লাশিও

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
লাশিও
ဝဵင်းလႃႈသဵဝ်ႈ လားရှိုးမြို့
শহর
লাশিও মিয়ানমার-এ অবস্থিত
লাশিও
লাশিও
মিয়ানমারে লাশিও'র অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২২°৫৬′ উত্তর ৯৭°৪৫′ পূর্ব / ২২.৯৩৩° উত্তর ৯৭.৭৫০° পূর্ব / 22.933; 97.750
দেশ মিয়ানমার
রাজ্য শান রাজ্য
জেলালাশিও জেলা
টাউনশিপলাশিও টাউনশিপ
উচ্চতা২,৭৪৬ ফুট (৮৩৬ মিটার)
জনসংখ্যা (আনুমানিক ২০০৯)
 • মোট১,৩১,০০০
 • জাতিতত্ত্বশান চীনা বর্মী
 • ধর্মসমূহবৌদ্ধধর্ম
সময় অঞ্চলMMT (ইউটিসি+6.30)

লাশিও (বর্মী: လားရှိုးမြို့; এমএলসিটিএস: la: hrui: mrui. [láʃó mjo̰]; Shan: ဝဵင်းလႃႈသဵဝ်ႈ [weŋ˥ lɑ˧˨ sʰeu˧˨]) মিয়ানমারের উত্তর শান রাজ্যের বৃহত্তম শহর। মান্দালয় থেকে এটি প্রায় ২০০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। শান পাহাড়ের সর্বোচ্চ পর্বত লোই লেং লাশিওর ৪৫ কিমি (২৮ মাইল) দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত।

লাশিও টাউনশিপ এবং লাশিও জেলার প্রশাসনিক কেন্দ্র এই লাশিও শহর । ২০১০ সালের এপ্রিলের আগ পর্যন্ত এটি একই সাথে শান রাজ্যের (উত্তর) প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল। ১৯৬০ সালের পর জনসংখ্যা আনুমানিক ৫,০০০ বৃদ্ধি পেয়ে ১৯৮৮ সালে ৮৮,৫৯০ হয়। বর্তমানে আনুমানিক জনসংখ্যা প্রায় ১,৩০,০০০। [১]

জনসংখ্যা বেশিরভাগই শান, চীনা এবং বর্মী জনগোষ্ঠী নিয়ে গঠিত।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

মিয়ানমারের (বার্মা) এই অংশে ১৮৮৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন শুরু হয় এবং ১৯০৩ সালে মান্দালয় থেকে মিয়ানমার রেললাইন লাশিওতে পৌঁছায়।

ব্রিটিশ শাসনের আগে লাশিও উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যগুলির কর্তৃত্বের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। তবে উপত্যকার বার্মিজ পোস্টটি পুরানো চীনা দুর্গের শিবিরে নাম ইয়াওয়ের নিকটে ছিল। লাশিও উপত্যকাটি আগে খুব জনবহুল ছিল। কিন্তু ব্রিটিশ দখলদারিত্বের দশ বছর আগে হসেনভির চাওফার বিদ্রোহের ফলে শহরটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

১৯০০ সালে লাশিও শহরটি ইউরোপীয় স্টেশন নিয়ে গঠিত ছিল। পাশাপাশি ছিল সিভিল অফিসারদের জন্য কোর্ট হাউস এবং কোয়ার্টারচ, মিলিটারি পুলিশ পোস্ট, মিলিটারি পুলিশের লাশিও ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তর এবং নেটিভ স্টেশন। নেটিভ স্টেশনে আলাদা আলাদা কোয়ার্টারে বিভিন্ন জাতি-সম্প্রদায়, যেমন: শান, বর্মী, হিন্দু ও মুসলমান বাস করতো। তবে সেখানে ত্তরের শান রাজ্যের পাঁচটি সবওয়াজের সরকারি কর্মচারীদের জন্য সংরক্ষিত আবাস্থল এবং একটি বাজার ছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চীন-জাপান যুদ্ধের সময় বার্মা রোডের ১৯৩৮-৪৫ সালের বার্মিজ টার্মিনাস হিসাবে লাশিও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানিরা ১৯৪২ সালের ২৯ এপ্রিলে লাশিও দখল করলেও এবং মিত্র বাহিনী ১৯৪৫ সালের ৭ মার্চে তা নিজ দখলে নিতে সক্ষম হয়। [২]

