শেখ মনসুর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
শেখ মনসুর (উশুরমা)
জন্ম১৭৩২
আলদি, চেচনিয়া
মৃত্যু১৭৯৪
শ্লিসেলবার্গ, রুশ সাম্রাজ্য

শেখ আল-মনসুর (১৭৩২ – ১৭৯৪) একজন চেচেন নেতা। ১৮শ শতাব্দীতে ককেসাস অঞ্চলে ক্যাথেরিন দ্য গ্রেট পরিচালিত সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সংঘটিত সংগ্রামে তিনি নেতৃত্ব দেন। চেচেন জনগণের কাছে তিনি একজন জাতীয় বীর হিসেবে বিবেচিত হন।

জীবনী[সম্পাদনা]

সানজা নদীর নিকটবর্তী আউল অঞ্চলে শেখ মনসুর জন্মগ্রহণ করেন। তাকে উশুরমা নাম দেয়া হয়। পরবর্তীতে তিনি শেখ মনসুর নামে পরিচিত হয়ে উঠেন। দাগেস্তানে নকশবন্দিয়া সুফি তরিকায় শিক্ষা লাভের পর তিনি চেচনিয়ায় ফিরে আসেন।

১৭৮৪ সালে শেখ মনসুর উত্তর ককেশাসে রুশ আগ্রাসনের ব্যাপারে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। তিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেন। চেচেন জনগণকে তিনি বেশ কিছু পৌত্তলিক প্রথা বাদ দিতে এবং একই সাথে ধূমপান বন্ধ করা ও ইসলামি শরিয়া আইন অনুসরণ করে প্রথাগত আইন বাদ দিতে নির্দেশ দেন। তিনি ইসলামি ঐক্য ধরে রাখতে বলেন। তবে প্রাচীন প্রথা, রীতির অধীনে বাস করা লোকদের মধ্যে একাজ সহজ ছিল না। দাগেস্তানের মত চেচনিয়ায়, বিশেষত পার্বত্য অঞ্চলগুলোতে ইসলামি ঐতিহ্য শক্ত অবস্থানে ছিল না। এরপরও তার জিহাদের ডাক বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে একতা বন্ধনের একটি প্রচেষ্টা ছিল।

১৭৮৫ সালে শেখ মনসুর ও তার যোদ্ধারা সানজার যুদ্ধে অগ্রসরমান একটি রুশ সেনাদলকে পরাজিত করেন। রুশ কমান্ডার কর্নেল পিয়েরিসহ ৬০০ এরও বেশি সৈন্য এই যুদ্ধ মারা যায়।[১] এরপর শেখ মনসুর প্রতিরোধ যোদ্ধাদের নিয়ে দাগেস্তান থেকে কাবরাডা অগ্রসর হন। তার অধিকাংশ যোদ্ধারাই দাগেস্তানি এবং চেচেন বংশোদ্ভূত ছিল। ১৭৮৫ এর ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের সংখ্যা ১২০০০ এ পৌছায়। রুশ অঞ্চলে প্রবেশের চেষ্টা করার সময় তিনি পরাজয়ের সম্মুখীন হন ফলে তার কিযলায়ার দুর্গ দখলের চেষ্টা ব্যর্থ হয়।

এরপর রুশ জনগণ তাদের বসতিগুলোর প্রতিরোধ ক্ষমতা মজবুত করে তোলে। রুশ সম্রাজ্ঞী ক্যাথরিন দ্য গ্রেট তার সৈন্যবাহিনীকে জর্জিয়া থেকে তেরেক নদীর দিকে সরিয়া আনেন। ১৭৮৬ সালে রুশ সৈন্যরা নবনির্মিত ভ্লাদিকাভকাজ দুর্গ ত্যাগ করে চলে আসে। ১৮০৩ সাল পর্যন্ত এ দুর্গ তারা নিজেদের আয়ত্তে আনতে সক্ষম হয়নি। ১৭৮৭-১৭৯১ সময়কালে রুশ-তুর্কি যুদ্ধ চলাকালিন সময় শেখ মনসুর আদিগেয়া চলে যান। রুশদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তিনি আদিগনোগাই জনগণকে নেতৃত্ব দেন। কিন্তু তারা বেশ কয়েকবার পরাজিত হয়।

১৭৯১ সালের জুন শেখ মনসুর কৃষ্ণ সাগরের তীরবর্তী অঞ্চলে আনাপার তুর্কি দুর্গ থেকে গ্রেপ্তার হন। এরপর তাকে সাংক্‌ত পিতেরবুর্গ আনা হয়। তিনি যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দণ্ডিত হন। ১৭৯৪ সালের এপ্রিলে তিনি শ্লিসেলবার্গ দুর্গে মৃত্যুবরণ করেন।

আরো দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. John Frederick Baddeley, The Russian Conquest of the Caucasus, London, Curzon Press, 1999, p. 49.