এবং শিকারের নেশা ও অবসর সময় কাটানোর ফলে তাকে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী থেকে সরানো হয় ১৪১৮ সালে। তাইজং এর দ্বিতীয় ছেলে যুবরাজ হায়রইয়াং তার ছোট ভাই সেজং এর উন্নতির জন্য ভিক্ষু(সন্ন্যাসী) হয়ে যায়।[৩] ইয়াংইয়ংকে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী থেকে সরানোর ফলে তাইজং তাড়াতাড়ি তার ছোট ছেলেকে সিংহাসনে বসানো প্রতিয়মান হয়ে উঠে। সরকারী কর্মকর্তাদের সরানো হয় যারা ইয়াংইয়ংকে সরানোর জন্য বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু তাইজং এর অবসরের পরও তিনি সরকারের নীতিতে প্রভাব ফেলতে থাকেন। সেজং ১৪২২ সালে তার পিতার মৃত্যুর পরই সিংহাসনে প্রকৃতভাবে অধিগ্রহণ করেন।[৩]
কৃতিত্ব
[সম্পাদনা]কনফুশিয়ানিজম এর উপর ভিত্তি করে রাজনীতি শুরু
[সম্পাদনা]রাজা সেজং শাসনকার্যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনেন সকল স্তরের মানুষকে বেসামরিক কর্মচারী হিসাবে নিয়োগ দিয়ে। অধিকন্তু তিনি সরকার পরিচালনা করে কনফুশিয়ানিজম অনুযায়ী এবং তিনি জনগণকে উৎসাহ দেন কনফুশিয়ানিজম অনুযায়ী আচরণ করতে। যার ফলে কনফুশিয়ানিজম হয়ে যায় সামাজিক আদর্শ। তিনি কনফুশিয়ানিজম এর উপর কিছু বইও প্রকাশ করেন। প্রথমদিকে তিনি বৌদ্ধ ধর্মকে কে দমন করেন সিওল এর সকল বৌদ্ধ ভিক্ষুকে নিষিদ্ধ করে, আয়তনে বহুলাংশে বৌদ্ধ পুরোহিতদের ক্ষমতা এবং সম্পদ কমান, কিন্তু পরবর্তিতে তিনি তার কার্যকলাম প্রশমিত করেন বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করে মন্দির নির্মাণের মাধ্যমে।[৪]
বৈদেশিক নীতি
[সম্পাদনা]চীনের রাজা মিং এর সাথে সম্পর্ক তৈরি করে তিনি কিছু সফল চুক্তি সম্পন্ন করেন যা জোসনকে লাভবান করে। মঙ্গোলিয়ার জুরকেইন সম্প্রদায় এর সাথে সম্পর্কের মাধ্যমে তিনি কোরিয়ার উত্তর দিকের উপদ্বীপে দশটি সামরিক ঘাঁটি স্থাপিত করেন। তিনি জাপানের সাথে ভাল সম্পর্ক রাখেন তিনটি বন্দর খুলে দিয়ে তাদের সাথে বাণিজ্য করতে। কিন্তু তিনি তুশিমিয়া দ্বীপ আক্রমণ করেন সৈন্যবাহিনী দ্বারা যেন তিনি দক্ষিণ সাগরে(পূর্ব চীন সাগর) জলদস্যুতা থামাতে পারেন কেননা তুশিমিয়া দ্বীপ জলদস্যুদের ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল।
কোরিয়ান সৈন্যবাহিনীর শক্তিবৃদ্ধি
[সম্পাদনা]রাজা সেজং ছিলেন একজন সফল সামরিক পরিকল্পনাকারী। তিনি বিভিন্ন সামরিক নীতির সৃষ্টি করেন তার রাজ্যের নিরাপত্তার জন্য, সাহায্য করেন কোরিয়ার সামরিক প্রযুক্তিকে অগ্রগতি সাধনের জন্য, যার মধ্যে কামান উন্নয়নও ছিল। বিভিন্ন ধরনের মর্টার এবং অগ্নি তীর পরীক্ষা তার সাথে বারুদের ব্যবহার। ১৪১৯ সালের মেতে, তার পিতা রাজা তেজং এর উপদেশ এবং নির্দেশনায় “গিহায় পূর্ব আক্রমণ” এ লক্ষস্থির করেন, এই সামরিক আক্রমণের চূড়ান্ত লক্ষ ছিল জাপানী জলদস্যুদের সরানো যারা তুশিমিয়া দ্বীপ থেকে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। এই