দেব দীপাবলি (বারাণসী)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
দেব দীপাবলি
প্রতি সন্ধ্যায় গঙ্গার দশাশ্বমেধ ঘাটে আরতি করা হয়
পালনকারীহিন্দু
ধরনবারাণসী
তাৎপর্যত্রিপুর পূর্ণিমা, শিবারাধনা
উদযাপনদেবগণ গঙ্গা আরতির সময় গঙ্গার ঘাটে আবির্ভূত হন
তারিখকার্তিক পূর্ণিমা

দেব দীপাবলি ("দেবগণের দিওয়ালি" বা আলোকোৎসব"[১]) হল কার্তিক পূর্ণিমার উৎসব যা ভারতের উত্তর প্রদেশের বারাণসীতে উদ্‌যাপিত হয়। এটি হিন্দু কার্তিক মাসের (নভেম্বর - ডিসেম্বর) পূর্ণিমায় পড়ে ও দীপাবলির পনেরো দিন পরে হয়। গঙ্গা নদীর নিকটস্থ সমস্ত ঘাটের সিঁড়িতে দক্ষিণ প্রান্তের রবিদাস ঘাট থেকে রাজঘাট পর্যন্ত গঙ্গা ও এর অধিষ্ঠাত্রী দেবীর সম্মানে দশ লক্ষেরও অধিক মাটির প্রদীপ (দিয়া) প্রজ্জ্বলন করা হয়। পৌরাণিক ইতিহাস অনুসারে, এ দিন দেবতারা গঙ্গা স্নান করতে পৃথিবীতে অবতরণ করেন বলে বিশ্বাস করা হয়।[২][৩] উৎসবটি ত্রিপুর পূর্ণিমা স্নান হিসেবেও পালন করা হয়।[১][৪] দেব দীপাবলি উৎসবে প্রদীপ জ্বালানোর প্রথা দশাশ্বমেধ ঘাটে পণ্ডিত কিশোরী রমন দুবে (বাবু মহারাজ) ১৯৯১ সালে প্রথমবারের মতো শুরু করেছিলেন[৩]

দেব দীপাবলির সময়, গৃহসমূহের সদর দরজা তেলের প্রদীপ ও রঙিন নকশা দিয়ে সজ্জিত করা হয়। রাত্রে আতশবাজি পোড়ানো হয়, বারাণসীর রাস্তায় সজ্জিত দেবতার শোভাযাত্রা বের করা হয় এবং নদীতে তেলের প্রজ্বলিত প্রদীপ ভাসানো হয়।[৫] এই উৎসবের তাৎপর্য ও ক্রমবর্ধমান সামাজিক-সাংস্কৃতিক জনপ্রিয়তার কারণে এটি বর্তমানে মির্জাপুরের মতো নিকটবর্তী জেলাগুলিতেও উদযাপিত হতে শুরু করেছে।

ক্রিয়াকলাপ[সম্পাদনা]

নদীর তীরে উৎসব দেখতে ভিড় জমেছে।
২০১১ সালের উৎসবে গঙ্গার একটি আলোকিত ঘাট

ভক্তদের দ্বারা সম্পাদিত প্রধান আচারগুলির মধ্যে রয়েছে কার্তিক স্নান (কার্তিকে গঙ্গায় পবিত্র স্নান করা) ও সন্ধ্যায় গঙ্গাকে দীপদান (তেল আলোকিত প্রদীপ নিবেদন)। সন্ধ্যায় গঙ্গা আরতি করা হয়।

দীপদান

পাঁচ দিনের উৎসব প্রবোধিনী একাদশী (কার্তিক মাসের ১১তম তম চান্দ্র দিন) শুরু হয় ও কার্তিক পূর্ণিমায় শেষ হয়। ধর্মীয় ভূমিকার পাশাপাশি, উৎসব ঘাটে গঙ্গা পূজা ও প্রদীপ জ্বালিয়ে আরতি দর্শন করার মাধ্যমে যুদ্ধে নিহতদের স্মরণ করা হয়। এটি গঙ্গা সেবা নিধি দ্বারা সংগঠিত হয়।

এই সময় দশশ্বমেধ ঘাটে অমর জওয়ান জ্যোতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয় এবং পাশের রাজেন্দ্র প্রসাদ ঘাটে বারাণসী জেলার পুলিশ কর্মকর্তা, ৩৯ গোর্খা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ৯৫টি সিআরপিএফ ব্যাটালিয়ন, ৪টি বায়ুসেনা নির্বাচন বোর্ড ও ৭টি এনসিসি (নৌ) বাহিনী, বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় (বিএইচইউ) এর ইউপি ব্যাটালিয়ন যুক্ত হয়।

