বেত

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

বেত
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: উদ্ভিদ
শ্রেণীবিহীন: সপুষ্পক উদ্ভিদ
শ্রেণীবিহীন: Monocots
শ্রেণীবিহীন: Commelinids
বর্গ: Arecales
পরিবার: Arecaceae
গণ: Calamus
প্রজাতি: C. tenuis
দ্বিপদী নাম
Calamus tenuis
Roxb.

বেত একপ্রকার সপুষ্পক উদ্ভিদ। এটি বাংলাদেশ, ভুটান, কম্বোডিয়া, লাওস, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ভারত, জাভা ও সুমাত্রা অঞ্চলের উদ্ভিদ।[২]

বেতফল
বেতফল

বৈজ্ঞানিক নাম[সম্পাদনা]

বেতগাছের বৈজ্ঞানিক নাম Calamus tenuis, যা Arecaceae পরিবারভুক্ত। আর আরো কয়েকটি বৈজ্ঞানিক নাম প্রচলিত আছে; যথা-

  • Calamus amarus Lour.
  • Calamus heliotropium Buch.-Ham. ex Kunth
  • Calamus horrens Blume
  • Calamus royleanus Griff.
  • Calamus stoloniferus Teijsm. & Binn.
  • Palmijuncus amarus (Lour.) Kuntze
  • Palmijuncus heliotropium (Buch.-Ham. ex Kunth) Kuntze
  • Palmijuncus horrens (Blume) Kuntze
  • Palmijuncus royleanus (Griff.) Kuntze
  • Palmijuncus tenuis (Roxb.) Kuntze
  • Rotang royleanus (Griff.) Baill.

আবাসস্থল[সম্পাদনা]

বেঁত গাছ, মধুপুর

বেত ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলের ভেজা ও জংলা নিচুভূমিতে ভাল জন্মে। এটি বর্তমানে আবাসন সংকটের জন্য বিপন্ন প্রজাতি।[৩]

বর্ণনা[সম্পাদনা]

বেতগাছ সাধারণত গ্রামের রাস্তার পাশে, বসতবাড়ির পেছনে, পতিত জমিতে ও বনে কিছুটা আর্দ্র জায়গায় জন্মে। কিছুদিনের মধ্যেই বেত ঘন হয়ে ঝাড়েও পরিণত হয়। বেতগাছ জঙ্গলাকীর্ন কাঁটাঝোপ আকারে দেখা যায়। বনের প্রাকৃতিক পরিবেশ ছাড়াও হাওরের কান্দাতে বেতগাছ জন্মে। চিরসবুজ এই উদ্ভিদটি পূর্ণবয়স্ক অবস্থায় ৪৫ থেকে ৫৫ ফুট এবং কখনো কখনো তার চেয়েও বেশি লম্বা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে ছয় প্রজাতির বেতফল পাওয়া যায়। এদের কাণ্ড দেখতে চিকন, লম্বা, কাঁটাময় ও খুবই শক্ত এবং শাখাহীন। সরু ও নলাকার কাণ্ড প্রস্থে সাধারণত ৫-১৫ মিলিমিটার। প্রতিটি কাণ্ডের আগা থেকে নতুন পাতা বের হয় ও বেড়ে ওঠে। কাণ্ড বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর নিচের অংশ পোক্ত হতে থাকে। কোনো ধারককে ধরে রাখার জন্য কাঁটাযুক্ত ধারক লতা বের হয়। বেতে ফুল ধরার আগে গাছ থেকে একধরনের মিষ্টি ঘ্রাণ আসে। তখন মৌমাছি, পিঁপড়া, মাছি এই রস খেতে বেত গাছে ভিড় জমায়।[৪][৫]

বেতের তৈরি ঝুড়ি
বেতের তৈরি সোফা
শুকনো বেতের আঁটি

বেতফল[সম্পাদনা]

বেত গাছের ফলকে বেতফল, বেত্তুন, বেথুন, বেথুল, বেতগুলা, বেত্তুইন ইত্যাদি নামে ডাকা হয়। এই ফল গোলাকার বা একটু লম্বাটে গোলাকার, ছোট ও কষযুক্ত টকমিষ্টি। এর খোসা শক্ত হলেও ভেতরটা নরম। বীজ শক্ত। কাঁচা ফল সবুজ ও পাকলে সবুজাভ ঘিয়ে বা সাদা রঙের হয়। এটি থোকায় থোকায় ফলে। প্রতি থোকায় ২০০টি পর্যন্ত ফল হয়। বেতগাছে ফুল আসে অক্টোবর মাসে আর ফল পাকে মার্চ-এপ্রিল মাসে। এটি অপ্রচলিত ফল হলেও অনেকের কাছে খুবই প্রিয়।

ব্যবহার[সম্পাদনা]

বেত দিয়ে ঝুড়ি তৈরী করছেন একজন কারিকর

শুকনো বেত দিয়ে বিভিন্ন হস্তশিল্প জাতীয় জিনিসপত্র তৈরি করা হয়, যেমন- চেয়ার, টেবিল, মোড়া, ডালা, কুলা, চাঙ্গারী, মুড়া, ঢুষি, হাতপাখা, চালোন, টোকা, গোলা, ডোল, ডুলা, আউড়ি, চাঁচ, ধামা, পাতি, বই রাখার তাক, সোফা, দোলনা, খাট, ঝুড়ি, টেবিলল্যাম্প, ল্যাম্পশেড ইত্যাদি। এটি গৃহনির্মাণ কাজেও ব্যবহার করা হয়, বিশেষ করে রেস্তরাঁ, ঘর বা অফিসের শৌখিন পার্টিশন হিসেবে এর ব্যাপক ব্যবহার হয়ে থাকে। এছাড়া লম্বা বেত ফালা করে নানা কিছু বাঁধার কাজেও ব্যবহার করা হয়। ফলের জন্য বেতের চাষ করা হয়না; বেতের প্রধান ব্যবহার হস্তশিল্প সামগ্রী তৈরির কাঁচামাল হিসেবে। তবে ফল খেতে সুস্বাদু ও অনেকেরই প্রিয়।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Lansdown, R.V. (২০১১)। "Calamus tenuis"বিপদগ্রস্ত প্রজাতির আইইউসিএন লাল তালিকা (ইংরেজি ভাষায়)। আইইউসিএন2011: e.T199688A9117768। ডিওআই:10.2305/IUCN.UK.2011-2.RLTS.T199688A9117768.enঅবাধে প্রবেশযোগ্য 
  2. Kew World Checklist of Selected Plant Families, Calamus tenuis
  3. "Global species"। ২০ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুলাই ২০১৪ 
  4. বেতফল - প্রথম আলো (২৮ আগস্ট, ২০১৫ ইং)
  5. "বেতফল পাহাড়ে দুর্লভ! - প্রথম আলো (২৯ জুলাই, ২০১২ ইং)"। ২০১৫-০৭-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৮-২৯