যোগবীরসিং কংসকার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
যোগবীরসিং কংসকার
১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত যোগ-সুধা পত্রিকার প্রচ্ছদ

যোগবীরসিং কংসকার (দেবনাগরী: योगवीरसिं कंसकार) (বিকল্প নাম: জোগবীর সিংহ কংসকার) (১৬ এপ্রিল ১৮৮৫ - ২৯ মার্চ ১৯৪২) হলেন একজন নেপালি কবি, সমাজ সংস্কারক এবং নেপাল ভাষার চার স্তম্ভের অন্যতম।[১] তিনি রাণা শাসনের বিরুদ্ধে তার মাতৃভাষার উন্নয়ন এবং বৌদ্ধ ধর্মের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।[২][৩][৪]

যোগবীর সিংহ ২০শ শতাব্দীর নেপালের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্য ব্যক্তিত্ব চিত্রধর হৃদয়ের গুরু এবং অনুপ্রেরণা ছিলেন।[৫]

প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

যোগবীর সিংহ কাঠমান্ডুর ক্বচ্ছেন নানি এলাকার কেল টোলে কংসকার পরিবারে জন্মগ্রহণ করে। তার পিতা চৈত্যবীর সিংহ এবং মায়ের নাম লক্ষ্মী নানি। যোগবীর সিংহের পিতার একটি কাপড়ের দোকান ছিল। ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে তরুণ বয়সে যোগবীর আর্য সমাজ নামে পরিচিত একটি সংগঠনের সাথে সমাজ সংস্কারমূলক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত হন। অপ্রচলিত ধর্ম মত প্রচলনের জন্য রাণা শাসকেরা তাকে জরিমানা ও কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে।[৬] কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে হতাশ কংসকার ভারতের কলকাতায় যান। সেখানে বাংলা ভাষাকেন্দ্রিক কর্মকাণ্ড ও প্রকাশনা এবং সে ভাষার সাহিত্যের প্রতি বাঙালিদের ভালোবাসা দেখে তিনি অনুপ্রাণিত হন।[৭][৮]

কর্মকাণ্ড[সম্পাদনা]

কাঠমান্ডুতে প্রত্যাবর্তন করে যোগবীর সিংহ কবিতা লিখতে শুরু করেন এবং তার কাপড়ের দোকান কবিদের সমাগমের স্থানে পরিণত হয়।[৯] প্রতি সপ্তাহে তারা নিজেদের লেখা সংবলিত খাতা আনতেন এবং একে অপরের লেখা নিয়ে আলোচনা করতেন। নেপালের রাজসভার প্রধান পুরোহিত বড় গুরুজু এই সভার সম্পর্কে জানতে পেরে এই খাতাগুলো বাজেয়াপ্ত করেন।

তুলসী মেহরের স্বদেশী আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ হয়ে যোগবীর আন্দোলনে যোগ দেন এবং এর বিকাশের জন্য ঘরে ঘরে হস্তচালিত চরকা স্থাপনে উদ্বুদ্ধ করতে থাকেব। ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বস্ত্রকলা ভবন নামে একটি পোশাক তৈরি প্রতিষ্ঠান গঠন করেন। কংসকার নারী শিক্ষার একজন অধিবক্তা ছিলেন। তিনি তার কন্যা বিদ্যাবতী কংসকারকে শিক্ষার্থে ভারতে প্রেরণ করেগ্রহণকারী প্রথম ব্যাচের সেবিকা ছিলেন।[১০]

গ্রন্থাগার ঘটনা[সম্পাদনা]

১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে যোগবীর একটি সমিতির নেতৃত্ব দেন, যারা একটি গ্রন্থাগার স্থাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট আবেদন করেছিলেন। কিন্তু আবেদনকারী এবং আবেদনে স্বাক্ষরকারী উভয়েই জেল জরিমানার সম্মুখীন হন।[১১][১২] ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে সমস্ত নেওয়ার লেখকদের প্রধানমন্ত্রীর সম্মুখে ডেকে পাঠানো হয় এবং নেপাল ভাষায় লেখালেখি বন্ধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।[১৩]

যোগবীর থেরোবাদী বৌদ্ধ ধর্মের প্রচারেও ভূমিকা রাখেন, যা সরকারকে অধিক রাগান্বিত করে। ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দে অপ্রচলিত ধর্ম মত প্রচারের চেষ্টার জন্য বৌদ্ধ শিক্ষক ধম্মলোক মহাস্থবির, কবি চিত্রধর হৃদয়, ব্যবসায়ী ধর্ম মান তুলাধর প্রমুখ ১১ জন ব্যক্তির সাথে যোগবীর সিংহকেও কারাদণ্ড দেওয়া হয় ও জরিমানা করা হয়।[১৪] তাকে তার কর্মকাণ্ডের জন্য অপমানিত ও তাড়িত করা হয়।[১৫]

