বেঙ্গল অ্যাম্বুলেন্স কোর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বেঙ্গল অ্যাম্বুলেন্স কোর
নেতাহাবিলদার এ সি চম্পটি
এর অংশ২ ফিল্ড অ্যাম্বুলেন্স, ব্রিটিশ সেনাবাহিনী
মিত্রপ্রথম বিশ্বযুদ্ধের মিত্রশক্তি
বিপক্ষকেন্দ্রীয় শক্তি
খণ্ডযুদ্ধ ও যুদ্ধবাগদাদ অভিযান

বেঙ্গল অ্যাম্বুলেন্স কোর প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সহায়তাকারী একটি চিকিৎসা দল যা বাঙালি জমিদারদের পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত হয়েছিল। টেসিফোনের যুদ্ধ এবং কুত অবরোধে কোরটির সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

সুরেশ প্রসাদ সর্বাধিকারী

১৯১৪ সালের ৪ আগস্ট ব্রিটেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যোগ দেয়। এ বিষয়ে আলোচনার জন্য বাংলার স্থানীয় রাজা-মহারাজা, নবাব, জমিদার এবং বিশিষ্ট নেতৃবর্গ কলকাতা টাউন হলে ১৪ আগস্ট এক সভার আয়োজন করে। এতে সিদ্ধান্ত হয়, তারা অর্থ ও লোকবল ইত্যাদি দিয়ে যুদ্ধে ব্রিটিশদের সহযোগিতা করতে চায়। এ জন্য প্রাথমিকভাবে তারা যুদ্ধক্ষেত্রে একটি চিকিৎসা দল প্রেরণের প্রস্তাব দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০ আগস্ট ভারতের ভাইসরয় বাঙালিদের নিয়ে একটি চিকিৎসা দল গঠনের সিদ্ধান্ত নেন যার নাম বেঙ্গল অ্যাম্বুলেন্স কোর। এই কোর গঠনে বেঙ্গল মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুরেশপ্রসাদ সর্বাধিকারী এবং বর্ধমানের মহারাজা বিজয় চাঁদ মহতাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু আগস্ট মাসের মধ্যে এদের প্রশিক্ষণ দিয়ে যুদ্ধে পাঠানো সম্ভব নয় বলে উদ্যোগটি স্থগিত করা হয়।[১]

১৯১৪ সালের অক্টোবরে কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে বাঙালি সৈন্য নিয়োগের বিষয়ে নতুনভাবে আলোচনা শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে বাংলা থেকে ১৫ জন চিকিৎসক এবং ১৭৫ জন কম্পাউন্ডার, স্ট্রেচার বিয়ারার, ড্রেসার নিয়ে একটি চিকিৎসাসেবা দল গঠন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও পরবর্তীতে মোট জনবল ১০০তে নামিয়ে আনা হয়। ১৯১৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ সেনাবাহিনী বাঙালিদের নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স কোরের প্রথম ইউনিট তথা রিভার অ্যাম্বুলেন্স গঠন ও তা মেসোপটেমিয়ার শাতিল আরব নদীতে পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়। সে বছরের ৬ মার্চ ভাইসরয় সরকারিভাবে রিভার অ্যাম্বুলেন্স গঠনের কথা ঘোষণা করেন। লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ এইচ নট কোরটির অধিনায়ক নিযুক্ত হন। এ কোরের জন্য বেঙ্গলি নামক একটি ভাসমান হাসপাতাল তৈরি করা হয়। কোরটির সদস্যরা ট্রেনে যাত্রা শুরু করার আগেই বেঙ্গলি কলকাতা থেকে সমুদ্রপথে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু, ১৭ মে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এটি সমুদ্রে ডুবে যায়।[১]

সে মাসেই বেঙ্গল অ্যাম্বুলেন্স কোর মেসোপটেমিয়ায় নতুন করে স্টেশনারি হাসপাতাল চালুর সিদ্ধান্ত নেয়। এজন্য কোরের ৭৭ জন সেনা এবং ৪১ জন চিকিৎসাকর্মী ইরাকের আমারাহ শহরে গমন করেন। ১৭ জুলাই তারা সেখানে বেঙ্গল স্টেশনারি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে। এটি ১৯১৬ সালের ৩১ মে পর্যন্ত প্রায় ১১ মাস সচল ছিল। এ সময় সেখান মোট ৭,৯২২ জন চিকিৎসা নেন। এছাড়াও দৈনিক প্রায় ২০০ জন স্থানীয় রোগীকে হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হত।[১]

পরবর্তীতে উক্ত হাসপাতালের ৩৭ জন সদস্যকে ২ নং ফিল্ড অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে যুক্ত করা হয়, যার নেতৃত্বে ছিলেন হাবিলদার এ. সি. চম্পটি। ১৯১৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর তারা কুত আল আমারার দিকে অগ্রসর হয় এবং কুত দখলে নিয়ে তারা বাগদাদ অভিমুখে রওনা হয়। বাগদাদ যাওয়ার সময় টেসিফোন এলাকায় দলের একজন সদস্য অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ফেরত পাঠানো হয়। টেসিফোন এলাকায় তুর্কী সেনারা ব্রিটিশদের প্রতিহত করে দেয়। ফলে, পরাজিত ব্রিটিশরা কুতে ফিরে আসতে বাধ্য হয়। এ সময় কোরের ৬ জন অসুস্থ সদস্য তুর্কীদের হাতে গ্রেপ্তার হয়। আবার, কূতে পৌঁছার পর কোরের আরো ১২ জন সদস্য অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদেরকে কূত থেকে ফেরত পাঠাতে হয়। ফলে, ২ ফিল্ড অ্যাম্বুলেন্সে বেঙ্গল কোরের সদস্য বাকি থাকে ১৮ জন। ১৯১৬ সালের ২৯ এপ্রিল ব্রিটিশদের এই বাহিনী তুর্কীদের কাছে আত্মসমর্পণ করলে এই ১৮ জনও আটক হন। কিন্তু একজন সদস্য অসুস্থ থাকায় আত্মসমর্পণের পরপরই তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। আর, বাকি ১৭ জন যুদ্ধবন্দী হিসেবে বাগদাদে যায়। এদের মধ্যে ৮ জন ১৯১৬ সালের সেপ্টেম্বরে বন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে এবং বাকিরা ১৯১৮ সালের ১১ নভেম্বরের যুদ্ধ বিরতির পর মুক্তি পায়।[১]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. মুহাম্মদ লুৎফুল হক (২০১২)। "বেঙ্গল অ্যাম্বুলেন্স কোর"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743