ঐতিহ্যগত শেষ পোস্টটি তিনটি সশস্ত্র বাহিনী (সেনা, নৌবিমান বাহিনী) দ্বারা সঞ্চালিত হয়। তারপরে সমাপনী অনুষ্ঠান হয় যেখানে আকাশ প্রদীপ জ্বালানো হয়। দেশাত্মবোধক গান, স্তোত্র ও ভজন গাওয়া হয় এবং ভগীরথ শৌর্য সম্মান পুরস্কার প্রদান করা হয়।[২][৬]

উৎসবের পর্যটন আকর্ষণ, ঘাট ও নদীকে উজ্জ্বল রঙে আলোকিত করা দশ লক্ষ প্রদীপের (ভাসমান এবং স্থির) সৌন্দর্য দর্শনার্থী ও পর্যটকদের দ্বারা প্রায়শই একটি উত্তেজনাপূর্ণ দৃশ্য হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। উৎসবের রাতে, পবিত্র শহর বারাণসীতে আশেপাশের গ্রাম ও সারা দেশ থেকে হাজার হাজার ভক্ত সন্ধ্যায় গঙ্গার ঘাটে আরতি দর্শনার্থে জড়ো হয়। স্থানীয় সরকার উৎসবের সময় শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে বেশ কিছু নিবিড় নিরাপত্তা ব্যবস্থা করে।[২]

দশমেশ্বর ঘাটে আরতি ছাড়াও সমস্ত ভবন ও বাড়ি মাটির প্রদীপ দিয়ে আলোকোজ্জ্বল করা হয়। প্রায় এক লক্ষ তীর্থযাত্রী প্রদীপ শোভিত নদী দর্শন করতে নদীর তীরে গমন করেন।[৭] আরতিটি ২১ জন তরুণ ব্রাহ্মণ পুরোহিত ও ২৪ জন তরুণী দ্বারা সম্পাদিত হয়।[৬] স্তবগান, ছন্দময় ঢাক বাজানো, শঙ্খ বাজানো এবং তাম্রকার জ্বালানো—আচার-অনুষ্ঠানটির বৈশিষ্ট্য।[৭]

সন্ধ্যায় নদীতীরস্থ সমস্ত ঘাটে প্রদীপ প্রজ্বলিত অবস্থায় আরতি সময়ে নদীতে নৌকারোহণ পর্যটকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়।[৩]

গঙ্গা মহোৎসব[সম্পাদনা]

'গঙ্গা মহোৎসব' বারাণসীতে একটি পর্যটন কেন্দ্রিক উৎসব। উৎসবটি প্রতি বছর প্রবোধনী একাদশী থেকে শুরু করে অক্টোবর-নভেম্বর মাসের কার্তিক পূর্ণিমা পর্যন্ত পাঁচ দিন ধরে উদযাপিত হয়। এটি বারাণসীর সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য প্রদর্শন করে। বিশ্বাস ও সংস্কৃতির বার্তা নিয়ে উৎসবে জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শাস্ত্রীয় সঙ্গীত, নৌকা বাইচ, দৈনিক শিল্প মেলা , ভাস্কর্য প্রদর্শন ও মার্শাল আর্ট হয়ে থাকে। অন্তিম দিন (পূর্ণিমা) ঐতিহ্যবাহী দেব দীপাবলি (দেবতাগণের দীপাবলি বা আলোকোৎসব) পালিত হয়। এই সময় গঙ্গা নদীর ঘাটগুলি দশ লক্ষেরও বেশি প্রজ্বলিত মাটির প্রদীপে জ্বলজ্বল করতে থাকে।[১][৮]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Fairs and festivals"। National Informatics Center। ১৩ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ নভেম্বর ২০১২ 
  2. "Varanasi gearing up to celebrate Dev Deepawali"The Times of India। ১০ নভেম্বর ২০১০। ৭ সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ নভেম্বর ২০১২ 
  3. "Ghats dazzle on Dev Deepawali"The Times of India। ২১ নভেম্বর ২০১০। ১৯ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ নভেম্বর ২০১২ 
  4. Dwivedi, Dr. Bhojraj (২০০৬)। Religious Basis of Hindu Beliefs। Diamond Pocket Books (P) Ltd.। পৃষ্ঠা 171। আইএসবিএন 9788128812392। সংগ্রহের তারিখ ৭ নভেম্বর ২০১২ 
  5. Publishing, DK (২০০৮)। India: People, Place, Culture, History। Penguin। পৃষ্ঠা 114। আইএসবিএন 9780756649524। সংগ্রহের তারিখ ৭ নভেম্বর ২০১২ 
  6. "Events finalised for Dev Deepawali"The Times of India। ৩ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ নভেম্বর ২০১২ 
  7. Bruyn, Pippa de (২০১০)। Frommer's India। John Wiley & Sons। পৃষ্ঠা 469। আইএসবিএন 9780470556108। সংগ্রহের তারিখ ৭ নভেম্বর ২০১২ 
  8. "Fair and Festivals"। Official website of UP Tourism। ২৯ জুন ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ নভেম্বর ২০১২ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]