আক্রমণে ২৪৫ জন জাপানী মারা যায় এবং লড়াইয়ে আরও একশ দশ জনকে গ্রেফতার করা হয়, যেখানে ১৮০ জন কোরিয়ান সৈন্য মারা যায়। এই আক্রমণের মাধ্যমে অপহৃত ১৪৬ জন চীনা এবং ৮ জন কোরিয়ানকে মুক্ত করা হয়। ১৪১৯ এর সেপ্টেম্বরে একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতি দেয়া হয় যেখানে কোরিয়ান সৈন্য কোরিয়ায় ফিরে আসে কিন্তু “গিহায় সন্ধি” স্বাক্ষরিত হয় ১৪৪৩ সালে যেখানে তুশিমিয়ার দাইমো প্রতিশ্রুতি দেন জোসনের রাজাকে রাজস্ব দিতে, প্রত্যাবর্তনে জোসন রাজসভা সো গৌত্রকে পুরস্কার দেয় যে তারা জাপান এবং কোরিয়ার মধ্যে লেনদেন বা বাণিজ্য করতে পারবে।[৫] ১৪৩৩ সালে সেজং একজন বিশিষ্ট জেনারেল কিম জংসোকে উত্তরে পাঠান জুরকেইন সম্প্রদায় বিনাশ করতে। কিমের সৈন্যরা কয়েকটি কেল্লা দখল করে এবং উত্তর দিকে কোরিয়ার রাজত্ব বাড়ায়, সোঙ্গোয়া নদী পর্যন্ত। চারটি দুর্গ এবং ছয়টি ঘাঁটি নির্মাণ করা হয় জনগণকে জুরকেইন থেকে সুরক্ষা দিতে।[৬][৭][৮]
বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি
[সম্পাদনা]সেজংকে কৃতিত্ব দেয়া হয় তার রাজত্বকালে বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতির জন্য।[৯][১০] তিনি কৃষকদের সাহয্য করতে চেয়েছিলেন তাই তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে কৃষকদের জন্য একটি হস্তপুস্তক তৈরি করার। যার নাম নংসা জিকসিওল যেটিতে বিভিন্ন কৃষি পদ্ধতি সম্পর্কে তথ্য ছিল, তিনি বিজ্ঞানীদের বলেছিলেন কোরিয়ার বিভিন্ন রাজ্য থেকে সংগ্রহ করার জন্য। এই পদ্ধতিগুলোর প্রয়োজন ছিল নতুন গৃহীত প্রণালী বজায় রাখতে যাতে নিবিড়, একটানা চাষ হয় কোরিয়ান কৃষিতে। তার শাসনকালে জাং ইয়ং-সিল হয়ে উঠেন একজন বিশিষ্ঠ আবিষ্কারক। জাং প্রকৃতগতভাবে সৃজনশীল এবং তীক্ষ্ণ বুদ্ধিদীপ্ত তরুণ ছিলেন। কিন্তু জাং সমাজের সবচেয়ে নিম্নস্তরে ছিলেন। তাইজং, সেজং এর পিতা, জাং এর দক্ষতা লক্ষ করেন এবং তাৎক্ষণিক তাকে সিওলের রাজদরবারে ডাকেন। জাংকে একটি রাজপদে নিয়োগ দেন এবং তার আবিষ্কারে তহবিল প্রদান করেন, রাজ কর্মকর্তাগণ এর প্রতিবাদ করেন বিশ্বাস করে যে নিম্নস্তরের একজন লোক পরিষদবর্গের ক্ষমতার মধ্যে আসা উচিত নয়। সেজং বিশ্বাস করেন জাং এর মেধাকে এবং তার সামর্থকে সমর্থন করেন। জাং গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবন করেন জলঘড়ি, জৌতির্বিদ্যার গোলক, সুন্দাইল(যেটি সময় নির্দেশ করে)[১১]। ১৪৪২ সালে জাং বিশ্বের প্রথম রেইন গজ উদ্ভাবন করেন এবং নাম দেন চিউগজি;[১০] এটি ছিল সেজং এর ছেলে এবং সিংহাসনের উত্তরাধিকারী মুঞ্জং এর ধারণা।
সেজং চেয়েছিলেন কোরীয় দিনপঞ্জিকা পদ্ধতি সংশোধন করতে, যেটি তৈরি হয়েছিল চীনা রাজধানীর সময়ের উপর ভিত্তি করে। সেজং কোরিয়ার ইতিহাসে প্রথমবারের মত তার জ্যোতির্বিদদের নিয়োগ দেন দিনপঞ্জিকা তৈরির জোসনের রাজধানী সিওল এর উপর ভিত্তি করে। এই নতুন পদ্ধতিতে কোরিয়ান জ্যোতির্বিদরা সঠিকভাবে সূর্য এবং চন্দ্রবস্থার সময় গণনা করতে পারেন।[১২] সেজং এর সময় কোরিয়াদের নিজস্ব চিকিৎসাবিদ্যার উন্নতি হয় যেটি চীনের চিকিৎসা থেকে আলাদা।
