ত্রিরত্ন মান তুলাধর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ত্রিরত্ন মান তুলাধর, বামে বসা, লাসা, ১৯৪৭
ত্রিরত্ন মানের বাণিজ্য প্রতীক

ত্রিরত্ন মান তুলাধর (দেবনাগরী: त्रिरत्न मान तुलाधर) (১৯০৫-১৯৮৬) হলেন নেপালের ঐতিহ্যবাহী তিব্বতী ব্যবসার বৃহত্তম ব্যক্তিত্ব এবং ১৯৪০ এর দশকের লাসার নেপালি বাণিজ্য সঙ্ঘের সভাপতি।[১]

প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

ত্রিরত্ন মান (বিকল্প নাম: হ্লান্ধুর) কাঠমান্ডুর নিয়তে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পিতা ব্যবসায়ী ও লোকহিতৈষী ধর্ম মান তুলাধর এবং মাতা হেরা লক্ষ্মী তুলাধরের তিন ছেলের মধ্যে জ্যেষ্ঠ ছিলেন। তিনি স্বগৃহে শিক্ষিত হন এবং নিজের চেষ্টায় ইংরেজি এবং চীনা ভাষা শিখেন। এছাড়া তিব্বত এবং ভারতে অবস্থান করার সময় তিনি তিব্বতি এবং হিন্দি ভাষা শিখেন। ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মায়া কংসকারকে বিবাহ করেন।[২]

ত্রিরত্ন মান নেপালের থেরোবাদী বৌদ্ধধর্মের পুনর্জাগরণের অন্যতম কর্মী ছিলেন। ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বৌদ্ধ পণ্ডিত ও নেতা ধর্মাদিত্য ধর্মাচার্য কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বৌদ্ধ ত্রাণ সঙ্ঘের সদস্য হন।[৩]

তিব্বতে বাণিজ্য[সম্পাদনা]

ত্রিরত্ন মান লাসা নেওয়ারদের একটি বংশের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তার পরিবারের লাসায় ১৭৯০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ছুসিংস্যার নামে পরিচিত একটি ঐতিহাসিক বাণিজ্য কুঠি ছিল। এই বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান তিব্বত, নেপাল ও ভারতে বাণিজ্য পরিচালনা করত। তাদের বাণিজ্য সামগ্রীর মধ্যে ছিল মুখোশ, জরি, রত্ন পাথর, কাপড় এবং অন্যান্য সাধারণ দ্রব্য।[৪] লাসার মূল ব্যবসায়িক ভবনের সাথে তিব্বতের গিয়ান্তসেফারি এবং ভারতের কালিম্পং, কলকাতালাদাখে উপবাণিজ্য কুঠি ছিল।[৫][৬] কলকাতার বাণিজ্য কুঠি ধর্ম মান পূর্ণ মান - তিব্বতী মুখোশ ভাণ্ডার নামে পরিচিত ছিল।[৭]

ত্রিরত্ন মান ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রথমবারের মতো লাসায় গমন করেন এবং পৈতৃক ব্যবসার হাল ধরেন। ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি নেপালে প্রত্যাগমন করেন।[৮] তিনি লাসায় দুইবার গমন করেন এবং ১৯৩৫-১৯৪১ ও ১৯৪৭-১৯৫৩ সাল পর্যন্ত মোট ১৩ বছর সেখানে তিব্বতে অতিবাহিত করেন।

১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ত্রিরত্ন মান লাসার নেপালি বাণিজ্য সঙ্ঘের সভাপতি নিযুক্ত হন এবং এক বছর সে পদে বহাল থাকেন।[৯]

লাসায় তার ছেলেদের হাতে ব্যবসায়ের ভার ছেড়ে দিয়ে নেপালে ফিরে আসার পর তিনি ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে সংগঠনের কাঠমান্ডু শাখার নির্বাহী সমিতিতে নির্বাচিত হন। ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি সেই পদে সমাসীন থাকেন।[১০]

তার জ্যেষ্ঠ পুত্র প্রত্যেক মান তুলাধর ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে ছুসিংস্যারের বাণিজ্য গুটিয়ে নেপালে ফিরে আসেন। ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের চীন-ভারত যুদ্ধকে কেন্দ্র করে সিকিমের বাণিজ্যপথ রুদ্ধ হয়ে গেলে নেপাল-তিব্বতের ঐতিহাসিক বাণিজ্য হয়ে যায়।[১১] ত্রিরত্ন মান জীবনের অবশিষ্ট সময় কাঠমান্ডুতে অতিবাহিত করেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. LeVine, Sarah and Gellner, David N. (2005). Rebuilding Buddhism: The Theravada Movement in Twentieth-Century Nepal. Harvard University Press. আইএসবিএন ০-৬৭৪-০১৯০৮-৩, 9780674019089. Page 26.
  2. Tuladhar, Sidhartha Man (১৯৯৯)। "Dharma Man Tuladhar and Pratek Man Tuladhar: Nepalese Traders in Tibet" (পিডিএফ)Postal Himal: Quarterly of the Nepal and Tibet Philatelic Study Circle। Nepal and Tibet Philatelic Study Circle। ৬ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ আগস্ট ২০১২  Page 24.
  3. Singh, Harischandra Lal (2007). In the footsteps of the Buddha: Random thoughts on 15 Buddhist thinkers and seekers of truth. Ratna Books. আইএসবিএন ৯৯৯৩৩৫৮০৪৫, 9789993358046. Page 39.
  4. Tuladhar, Sidhartha Man (১৯৯৯)। "Dharma Man Tuladhar and Pratek Man Tuladhar: Nepalese Traders in Tibet" (পিডিএফ)Postal Himal: Quarterly of the Nepal and Tibet Philatelic Study Circle। Nepal and Tibet Philatelic Study Circle। ৬ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ আগস্ট ২০১২  Page 23.
  5. Tuladhar, Kamal Ratna (১০ মার্চ ২০১২)। "Long ago in Ladakh"The Kathmandu Post। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০১২ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  6. Hilker, D. S. Kansakar (2005). Syamukapu: The Lhasa Newars of Kalimpong and Kathmandu. Kathmandu: Vajra Publications. আইএসবিএন ৯৯৯৪৬-৬৪৪-৬-৮. Page 40.
  7. Tuladhar, Kamal Ratna (2011). Caravan to Lhasa: A Merchant of Kathmandu in Traditional Tibet. Kathmandu: Lijala & Tisa. আইএসবিএন ৯৯৯৪৬-৫৮-৯১-৩. Page 47.
  8. Sankrityayan, Mahapandit Rahul (1934) Tibet Mein Sava Baras. New Delhi: Sharda Mandir. Page 258.
  9. Tuladhar, Kamal Ratna (আগস্ট ২০০৯)। "Pioneers on the Roof of the World"। Matina  টেমপ্লেট:BLCAT. Page 5.
  10. "Nepali Banijya Sangh, Lhasa"। Thaunkanhe। মে–জুন ১৯৫৫। 
  11. "Nathu La to open for Indo-China trade after 44 yrs"The Economic Times। ২০ জুন ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০১২