নীল অতিদানব তারা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বাম থেকে ডানে, কার্তীকেয়, সূর্য এবং Algol B

নীল অতিদানব একপ্রকার অতিদানব তারা (ঔজ্জ্ব্ল্য শ্রেণীঃ I) যাদের বর্ণালীর ধরন 'ও' অথবা 'বি' টাইপ এই তারা গুলো খুবই গরম এবং উজ্জ্ব্ল, যাদের উপরিপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ৩০,০০০-৫০,০০০ কেলভিন। এই তারাগুলো Hertzsprung-Russell diagram অনুসারে সূর্যের ভরের ১০-৫০ গুণ এবং সূর্যের ব্যাসের ২৫ গুণ বড়। এই দুর্লভ এবং রহস্যময় নীল অতিদানব তারাগুলো আমাদের পরিচিত মহাবিশ্বের সবচেয়ে গরম ও উজ্জ্ব্ল তারা।[১] কিন্তু নীল অতিদানব তারাগুলো তাদের প্রতিরূপ লাল অতিদানব তারার তুলোনায় ক্ষুদ্রাকৃতির হয়ে থাকে।

অতি বৃহৎ ভরের জন্য এইতারা গুলোর জীবনকাল খুবই ছোট হয় এবং সাধারণতঃ অল্পবয়স্ক মহাজাগতিক কাঠামোতে (যেমন খোলা তারা গুচ্ছে, সর্পিল ছায়াপথের বাহুতে, অনিয়মিত ছায়াপথে) দেখা যায়। তুলোনামূলক পূরাতন গঠন যেমন সর্পিল ছায়াপথের কেন্দ্রে, উপবৃত্তাকার ছায়াপথে, গুটিকাসদৃশ তারাগুচ্ছে এদের খুবই কম দেখতে পাওয়া যায়।

কালপুরুষ নক্ষত্রমন্ডলের বাণরাজা তারাটি একটি বহুল পরিচিত নীল অতিদানব তারা। এর ভর সূর্যের ভরের ২০ গুণ এবং এর ঔজ্জ্বল্য সূর্যের ঔজ্জ্বল্যের ৬০,০০০ গুণ। যদিও এই ধরনের তারার সংখ্যা ও স্থায়ীত্ব কম তবুও এদের ঔজ্জ্বল্যতার কারণে রাতের আকাশে খালি চোখে এদেরই বেশি দেখতে পাওয়া যায়।

নীল অতিদানব তারা হচ্ছে বড় তারাগুলোর মৃত্যুর পূর্বের অবস্থা। এর কেন্দ্রের পারমাণবিক বিক্রিয়ার গতি কমে আসাতে তারাটি সংকুচিত হয় এবং সংকুচিত অবস্থায় একই পরিমাণ শক্তি বিকিরণের ফলে এর উপরিপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। যেকোন কারণেই হোক; লাল অতিদানব তারার পারমাণবিক বিক্রিয়ার গতি কমে গেলে তা নীল অতিদানব তারায় পরিণত হয়। এবং কোন কারণে বিক্রিয়ার গতি বৃদ্ধি পেলে নীল অতিদানব তারা লাল অতিদানব তারায় পরিণত হয়। লাল অতিদানব তারার নাক্ষত্রিক বায়ু ধীর গতির ও ভারি হয় কিন্তু নীল অতিদানব তারার নাক্ষত্রিক বায়ু দ্রুত গতির এবং বিস্তৃত হয়। যখন লাল অতিদানব তারা নীল অতিদানব তারায় পরিণত হয়, তখন এর নাক্ষত্রিক বায়ু দ্রুত হয়ে যায়, কিন্তু এর উপরিতলে পূর্বের লাল অতিদানব তারার ধীর গতির বায়ু থেকে যায় ফলে উপরিপৃষ্ঠের উপাদানগুলো একটি চিকন স্তর সৃষ্টি করে। প্রায় প্রতিটি নীল অতিদানব তারায় এই চিকন স্তরটি দেখা যায় যার দ্বারা বোঝা যায় যে, এই তারা গুলো কোন একসময় লাল অতিদানব তারা ছিল।

একটি তারার যখন সৃষ্টি হয় তখন এটি লাল অতিদানব এবং নীল অতিদানব তারার অবস্থায় বেশ কয়েকবার থাকতে পারে যার কারণে তারাটি একটি হালকা স্তর ধারণ করে। এই ক্ষণস্থায়ী অবস্থায় তারাটিকে শ্বেত বা হলুদ বর্ণের দেখায় এবং এ ধরনের তারাকে হলুদ অতিদানব তারা বলা হয় যেমন ধ্রুবতারা।

যদিও তারাটি স্বাভাবিক অবস্থায় একটি অতিনবতারায় (supernova) পরিণত হয় কিন্তু সূর্যের ভরের ৮-১২ গুণ বড় তারাগুলো অক্সিজেন-নিয়ন সংবলিত শ্বেত বামন তারায় পরিণত হতে পারে। এরূপ ঘটনার কারণ এখনো জানা যায়নি যে কেন একটি তারা অতিনবতারায় পরিণত হওয়ার পরিবর্তে একটি শ্বেত বামন তারায় পরিণত হয়। ধারণা করা হয় যে, দ্রুত অতিরিক্ত ভর হারানোর কারণে এমনটি হয়ে থাকে। নীল অতিদানব বা লাল অতিদানব তারা এবং কখনও কখনও হলুদ অতিদানব তারা সব তারাই অতিনবতারায় পরিণত হতে পারে, কারণ এই প্রক্রিয়া তারার উপরিপৃষ্ঠের ধরনের উপর নির্ভর করে না বরং এর কেন্দ্রের উপাদানের উপর নির্ভর করে।

লাল অতিদানব তারা সৃষ্টি হতে অধিক সময় নেয়,[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] বলে আমরা আকাশে এই তারা বেশি দেখতে পাই এবং বেশিরভাগ অতিনবতারা লাল অতিদানব তারা হতে সৃষ্টি হয়। পূর্বে ধারণা করা হত যে সকল অতিনবতারাই লাল অতিদানব তারা হতে সৃষ্টি হয় কিন্তু পরবর্তিতে supernova 1987A আবিষ্কৃত হয় যা নীল অতিদানব তারা B3 হতে সৃষ্টি হয়েছে।[২]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Dr. Jim Kaler, The Nature of the Stars"। ১৯ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ মার্চ ২০১২ 
  2. Galactic Twins of the Nebula Around SN 1987A: Hints that LBVs may be supernova May 2007

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]