সাহিত্য
[সম্পাদনা]সেজং জোসনের কৃষকদের কৃষি উৎপাদনের উপর নির্ভরশীল ছিলেন তাই তিনি কৃষকদের কর কমিয়ে দেন। এর ফলে কৃষকরা কর নিয়ে চিন্তা কম করত এবং তাদের শস্য উৎপাদন ও বিক্রয়ে বেশি দৃষ্টি দিত। যখন রাজপ্রসাদে অতিরিক্ত খাবার থাকত তখন রাজা সেজং তা গরীব চাষী বা কৃষকদের প্রদান করতেন যাদের তা প্রয়োজন ছিল। ১৪২৯ সালে রাজা সেজং এর তত্ত্বাবধানে নংশা-জিকসিওল বই লিখা হয়। এটি ছিল কোরিয়ান প্রথম বই কৃষি, কৃষিবাণিজ্যের সাথে রোপণ, উত্তলণ এবং মৃত্তিকা প্রণালী এর উপর। বেশিরভাগ রাজ কর্মকর্তা এর বিরোধিতা করেন হাঙ্গুল লিপি ব্যবহারের জন্য এতে নিম্ন শ্রেণির লোকেরা শিক্ষিত হয়ে যাবে এবং একজন আরেকজনের সাথে লিখিত যোগাযোগ করতে পারবে। সেজং এর ব্যক্তিগত লিখাও ছিল উচ্চ বিবেচনাধীন। তিনি রচনা করেন জনপ্রিয় “ইয়ংবি ইউচিওন গা”(সংস অব ফ্লায়িং ড্রাগন”, ১৪৪৫), সেকোবো সাংজিওল(বৌদ্ধের জীবনী, ১৪৪৭), অরিং চিওং-গাং জিগক(১৪৪৭) এবং দংগুক জিওং-উন(১৪৪৭)।
১৪২০ সালে সেজং গায়ংবকাগাং প্রাসাদে প্রতিষ্ঠা করেন “হল অব অর্থিস” যেটি গঠিত হয় রাজার দ্বারা নির্বাচিত পণ্ডিতদের মাধ্যমে। এটি অনেকগুলো পাণ্ডিত্যপূর্ণ প্রয়াস এ অংশগ্রহণ করে, যার মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত হচ্ছে “হানমিন জিংগিওম” এর সংকলন।[১৩]
হাঙ্গুল
[সম্পাদনা]রাজা সেজং দা গ্রেইট গভীর প্রভাব ফেলেন কোরিয়ার ইতিহাসে হাঙ্গুল লিপিকে পরিচিত করে দেয়ার জন্য, এটি কোরিয়ান ভাষার নিজস্ব লিপি।[১৪] হাঙ্গুল সৃষ্টির আগে, কোরিয়ান লোকেরা(সে সময় জোসনের লোকেরা নামে পরিচিত ছিল) প্রাচীন চীনা বর্ণ ব্যবহার করত প্রাথমিকভাবে লেখার জন্য, শত বছর ধরে ইদু, হাংচা, গুগইয়ো এবং গাকপিল ইত্যাদি লিপি ব্যবহার করত লেখার জন্য।[১৫][১৬][১৭][১৮] কোরীয় এবং চীনের ভাষার মধ্যে ভিত্তিগত পার্থ্যক্য,[১৯] থাকার ফলে বেশিরভাগ বর্ণই শেখার প্রয়োজন ছিল, কিন্তু চাইনিজ বর্ণ লিখতে শেখা আরো কষ্টকর ছিল নিম্নশ্রেণীর লোকদের জন্য, যাদেরকে প্রায়ই শিক্ষার সুযোগ দেয়া হয় না। এই সমস্যা সমাধানের জন্য, রাজা সেজং তৈরি করেন অনন্য বর্ণ যেটি হাঙ্গুল নামে পরিচিত যাতে সাধারণ জনগণের মধ্যে স্বাক্ষরতার হার বাড়ে,শ্রেণী-বর্ণ নির্বিশেষে সব ধরনের মানুষের জন্য শিক্ষার সুযোগ করে দেয়া।।[২০] তার লক্ষ ছিল কোরিয়ার নিজস্ব সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করা এই অসাধারণ লিপি দ্বারা।
প্রতিটি হাঙ্গুল ধ্বনি উচ্চারনের জন্য মুখ, জিহবা এবং দাঁতের সহজ চিত্র ব্যবহার করেন।তিনি কোরিয়াকে নিজস্ব ঐতিহ্যের পরিচিতি দিতে অনন্যনকশার আদলে লিপি তৈরির প্রয়াস নিয়েছিলেন। রৈখিক বর্ণের তুলনায় নকশার আদলে তৈরি বর্ণ সন্নিবিদ্ধ থাকে। ১৪৪৬ সালে প্রথম প্রকাশিত হওয়া হাঙ্গুল বর্তমানে যে কেউ মাত্র কয়েকদিনেই শিখতে পারে।
