বিষ্ণুপ্রিয়া

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষ্ণুপ্রিয়া দেবী
চৈতন্য মহাপ্রভু ও বিষ্ণুপ্রিয়া দেবীর বিগ্রহ, বিষ্ণুপ্রিয়া জন্মস্থান মন্দির, নবদ্বীপ
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম
বিষ্ণুপ্রিয়া দেবী

ষোড়শ শতকের মাঘ শুক্ল শ্রীপঞ্চমী তিথি
মৃত্যুফাল্গুনী পূর্ণিমা
ধর্মহিন্দুধর্ম
জাতীয়তাভারতীয়
দাম্পত্য সঙ্গীচৈতন্য মহাপ্রভু
আত্মীয়সনাতন মিশ্র (পিতা), মহামায়া দেবী (মাতা)

শ্রীমতী বিষ্ণুপ্রিয়া দেবী ছিলেন শ্রীমন্মহাপ্রভু চৈতন্যদেবের সহধর্মিণী। ষোড়শ শতাব্দীর নবদ্বীপ ধামের বিশিষ্ট বিদুষী নারী। তৎকালীন হিন্দু সমাজ সংস্কারে চৈতন্য মহাপ্রভুকে সাহায্য করতেন। তিনি পরম বৈষ্ণব সাধিকাও ছিলেন। তিনি পশ্চিমবঙ্গের নবদ্বীপ শহরে জন্মগ্রহণ করেন।

প্রথম জীবন[সম্পাদনা]

ষোড়শ শতকের এক বসন্তকালে শ্রীপঞ্চমী তিথিতে শ্রী নবদ্বীপ ধামে বৈদিক মন্ত্র গর্জ্জনা মধ্যে রাজপণ্ডিত শ্রীমন্ত সনাতন মিশ্রের গৃহে কুমারী বিষ্ণুপ্রিয়া জন্ম গ্রহণ করেন। কন্যার নামকরণ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে করা হল "বিষ্ণুপ্রিয়া" যাহা বিষ্ণুপত্নী দেবী লক্ষ্মী-সরস্বতীর পর্যায় । অক্ষর পরিচয়াদি প্রাথমিক শিক্ষা তিনি তাহার গৃহ থেকেই প্রাপ্ত করেন এবং সনাতন মিশ্রর বাড়ি তে টোল থাকা দরূন পণ্ডিত সনাতন মিশ্রর নিজ ছাত্রদেরকে বেদ-বেদান্ত-দর্শনাদি শাস্ত্রীয় শিক্ষা দিতেন । এইসব শাস্ত্র শিক্ষা কুমারী বিষ্ণুপ্রিয়া সরাসরি না প্রাপ্ত করা সত্ত্বেও তিনি নিত্য আড়ালে শাস্ত্রচর্চা শুনে শুনে বড় হন এবং খুব দ্রুতই গূঢ়ভাবে শাস্ত্রীয় জ্ঞাজ্ঞান এবং বাকপটুতে পারঙ্গত প্রাপ্ত করেন। সেই যুগীয় মহিলাদের মধ্যে এমন এক বিদুষী নারী হওয়া অনেক দুর্লভ বিষয় ছিল। অতঃপর কুমারী বিষ্ণুপ্রিয়ার নবযৌবন প্রাপ্ত অবস্থায় শ্রী নবদ্বীপ ধামের পণ্ডিত শ্রীমন্ত বিশ্বম্ভর মিশ্র (নিমাই পণ্ডিতের) সঙ্গে তাহার বিবাহ সম্পন্ন হয়। তিনি বিশ্বম্ভরের দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন। ইতিহাসকার এবং জনশ্রুতি থেকে জানা যাযয়, শ্রীমন্ত সনাতন মিশ্রের পূর্বপুরুষ মিথিলাঞ্চল থেকে আগত বৈদিক ব্রাহ্মণ ছিলেন এবং পরবর্তীতে তিনিও এক ধনাঢ্য রাজপণ্ডিত ছিলেন।[১]

শেষ জীবন[সম্পাদনা]

শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু গৃহত্যাগ করার পর তিনি প্রচুর কষ্ট পেয়েছিলেন। স্বামী বিরহ যন্ত্রনায় তিনি বাকি জীবনটা উৎসর্গ করেন ভগবানের সেবার জন্য। তিনি পণ্ডিত ও জ্ঞানী মহিলা ছিলেন। অনেক পতিত এবং মূঢ়জনকে আধ্যাত্মিক জ্ঞান দান করেছিলেন। শেষ জীবনে একবার স্বামীর সাথে দেখা করার সুযোগ হয়েছিল তার। সন্ন্যাস নেওয়ার পর মহাপ্রভু একবারই তার মাকে দেখতে আসেন। তখন বিষ্ণুপ্রিয়া মহাপ্রভুকে একটু প্রদীপ দেখাবার সুযোগ পেয়েছিলেন। স্বামীকে প্রণাম করার পর তাকিয়ে দেখেন স্বামী আর সেখানে নেই। শুধু রয়ে গেছে তার খড়ম। ইতিহাসে তিনি সম্ভবত একমাত্র নারী যিনি পরবর্তী সমগ্র জীবনে শুধু স্বামীর খড়ম পূজা করেই কাটিয়ে দিয়েছিলেন। স্বামীর প্রতি তার যে অগাধ ভালোবাসা, প্রেমাশ্রুতা, তাকে মহীয়সী বানিয়েছে, তাই সকল হিন্দুনারীগণের আদর্শ হিসেবে বিবেচিত হন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]