জলবায়ু[সম্পাদনা]

ক্যাপেন জলবায়ু শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি অনুসারে লাশিও'র আর্দ্র উষ্ণমঞ্চীয় জলবায়ু ( সিওয়া ) রয়েছে। এখানে মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাত চিহ্নিত হয়েছে। বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ৫৪ ইঞ্চি (১,৪০০ মিমি) । গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৭ °সে (৮১ °ফা) এবং গড় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ °সে (৫৫ °ফা) ।[৩] সাধারণত বছর জুড়ে উষ্ণ তাপমাত্রা বিরাজ করলেও ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত রাতে আবহাওয়া শীতল থাকে।

Lashio (1981–2010)-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য
মাস জানু ফেব্রু মার্চ এপ্রিল মে জুন জুলাই আগস্ট সেপ্টে অক্টো নভে ডিসে বছর
সর্বোচ্চ রেকর্ড °সে (°ফা) ৩৮.৯
(১০২.০)
৩৩.৫
(৯২.৩)
৩৬.৫
(৯৭.৭)
৩৮.০
(১০০.৪)
৩৮.১
(১০০.৬)
৩৭.০
(৯৮.৬)
৩৪.৬
(৯৪.৩)
৩৬.০
(৯৬.৮)
৩৫.৬
(৯৬.১)
৩৪.৪
(৯৩.৯)
৩২.৪
(৯০.৩)
৩০.৫
(৮৬.৯)
৩৮.৯
(১০২.০)
সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা) ২৫.৭
(৭৮.৩)
২৮.১
(৮২.৬)
৩১.২
(৮৮.২)
৩২.৮
(৯১.০)
৩১.৬
(৮৮.৯)
৩০.৭
(৮৭.৩)
২৯.৩
(৮৪.৭)
২৯.৬
(৮৫.৩)
২৯.৯
(৮৫.৮)
২৯.৩
(৮৪.৭)
২৭.১
(৮০.৮)
২৫.২
(৭৭.৪)
২৯.২
(৮৪.৬)
সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা) ৫.২
(৪১.৪)
৬.১
(৪৩.০)
৯.৬
(৪৯.৩)
১৫.১
(৫৯.২)
১৯.২
(৬৬.৬)
২১.৮
(৭১.২)
২১.৯
(৭১.৪)
২১.৮
(৭১.২)
২০.৯
(৬৯.৬)
১৮.৭
(৬৫.৭)
১৩.৩
(৫৫.৯)
৮.১
(৪৬.৬)
১৫.১
(৫৯.২)
সর্বনিম্ন রেকর্ড °সে (°ফা) −১.৯
(২৮.৬)
১.০
(৩৩.৮)
৩.০
(৩৭.৪)
৮.০
(৪৬.৪)
১২.৫
(৫৪.৫)
১৮.৪
(৬৫.১)
২০.১
(৬৮.২)
২০.০
(৬৮.০)
১৬.৯
(৬২.৪)
৮.৩
(৪৬.৯)
৬.০
(৪২.৮)
১.০
(৩৩.৮)
−১.৯
(২৮.৬)
বৃষ্টিপাতের গড় মিমি (ইঞ্চি) ২.৭
(০.১১)
৫.৯
(০.২৩)
৯.৬
(০.৩৮)
৫৭.১
(২.২৫)
১৭১.৯
(৬.৭৭)
১৭৮.৩
(৭.০২)
২১৩.০
(৮.৩৯)
২৯০.৯
(১১.৪৫)
২৮০.৭
(১১.০৫)
১৭৫.৬
(৬.৯১)
৭৫.৫
(২.৯৭)
১০.০
(০.৩৯)
১,৪৭১.২
(৫৭.৯২)
উৎস: Norwegian Meteorological Institute[৪]

নিদর্শন[সম্পাদনা]

  • ইয়ান টিন অং প্যাগোডা
  • চীনা মন্দির
  • প্রাকৃতিক উষ্ণ প্রস্রবণ
  • সারসানা পাহাড়
  • মনসু শান মঠ
  • লাশিও নৈশ বাজার
  • হু সোম বাঁধ
  • লিনোয়েট (ব্যাট) গুহা
  • ইয়ে কান থাং

পরিবহন[সম্পাদনা]