মৃত্যু এবং উত্তরাধিকার
[সম্পাদনা]রাজা সেজোং বহুমূত্র জটিলতায় অন্ধত্ব বরণ করেন এবং ১৪৫০ সালে মারা যান। তাকে ইয়োং সমাধি মন্দিরে (영릉; 英陵) সমাধিত করা হয়। রাজা সেজোং এর পরে তার স্থানে অভিষিক্ত হন তার বড় পুত্র মুঞ্জং। তবে রাজা সেজং পূর্বেই ধারণা করেছেন, তার অসুস্থ পুত্র খুব বেশি দিন দায়িত্ব পালন করতে পারবে না। তাই মৃত্যু শয্যায় দরবারে বিদ্বানদের বলে যান তার কনিষ্ঠ রাজ দৌহিত্র দানজং এর দেখভাল করতে। দুই বছর পরেই রাজা সেজং এর ভবিষ্যৎবানী সত্য হয়। মাত্র বারো বছর বয়সে জসুন আমলের ষষ্ঠ রাজা হিসেবে রাজা দানজোং আত্মপ্রকাশ করেন। তবে রাজা সেজং এর দ্বিতীয় পুত্র সেজো ১৪৫৫ সালে দানজোং এর কাছ থেকে রাজ ক্ষমতা করায়ত্ত করে নেয়। ছয়জন মন্ত্রীর একটি দল পুনরায় দানজোংকে সিংহাসনে বসানোর পরিকল্পনা করলে রাজা সেজো তাদের বিদ্বানদের কক্ষ রহিত করেন। তিনি দানজোং এবং রাজা সেজং এর আমলের বেশ কিছু মন্ত্রীদের মৃত্যুদন্ড দেন। দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিওল সেজং স্ট্রীট এবং সেজং সেন্টার রাজা সেজং এর নামে নামকরণ করা হয়েছে। [২১]
২০০৮ সালে কেবিএস চ্যানেলে রাজা সেজং দ্যা গ্রেট নামক ঐতিহাসিক নাটকে রাজা সেজং এর জীবনী তুলে ধরা হয়।[২২]
পরিবার
[সম্পাদনা]- পিতা: জোসনের রাজা তাইজং(태종)
- মাতা: রাণী উয়োন গিয়ং উয়াং হু (원경왕후 민씨, জুলাই ১১, ১৩৬৫ – জুলাই ১০,১৪২০)
- পরিবারঃ
- রাণী সোহন ওয়াং হু সিম (소헌왕후 심씨, সেপ্টেম্বর ২৮,১৩৯৫ - মার্চ ২৪, ১৪৪৬) [২৩][২৪]
- ঈ হিয়াং , মুনজোং, প্রথম পুত্র
- ঈ ঈউ, সেজো, দ্বিতীয় পুত্র
- ঈ ইয়োং, আনফিয়ং এর জ্যেষ্ঠ রাজপুত্র (이용 안평대군, অক্টোবর ১৮-১৪১৮- নভেম্বর ১৮,১৪৫৩), তৃতীয় পুত্র
- ঈ গু, ইমইয়ংএর জ্যেষ্ঠ রাজপুত্র (이구 임영대군, জানুয়ারী ৭,১৪২০- জানুয়ারি ২১,১৪৬৯), ৪র্থ পু্ত্র
- ঈ ইয়েও, গোয়ানফিয়ং এর জ্যেষ্ঠ রাজপুত্র (이여 광평대군, ১৪২৫-১৪৪৪), ৫ম পুত্র
- ঈ ঈউ, গিয়মসং এর জ্যেষ্ঠ রাজপুত্র (이유 금성대군, মার্চ ২৮,১৪২৬-অক্টোবর ২১,১৪৫৭),ষষ্ঠ পু্ত্র
- ঈ ইম, ফিয়ং-উয়োন এর জ্যেষ্ঠ রাজপুত্র (이임 평원대군, ১৪২৭-১৪৪৫) ৭ম পুত্র
- ঈ ঈয়েওম, ইয়েওং-উং এর জ্যেষ্ঠ রাজপুত্র (이염 영응대군, ১৪৩৪-১৪৬৭), ৮ম পুত্র
- রাজকন্যা জংসো (정소공주, ১৪১২-১৪২৪), ১ম কন্যা[২৫]
- রাজকন্যা জং-উই (정의공주, ১৪১৫-১৪৭৭), ২য় কন্যা[২৬]
সরকারিভাবে মরনোত্তর উপাধি
[সম্পাদনা]- হাঞ্জাঃ 世宗莊憲英文睿武仁聖明孝大王
- হাঙ্গুলঃ 세종장헌영문예무인성명효대왕
- ইংরেজিঃ King Sejong Jangheon Yeongmun Yemu Inseong Myeonghyo the Great
বর্তমান কোরিয়ান মুদ্রায়
[সম্পাদনা]রাজা সেজোং পৃথিবীর ছয়জন ভাষাবিদদের একজন যার প্রতিকৃতি জাতীয় মুদ্রায় এসেছে।
ভাষ্কর্য এবং জাদুঘর প্রদর্শনী
