প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নৌযুদ্ধ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
এইচএমএস ড্রেডনট (ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজ-১৯০৬)। জাহাজটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বিশেষ অবদান রাখে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নৌযুদ্ধ মূলত: মিত্রশক্তির তুলনামূলকভাবে বিশালাকার নৌবহর ও চতুর্দিকে ঘেরাও করা অবস্থান দ্বারা কেন্দ্রীয় শক্তিকে সমুদ্র অঞ্চলে বাঁধা দেয়ার প্রচেষ্টা এবং কেন্দ্রীয় শক্তির এই অবরোধ অতিক্রম অথবা সাবমেরিন ও রেইডার দিয়ে যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্সের ওপর কার্যকরী অবরোধ আরোপ করার প্রচেষ্টা দ্বারা বৈশিষ্ট্যমন্ডিত ছিল৤

পটভূমি: বিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগে বিধ্বংসী যুদ্ধজাহাজ নির্মাণে ব্রিটেন এবং জার্মানির মধ্যকার নৌশক্তি বৃদ্ধির প্রতিযোগিতা নিয়ে বেশ কয়েকটি বইয়ে আলোচনা করা হয়েছে৤ জার্মানির বিংশ শতাব্দীর প্রভাবশালী নৌশক্তি ও সমুদ্রবাহিত বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল দ্বীপরাষ্ট্র যুক্তরাজ্যের সমপর‌্যায়ের নৌবহর নির্মাণের প্রচেষ্টাকে প্রায়ই এ দুই দেশের মধ্যে শত্রুতার একটি প্রধান কারণ বলে অভিহিত করা হয়, যা যুক্তরাজ্যকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণের দিকে পরিচালিত করেছিল৤ জার্মানির নেতৃবর্গ এমন একটি নৌশক্তি গঠন করতে চেয়েছিল যা তাদের বৈদেশিক বাণিজ্য ও ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যকে বৃটেনের কৃপার ওপর নির্ভরশীলতা থেকে মুক্তি দিতে সক্ষম, কিন্তু এমন একটি নৌবহর অবধারিতভাবেই ব্রিটেনের নিজ বাণিজ্য ও সাম্রাজ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতো৤

প্রথম মরক্কো সংকটের (মরক্কোর ঔপনিবেশিক অবস্থাকে কেন্দ্র করে, মার্চ ১৯০৫ ও মে ১৯০৬ এর মধ্যবর্তী সময়ে) পর থেকেই তাদের নিজ নিজ নৌশক্তি বৃদ্ধি করার প্রতিযোগিতা চলছিল৤ যাহোক, ঘটনাপ্রবাহ এদিকে পরিচালিত হয়: ক্যাপ্টেন আলফ্রেড থায়ের মাহান ছিলেন একজন মার্কিন নৌ কর্মকর্তা যিনি ব্রিটিশ নৌবাহিনীর ইতিহাসে অত্যন্ত আগ্রহী ছিলেন৤ ১৮৮৭ সালে তিনি The Influence of Sea Power upon History নামে একটি বই প্রকাশ করেন৤ এই বইয়ের মূল বিষয় ছিল আধুনিক বিশ্বের বুনিয়াদ হিসেবে নৌ আধিপত্য৤ তিনি দাবি করেন যে রোম থেকে শুরু করে যুক্তরাজ্য পর্যন্ত যে জাতিই সমুদ্রের আধিপত্য পেয়েছে সে জাতিই উন্নত ও সমৃদ্ধ হয়েছে৤ পক্ষান্তরে যে জাতি নৌ আধিপত্যে পিছিয়ে পড়েছে, যেমন হানিবালের কার্থেজ বা নেপোলিয়নের ফ্রান্স, তা সমৃদ্ধশালী হতে পারেনি৤ তিনি ধারণা করেন যে ব্রিটেন বিশ্বের সমুদ্রাঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে নৌবাহিনী গঠনের জন্য যা করেছে তা অন্যরাও করতে পারে- এমনকি করা অপরিহার্য, যদি তারা সম্পদ ও সাম্রাজ্যের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে চায়৤

নৌ-শক্তি বৃদ্ধির প্রতিযোগিতা: মাহানের গবেষণা অত্যন্ত প্রভাবশালী ছিল এবং তা বিশ্বজুড়ে নব উদ্যমে নৌ শক্তি অর্জনের এক বিস্ফোরণ ঘটায়৤ যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস অনতিবিলম্বে তিনটি যুদ্ধজাহাজ (দুই বছর পর একটি চতুর্থ USS Iowa সহ) নির্মাণের নির্দেশ দেয়৤ জাপান, যার ব্রিটিশ প্রশিক্ষিত নৌবাহিনী সুশিমার যুদ্ধে রাশিয়ান নৌবহরকে সম্পূর্ণরূপে পরাজিত করে, লড়াইয়ের ক্ষেত্রে নৌশক্তিকে একটি প্রভাবশালী বিষয়রূপে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে৤ যাহোক, এ বইয়ের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে জার্মানিতে৤ জার্মান সম্রাট দ্বিতীয় উইলহেম যখন তার দাদী রাণী ভিক্টোরিয়াকে দেখতে যান তখন তাকে রাজকীয় নৌবাহিনীতে নিয়ে আসা হয়৤ তার মা বলেন, “উইলহেমের একটি পরিকল্পনা হলো এমন একটি নৌবাহিনী গঠন করা যা ব্রিটিশ নৌবাহিনীর চেয়েও বড় ও শক্তিশালী হবে”৤ ১৮৯৮ সালে প্রথম ও এর দুই বছর পর দ্বিতীয় জার্মান নৌ আইন জারি হয়, যা দেশটির নির্মাণিতব্য জাহাজের সংখ্যা দ্বিগুণ করে তোলে তথা পরবর্তী ২০ বছরে ১৯ টি ব্যাটলশিপ ও ২৩টি ক্রুজার নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়৤ পরবর্তী এক দশকে জার্মানি অস্ট্রিয়ার চেয়েও নিচে থাকা নৌ র‌্যাংকিং থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রণতরী বহরের অধিকারী দেশে পরিণত হয়৤ ট্রাফালজারের যুদ্ধের পর এই প্রথম ব্রিটেন একটি আগ্রাসী ও বাস্তবিকই বিপজ্জনক প্রতিদ্বন্দ্বীর মুখোমুখি হয়৤