১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে তার স্ত্রী শোভা লক্ষ্মীর মৃত্যুর পর তিনি বুদ্ধ মায়ার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে সরকার রাজনৈতিক কর্মী, লেখক এবং শাসকদের বিরুদ্ধে হুমকিস্বরূপ সমস্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দমনমূলক নীতি গ্রহণ করে। যোগবীর সিংহকে গ্রেফতার করা হয় এবং ৮৫ দিন কারারুদ্ধ করে রাখা হয়।[১৬]

১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে নেপাল ভাষা পরিষদ যোগবীর সিংহের রচনার সংকলন যোগ-সুধা নামে প্রকাশ করে।[১৭]

সম্মাননা[সম্পাদনা]

কাঠমান্ডু মহানগরের যোগবীর সিংহ মার্গ নামে একটি সড়কের নামকরণ করে।[১৮]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Contributions to Nepalese Studies, Volume 22"। Institute of Nepal and Asian Studies, Tribhuvan University। ১৯৯৫।  Page 74.
  2. Lienhard, Siegfried (1992). Songs of Nepal: An Anthology of Nevar Folksongs and Hymns. New Delhi: Motilal Banarsidas. আইএসবিএন ৮১-২০৮-০৯৬৩-৭. Page 1.
  3. Tuladhar, Prem Shanti (2000). Nepal Bhasa Sahityaya Itihas: The History of Nepalbhasa Literature. Kathmandu: Nepal Bhasa Academy. আইএসবিএন ৯৯৯৩৩-৫৬-০০-X. Page 90.
  4. Sthavir, Dharmalok (১ ডিসেম্বর ১৯৭৭)। "A Journey to Great China"Regmi Research Series। Regmi Research। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১২  Pages 35-36.
  5. Lewis, Todd T. and Tuladhar, Subarna Man (2009). Sugata Saurabha - An Epic Poem from Nepal on the Life of the Buddha by Chittadhar Hridaya. New York: Oxford University Press. আইএসবিএন ৯৭৮-০-১৯-৫৩৪১৮২-৯. Page 350.
  6. LeVine, Sarah and Gellner, David N. (2005) Rebuilding Buddhism: The Theravada Movement in Twentieth-Century Nepal. Harvard University Press. আইএসবিএন ৯৭৮-০-৬৭৪-০১৯০৮-৯. Page 41. Retrieved 6 January 2012.
  7. Hridaya, Chittadhar (1982, third ed). Jheegu Sahitya ("Our Literature"). Kathmandu: Nepal Bhasa Parisad. Page 93.
  8. Sudarshan, Bhikshu (1970). Lumanke Bahahpin ("Memorable Figures"). Kathmandu: Chwasa Pasa. Page 41.
  9. Shrestha, Bal Gopal (জানুয়ারি ১৯৯৯)। "The Newars: The Indigenous Population of the Kathmandu Valley in the Modern State of Nepal)" (পিডিএফ)CNAS Journal। সংগ্রহের তারিখ ২৩ মার্চ ২০১২  Page 88.
  10. Tuladhar, Lochan Tara (আগস্ট ২০০৮)। "Yogbir Singh Kasaa: A saga of selfless contributions"। Matina  Pages 20-22.
  11. Dali, Indira (১৯৯১)। "Libraries and information centres" (পিডিএফ)Libraries and information centres in Nepal: CEDA library and documentation branch। Singapore: Asian Mass Communication Research & Information Centre। সংগ্রহের তারিখ ৬ মার্চ ২০১২ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] Page 17.
  12. Tumbahang, Govinda Bahadur (জানুয়ারি ২০১০)। "Marginalization of Indigenous Languages of Nepal"Contributions to Nepalese Studies। সংগ্রহের তারিখ ৩ জানুয়ারি ২০১২ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  13. Hridaya, Chittadhar (1982, third ed). Jheegu Sahitya ("Our Literature"). Kathmandu: Nepal Bhasa Parishad. Page 101.
  14. LeVine, Sarah and Gellner, David N. (2005). Rebuilding Buddhism: The Theravada Movement in Twentieth-Century Nepal. Harvard University Press. আইএসবিএন ০-৬৭৪-০১৯০৮-৩, আইএসবিএন ৯৭৮-০-৬৭৪-০১৯০৮-৯. Page 41.
  15. Sthavir, Dharmalok (১ ডিসেম্বর ১৯৭৭)। "A Journey to Great China"Regmi Research Series। Regmi Research। সংগ্রহের তারিখ ১১ অক্টোবর ২০১২  Pages 35-36.
  16. Sudarshan, Bhikshu (1970). Lumanke Bahahpin ("Memorable Figures"). Kathmandu: Chwasa Pasa. Page 56.
  17. Hridaya, Chittadhar (ed.) (1951) Yog-Sudha. Kathmandu: Nepal Bhasa Parisad. https://books.google.com.np/books/about/Yog_Sudha.html?id=i3DfcQAACAAJ&redir_esc=y
  18. "Addressed Road Network Map"। Kathmandu Metropolitan City। মার্চ ৬, ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ জানুয়ারি ২০১২