[সম্পাদনা]২০০৯ সালে গোয়াংহোয়ামুনের রাস্তায় ঠিক সওউলের সেজোং সেন্টারের সামনে ভাস্কর কিম ইয়োং-উয়োনের শিল্পকর্ম [২৭] রাজা সেজোং এর একটি সাড়ে নয় মিটার উচ্চতার ব্রোঞ্জের ভাষ্কর্য স্থাপন করা হয়। [২৮] ভাস্কর্যটির স্তম্ভমূলের নিচে দিয়ে ৩২০০ মিটার বর্গমিটার আয়তনের ভূগর্ভস্ত জাদুঘর, "রাজা সেজোং এর গল্প"তে ঢোকার ব্যবস্থা রয়েছে। [২৯]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]পাদটিকা
[সম্পাদনা]- ↑ in JoonSoo Room(준수방; 俊秀坊)
- ↑ Encyclopedia of World History, Vol II, P362 Sejong, Edited by Marsha E. Ackermann, Michael J. Schroeder, Janice J. Terry, Jiu-Hwa Lo Upshur, Mark F. Whitters, আইএসবিএন ৯৭৮-০-৮১৬০-৬৩৮৬-৪
- ↑ ক খ Yǒng-gyu, Pak (২০০৪)। Han'gwǒn ǔro ingnǔn Chosǒn Wangjo sillok (Ch'op'an. সংস্করণ)। Seoul: Tǔllyǒk। পৃষ্ঠা 55। আইএসবিএন 89-7527-029-7।
- ↑ Pratt, Keith (২০০৬)। Everlasting Flower: A History of Korea।
- ↑ https://web.archive.org/web/20090114065908/http://preview.britannica.co.kr/bol/topic.asp?article_id=b01g3496a। জানুয়ারি ১৪, ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ২৫, ২০০৮।
|শিরোনাম=
অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য) - ↑ "21세기 세종대왕 프로젝트"। Sejong.prkorea.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০২-২২।
- ↑ "한국역대인물 종합정보 시스템 - 한국학중앙연구원"। People.aks.ac.kr। ২০০৫-১১-৩০। ২০১৬-০৩-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০২-২২।
- ↑ <<책한권으로 읽는 세종대왕실록>>(Learning Sejong Silok in one book) আইএসবিএন ৮৯০১০৭৭৫৪X
- ↑ Haralambous, Yannis; Horne, P. Scott। Fonts & Encodings (ইংরেজি ভাষায়)। "O'Reilly Media, Inc."। পৃষ্ঠা 155। আইএসবিএন 9780596102425। সংগ্রহের তারিখ ৮ অক্টোবর ২০১৬।
- ↑ ক খ Selin, Helaine। Encyclopaedia of the History of Science, Technology, and Medicine in Non-Westen Cultures (ইংরেজি ভাষায়)। Springer Science & Business Media। পৃষ্ঠা 505–506। আইএসবিএন 9789401714167। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুলাই ২০১৬।
- ↑ "장영실"। Bueb125.com.ne.kr। ২০০১-০৭-১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০২-২২।
- ↑ https://web.archive.org/web/20110722135645/http://www.reportnet.co.kr/knowledge/pop_preview.html?dn=2075262। জুলাই ২২, ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ২৫, ২০০৮।
|শিরোনাম=
অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য) - ↑ "우리말 배움터"। Urimal.cs.pusan.ac.kr। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০২-২২।
- ↑ Kim Jeong Su(1990), <<한글의 역사와 미래>>(History and Future of Hangul) আইএসবিএন ৮৯৩০১০৭২৩০
- ↑ Hannas, Wm C.। Asia's Orthographic Dilemma (ইংরেজি ভাষায়)। University of Hawaii Press। পৃষ্ঠা 57। আইএসবিএন 9780824818920। সংগ্রহের তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬।
