নীতীশচন্দ্র লাহিড়ী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
নীতীশচন্দ্র লাহিড়ী
জন্ম১৮৯২
মৃত্যু২১ জুলাই ১৯৬৪
পেশাআইনজীবী
সমাজকর্মী
চলচ্চিত্র প্রযোজক
পরিচিতির কারণরোটারী ইন্টারন্যাশনাল
দাম্পত্য সঙ্গীবিন্দুবালা
সন্তানদুই কন্যা
পুরস্কারপদ্মভূষণ (১৯৬৩)
জে এম টেগোর অ্যাওয়ার্ড (কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়)
অর্ডার অব মেরিট (চিলি)
ন্যাশনাল অর্ডার অব মেরিট (ফ্রান্স)

নীতীশচন্দ্র লাহিড়ী (১৮৯২- ২১ জুলাই ১৯৬৪) ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি আইনজীবী, সমাজকর্মী এবং চলচ্চিত্র প্রযোজক। তিনি ছিলেন এশিয়া বংশোদ্ভূত প্রথম ব্যক্তি যিনি রোটারী ইন্টারন্যাশনালের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং বাংলার প্রথম চলচ্চিত্র বিলাত ফেরত -এর প্রযোজনা করেন ।[১] তার সভাপতিত্বে রোটারী ইন্টারন্যাশনাল তার যুব শাখা, ইন্টারঅ্যাক্ট ক্লাব শুরু হয়।[২] সমাজসেবায় অবদানের জন্য ভারত সরকার তাকে ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে দেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান পদ্মভূষণে ভূষিত করে ।[৩]

জীবনী[সম্পাদনা]

নীতীশচন্দ্র লাহিড়ী ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে (১২৯৮ বঙ্গাব্দে) ব্রিটিশ ভারতের অবিভক্ত বাংলার কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন।[৪] তিনি স্কুল শিক্ষক পিতার তিন পুত্রের একজন ছিলেন। [৫] কলকাতাতেই তার পড়াশুনা। বিদ্যালয়ের শিক্ষা শেষে ভর্তি হন সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ এবং পরে স্কটিশ চার্চ কলেজে। ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে আইন পাশ করেন এবং আইনের পরীক্ষায় অত্যন্ত ভাল ফলের জন্য 'জেএম ঠাকুর পদক' লাভ করেন। কলেজের ছাত্রাবস্থায় তিনি সাহিত্যের বিভিন্ন কাজে জড়িত ছিলেন। তিনি একটি সাহিত্য পত্রিকারও সম্পাদনা করতেন। সেই পত্রিকায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি রচনা প্রকাশিত হয়েছিল। [৫] বেদান্ত ও উপনিষদ বিষয়েও তিনি পাণ্ডিত্য অর্জন করেছিলেন। [৪] নীতীশচন্দ্র কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী হিসাবে তার কর্মজীবন শুরু করেন। কিন্তু চার বছর পর তিনি অর্থনৈতিক কারণে চলচ্চিত্র জগতে কাজের জন্য আইন ব্যবসা ছেড়ে দেন। তিনি একটি স্টুডিও প্রতিষ্ঠা করেন এবং ইংল্যান্ডে প্রবাসী বাঙালিদের নিয়ে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে তিনি ধীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে বাংলায় নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র বিলাত ফেরত প্রযোজনা করেন। এই সময়েই তিনি বিন্দুবালাকে বিবাহ করেন। [৫]

নীতীশচন্দ্র লাহিড়ী ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে রোটারী ইন্টারন্যাশনালের কলকাতা চ্যাপটারে যোগ দেন এবং ওই বছরেই তিনি সচিব হন।[৫]তার ব্যবসায়িক ভ্রমণ তাকে ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে কাজের জন্য তাকে মুম্বাই যেতে হয়। সেখানে গিয়ে তিনি মুম্বাই চ্যাপ্টারের সদস্য হয়ে রোটারী ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন এবং পরে ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় ফিরে এসে তিনি কলকাতায় ফিরে আসেন এবং ১৯৪৪-৪৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা শাখার সভাপতি হন।[৫]১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলার দুর্ভিক্ষে এই সংস্থাটির মাধ্যমে বহু জনহিতকর কাজ করেন। তার নেতৃত্বে সংস্থাটি দুর্ভিক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য খাদ্যের সংস্থান, বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবার জন্য ক্যাম্প স্থাপন করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি আর্মড ফোর্সেস এন্টারটেইনমেন্ট'-এর ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন এবং, যুদ্ধের পরে, ভারত সরকারের জন্য বিতরণ কেন্দ্রগুলি পরিচালনা করেন। [৫]১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি রোটারী ইন্টারন্যাশনালের দ্বিতীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৫৫-৫৬ খ্রিস্টাব্দে রোটারী ইনফরমেশন কাউন্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে দিল্লিতে সেসময়ের সবচেয়ে বড় এশিয়া আঞ্চলিক সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন, যেখানে একুশটি দেশের ২৯০০ জন প্রতিনিধি অংশ নেন। [৫]তিনি ১৯৬২-৬৩ খ্রিস্টাব্দে আন্তর্জাতিক রোটারী ক্লাবের বিশ্ব সভাপতি তথা গ্লোবাল প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।[৪] প্রসঙ্গত, তিনিই প্রথম এশীয় হিসাবে এই পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন।[৫] সংগঠনের যুব শাখা ইন্টারঅ্যাক্ট ক্লাব প্রতিষ্ঠায় তিনিই কার্যকরী ভূমিকা নেন। [২]

সম্মাননা[সম্পাদনা]

ভারত সরকার ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে সমাজসেবায় তার অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান পদ্মভূষণ প্রদান করে।[৩] ফ্রান্স ও চিলি রাষ্ট্র তাকে ন্যাশনাল অর্ডার অব মেরিট ও অর্ডার অব মেরিট উপাধি প্রদান করে। ক্যালিফোর্নিয়ার কলেজ অফ মেডিসিন এবং টেক্সাসের বেলর বিশ্ববিদ্যালয় সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। [৪][৫]

নীতীশচন্দ্র লাহিড়ী ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দের ২১ জুলাই (১৩৭১ বঙ্গাব্দের ৫ শ্রাবণ) প্রয়াত হন। স্ত্রী বিন্দুবালা তার পূর্বেই মারা যান।[২] নীতীশচন্দ্রের মৃত্যুর পর কলকাতার রোটারী ক্লাব তাদের শিশু গ্রন্থাগারের নামকরণ করে- নীতীশচন্দ্র লাহিড়ী চিলড্রেনস লাইব্রেরি[৬]

ফিল্মগ্রাফি[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "The First RI President from India" (পিডিএফ)। Rotary 3211। ২০১৬। ১০ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ মার্চ ২০১৬ 
  2. "Founder of Interact"। Interact Club of Khulna। ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৯ মার্চ ২০১৬ 
  3. "Padma Awards" (পিডিএফ)। Ministry of Home Affairs, Government of India। ২০১৬। ১৫ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ জানুয়ারি ২০১৬ 
  4. সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, নভেম্বর ২০১৩, পৃষ্ঠা ৩৬৮, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  5. "Nitish Chandra Laharry"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-১৯ 
  6. "The Rotarian Feb 1990"। Rotary International। ১৯৯০। সংগ্রহের তারিখ ৯ মার্চ ২০১৬