লাশিও বার্মা সড়কের শেষ প্রান্তে এবং মান্দালয় -কুনলং রেলপথের টার্মিনাসে অবস্থিত। এটি মান্দালয় থেকে সরকারি মালবাহী দুই চাকার গাড়ির (কার্ট) সড়কেরও শেষ প্রান্ত। সেখান থেকে এটি ১৭৮ মাইল (২৮৬ কিমি) দূরে অবস্থিত।[৫]

দর্শনীয় গোটিক রেলসেতু (বহুখিলানবিশিষ্ট সেতু) লাশিওর নিকটে অবস্থিত। এবং মান্দালয় থেকে আগত ট্রেনগুলো এই সেতুর উপর দিয়ে যায়। এটি মিয়ানমারের সর্বোচ্চ সেতু।

২০০৯ সালে চীনের জিগাও হয়ে একটি রেলপথের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। ২০১১ সালে এই প্রস্তাবটি খুনমিং এবং কিউকফিউয়ের মধ্যে একটি সংযোগে প্রসারিত করা হয়। মিয়ানমারের রেল পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশনের মধ্যে রেলপথটি নির্মাণের জন্য মে ২০১১ সালে বেইজিং সফরকালে রাষ্ট্রপতি থেইন সেনের একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। [৬]

এখানে লাসিও বিমানবন্দর অবস্থিত।

সংস্কৃতি[সম্পাদনা]

ধর্মীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে সাসানা (পাইলোন চান্ত) প্যাগোডা এবং মনসু প্যাগোডা। ইয়েপুসান স্পা শহরের কেন্দ্র থেকে প্রায় পাঁচ মাইল দূরে অবস্থিত। শীতকালে এটি একটি স্বাস্থ্যকর স্থান। কিছু জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠী ব্যতীত লাশিও্তে বিশাল সংখ্যক চীনা জনগোষ্ঠী বসবাস করে। এই অঞ্চলের সর্বাধিক বিখ্যাত চীনা মন্দিরগুলি হ'ল 观音山,灵峰। এখানে বেশিরভাগ চীনা জনগোষ্ঠী প্রতি বছর চীনা নববর্ষ (বসন্ত উৎসব) এর সময় উপস্থিত থাকে। ২০২০ সাল থেকে লাশিও মিয়ানমার ও চীনের সীমান্ত বাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] এটি মিউস থেকে ১৯০ কিলোমিটার (১২০ মা) দূরে এবং মিউজ এবং মান্দালয়ের মাঝখানে অবস্থিত।

২০১০ সালের সাধারণ নির্বাচন পরবর্তী মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক সরকারের অন্যতম ভাইস প্রেসিডেন্ট সাই মওক খাম লাশিও আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন।

শিক্ষা[সম্পাদনা]

শহরটিতে লাশিও বিশ্ববিদ্যালয়, কম্পিউটার বিশ্ববিদ্যালয় (লাশিও),[৭] প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (লাশিও),[৮] শিক্ষা কলেজ (লাশিও) এবং লাশিও নার্সিং স্কুল রয়েছে।

চিত্রশালা[সম্পাদনা]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Population of Lashio, Myanmar"। Population.mongabay.com। ২০১৩-১০-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০২-২৫ 
  2. Ferrie, Jared (২০১৩-০৫-২৯)। "Buddhist mobs attack Muslim homes in Myanmar, one dead"Reuters। ২০১৪-০৩-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০২-২৫ 
  3. "Maps, Weather, Videos, and Airports for Lashio, Burma"। Fallingrain.com। ২০১৩-০২-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০২-২৫ 
  4. "Myanmar Climate Report" (পিডিএফ)। Norwegian Meteorological Institute। পৃষ্ঠা 23–36। ৮ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০১৮ 
  5. চিসাম, হিউ, সম্পাদক (১৯১১)। "Lashio"। ব্রিটিশ বিশ্বকোষ16 (১১তম সংস্করণ)। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা 233। 
  6. Myanmar in China’s Push into the Indian Ocean ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে, Joshy M Paul, March 14, 2016, retrieved 20 January 2017
  7. https://web.archive.org/web/20051222041929/http://www.geeky.net/geeky.css। ডিসেম্বর ২২, ২০০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মে ৩০, ২০১১  |শিরোনাম= অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
  8. "Technological University (Lashio) - Lashio District"। Most.gov.mm। ২০১৪-০৩-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০২-২৫ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]