- ↑ Chen, Jiangping। Multilingual Access and Services for Digital Collections (ইংরেজি ভাষায়)। ABC-CLIO। পৃষ্ঠা 66। আইএসবিএন 9781440839559। সংগ্রহের তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬।
- ↑ "Invest Korea Journal" (ইংরেজি ভাষায়)। 23। Korea Trade-Investment Promotion Agency। ১ জানুয়ারি ২০০৫। সংগ্রহের তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬।
They later devised three different systems for writing Korean with Chinese characters: Hyangchal, Gukyeol and Idu. These systems were similar to those developed later in Japan and were probably used as models by the Japanese.
- ↑ "Korea Now" (ইংরেজি ভাষায়)। 29। Korea Herald। ১ জুলাই ২০০০। সংগ্রহের তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬।
- ↑ Hunmin Jeongeum Haerye, postface of Jeong Inji, p. 27a, translation from Gari K. Ledyard, The Korean Language Reform of 1446, p. 258
- ↑ Koerner, E. F. K.; Asher, R. E.। Concise History of the Language Sciences: From the Sumerians to the Cognitivists (ইংরেজি ভাষায়)। Elsevier। পৃষ্ঠা 54। আইএসবিএন 9781483297545। সংগ্রহের তারিখ ১৩ অক্টোবর ২০১৬।
- ↑ (কোরীয়)Tourguide – Tomb of Sejong the Great ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১১ মে ২০১৯ তারিখে
- ↑ "Official website of the drama King Sejong the Great"। ২২ মার্চ ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ নভেম্বর ২০১৫।
- ↑ Daughter of Sim On (심온, 1375 – December 25, 1418), Lord Anhyo (안효공), Internal Prince Cheongcheon (청천부원군); and Lady Sunheung, Princess Consort to the Internal Prince, of the Ahn clan (순흥부부인 안씨). Granddaughter of Sim Deok-bu (심덕부, 1328–1401)
- ↑ Her uncle Sim Jong (Sim On's brother) is Taejo's son-in-law (created Prince Consort Cheongwon) thru his marriage to Princess Gyeongseon
- ↑ Eldest offspring
- ↑ Later married Ahn Maeng-dam (안맹담, ?-1469), son of Ahn Mang-ji (안망지); created Military Officer Yeonchang (연창위)
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৯ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ নভেম্বর ২০১৫।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ নভেম্বর ২০১৫।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ নভেম্বর ২০১৫।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- Kim, Yung Sik. (1998). "Problems and Possibilities in the Study of the History of Korean Science," Osiris (2nd series, Volume 13, 1998): 48–79.