মৈথিলী সাহিত্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

মৈথিলী সাহিত্য হলো মৈথিলী ভাষার কবিতা, উপন্যাস, ছোটগল্প, নথি ও অন্যান্য লেখার সম্পূর্ণ সংগ্রহ। মৈথিলির সবচেয়ে বিখ্যাত সাহিত্যিক ব্যক্তিত্ব হলেন কবি বিদ্যাপতি (১৩৫০-১৪৫০), যিনি তাঁর কবিতা লিখেছেন গণমানুষের ভাষায়, অর্থাৎ মৈথিলী ভাষায়, এমন সময়ে যখন রাজ্যের সরকারী ভাষা ছিল সংস্কৃত এবং সংস্কৃতকেই সাহিত্যের ভাষা হিসেবে বিবেচনা করা হতো। বিদ্যাপতির পরে সাহিত্যে সংস্কৃতের পরিবর্তে মৈথিলি ভাষার ব্যবহারে বৃদ্ধি দেখা যায়।

মাগধী প্রাকৃতের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল 'র'-কে 'স', 'ণ'-এর বদলে 'ন', 'জ'-এর 'য়', 'ব'-এর 'য়'-এ পরিবর্তন। অশোকের ফরমানে 'র' থেকে 'হ'-এর পরিবর্তন প্রতিষ্ঠিত হয়। মহাবীর ও বুদ্ধ তাঁদের উপদেশ পূর্বীয় ভাষায় প্রদান করেছিলেন। ভাষার ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবহার মূলত পূর্ব থেকে এসেছে যা প্রাকৃত ও অপভ্রংশ-অবহট্ট কাব্যের উপর একটি ব্যাপক রচনা প্রাকৃতপিংলাম থেকে স্পষ্ট হয়। জ্যোতিরিশ্বর লরিকার উল্লেখ করেছেন। দ্বিতীয় বাচস্পতি তাঁর তত্ত্বচিন্তামণিতে ও বিদ্যাপতি তাঁর দানবাক্যাবলীতে প্রচুর পরিমাণে চলিত মৈথিলি শব্দ ব্যবহার করেছেন।

মৈথিলি লিপি, মিথিলাক্ষর বা জনপ্রিয়ভাবে তিরহুতা নামে পরিচিত, এটি একটি মহান প্রাচীনত্বের নিদর্শন। ললিতবিস্তারে বৈদেহী লিপির উল্লেখ আছে। খ্রিস্টপূর্ব ৭ম শতাব্দীর শেষের দিকে, উত্তর-পূর্বীয় বর্ণমালায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে এবং আদিতসেনার শিলালিপিগুলিতে প্রথমবারের মতো এই পরিবর্তনটি দেখতে পাওয়া যায়। পূর্বীয় সংস্করণটি পরিবর্তিত হয় এবং মৈথিলি লিপিতে পরিণত হয়, যা আসাম, বাংলা ও নেপালে ব্যবহৃত হতে থাকে। লিপির প্রাচীনতম লিপিবদ্ধ সূত্র-লেখের প্রমাণ পাওয়া যায় খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে আদিত্যসেনের মান্দার পাহাড়ী পাথরের শিলালিপিতে, যা এখন দেওঘরের বৈদ্যনাথ মন্দিরে স্থাপিত।[১]

বৌদ্ধ দোহাসমূহে ভাষা মিশ্র মৈথিলি-কামরূপী ভাষার অন্তর্গত বলে বর্ণনা করা হয়েছে।[২]

প্রাথমিক মৈথিলি সাহিত্য (আনুমানিক ৭০০–১৩৫০ খ্রিস্টাব্দ)[সম্পাদনা]

এই সময় প্রধানত গীতিনাট্য, গান এবং দোহা রচনা করা হতো। এই যুগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ মৈথিলী লেখক ছিলেন:

  • জ্যোতিরিশ্বর ঠাকুর (১২৯০–১৩৫০) যার বর্ণার্থনাকর উত্তর ভারতীয় ভাষার প্রথম গদ্য ও বিশ্বকোষ।

মধ্য মৈথিলি সাহিত্য (আনুমানিক ১৩৫০–১৮৩০ খ্রিস্টাব্দ)[সম্পাদনা]

সময়কাল ছিল নাট্য রচনার। এই যুগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ মৈথিলী লেখক ছিলেন:

আধুনিক মৈথিলি সাহিত্য (১৮৩০ খ্রিস্টাব্দ থেকে এখন পর্যন্ত)[সম্পাদনা]

একজন আইরিশ ভাষাবিদ ও সরকারি কর্মচারী জর্জ আব্রাহাম গ্রিয়ারসন অক্লান্তভাবে মৈথিলী লোককাহিনি নিয়ে গবেষণা ও এর ব্যাকরণের প্রতিলিপি করার পর আধুনিক মৈথিলী তার ছন্দ ফিরে পায়। পল আর. ব্রাস লিখেছেন যে "গ্রিয়ারসন ভেবেছিলেন যে মৈথিলী ও তার উপভাষাগুলিকে জনকপুর, সিরাহা, সাপ্তারি, সরলাহি, দরভাঙ্গা ও মধুবনীর সমগ্র জনগোষ্ঠীর ভাষা হিসাবে চিহ্নিত করা যেতে পারে"।[৩]

২০১০ সালের এপ্রিলে নেপাল উইক্লিফ বাইবেল অনুবাদকদের সাথে যৌথ মেধাস্বত্বের অধীনে বাইবেল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া কর্তৃক মৈথিলি ভাষায় নিউ টেস্টামেন্টের একটি অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছিল।

আধুনিক যুগে মৈথিলীর বিকাশ ঘটেছে পত্রিকা ও সাময়িকীর কারণে। এ যুগের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ লেখক হলেন:

  • বলদেব মিশ্র (১৮৯০–১৯৭৫)[৪]
  • সুরেন্দ্র ঝা 'সুমন' (১৯১০–২০০২) সাহিত্য একাডেমিতে মৈথিলীর প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন।
  • রাধা কৃষ্ণ চৌধুরী (১৯২১–১৯৮৫)
  • জয়কান্ত মিশ্র (২০ ডিসেম্বর ২৯৩৩ – ৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৯) সাহিত্য আকাদেমিতে মৈথিলীর প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন।
  • বিনোদ বিহারী বর্মা (১৯৩৭–২০০৩)
  • পরিচয় দাস (১৯৬৪–)
  • গজেন্দ্র ঠাকুর (১৯৭১–)

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Choudhary, R. (1976). A survey of Maithili literature. Ram Vilas Sahu.
  2. Barua, K. L. (১৯৩৩)। Early history of Kamarupa। Published by the Author। 
  3. Brass, P. R. (1974). Language, Religion and Politics in North India. Cambridge: Cambridge University Press, 1974. page 64
  4. Mishra, V. (১৯৯৮)। Makers of Indian Literature series (Maithili): Baldev Mishra। Sahitya Akademi, New Delhi। আইএসবিএন 81-260-0465-7 

টেমপ্লেট:মৈথিলী ভাষা